<p>রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ মঞ্চে নেতাকর্মীদের চাপে তিল ধারণের যেন জায়গা ছিল না। গাদাগাদি করে নেতা, পাতি নেতা ও সমর্থকদের অবস্থান ছিল সমাবেশের শুরু থেকেই। সকাল সাড়ে ৯টায় গণসমাবেশ শুরুর পর থেকে রাজশাহী ঐতিহাসিক মাঠে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে সমাবেশ মঞ্চেও শুরু থেকেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মাঠে মিছিলসহ নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুর ২টার মধ্যে মাঠ প্রায় ভরে যায়।</p> <p>কিন্তু ২টার পর থেকেই মাঠ আস্তে আস্তে ফাঁকা হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে দলটির মহাসচিব ও সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগেই মাঠের অর্ধেক প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। যা দেখে কেন্দ্রের অনেক নেতারই ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঞ্চে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ ১টার দিকে ওঠার পরে তারও জায়গা হচ্ছিল না। নেতা-পাতি নেতা, এমনকি কর্মী-সমর্থকরাও ভিড় করতে থাকেন মঞ্চে। এতে রাজশাহী ও আশপাশের জেলা থেকে আসা নেতারা কে কোথায় বসবেন, তা নিয়েও দেখা দিয়েছিল মনোমালিন্য। এর মধ্যে আবু সাইদ মঞ্চে গেলে তার বসার জায়গা না পেয়ে কয়েকজনকে সরানোর চেষ্টা করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এ সময় সাইদের সঙ্গে তাদের হালকা ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। মঞ্চের দক্ষিণ পাশে যে যার মতো বসেছিলেন চেয়ারের নিচে। আবার অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন মঞ্চে। ফলে গোটা মঞ্চ মিলে অন্তত ৪০০ নেতাকর্মী ‘ঠাঁই’ নেন। তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছবি, সেলফি তোলাতেই ব্যস্ত সময় পার করেন। অনেকে নেতাদের বক্তব্যের সময় ডায়াসের সামনে গিয়ে সেলফি তোলেন।</p> <p>এতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় মঞ্চের নিচে অবস্থান করা নেতাকর্মীদের। আজগর হোসেন নামের এক কর্মী মঞ্চের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকেন, ‘দেখেন দেখেন কী একটা অবস্থা! যেন এরা সবাই নেতা। কিন্তু অনেকেই ওয়ার্ড পর্যায়েরও নেতা নয়। হয়তো বিএনপির কর্মী বা সমর্থক। নেতাদের সঙ্গে এসে মঞ্চে উঠে ছবি তুলতে ব্যস্ত। মঞ্চে কারো যেন কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। এভাবে যদি এতটুকু জায়গা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে আগামীতে ক্ষমতায় এলে এরা কী করবে?’</p> <p>গণসমাবেশের উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষ মুক্তি চায়। তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতির কাঠামোকে হত্যা করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই সরকার আন্দোলন করেছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বন্ধ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এ সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধী দলকে নির্মূল করে দিতে চায়। এতে কি নির্মূল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেয়েছে? পায়নি। আরো উত্তাল হয়ে জেগে উঠেছে। এ লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।’</p> <p>শনিবার সকালে রাজশাহী নগরীর ফায়ার সার্ভিস মোড় সংলগ্ন হাজী মুহম্মদ মুহসীন স্কুল মাঠে (মাদরাসা মাঠে) আসতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।</p> <p>এ ছাড়া বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিনা রহমান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহসাংগঠিনক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন সওকত ও ওবাইদুর রহমান, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বগুড়ার এমপি গোলাম মাহমুদ সিরাজ, এমপি মোমাররফ হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ বক্তব্য দেন। </p>