<p>বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে খাবার অপচয়ও। ২০২২ সালে ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হয়েছে বিশ্বজুড়ে, যা বিশ্ববাজারে আসা উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এমন চিত্র উঠে এসেছে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে। এতে বাংলাদেশের চিত্রও উঠে এসেছে।</p> <p>বলা হয়, একজন বাংলাদেশি বাসাবাড়িতে বছরে ৮২ কেজি খাদ্য অপচয় করে, যা একজন আমেরিকান, ডাচ বা জাপানিজের চেয়ে বেশি। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিজনে বছরে খাদ্য অপচয় করে ৭৩ কেজি, নেদারল্যান্ডস ৫৯ কেজি ও জাপান ৬০ কেজি।</p> <p>গত বুধবার নাইরোবিভিত্তিক জাতিসংঘের পরিবেশ প্রগ্রাম (ইউএনইপি) ‘খাদ্য অপচয় সূচক প্রতিবেদন ২০২৪’ প্রকাশ করে। এতে দাবি করা হয়, প্রতিবছর বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে এক কোটি ৪১ লাখ টন খাদ্য অপচয় করা হয়।</p> <p>খাদ্য অপচয়ের পরিস্থিতি আগের হিসাবের চেয়ে বেড়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল প্রতিজন বাংলাদেশি বাসাবাড়িতে বছরে ৬৫ কেজি খাদ্যের অপচয় করে। সেই সময় মোট অপচয় ছিল এক কোটি ছয় লাখ টন।</p> <p>বেশির ভাগ খাবার অপচয় হয়েছে বাসাবাড়িতে। খাবার অপচয়ের এ ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে। বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ যখন না খেয়ে আছে, তখন লাখ কোটি ডলার মূল্যের খাবার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে।</p> <p>এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসন বলেন, ‘খাবার অপচয় বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি।’</p> <p>জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের অপচয়ের ঘটনা নৈতিক নয়; বরং ‘পরিবেশগত ব্যর্থতা’। উড়োজাহাজ চলাচল থেকে নিঃসরিত কার্বন যতটা না বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াচ্ছে, তার থেকে পাঁচ গুণ উষ্ণতা বাড়াচ্ছে খাদ্যবর্জ্য।</p> <p>এখন পর্যন্ত বিশ্বে খাবারের অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের সংকলিত দ্বিতীয় প্রতিবেদন এটি। প্রতিবেদনটি তৈরিতে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে অলাভজনক সংস্থা ডাব্লিউআরএপি। খাবার অপচয় নিয়ে এটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র উপস্থাপন করেছে।</p> <p>ডাব্লিউআরএপির কর্মকর্তা রিচার্ড সোয়ানেল বলেন, ‘এটা আমাকে হতভম্ব করে দিয়েছে। আসলে প্রতিবছর দিনে এক বেলায় যত খাবার নষ্ট হয়, শুধু তা দিয়েই বর্তমানে অনাহারে থাকা প্রায় ৮০ কোটি মানুষের সবাইকে খাওয়ানো সম্ভব।’</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে যত খাবার নষ্ট হয়েছে, তার ২৮ শতাংশ নষ্ট হয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন ও হোটেলের মতো খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাগুলোতে। কসাই ও মুদি দোকানে নষ্ট হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ খাবার নষ্ট হয়েছে বাসাবাড়িতে। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন। সোয়ানেল মনে করেন, এ ধরনের অপচয় হওয়ার বড় কারণ, মানুষ তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার কিনছে। এ ছাড়া তারা কতটুকু খেতে পারবে তার আন্দাজ করতে পারছে না। এতে খাবার উচ্ছিষ্ট থেকে যাচ্ছে।</p> <p>সোয়ানেল আরেকটি বিষয়ের কথা বলেছেন। তা হলো মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ। উৎপাদিত খাবার নষ্ট হচ্ছে, কারণ মানুষ ভুলবশত ধারণা করে যে তাদের খাবারের মেয়াদ নেই।</p> <p>প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রচুর খাদ্য অযথাই অপচয় হয়নি; বরং এগুলো পরিবহনের সময় কিংবা রেফ্রিজারেটরের অভাবে নষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটানে প্রতিজনে বছরে অপচয় করে ১৯ কেজি খাদ্য, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। ইন্ডিয়ায় প্রতিজনে অপচয় করে ৫৫ কেজি, শ্রীলঙ্কায় ৭৬ কেজি ও মালদ্বীপে ২০৭ কেজি। মালদ্বীপের অপচয় এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।</p> <p>পাকিস্তানে প্রতিজনে বছরে অপচয় করে ১৩০ কেজি, আফগানিস্তানে ১২৭ কেজি ও নেপালে বছরে প্রতিজনে অপচয় করে ৯৩ কেজি।</p> <p> </p>