<p style="text-align: justify;">প্রায় ২৩০ বছর আগে মোগল আমলের বিশেষ স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত হয়েছিল কাজীর মসজিদ। এর আদি অংশটির স্থাপত্যশৈলীতে মোগল ঐতিহ্যের ছাপ স্পষ্ট। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন মসজিদটি দেখতে আসেন। প্রচলিত বিশ্বাস থেকে মনোবাসনা পূরণের আশায় অনেকে মানত করে দানও করেন।</p> <p style="text-align: justify;">কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে দলদলিয়া ইউনিয়নের দলবাড়ীর পাড় গ্রামে অবস্থিত কাজীর মসজিদ। স্থাপনাটি প্রায় দেড় একর জমিতে অবস্থিত। মসজিদের পুরনো ভবনটি চার গম্বুজবিশিষ্ট শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো। এই ভবনের দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট ও প্রস্থ ১৩ ফুট।</p> <p style="text-align: justify;">দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় আড়াই ফুট। কালের প্রবাহে মসজিদটির কিছু অংশ মাটিতে দেবে গেছে। মসজিদের মধ্যে একটি ছোট মেহরাব রয়েছে, জুমার দিন খতিব সেখান থেকে বয়ান পেশ করেন। ছোট মূল মসজিদটির ভেতরে এখন ১৫ থেকে ২০ জন একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।</p> <p style="text-align: justify;">উলিপুরের সাবেক ইউএনও   সৈয়দ আবু রায়হান লিখিত ‘উলিপুরের ইতিহাস ও লোকসাহিত্য’ বইতে বলা হয়েছে, ১২১৪ হিজরি সনে পারস্য (প্রাচীন ইরান দেশ) থেকে কাজী কুতুব উদ্দিন নামের একজন ধর্মযাজক ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য এই অঞ্চলে এসে মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি এলাকায় ধর্ম প্রচারের সময় মুসল্লিদের নিয়ে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। কাজী কুতুব একসময় এলাকা থেকে চলে যান। তার পরেও এলাকার মুসল্লিরা দীর্ঘ সময় ছোট মসজিদটিতে নামাজ আদায় করেন। কাজী কুতুব উদ্দিনের নাম থেকেই মসজিদটির নাম হয়ে যায় কাজীর মসজিদ। ধীরে ধীরে নানা কারণে এটি পরিত্যক্ত হয়ে ঝোপ-জঙ্গলে ঢেকে যায়।</p> <p style="text-align: justify;">৫০ বছর ধরে মসজিদের প্রধান খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা মাওলানা আবদুস সবুর বলেন, ‘যতটুকু জানি, প্রাচীন মসজিদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। একসময় এলাকার লোকজন মসজিদটি আবিষ্কারের পর এর সংস্কার করেন।’</p> <p style="text-align: justify;">আদি মসজিদের প্রবেশপথে একটি ফারসি ভাষার শিলালিপি রয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে, পবিত্র কালেমার বাণী। আর লেখা প্রতিষ্ঠাকাল হিজরি ১২১৪ সন। মসজিদের পূর্বদিকে শানবাঁধানো অনেক পুরনো একটি পুকুর রয়েছে। ২০০৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কাজীর মসজিদটি অধিগ্রহণ করে।</p> <p style="text-align: justify;">এখন প্রতি শুক্রবার স্থানীয়  ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন বিভিন্ন মানত (নগদ টাকা, চিনি, গুড়, পায়েস, খোরমা, জিলাপি, খিচুড়ি, হাঁস-মুরগি, ছাগল, চাল, ডাল ও ধর্মীয় বই) নিয়ে এসে মসজিদ কমিটির হাতে তুলে দেন। মানতকারীদের মধ্যে মুসলমানের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষও থাকেন।</p> <p style="text-align: justify;">মুসল্লি বেড়ে যাওয়ায় আদি মসজিদের পাশেই আধুনিক ধাঁচে দোতলা একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতি সপ্তাহের দান ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মূল মসজিদটি ঠিক রেখে পাঁচতলার ভিত্তি দিয়ে নতুন ভবনটি তৈরি করা হয়েছে।</p>