<p style="text-align:justify">সংকটের সময়েও দৃশ্যত এক হতে পারছেন না ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকার বিবদমান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বলা হচ্ছে, এ কারণেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলা দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি তাঁরা। তবে এই ব্যর্থতার দায় নিতে রাজি নন স্থানীয় নেতাদের কেউই। তাঁরা দলীয় প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা মহানগরের নেতাদের নিয়ে ডাকা বৈঠকে এমন চিত্র উঠে এসেছে।</p> <p style="text-align:justify">কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরের সহিংস পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীদের দুর্বল ভূমিকার পেছনের কারণ খুঁজতে গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে ব্যাপক সহিংসতার শিকার রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ডাকা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা-৪, ৫ ও ১৮ আসনের সংসদ সদস্য, এসব এলাকার আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ একাধিক নেতা।</p> <p style="text-align:justify">বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা—এই তিনটি এলাকায় সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে নেতাকর্মীরা বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এর পেছনের কারণ খোঁজার জন্য ডাকা বৈঠকে স্থানীয় নেতাদের কথা বেশিক্ষণ শুনতে পারেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। কারণ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েই দলীয় প্রতিপক্ষের ওপর ব্যর্থতার দায় চাপানো শুরু করেন।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে তাণ্ডবের সময় নিজেরা কে কতটা প্রতিরোধ করেছেন সেই বর্ণনা দেন। পরস্পরকে দোষারোপ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য শোনা বন্ধ করে দিয়ে নিজে বক্তব্য দেন।</p> <p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্থানীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘কে কী করেছেন তা আপনাদের চেহারায় লেখা আছে। আমরা এগুলো জানি।’</p> <p style="text-align:justify">ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়া। উন্নয়ন, অগ্রগতির চলমান চাকাকে থামিয়ে দিতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা সুপরিকল্পিতভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।’</p> <p style="text-align:justify">কোটা আন্দোলনের নামে তাণ্ডব প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা এ ধরনের ঘৃণিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহিংসতায় জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা কালের কণ্ঠ’র প্রশ্নের জবাবে বলেন, বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে এলাকার বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ দিয়ে বিরোধ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৈঠকে স্থানীয় নেতারা মূলত আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। সহিংসতার দিনগুলোতে কে কী করেছেন তা বলেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের নিজ নিজ এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বলেছেন।’</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবীব হাসান বিগত সংসদে ঢাকা-১৮ (উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমন কঠিন সময়েও আমাদের নিজেদের দ্বন্দ্ব কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না। এবারের পরিস্থিতি দেখেও যদি আমাদের শিক্ষা না হয় তাহলে আর কোনো দিন শিক্ষা হবে বলে মনে হয় না। এখন দরকার হলো আমাদের সবার মিলেমিশে কাজ করা।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>‘</strong><strong>বিএনপি ধ্বংসের সুরে কথা বলছে</strong><strong>’</strong></p> <p style="text-align:justify">এদিকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই—এ অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাঁরা এখনো ধ্বংসের সুরে কথা বলছেন। তিনি গতকাল রাজধানীর শ্যামলী-আদাবর রিং রোডে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথার সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল এখনো মিথ্যাচার করছেন। তাঁদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই। মির্জা ফখরুল এখনো ধ্বংসের সুরে কথা বলছেন, আগুনের কথা বলছেন। আপনারা (বিএনপি) এ দেশ চাননি, মুক্তিযুদ্ধ চাননি। আপনারা পদ্মা সেতু চাননি, মেট্রো রেল চাননি।’</p> <p style="text-align:justify">ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক বিটিভিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল এখনো ধ্বংসের সুরে কথা বলেন। আর কত ধ্বংস চান?’</p> <p style="text-align:justify">ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মেট্রো রেলের মিরপুর স্টেশনে যে হামলা হয়েছে সেগুলো সারাতে এক বছর লাগবে। আমাদের যত অর্জন আছে, সন্ত্রাসীরা সেখানে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। যে সেতু ভবন পদ্মা সেতু করেছে, সেই সেতু ভবন আক্রান্ত, দোতলায় আমার অফিস কয়লা হয়ে গেছে, বিআরটিএ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’</p> <p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যে অর্জনগুলো বাংলাদেশকে প্রশংসিত করেছে, সম্মানিত করেছে, শেখ হাসিনার সেই অর্জনগুলো আজ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ জয় বাংলা আক্রান্ত, একাত্তরের মহাবিজয় আজ আক্রান্ত।</p> <p style="text-align:justify">ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত ও জাজিরা প্রান্তে বারবার আগুন দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে, স্থানীয় জনগণ প্রতিরোধ করেছে। আমার দেশ ও অর্জন যখন আক্রান্ত হয় আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারি না।’</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।</p>