<p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেছেন, ‘ছাত্র আন্দোলন ছিল সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই। ৩৬ দিনের আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে শতাধিক ভাই-বোনকে হারিয়েছি। এখন দেশ গঠনের দায়িত্ব আমাদের হাতে। সমতা ও সাম্যের ভিত্তিতে এই দেশ গঠন হবে।’</p> <p>মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্র-জনতার মৈত্রী সফর উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।</p> <p>শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ গালিবের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় হাসিব আরো বলেন, ‘কিছুদিন আগে বাঁধ ছেড়ে দিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারত আমাদের ওপর সংকট চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ছাত্র-জনতার সম্প্রীতির বন্ধনের মাধ্যমে আমরা তার জবাব দিয়েছি। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে- দেশের যে কোনো সংকটে আমরা এক এবং ঐক্যবদ্ধ।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ছাত্র-জনতার সরকার। ভারতের আগ্রাসি ভূমিকা অব্যাহত থাকলে আমরা চুপ থাকব না। আমাদের দাবি, দিল্লির সঙ্গে সব অন্যায্য চুক্তি বাতিল করতে হবে। তবে আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। তা হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে।’</p> <p>সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) সক্রিয় হতে হবে। বিএসএফ গুলি করে মানুষ মারে তখন বিজিবি কেন নিষ্ক্রিয়। ভারতীয় বাহিনী গুলি করতে দেখে না কারা হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ। তারা বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হলে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’</p> <p>চাঁদাবাজি, মাদক, সিন্ডিকেটের সঙ্গে কখনো আপোষ নয়, জানিয়ে হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘দেশের মানুষ যে সমস্যা থেকে মুক্তি চেয়েছে তা চলতে দেওয়া যাবে না। চাঁদাবাজি করলে রুখে দাঁড়াতে হবে। সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে দেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে না। মাদক বন্ধ করা না গেলে এ দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না।’</p> <p>তিনি রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোনো দলের মতের হয়ে নয়, পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষ সেবা চায়। সঠিক সেবা দেওয়ার ইচ্ছে না থাকলে আপনার ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অধিকার নেই।’</p> <p>হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, আমরা তাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করতে পারব না। বৈষম্যহীন আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাধ্যমে শহীদের মর্যাদা রক্ষায় শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব। দেশের যে কোনো সংকট মোকাবিলায় আমরা এক এবং ঐক্যবদ্ধ।’</p> <p>ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরবে না উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক বলেন, ‘ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী সরকারের শাসনের সুযোগে প্রশাসনের রন্দ্রে-রন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনও রয়ে গেছে। আমরা এই ব্যবস্থার বিলুপ্তি চাই। এ জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি।’</p> <p>সভায় ঢাবির সমন্বয়ক আরিফ, শাবিপ্রবির সমন্বয়ক হাফিজুর রহমান, তাবাসসুম জান্নাত, দেলোয়ার হোসেন, ঢাকার সমন্বয়ক আসিফ হোসেন, শাবির শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ফয়সল আহমদ, সিলেট জেলা সমন্বয়ক তারেক আহমদ, আবু সাঈদ, সহ-সমন্বয়ক জুনায়েদ আহমদ প্রমুখ।</p> <p>এর আগে ঢাকা থেকে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে সিলেটে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের যতরপুরের বাসায় যান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই সিলেটে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের সরাসরি গুলিতে নিহত হন তুরাব। তিনি নয়াদিগন্ত ও স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। </p>