<p>ছবি তুলতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে নিজের সন্তান ও পরিবারের শিশুদের ছবি তুলতে খুব ভালো লাগে আমাদের। সেই সব ছবি আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করি। শিশুদের ছবি প্রকাশের নেতিবাচক দিকগুলো কি ভেবেছেন কখনো? শিশুর ছবিসংক্রান্ত প্রাইভেসি নিয়ে লিখছেন ফটোগ্রাফার ইয়াসমিন হক রলি।</p> <p>একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেন হাসান। সম্প্রতি মেয়ে শিশুর বাবা হয়েছেন। একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়ে রীতিমতো সন্তানকে নিয়ে ভয় পেয়েছেন। ফ্ল্যাশযুক্ত ক্যামেরায় ছবি তোলার কারণে তিন মাস বয়সী শিশুসন্তান চমকে যায়। ফটোগ্রাফার খেয়াল না করেই ফ্ল্যাশে ছবি তুললে চমকে যায় শিশুটি। আর এতে শুরু হয় কান্না। হাসান এরপর নিজের শিশুকে যখনই কোনো অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছেন সতর্ক থাকছেন। শিশুটি আবারও যেন ফ্ল্যাশ ফটোগ্রাফির সামনে না পড়ে।</p> <p>অন্যদিকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি জেসমিন খান। পাঁচ বছরের শিশুসন্তান মালিহাকে নিয়ে নিয়মিত ফেসবুক ছবি প্রকাশ করেন। ফেসবুকের ভিডিও হিসেবে একটি ক্লিপ দেখে সম্প্রতি চমকে গেছেন জেসমিন খান। পশ্চিমা দুনিয়াতে শিশুদের ছবি বিভিন্ন অবৈধ সাইট ও পর্নোগ্রাফিক প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচা হচ্ছে। রীতিমতো সামাজিক দুনিয়া থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন শিশুর ছবি এসব সাইটে পেডোফাইল বা শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণ আছে এমন অপরাধীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। জেসমিন খান এখন সতর্ক সন্তানের ছবি তোলা ও শেয়ারের বিষয়টি নিয়ে। </p> <p>অস্ট্রেলিয়াতে প্রতি তিনজন কিশোর-কিশোরীর একজন কোনো না কোনো কারণে ছবিসংক্রান্ত নির্যাতন বা অপরাধের ভুক্তভোগী হচ্ছে। পশ্চিমা অন্যান্য দেশেও শিশুরা একই ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশ, ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশেও শিশুদের ছবিসংক্রান্ত অপরাধের হার বাড়ছে।</p> <p>নানা কারণে আমরা ছবি তুলি। সন্তান ও শিশুর শৈশবের ছবি তুলে রাখতে পছন্দ করি আমরা। নির্দিষ্ট বয়সে এলে সন্তানদের ছবি তোলার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। সবার আগে শিশু ছবি তোলার বিষয়টি পছন্দ করছে কি না তা মাথায় রাখতে হবে। শিশুর ক্ষেত্রে ছবি তোলার বিষয়ে অবশ্যই তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। ছবি তোলা নিয়ে কোনোভাবেই যেন তারা বিরক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।</p> <p>শিশুরা ছোট বলে সামাজিক অনেক কিছুই তারা জানে না। তাদের ছবি শেয়ার করার সময়ও যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের প্রাইভেসি সম্পর্কে আপনাকে বুঝতে হবে। মজা করার জন্য কিংবা মিম বানানোর জন্য তাদের ছবি কোনোভাবে বিকৃত করা যাবে না। সম্পাদনা করা ছবি কিংবা চেহারা পরিবর্তন করে কোনো ছবি কোনোভাবেই শেয়ার করা উচিত নয়। </p> <p>সব ছবি সব সময় শেয়ার করতে হয় না। শিশুদের শৈশবের ছবি আপনার সংগ্রহে রাখতে পারেন, কিন্তু সব যে উন্মুক্তভাবে শেয়ার করতে হবে, এমনটা ভাববেন না। পারিবারিক সংগ্রহ ও স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলতে পারেন, কিন্তু ছবি শেয়ারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। ছবি বিশেষ সফটওয়্যার বা অ্যাপে সম্পাদনার সময় অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।</p> <p>কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েরা সচরাচর নিজেদের মতো করে চলতে চায়। অনেক সময় বাবা-মা তাদের ছবি শেয়ার করুক, এটা অনেক কিশোর-কিশোরী পছন্দ করে না। নিজের ছবি নিয়ে অনেকেই নিজেদের বন্ধু মহলে অস্বস্তিতে ভোগে। ছবি তোলা ও শেয়ারের ক্ষেত্রে তাদের মতামত জরুরি। তা না হলে বাবা-মার সাথে সন্তানদের মতবিরোধ তৈরি হতে পারে। শুধু ছবি নয়, ছোটবেলার কোনো মজার ভিডিও থাকলে তা শেয়ারের আগে সন্তানের সঙ্গে কথা বলে নিন। অপ্রস্তুত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়, এমন কোনো ভিডিও বা ছবি কখনোই শেয়ার করবেন না।</p> <p>সন্তানের ছবি শেয়ারের আগে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছেন তার প্রাইভেসি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। গুগল থেকে শুরু করে ফেসবুকে অনেক সময় ছবি শেয়ার করলে তা ভবিষ্যতে আপনার অজান্তেই ব্যবহার করার ঝুঁকি থাকে। আপনার সন্তানের ছবি প্রকাশের সময় তার বয়স, জন্মদিন, ছবি তোলার স্থান, স্কুলের নামের মতো গোপনীয় তথ্যাদি গোপন রাখতে সচেষ্ট থাকুন। অপ্রস্তুত অবস্থা, পোশাকহীন বা বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি তুলবেন না। ছবি ভবিষ্যতের দলিল<span lang="DA" style="font-size:12.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">―</span></span>এ বিষয়টি মাথায় রেখে ছবি তোলার চেষ্টা করুন।</p> <p>সন্তানের শৈশবের কোনো ভিডিও থাকলে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকুন। উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করলে ভিডিও চুরির সম্ভাবনা থাকে। ভিডিও টিকটক বা মাইক্রো ভিডিও হিসেবে প্রকাশের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকুন। টিকটকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফরমের ভিডিও প্রকাশের পরে তা ছড়িয়ে পড়লে বা অন্য কেউ পুনরায় ব্যবহার করলে তার হদিস থাকে না। এসব বিষয় মাথায় রাখুন। কোনো ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের আগে নিয়মনীতি ও প্রকাশনার নিয়ম-কানুন জেনে নিন।</p>