<p>একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় ঈদের আগের দিন বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে জেলে গেলেন গৃহবধূ খালেদা পারভীন (৪২)। গ্রেপ্তারের পর উল্লাপাড়া মডেল থানা চত্বরে তিন বছরের শিশুকন্যা ফাতেমাকে রেখে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় মা-মেয়ের কান্নায় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।</p> <p>এগিয়ে আসা অনেককেই চোখ মুছতে দেখা যায়। খালেদা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চর দমদমা গ্রামের দিনমজুর ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী। উদ্দীপন নামের একটি সংস্থা থেকে দুই বছর আগে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি।</p> <p>খালেদা পারভীন উল্লাপাড়া মডেল থানা গেটে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে বলেন, অভাব-অনটনের সংসারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে তিনি দুই বছর আগে উদ্দীপন এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন। তার চার মেয়ে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ে স্থানীয় স্কুলে ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে ফাতেমার বয়স তিন বছর। সংসারের চরম দুর্দিন হওয়ায় স্বামীকে নিয়ে মাস ছয়েক হলো তিনি ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন। এর আগে বেশ কয়েকটি কিস্তিতে তিনি ২০ হাজার টাকার মতো পরিশোধ করেন। সুদ আসল মিলে ১৩/১৪ হাজার টাকা পেত এই ঋণদানকারী সংস্থা। তিনি ভেবেছিলেন পোশাক কারখানায় চাকরি করে ঋণের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করে দেবেন।</p> <p>মঙ্গলবার রাতে তিনি সপরিবারে বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু উদ্দীপন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সিরাজগঞ্জ আদালতে ঋণ পরিষদ না করার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। কিন্তু তিনি তা জানতেন না। বুধবার বেলা ১১টার দিকে উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।</p> <p>ঈদের আগের দিন শিশুকন্যা ফাতেমাসহ পরিবারের লোকজনকে রেখে জেলে যেতে চরম কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু কিছুই করার নেই। এদিকে থানা চত্বরে শিশু ফাতেমাকে রেখে সিরাজগঞ্জ জেলহাজতে যাওয়ার জন্য পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় মা-মেয়ের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।</p> <p>এ ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থা উদ্দীপনের সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঋণ নেওয়ার সময় বার বার লোকজন তাদের অফিসে আসেন। ভালো ব্যবহার করেন। কিন্তু ঋণের কিস্তি অধিকাংশ ঋণ গ্রহিতারা সময় মতো দেন না বা দিতেও চান না। এনজিওর লোকজন তাদের বাড়িতে গেলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।</p> <p>মনিরুল আরো জানান, তারা একটি কম্পানিতে চাকরি করেন। তাদেরকেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। ফলে নিরুপায় হয়ে ঋণ পরিশোধ না করা গ্রহকদের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে হয় তাদেরকে।</p> <p>খালেদা পারভীনের ঈদের আগের দিন গ্রেপ্তার এবং শিশুকন্যাকে ফেলে জেলে যাওয়ার বিষয়টি জেনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু এনজিওর একজন কর্মী হিসাবে তিনিও বড় অসহায়।</p> <p>উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, খালেদা পারভীনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। আদালতের আদেশ মেনেই খালেদা পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে পুলিশের কিছু করার ছিল না।</p>