<p>কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রূপ নেওয়া অসহযোগ আন্দোলনে গণপ্রতিরোধের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগে সাধারণ জনতার মাঝে শুরু হয় গণ-উল্লাস। সারা দেশে, বিশেষ করে রাজধানীতে বিজয় উল্লাস করতে দলে দলে নেমে আসে দেশের সব পেশার সাধারণ মানুষ। এই বিজয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত দেশের তারকারাও। কেউ কেউ নেমে এসেছেন মাঠে। কেউ বা সামাজিক মাধ্যমে দিচ্ছেন বিজয় বার্তা। এবার ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে কথা বলেছেন ওপার বাংলার নায়ক পরমব্রত।</p> <p>কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারে দীর্ঘ এক বার্তা লিখেছেন এই অভিনেতা। এর আগে এক মাস ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তেমন কিছু লেখেননি। এবারই প্রথম নিজের মতামত জানালেন।</p> <p>পরমব্রত লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শেষ অবধি নীরবতা ভঙ্গ করছি! কারণ, এক মাসের কিছু আগে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র আন্দোলনের ওপর সে দেশের সরকার ক্রমাগত যে আক্রমণ চালিয়ে গেছে, তা ন্যক্কারজনক ও বর্বরোচিত তো বটেই, একচ্ছত্র ক্ষমতার মোহে অন্ধ শাসকের মানুষকে তার প্রাপ্য মর্যাদা না দেওয়ার চরম উদাহরণও বটে। আমরা সবাই কমবেশি জানি, এই আন্দোলন সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে শুরু হলেও সরকারের নানা অগণতান্ত্রিক ও একনায়কোচিত পদ্ধতি নিয়ে জমতে থাকা মানুষের রাগ ফেটে বেরিয়ে এই আন্দোলনকে এক বৃহৎ চেহারা দেয়, যা আজ এক চরম পরিণতি পেয়েছে!’</p> <p>হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বহু জায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার খবর পাওয়া যায়। যা নিয়ে বহির্বিশ্বেও নিন্দা চলছে। এ প্রসঙ্গে পরমব্রত লিখেছেন, “এক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি দেখলাম একটি পোস্ট দিয়েছেন, ‘যে মসজিদ থেকে মানুষকে এক হওয়ার ডাক দিয়েছেন, সেই মসজিদ থেকেই সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার ডাক দিন!’ আরেকটি পোস্টে পড়লাম, ‘কালীবাড়ি রক্ষা করছেন মাদ্রাসার ছাত্রেরা।’ সত্যিই ভালো লাগল পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসবের প্রয়োজন পড়ছে কেন?”</p> <p>নিজের দীর্ঘ বার্তায় আগুন ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পরমব্রত লিখেছেন, ‘“বিজয়োল্লাসে মত্ত কিছু মানুষ দেখলাম বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙছেন, গণভবন লুটপাট করছেন। শুনলাম ৩২ নম্বর ধানমণ্ডি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে! কারাগার ভেঙে দেওয়ায় বন্দি পালাচ্ছেন। সাবেক শাসক দলের সংসদ সদস্যদের বসতবাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, এমনকি পিটিয়ে হত্যাও চলছে। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক তথা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাশরাফির বাড়িতেও আগুন লাগানো হয়েছে। ওত পেতে থাকা কিছু স্বাধীনতাবিরোধী, কট্টরপন্থী শক্তি আপনাদের এই অসামান্য আন্দোলন হাইজ্যাক করে ফেলছে না তো? ” </p> <p>বাংলা বসন্তের কথা উল্লেখ করে পরমব্রত লিখেছেন, “বারবার শুনছি ‘বাংলা বসন্ত’ বলা হচ্ছে এই মুভমেন্টকে! মনে পড়ছে ‘আরব স্প্রিং’-এর কথা। আর এ-ও মনে পড়ছে যে সেই বসন্তের ফল অধিকাংশ জায়গায় ভালো হয়নি। কট্টরপন্থী মৌলবাদী শক্তি হাইজ্যাক করেছে সেই মুভমেন্টকে, মধ্যপ্রাচ্য তলিয়ে গেছে গৃহযুদ্ধ ও অশেষ রক্তপাতের গহ্বরে।</p> <p>বাঙালি পরিচয়ে গর্ববোধ করে পরমব্রত বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দেশের মানুষই তৈরি করবেন। সেটাই উচিত এবং সেই সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আমার নিশ্চয়ই নেই। করতে আমি চাইও না! আমি ভারতীয়। কিন্তু যারা আমাকে চেনেন, বিশেষত আমার বাংলাদেশের বন্ধুরা, তারা জানেন, আমার কাছে আমার ‘বাঙালি’ পরিচয়টা কতটা গর্বের! বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অনেক বেশি আত্মিক এবং প্রকৃত অর্থে আত্মীয়তার! টানটা নাড়ির! তাই হয়তো একটু অনধিকারচর্চাই করে ফেললাম! মাফ করবেন!”</p>