<p>আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আমরা এই দেশে জন্মেছি, এই দেশে মরব, পালাব না। কোথায় পালাব! পালাব না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে একটি সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেন তিনি। কিন্তু সেই ওবায়দুল কাদের এখন যেন নিরুদ্দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন এবং তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না।</p> <p>২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। এরপর শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে চলে যান। ধারণা করা হচ্ছে, ওবায়দুল কাদেরও তাঁদের সঙ্গে গেছেন। তবে কেউ কেউ ধারণা করছেন, তিনি দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন। কিন্তু তাঁর সঠিক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। দলের নেতাকর্মীরা পর্যন্ত জানেন না তিনি কোথায় আছেন।</p> <p>ওবায়দুল কাদেরের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাঁর 'পালাব না' বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গান, মিম এবং প্যারোডি তৈরি হয়েছে, যা ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। ওবায়দুল কাদের, যিনি একসময় প্রতিদিন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতেন, তিনি গত আড়াই মাস ধরে কোনো বিবৃতি দেননি।</p> <p><strong>দলের ভেতরে অসন্তোষ</strong><br /> আওয়ামী লীগ নেতারা ও কর্মীরা ওবায়দুল কাদেরের এই আচরণে বিস্মিত এবং অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ছাত্র আন্দোলন এবং সরকারের পতনের পর দলের মধ্যে দোষারোপের সংস্কৃতি শুরু হয়েছে, আর তার কেন্দ্রে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের। দলের ভেতরে অনেকেই বলছেন, ওবায়দুল কাদের তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করে অন্য নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেননি। এখন সেই নেতারা প্রকাশ্যে আসতে চেষ্টা করছেন, আর ওবায়দুল কাদের পুরোপুরি নীরব।</p> <p><strong>গণমাধ্যমে অনুপস্থিতি</strong></p> <p>একসময় গণমাধ্যমে ওবায়দুল কাদের ছিলেন নিয়মিত উপস্থিত। তিনি প্রতিদিন কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতেন, আর তা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হতো। কিন্তু সরকার পতনের পর থেকে তিনি একদমই জনসম্মুখে আসেননি। এমনকি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজেও গত ৫ আগস্টের পর কোনো পোস্ট নেই। সেই পোস্টে তিনি পদ্মা সেতু এলাকায় নিজের কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছিলেন, যা পরে নানা রিয়েক্ট এবং মন্তব্যের জন্ম দেয়।</p> <p><strong>অবস্থান নিয়ে গুঞ্জন</strong></p> <p>ওবায়দুল কাদের কোথায় আছেন তা নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন চলছে। কেউ বলছেন, তিনি ভারতে চলে গেছেন, কেউ বলছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি দেশের মধ্যেই কোনো নিরাপদ জায়গায় আত্মগোপনে আছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারাও তাঁর কোনো খোঁজ দিতে পারছেন না।</p> <p><strong>দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ</strong></p> <p>গত ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাবেক ছাত্রনেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। তাঁরা তখন তাঁর বিরুদ্ধে ‘চাটুকার’ নিয়ে চলার অভিযোগ তোলেন এবং স্লোগান দেন। এই বৈঠকের পরপরই তিনি আর জনসমক্ষে আসেননি।</p> <p>সরকারের পতনের পর থেকে দলের ভেতরে ওবায়দুল কাদেরকে কেন্দ্র করে আলোচনা ও সমালোচনা তুঙ্গে। দলের অনেক নেতা মনে করেন, তাঁর অনুপস্থিতি এবং নীরবতা দলে বিভ্রান্তি ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ এমনকি মনে করছেন, যদি তিনি জনসম্মুখে আসেন, তাহলে তাঁকে নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে।</p> <p>এই পরিস্থিতিতে, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না তিনি নিজে জনসম্মুখে আসেন বা তাঁর অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে, তা শুধু কাদেরের অনুপস্থিতির কারণেই নয়, বরং পুরো দলের নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার অভাবও স্পষ্ট করে তুলেছে।</p>