<p>ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভরত যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি একাডেমিক ভবন দখলে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে হ্যামিলটন হল দখল করে ভবনটির ভেতরে অবস্থান নেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর নিন্দা করে বলেছেন, ‘কাজটি ভুল’।</p> <p>এর আগে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ক্যাম্পাসে নির্মিত তাঁবু সরাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের বহিষ্কার করা শুরু করেছে। স্থানীয় সময় গত সোমবার দুপুর ২টার মধ্যে তাঁবু ছেড়ে না গেলে বিক্ষোভকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে পড়তে হবে বলে এর আগে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী ওই স্থানে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অস্টিনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে চলমান আরেকটি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ থেকে দশ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।</p> <p>সেখানকার কর্মকর্তারা বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা তাঁবু সরানোর নির্দেশনা আমলে নেননি। কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের থাকার জায়গাগুলোতে ‘বেসবল আকারের পাথর’ পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষের ধারণা, বেশির ভাগ বিক্ষোভকারীরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই। চলতি মাসে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের আরেকটি অস্থায়ী শিবির উচ্ছেদ করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।</p> <p>বর্তমান পরিস্থিতিতে নিউ ইয়র্কের সর্ব উত্তরের এই অভিজাত আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয় কলাম্বিয়ার কর্তৃপক্ষের ওপর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কিংবা সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ বাড়ছে। এ ব্যাপারে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘কলাম্বিয়ায় যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ অপমানজনক। ক্যাম্পাসটিতে এখন ইহুদিবিদ্বেষী ছাত্র ও শিক্ষক ছড়িয়ে পড়েছে।’বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘ক্যাম্পাসে আসন্ন লকডাউন বা উচ্ছেদের গুজব নাকচ করে শিক্ষার্থীদের বলেছে, এখন পুলিশ ডাকার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।</p> <p>স্থানীয় সময় সোমবার সকালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনুশ শফিক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এসব ক্যাম্প সরানোর একটি উপায় খুঁজে বের করার জন্য গত বুধবার থেকে একাডেমিক প্রধানদের একটি ছোট দল ছাত্রসংগঠকদের সঙ্গে আলোচনা করছে। তবে দুঃখজনকভাবে আমরা কোনো সমঝোতায় আসতে পারিনি। সংগঠকদের একটি চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘনের কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’</p> <p>শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যদি স্থানীয় সময় দুপুর ২টার মধ্যে স্বেচ্ছায় আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে তাদের সেমিস্টার শেষ করার অনুমতি দেওয়া হবে।<br /> তবে ওই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষর্থীদের বহিষ্কার করা শুরু করেছে ও সাময়িকভাবে তাদের ক্যাম্পাস থেকে নিষিদ্ধ করেছে। বিক্ষোভকারী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম কলাম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন। সংগঠনটি এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ অমান্য করার অঙ্গীকার জানিয়ে বিক্ষোভকারীদের ‘ক্যাম্প রক্ষা’ করার আহবান জানিয়েছে।</p> <p>নিউ ইয়র্কের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন গাজায় যুদ্ধ ও ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন নিয়ে দেশটিতে চলমান বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ১৮ এপ্রিল ক্যাম্পাসের কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে নির্মিত একটি অস্থায়ী শিবিরে অভিযান চালিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনার পর বিক্ষোভকারীরা আরো দ্বিগুণ উদ্যমে নতুন করে তাঁবু খাটাতে শুরু করেন।</p> <p>শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি, ইয়েল, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন ও মিনেসোটা ইউনিভার্সিটিতেও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ হচ্ছে। </p> <p><strong>সূত্র : বিবিসি</strong></p>