পুরোদমে সময় দেওয়া শুরু করলেন বিডিরিসাইকেলে।
শুরুতে ঠিক করা হলো শুধু উত্তরায় কাজ করবে বিডিরিসাইকেল। সবই ঠিক ছিল, শুধু ছোট একটা ভুল হয়ে গিয়েছিল সৈয়দ আমীনের। বাজারদরের চেয়ে একটু বেশি দামে কিনে ফেলেছিলেন বাতিল মাল। ফলে যাত্রার শুরুতেই ধাক্কা খেতে হয়েছিল বিডিরিসাইকেলকে। তবে ছোটখাটো ভুল ভ্রান্তি শুধরে নেওয়ায় কিছু দিনের মধ্যেই পরিকল্পিত ছন্দে ফিরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এভাবেই ২০১৮ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করে এই ডিজিটাল ভাঙারি।
কাজ হয় যেভাবে
ধরুন, আপনি বাসা পরিবর্তন করেছেন বা আপনার বাসায় বা অফিসে প্রচুর বাতিল জিনিসপত্র জমে গেছে। আপনি চাইছেন তা বিডিরিসাইকেলের কাছে বিক্রি করতে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে শুধু কষ্ট করে বিডিরিসাইকেলের ওয়েবসাইট http://www.bdrecycle.com/-এ গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। অ্যাকাউন্ট তৈরি করলেই আপনার সামনে একটি পেজ চলে আসবে। ওই পেজটিতে দেখতে পাবেন বিভিন্ন অপশন রয়েছে বাতিল পণ্যের জন্য। যেমন—কী ধরনের পণ্য, বিডিরিসাইকেল কবে এবং কয়টার সময় পণ্য নিতে এলে আপনার সুবিধা হবে, আনুমানিক ওজন কত হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এটি পূরণ করে নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেইসব ভাঙারির ব্যবস্থা করার বাকি দায়িত্বটুকু বিডিরিসাইকেলের। শুধু তা-ই নয়, পণ্য বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর আপনার অ্যাকাউন্ট পেজের হিস্টোরি চার্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে তথ্য উঠে যাবে। আবার পণ্য বিক্রি করার সময় চাইলে দেখে নিতে পারবেন ঠিক কত দিন আগে বিডিরিসাইকেলের সেবা নিয়েছিলেন।
ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও একটি পেজ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। চাইলে সেখান থেকে টুকিটাকি বিষয় জেনে নিতে পারবেন। সাধারণত ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফেসবুকে রেসপন্স করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রক্রিয়াটিকে আরো সহজ করতে নিজস্ব অ্যাপও তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সেবার আওতা
এখনো এক বছর পূর্ণ হয়নি বিডিরিসাইকেলের। শুরুতে শুধু উত্তরাকে কেন্দ্র করে সেবা দেওয়া শুরু করলেও নিজেদের পরিধি বৃদ্ধি করছে প্রতিষ্ঠানটি। উত্তরা ছাড়াও গুলশান ও বনানীর বাসিন্দারা বিডিরিসাইকেলের সেবা নিতে পারবেন।
তবে উত্তরা হলে সব বাতিল পণ্য মিলিয়ে সর্বনিম্ন ১০ কেজি, আর গুলশান-বনানী হলে সব বাতিল পণ্য মিলিয়ে সর্বনিম্ন ৩০ কেজি না হলে অর্ডার নেয় না বিডিরিসাইকেল। এ বিষয়ে সৈয়দ আমীন জানান,“এর চেয়ে কম পরিমাণের পণ্য পরিবহন সেবা দিয়ে কিনে আনলে ব্যবসা করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।”
চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ সমগ্র ঢাকায় নিজেদের সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
কেন বিডিরিসাইকেল
এই প্রশ্নটি মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এর উত্তর হচ্ছে, পরিবেশ রক্ষা। একজন সাধারণ ভাঙারিওয়ালা যখন আপনার বাতিল পণ্য কিনে নিয়ে যায়, তখন কিন্তু সে অনেক কিছুই ঠিকমতো রিসাইকেল করতে পারে না। দিনশেষে গিয়ে ওই সব পণ্যের ঠাঁই হয় মাঠে। এগুলোর অধিকাংশই পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর। অথচ এই ঘটনার ঠিক উল্টোটা হয় বিডিরিসাইকেলের ক্ষেত্রে। সঠিক উপায়ে বাতিল পণ্য রিসেইকেলিং করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
যে কেউ চাইলে বিডিরিসাইকেলের মাধ্যমে বাতিল পণ্য দান করেও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে শুধু সঠিক উপায়ে রিসাইকেলিং করেই নয়, আপনার বাতিল পণ্যের যা মূল্য আসে, সেটির সমপরিমাণ মূল্যের গাছও রোপণ করে দেবে প্রতিষ্ঠানটি।
বিডিরিসাইকেল টিম
সব মিলিয়ে বর্তমানে ছয়জন রয়েছেন বিডিরিসাইকেল টিমে। এদের মধ্যে দুজন অস্থায়ী ও বাকি চারজন স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এই দলের অন্যতম তিন সদস্য হচ্ছেন—সৈয়দ আমীন, সবুজ রহমান, শরিফ। সবুজ রহমান একই সঙ্গে প্রধান নির্বাহী ও হিসাবের দায়িত্বে রয়েছেন, আর শরিফ প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয়ের দিকটি দেখছেন।
বিডিরিসাইকেল সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আমীন বলেন, “বাইরে থেকে দেখতে এটি আর দশটি ব্যবসায়ের মতোই। পুঁজি আছে, বিনিয়োগ রয়েছে, লাভ-লোকসানও রয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানটিকে শুধু অর্থের বিচারে পরিমাপ করলে হবে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানটির ইতিবাচক যে সামাজিক দিক রয়েছে, পরিবেশবান্ধব যে দিকগুলো রয়েছে, সে বিষয়গুলো ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের দেশে বর্তমানে মাত্র ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ পেট বোতল রিসাইকেল করা হচ্ছে। বাকি সিংহ ভাগ পেট বোতলই রিসাইকেল ছাড়া চলে যাচ্ছে মাঠেঘাটে, এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এটি শুধু পেট বোতল নয়, নানা ধরনের ইলেকট্রনিকসের বাতিল পণ্যও এভাবে রিসাইকেলিংয়ের অভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে। আমরা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছি, ডেটা সংগ্রহ করেছি, তারপর কাজ করার জন্য এ ক্ষেত্রটি বেছে নিয়েছি। কারণ এ সেক্টরটি এখনো ঠিকভাবে গোছানো হয়নি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে পুরো পৃথিবীতেই বাতিল পণ্য এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে নানা পদের ব্যবসা গড়ে উঠছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবসার চল শুরু হয়েছে। বিডিরিসাইকেলের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার প্রথম ১০ মাসের মধ্যেই রাজধানীর শুধু উত্তরা, গুলশান ও বনানী এলাকা থেকে প্রায় ৫২ টন বাতিল পণ্য প্রসেস করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তাহলে ভেবে দেখুন, সম্পূর্ণ রাজধানী বা সমগ্র বাংলাদেশে কী পরিমাণ বাতিল পণ্য কোনো প্রকার রিসাইকেলিং ছাড়াই প্রতিনিয়ত পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
এসব কথা চিন্তা করে বিডিরিসাইকেল পরিকল্পনা করছে, ভবিষ্যতে রিসাইকেল করা পণ্যের একটি শোরুম তৈরি করবার। যে শোরুম থেকে স্বল্প আয়ের মানুষ বাজারমূল্যের তিন ভাগের এক ভাগ দামে পণ্য কিনতে পারবেন। এছাড়া, অন্যান্য পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নিজেদের তত্ত্বধানে পেট বোতলের প্রসেসিং শুরু করা।