তথ্য-প্রযুক্তির নতুন চমক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) দক্ষ চ্যাটবটগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক, বুদ্ধিদীপ্ত জবাব দিয়ে থাকে। তবে ব্যাপারটি এখনো গড়ে ওঠার পর্যায়ে আছে বলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুল, দুর্বল, এমনকি মিথ্যা কথাও বলে! আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। এর সম্ভাবনা ও ক্ষমতায় আমরা যেমন মুগ্ধ, তেমনি তাকে নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। বহু মানুষকে নাকি কর্মহীন করতে চলেছে এই প্রযুক্তি।
চ্যাটবটরা মিথ্যাও বলে
সাব্বির খান, স্ক্যান্ডিনেভিয়া প্রতিনিধি

এর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি কম নেই। সব মিলিয়ে মনে করা হয়, এআই আসলে আশীর্বাদই। তাই সে আলোচনা আপাতত তোলা থাক। এআই কেন মিথ্যা বলে সেটাই বরং দেখা যাক।
সুইডিশ গবেষক ম্যাটিয়াস রোস্ট জানিয়েছেন, মিথ্যা বলাটা চ্যাটবটের প্রকৃতিগত অভ্যাসের মধ্যেই রয়েছে। চ্যাট জিপিটি, বার্ড বা পাইয়ের মতো চ্যাটবটগুলো চোখের নিমেষে যেভাবে নানা মুশকিল আসান করে দেয় তা যেন প্রায় ম্যাজিকের মতোই। কঠিন পাঠ্যের সারসংক্ষেপ, সভার কার্যবিবরণী ও সাক্ষাৎকারের জন্য মানসম্পন্ন প্রশ্ন তৈরি করা বা রাতের খাবারের টিপস দেওয়ার মতো দৈনন্দিন কাজসহ হেন বিষয় নেই, যাতে সাহায্য করছে না।
তবে প্রায়ই এই বটগুলো পাগলাটে আচরণ করে। চ্যাটবটগুলো মনগড়া রেফারেন্স, ব্যক্তি বা ঘটনা তৈরি করে সেগুলোকে সত্যি হিসেবে উপস্থাপন করতে পিছপা হচ্ছে না। কিন্তু কী কারণে তা করছে এআই? এগুলো কি ইচ্ছাকৃত? হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রম তৈরির সচেতন প্রয়াস, নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু? এসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন একদল গবেষক।
এই সময়ের বহুল আলোচিত প্রযুক্তি চ্যাটবট হলো একটি কম্পিউটার প্রগ্রাম, যাকে টাইপ করে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা যায়। এটি এমনভাবে উত্তর দেবে, যা সাধারণত শুধু একজন মানুষের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব।
এগুলোকে এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক পরিষেবা দেওয়া বা ব্যক্তিগত সহকারীর কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিছু চ্যাটবট ‘জেনারেটিভ এআই’-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এদের বিপুল পরিমাণে ডাটার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শেখানো হয় নানা প্যাটার্ন ও কাঠামো শনাক্ত করা। সেই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান দিয়ে এআই ঠিক মানুষের মতো করেই টেক্সট, চিত্র, শব্দ বা ভিডিওজাতীয় নতুন আধেয় তৈরি করতে পারে।
সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ম্যাটিয়াস রোস্ট ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বটগুলো মূলত একটি বাক্যে প্রতিটি শব্দের পরবর্তী শব্দটি কী হতে পারে তা ঠিক করে অ্যালগরিদমের কায়দা প্রয়োগ করে। এটি হিসাব কষে মেমোরিতে জবাবের একটি তালিকা তৈরি করে এবং তার ভিত্তিতে দৃশ্যত সেরা বিকল্পটি বেছে নেয়। এটি অনেকটা মোবাইল ফোন বা ই-মেইলে কিছু লেখার সময় পরবর্তী সম্ভাব্য শব্দটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসার মতো। প্রভাষক ম্যাটিয়াস রোস্ট আরো বলেন, ‘চ্যাটবটগুলোর প্রশিক্ষণ মডেল যত ভালো হবে, এর দেওয়া উত্তরগুলোও তত সহজে বোঝা যাবে। এর অন্তর্নিহিত প্রকৃতিতে এমন কিছু নেই যা উত্তরগুলোকে আরো সঠিক করতে সাহায্য করতে পারে।’ অর্থাৎ বিষয়টি মূলত প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভর করবে।
ঠিক কোন কারণে এআই-পরিষেবাগুলো সব সময় একটি নির্দিষ্ট উত্তর দেয় তা এখনো গবেষকদের কাছেই অস্পষ্ট! তাঁরা সত্যিই পুরোপুরি জানেন না, রোবট ভাষা-মডেল কিভাবে মানুষের মস্তিষ্কের অনুকরণে তাদের উত্তরগুলো নির্বাচন করে থাকে। শিক্ষক ম্যাটিয়াস রোস্ট বলেন, ‘সব সময় হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রম তৈরি করা বটগুলোর গঠনপ্রকৃতিতেই নিহিত। আর এটা অবাক করার মতোই বিষয় যে কোনো এক বিচিত্র কারণে বটের উত্তরগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়।’
এআই-সংক্রান্ত হোয়াইট হাউসের নির্দেশিকা তৈরিতে যুক্ত ছিলেন আমেরিকান ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক সুরেশ ভেঙ্কটসুব্রামনিয়ান। তিনি বলেন, ‘এটি একটি আজব বিষয়ই বটে যে চ্যাটবটগুলো এমন সব উত্তর দিতে পারে, যা কোনো না কোনোভাবে সঠিক! তিনি বলেন, “কেউ যদি চ্যাটবটকে কিছু জিজ্ঞাসা করে, তাহলে তার ‘আমি জানি না’ বলার অনুমতি নেই। একে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে অর্থপূর্ণ বলে মনে হলে প্রশ্ন যা-ই হোক না কেন, তার এক রকম উত্তর তাকে দিতেই হবে। গত গ্রীষ্মে একজন মার্কিন আইনজীবীকে মামলা প্রস্তুত করার জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কারণ ঘটনাটিতে চ্যাটবট এমন সব কথিত অতীত মামলার রেফারেন্স দিয়েছিল, যেগুলো আসলে অস্তিত্বহীন।”
সম্পর্কিত খবর

২০৪৫ সালের মধ্যে ৩ পেশা বাদে সবাই চাকরি হারাবে : গবেষক
অনলাইন ডেস্ক

এআই গবেষণায় উন্নতির সূচনালগ্ন থেকেই অনেকেই এমন আশঙ্কা করে আসছেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি তাহলে সবার চাকরি কেড়ে নেবে? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনটাই সত্য বলছেন এআই গবেষকরা। এক এআই গবেষকের দাবি, ২০৪৫ সালের মধ্যেই মানুষের প্রায় সব কাজই কেড়ে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে থেকে যাবে তিনটি কাজ।
অ্যাডাম ডর নামের ওই বিশেষজ্ঞ ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে সব চাকরি হারাতে হবে।
ডরের হুঁশিয়ারি, ভাবতে পারেন এমন যন্ত্র ইতোমধ্যেই চলে এসেছে।
এদিকে এআই এর গডফাদার খ্যাত জিওফ্রে হিন্টন এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার যে ব্যাপকভাবে বেড়েছে, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর জেরে চাকরির বাজারে সংকট তৈরি হবে এটা ঠিক, তবে তার সঙ্গে চাকরির বিকল্প রাস্তাও খুলে যাবে, এটাও অস্বীকার করার জায়গা নেই।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

ক্রোমের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিতে পারে ওপেনএআইয়ের যে ব্রাউজার, কবে আসছে
অনলাইন ডেস্ক

চ্যাটজিপিটির তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই নিয়ে আসছে নতুন ব্রাউজার। এআই চালিত এই ওয়েব ব্রাউজার লঞ্চ হওয়ার পূর্বেই গুগলের অন্যতম দাপুটে ব্রাউজার ক্রোমের বিরুদ্ধে বড়সড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে চলেছে। ব্রাউজারটি শুধু সার্ফিংয়ের অভিজ্ঞতাই বদলে দেবে না, বরং ব্যবহারকারীর পক্ষ থেকে নানা কাজ নিজে থেকেই করতে পারবে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই ব্রাউজার বাজারে আসতে চলেছে বলে জানিয়েছে তিন ঘনিষ্ঠ সূত্র।
বিশ্বজুড়ে ৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বর্তমানে গুগল ক্রোম ব্যবহার করেন। ব্রাউজারটি গুগল প্যারেন্ট কম্পানি অ্যালফাবেট-এর বিজ্ঞাপন ব্যবসার একটি বড় অংশ। কারণ, ক্রোম ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেখাতে সাহায্য করে, যা কম্পানির রাজস্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ।
কেমন হবে এই ব্রাউজার
সূত্র জানিয়েছে, ওপেনএআই-এর এই ব্রাউজার তৈরি হচ্ছে গুগলেরই ওপেন সোর্স প্ল্যাটফরম ক্রোমিয়ামের ওপর ভিত্তি করে। একই প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে তৈরি হয় মাইক্রোসফট এজ এবং অপেরা মতো অন্যান্য ব্রাউজারও। নতুন ব্রাউজারে কম্পানিটির এআই এজেন্ট যেমন ওপারেটরকে সরাসরি কাজে লাগাতে পারবে। যা ব্যবহারকারীর হয়ে ফর্ম পূরণ করা, রিজারভেশন বুক করা কিংবা ই-মেইল লেখা—এই ধরনের কাজ করে দিতে পারবে।
গত বছর মার্কিন আদালত গুগলের বিরুদ্ধে অনলাইন সার্চে অবৈধ একচেটিয়া দখলের অভিযোগে রায় দিয়েছিলেন। মার্কিন বিচার বিভাগ ক্রোম বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানায়। যদিও গুগল সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে চায়। এমন সময়ে ওপেনএআই-এর নিজস্ব ব্রাউজার আনার পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, ওপেনএআই ইতোমধ্যেই অ্যাপলের প্রাক্তন ডিজাইন প্রধান জনি ইভ-এর এআই ডিভাইস স্টার্ট-আপ ‘আইও’ কিনে নিয়েছে।
সূত্র : দ্য ওয়াল

ইন্টারনেট ছাড়াই চলবে মেসেজ আদান-প্রদান, আসছে ভিন্ন এক প্ল্যাটফরম
অনলাইন ডেস্ক

বর্তমানে আমরা মেসেজ আদান-প্রদানের জন্য ইন্টারনেটের ওপরই ভরসা করে থাকি। মোবাইল নেটওয়ার্ক-নির্ভর সাধারণ মেসেজ পাঠানোর ব্যবস্থা এখন অতীত। কারণ মেসেজ এখন আর শুধুই শব্দনির্ভর নয়। এতে থাকে বহু ছবি, ভিডিও কিংবা লিংক বা অন্যান্য অ্যাটাচমেন্ট।
তবে এবার আসছে ভিন্নতর প্ল্যাটফরম। মেসেজ পাঠাতে মোটেই লাগবে না ইন্টারনেট! সামাজিক মাধ্যম টুইটার (বর্তমান এক্স)-এর উদ্ভাবক জ্যাক ডরসির হাত ধরেই বাজারে আসছে অ্যাপটি।
ইন্টারনেট নয়, ব্লুটুথ ব্যবহার করেই এখানে পাঠানো যাবে মেসেজ। তবে মেসেজ প্রাপককে থাকতে হবে প্রেরকের ৩০০ মিটারের মধ্যে। টরেন্ট যেভাবে দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান-প্রদান করে সেভাবেই বিটচ্যাট ডেটা লেনদেন করবে।
কিভাবে কাজ করবে এই বিটচ্যাট
জানা যাচ্ছে স্টোর অ্যান্ড ফরোয়ার্ড মডেল হিসেবে কাজ করবে এই প্ল্যাটফর্ম। যতক্ষণ সেই ইউজার ‘অ্যাভলেবল’ থাকবেন ততক্ষণ মেসেজটি সেখানে স্টোর থাকবে। আর এ ক্ষেত্রে মেসেজ চালাচালি করতে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ থাকার প্রয়োজন পড়বে না।
পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে মেসেজ থাকবে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড’। আর মেসেজ পাঠাতে কোনো ফোন নম্বর কিংবা ই-মেইল অ্যাড্রেস, কিছুই লাগবে না।
কেন বিটচ্যাটের আগমনকে এত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে
মূলত এই মুহূর্তে পৃথিবীতে ডিজিটাল প্রাইভেসি নিয়ে নানা আশঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নানা ভাবে হ্যাকারদের দাপট কিংবা আরো নানা ফ্যাক্টর রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই বার্তা বিনিময়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেবল তাই নয়, হোয়াটসঅ্যাপের দৌরাত্ম্যের মাঝে বিটচ্যাট চেষ্টা করছে মেসেজিংয়ের এক নতুন দিগন্ত খোঁজার। যেখানে স্থানীয়, অজ্ঞাত ও ইন্টারনেটবিহীন বার্তা বিনিময় করা যাবে।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

১৮ জুলাই বিনা মূল্যে ১ জিবি ইন্টারনেট পাবেন গ্রাহকরা
অনলাইন ডেস্ক

জুলাই আন্দোলন স্মরণে সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগামী ১৮ জুলাই গ্রাহকদের বিনা মূল্যে ১ জিবি ইন্টারনেট দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আজ বুধবার অপারেটরদের এই নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্দেশনা অনুসারে, বিনা মূল্যের এই ডেটার মেয়াদ থাকবে পাঁচ দিন। ৮ জুলাই বিটিআরসি কার্যালয়ে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তৈমুর রহমান বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ের চেতনা, বিশেষ করে ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে, সমুন্নত রাখতে অত্যন্ত আগ্রহী।
অন্য একটি মোবাইল অপারেটরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টেলিকম কম্পানিগুলিকে গ্রাহকদের দেওয়া সব ডেটার ওপর ট্যাক্স দিতে হবে। সরকারের উচিত বিনা মূল্যের ডেটা করমুক্ত হবে কি না এই বিষয়টি স্পষ্ট করা।’
এ ছাড়া অপারেটরদের ট্রান্সমিশন এবং অন্যান্য ডেলিভারি খরচ বহন করতে হবে।
গত বছরের ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়নের সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশজুড়ে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে দেয়।