<article> <p>প্রায় পৌনে চার শ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বড় শরীফপুর মসজিদ। অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধেরও ১০০ বছর আগে! কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা। মোগল আমলে চুন-সুরকিতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রতিদিনই ভিড় জমায়। অনেকে নামাজ আদায়ও করে।</p> </article> <article> <p>বাইশগাঁও ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামে ১৬৫৭ সালে নির্মিত হয়েছিল মসজিদটি। স্থাপনাটির সীমানা মনোহরগঞ্জ উপজেলায় পড়লেও এটি তিন জেলার মোহনায় অবস্থিত। এর পাশেই পড়েছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা এবং দক্ষিণে কিছুদূর গেলেই নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা। মসজিদ লাগোয়া স্থানে রয়েছে ৩৫.২৯ একর আয়তনের বিশাল নাটেশ্বর দিঘি।</p> </article> <article>মসজিদের অবস্থান দিঘির পারেই। সেখানে রয়েছে হজরত সৈয়দ শাহ শরীফ বাগদাদী নামের এক সুফিসাধকের মাজারও। বড় শরীফপুর মসজিদের বাইরের দৈর্ঘ্য ১৪.৪৮ মিটার ও প্রস্থ ৫.৯৪ মিটার। আয়তাকার মসজিদ ভবনের ওপরে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। পূর্ব দিকের অংশে আছে তিনটি খিলানযুক্ত দরজা। কেন্দ্রীয় দরজাটি অপেক্ষাকৃত বড়। দরজাগুলোর বিপরীত দিকে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। মসজিদের চার কোণে চারটি বড় মিনার। মাঝের বৃহৎ প্রবেশপথের ওপরও দুটি মিনার রয়েছে।</article> <article> <p>গম্বুজের ভেতরের অংশ পাতার নকশায় সজ্জিত। এ ছাড়া বাইরের অংশেও রয়েছে নকশার কাজ। মসজিদের সামনের দেয়ালে আছে ফারসি ভাষায় লেখা শিলালিপি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, হায়াতে আবদুল করিম নামের এক ব্যক্তি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হায়াতে আবদুল করিমের পরিচয় নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দুটি মত রয়েছে। এর একটি হচ্ছে—তিনি নাটেশ্বর নামের এক রাজার কর্মকর্তা ছিলেন। আর অন্যটি হচ্ছে—হায়াতে আবদুল করিম ছিলেন দিঘির পারে যাঁর সমাধি, সেই সৈয়দ শাহ শরীফ বাগদাদী নামের পীরের মুরিদ।</p> <p>মসজিদটি পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, নাটেশ্বর রাজা এখানকার দিঘিটি খনন করেন বলে মনে করা হয়। এ কারণেই দিঘিটি তাঁর নামানুসারেই নাটেশ্বর দিঘি নামে পরিচিত। বড় শরীফপুর মসজিদের ভেতরে ও বাইরে মিলিয়ে পাঁচ শর বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে বলে জানান তিনি।</p> <p>কুমিল্লার ইতিহাসবিদ ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, দিঘির পারে যাঁর মাজার সেই অলি বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য এই অঞ্চলে এসেছিলেন বলে মনে করা হয়। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে তাঁর অনেক ভক্ত রয়েছে। এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে তাঁর অবদান অনেক। আহসানুল কবীর বলেন, তাঁর গবেষণা মতে কুমিল্লায় ১৬৫৮ সালে সর্বপ্রথম শাহসুজা মসজিদটি নির্মিত হয়। সে বিবেচনায় বড় শরীফপুর ও শাহসুজা মসজিদ দুটি সমসাময়িক।</p> <p>বাইশগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। পৌনে চার শ বছর আগে এমন সুন্দর ও সুনির্মিত মসজিদ নির্মাণ হওয়া থেকে মনে হয়, ওই সময় এ অঞ্চলে ইসলামের বেশ প্রসার ঘটেছিল।’ </p> <p>স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল মজিদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখছি মসজিদটি আগের মতোই সুন্দর। বহু মানুষ এটি দেখতে ও নামাজ পড়তে আসে।’</p> <p>প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের (কুমিল্লা কার্যালয়) আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান বলেন, ‘বড় শরীফপুর মসজিদটি কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন একটি মসজিদ। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সংরক্ষিত। তিন জেলার মোহনার এ মসজিদ, দিঘি ও মাজারকে ঘিরে একটি প্রত্নপর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।’</p> </article>