<p>আম মৌসুমে গত তিন বছর যাবৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন সার্ভিস চতুর্থ মৌসুমেও উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনটি উদ্বোধন করবেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এমপি।</p> <p>আজ মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'ট্রেনটি উদ্বোধন ও সফলভাবে পরিচালনা করতে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই ট্রেন স্বল্প খরচে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে  আম সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করবে।'</p> <p>পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক (ডিসিএম) নাসিরুদ্দিন বলেন, '২০২০ সালে  করোনাকালে প্রথম ৫জুন থেকে ২১ জুলাই এই ট্রেন পরিচালনা করা হয়। সে বছর ৪৭দিনে ৮লক্ষ ৫৬ হাজার ৬৮২ কেজি আম পরিবহন হয়। রেলের আয় হয় ৯ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৭৯ টাকা। ২০২১ সালে ২৭ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৫০ দিনে আম পরিবহন হয় ২২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯২০ কেজি। রাজস্ব আয় হয় ২৬ লক্ষ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা। এ বছরই সবচাইতে বেশিদিন ট্রেন চলে, আম পরিবহন হয় ও আয় হয়। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৩ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত মাত্র ১১ দিন ম্যাংগো স্পেশাল চলে। আম পরিবহন হয় ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫৯৮ কেজি। আয় হয় ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ২৬৫ টাকা।'</p> <p>তিনি আরো বলেন, 'শুধু আয় চিন্তা করেই রেলের সকল সার্ভিস দেওয়া হয় না। সেবা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়। কোনো সার্ভিসের আয়ের হিসেব তাদের দপ্তর করে। তবে কোন সার্ভিস কখন থেকে পরিচালিত হবে তা দেখবে রেলের পরিকল্পনা বিভাগ। সামনে কোরবানি ঈদ। ঈদে সড়কে চাপ কমাতে পণ্য পরিবহন নিরুৎসাহিত করা হয়। কাজেই যতদিন চাহিদা থাকবে ততদিন এই ট্রেন চলবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলে বর্তমানে পণ্যবাহী ওয়াগনের ঘাটতি নেই। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আপাতত: ৫টি ওয়াগন দিয়ে ট্রেন চালু করা হবে। চাহিদা অনুযায়ী ওয়াগন সংখ্যা বাড়ানো হবে। পণ্য পরিবহন ভাড়া বিগত বছরগুলির সমান অর্থাৎ অপরিবর্তিত থাকবে।'</p> <p>চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন মাস্টার ওবাইদুল্লাহ বলেন, 'ট্রেনটি কোনো ছুটি ছাড়াই সপ্তাহের প্রতিদিন বিকেল ৪টায় জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর স্টেশন ছেড়ে জেলার নাচোল, নাচোলের নিজামপুর, জেলার সদর উপজেলার আমনুরা জংশন হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন, এরপর সদর উপজেলার আমনুরা বাইপাস, রাজশাহীর কাঁকনহাট হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজশাহী স্টেশন ছেড়ে রাত ১২টা ১৫ মিনিটে জয়দেবপুর, রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ঢাকা এয়ারপোর্ট ও রাত ১টা ১৫ মিনিটে শেষ গন্তব্য ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছবে। আরেকটি ট্রেন রাত ৩টায় ঢাকা ছেড়ে পরের দিন দুপুর ২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপর পৌঁছবে। অর্থাৎ একজোড়া ট্রেন চলবে। ট্রেননি সফলভাবে পরিচালনা করতে জেলায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের সাথে সভা করে প্রচারণা চলছে।'</p> <p>তিনি আরো বলেন, 'ট্রেন আম বা যে কোন কাঁচামাল বা যে রেলওয়ে আইনে পার্সেল হিসেবে গণ্য যেকোনো পণ্যের ভাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সকল স্টেশন থেকে জয়দেবপুরসহ ঢাকার সকল স্টেশনের জন্য ১টাকা ৩০ পয়সা প্রতি কেজি। যা রাজশাহীর সকল স্টেশনের জন্য ১টাকা ১৭ পয়সা প্রতি কেজি। এছাড়া রেলওয়ের নিজস্ব কুলির জন্য খরচ নির্ধারিত।'</p> <p>ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে গত তিন বছর যাবৎ ঢাকায় আম পরিবহন করছেন সদর উপজেলার আম ব্যবসায়ী আহাদ বিশ্বাস। তিনি ও ট্রেনে আম পরিবহনকারী অন্য ব্যবসায়ীরা বলেন, সার্ভিসটি কুরিয়ারের চেয়ে ভালো ও সাশ্রয়ী। কুরিয়ারে কখন আম পৌঁছবে তা নিশ্চিত নয়। এছাড়া আম যত্মে যায় না। তবে তারা ফোন করে খবর দেয়। এছাড়া ট্রেনের আরেকটি সমস্যা শুধু শুরুর ও শেষের দুই স্টেশন পর্যন্ত আম আনা ও নেওয়ার বাড়তি বিষয়টি। তবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, অনলাইন আম ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি পর্যায়ে সার্ভিসটি ভালো। ক্রমান্বয়ে এটি জনপ্রিয় হবে। তবে এটি আরো পূর্বে চালু হলে ভালো হত।</p>