<p>দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর খাদ্যপণ্যের সংকটের আশঙ্কায় সুপারশপে কেনাকাটার হিড়িক পড়েছিল। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনেকেই কাঁচাবাজারে না গিয়ে সুপারশপমুখী হয়েছেন। এমন সংকটকালে সরবরাহ ঠিক রেখে দেশের সুপারশপগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে বলে জানালেন এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির। সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সংকটকালে তাই হাসপাতালের মতো সুপারশপেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।</p> <p>তিনি জানান, ২০০৮ সালে এসিআই লজিস্টিকস নিয়ে আসে স্বপ্ন সুপারশপ, আমাদের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ ১৩৮টি আউটলেট রয়েছে। ক্রেতাদের অর্থ সাশ্রয়ের মাধ্যমে স্বপ্নপূরণে সহায়তার প্রত্যয়ে স্বপ্ন এখন দেশের সর্ববৃহৎ রিটেইল চেইন সুপারশপ। আগামী মাসে আরো পাঁচটি আউটলেট খোলার পরিকল্পনা আছে এসিআই গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানটির।</p> <p>সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘মার্চ মাসে দেশে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, ঢাকা শহরের কাঁচাবাজারের বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ গ্রামে চলে গিয়েছিল। সেই সময় ঢাকা শহরের বেশির ভাগ পণ্যের জোগান দিয়েছে সুপারশপ। কিছু কিছু সাপোর্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরাও ই-কমার্স সেবা নিয়ে গ্রাহকের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই সময় সবচেয়ে বড় সাপোর্ট দিয়েছে সুপারশপগুলো।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘করোনাকালে প্রমাণ হলো সুপারশপ মানুষের বিলাসিতার জায়গা নয়। এ রকম সংকটে যেমন হাসপাতাল দরকার তেমনি সুপারশপও। দেশে বছরে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে খুচরা বিক্রি হয়, যেখানে সুপারশপগুলোর বার্ষিক টার্নওভার দুই হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে স্বপ্ন একাই এক হাজার কোটি টাকার অবদান রাখছে বলে জানালেন এসিআই লজিস্টিকসের নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক টার্নওভার আড়াই শ কোটি টাকার মতো ছিল। সেখানে হয়তো করোনায় তাদের টার্নওভার তিন-চার শ কোটি টাকার ওপরে যাবে।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘করোনাকালে আমরা জোগান ঠিক রেখে মূল্যস্ফীতি যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে কর্মী এবং আমাদের ভোক্তাদের সুরক্ষাকেও সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছি। আমাদের প্রত্যেকটি আউটলেটে ক্রেতাদের সুরক্ষায় আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছি।’</p> <p>সাব্বির হাসান নাসির বলেন, করোনাকালে বহির্বিশ্বেও ওয়ালমার্ট, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, টেসকোর মতো বড় সুপারশপগুলো বড় ভূমিকা রেখেছে। অনেকেই মনে করেন, ই-কমার্স জরুরি পরিস্থিতিতে একমাত্র সমাধান, আসলে ব্যাপারটা তা নয়। কোনো দেশেই এখনো পর্যন্ত ই-কমার্সের অবকাঠামো এবং সক্ষমতা এমন পর্যায়ে যায়নি, যেখানে ভোক্তার প্রতিটি পণ্য মান দেখেশুনে বাসায় বসে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। হয়তো মোবাইল ফোন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, কাপড়ের মতো জিনিসগুলো মানুষ ই-কমার্সে কেনে। করোনায় ই-কমার্সে মুদি ও খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। তার মানে এই নয় যে তা সুপারশপকে ছাড়িয়ে গেছে। মানুষ দেখেশুনে জিনিস কিনতে চায়, যার জন্য সুপারশপ এখনো ভরসার জায়গা।</p> <p>তিনি বলেন, মাসে মাসে আমাদের ই-কমার্সে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৫০ শতাংশের বেশি। এ কারণে আমরা ই-কমার্স ব্যবসা ঢেলে সাজাচ্ছি। আগামী ছয় মাসে আমরা ব্যাপক বিনিয়োগ করতে থাকব। সারা দেশে স্বপ্নের ওয়্যারহাউস সম্প্রসারণ, স্টোরে বিনিয়োগসহ আরো জনবল নিয়োগ করব। ক্রেতাকে আরো ভ্যালু দেওয়ার জন্য আমরা এখন বেসিক স্টোরের দিকে বেশি নজর দিচ্ছি।</p> <p>লকডাউন শুরু হওয়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদনের পর বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় কৃষকদের। দীর্ঘ সময় হাট-বাজার বন্ধ থাকায় ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারেনি বলে জানান স্বপ্নের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘করোনায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বপ্ন। এমনকি আমরা গারো সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পণ্য নিয়েছি। গ্রামে লকডাউনের কারণে পণ্য বিক্রি করা যাচ্ছে না, সেখানেও আমরা গিয়ে পণ্য কিনেছি। সুপারশপের সঙ্গে কৃষকের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি আমরা পুরো সাপ্লাই চেইনকে স্বচ্ছ রাখতে পারছি।’</p> <p>করোনায় সুপারশপগুলোর ই-কমার্স ব্যবসার পরিসর বেড়েছে উল্লেখ করে সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘করোনার আগে আমাদের ই-কমার্স সেবাটি ক্ষুদ্র পরিসরে ছিল, যেটা আমরা বেশ উন্নয়ন করেছি। আমাদের ব্যবসার প্রায় ১৫ শতাংশ হোম ডেলিভারি এবং ই-কমার্স দখল করে ফেলেছে। দেশের গ্রোসারি ই-কমার্সে আমরা সম্ভবত দ্বিতীয় বৃহত্তম।’</p> <p>করোনাকালে স্বপ্নের প্রবৃদ্ধি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘করোনায় সুপারশপে ক্রেতার আগমন কম হয়েছে কিন্তু বাস্কেট সাইজ বেড়েছে। করোনা আতঙ্কে ক্রেতারা কম সময় স্টোরে এসে তাড়াতাড়ি বাজার সারতে চেয়েছেন। বারবার বাজার করতে না এসে সব কিছু একবারে কিনতে চেয়েছেন। সে কারণে ক্রেতার সংখ্যা কমলেও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমাদের মার্চে ৫০ শতাংশ, এপ্রিলে ৪০ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ছিল। কিন্তু শপিং আওয়ার বিকেল ৪টা পর্যন্ত করে দেওয়ায় মে এবং জুনে তা কমে যায়। মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে স্বপ্নের যথেষ্ট ভালো অপারেটিং প্রফিট হয়েছে। আশা করছি জুন মাসেও আমরা অপারেটিং প্রফিট করতে পারব। এটা বিরাট আশার কথা।’</p> <p>করোনায় সুপারশপে ক্রেতা চাহিদায় কী কী পরিবর্তন এসেছে জানতে চাইলে সাব্বির হাসান নাসির বলেন, ‘হাইজিন ও সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া নিত্যপণ্য যেমন চাল, পেঁয়াজ, শিশুখাদ্য, নুডলস ইত্যাদির চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক। আর ঘরে থাকায় চাহিদা কমে গেছে শ্যাম্পু, ডায়াপার, কসমেটিকসের মতো পণ্যের।’</p> <p>নতুন বাজেটেও সুপারশপে ক্রেতা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহত আছে, যা করোনাকালে বাড়তি চাপ বলে মনে করেন এসিআই লজিস্টিকসের নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘এই ৫ শতাংশ ভ্যাট উঠিয়ে দিলে ক্রেতাদের কতটা উপকার হতো তা সরকার উপলব্ধি করতে পারেনি। কারণ সবার আয় কমে গেছে।’</p>