<p style="text-align: justify;">ইবাদতের পদ্ধতিগত কিছু না কিছু পার্থক্য সব উম্মতেই ছিল, কিন্তু মূল ইবাদত ছিল সবারই অভিন্ন। পূর্ববর্তী কোন জাতির কোরবানি করার পদ্ধতি কেমন ছিল, তার বিশদ বিবরণ পাওয়া না গেলেও কোরআনে প্রত্যেক সম্প্রদায়ে কোরবানির বিধিবদ্ধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য দিয়েছি কোরবানির বিধান। যাতে আল্লাহ তাদেরকে যে চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন তাতে তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ। সুতরাং তোমরা তাঁরই আনুগত্য করো। আর সুসংবাদ দিন বিনীতদের।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৪)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>আদম (আ.)-এর যুগে কোরবানি</strong></p> <p style="text-align: justify;">পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কোরবানি ছিল মানবজাতির পিতা আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কোরবানি। সেখান থেকেই কোরবানির প্রচলন শুরু হয়। আদম (আ.)-এর দুই সন্তান হাবিল ও কাবিল এক মেয়েকে বিয়ে করার ব্যাপারে মতানৈক্য দেখা দেয়। এ সমস্যা নিরসনে শরিয়তের বিধান অনুসারে দুজনকেই আল্লাহর নামে কোরবানি পেশ করতে বলা হলো। হাবিল নিজের খামার থেকে একটি উত্কৃষ্ট মানের দুম্বা এবং কাবিল নিজের ক্ষেত থেকে কিছু সবজি শস্য কোরবানির জন্য পেশ করে।</p> <p style="text-align: justify;">দুজনের মধ্যে হাবিলের উদ্দেশ্য সৎ ছিল বিধায় আল্লাহ তাআলা তাঁর কোরবানি কবুল করেন। তখন কোরবানি কবুল হওয়ার আলামত ছিল, আসমান থেকে আগুন এসে কোরবানির জন্য পেশকৃত বস্তু জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেওয়া। (তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন : সুরা মায়িদা, ২৭তম আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>নুহ (আ.)-এর যুগে কোরবানি</strong></p> <p style="text-align: justify;">মুসলিম ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ.) বর্ণনা করেন, মহাপ্লাবনের দ্বিতীয় বছরের দ্বিতীয় মাসের ২৬তম দিনে নুহ (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে জাহাজ থেকে নামার আদেশ পান। নেমেই প্রথমে তিনি জন্তু জবাইয়ের জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করেন। এরপর সব ধরনের হালাল পশু ও পাখি থেকে বাছাই করে সেগুলোকে আল্লাহর নামে কোরবানির উদ্দেশে জবাই করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১ / ২৭৫)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইবরাহিম (আ.)-এর যুগে কোরবানি</strong></p> <p style="text-align: justify;">ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নযোগে ইসমাঈলকে কোরবানি করতে দেখেন। তাঁকে তাঁর প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিলম্ব না করে তিনি ইসমাঈল (আ.)-কে জবাই করতে নিয়ে যান। তখন জান্নাতি দুম্বা দিয়ে তাঁর কোরবানির বিনিময় দেওয়া হয়। সুরা সাফফাতের ১০১-১০৭ আয়াতে সে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এখানে ইসমাঈলকে কোরবানি করানো উদ্দেশ্য ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল মূলত পিতা-পুত্রের পরীক্ষা নেওয়া।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইলিয়াস (আ.)-এর কোরবানি</strong></p> <p style="text-align: justify;">বনি ইসরাঈলের একটি অংশ মূর্তিপূজায় জড়িয়ে পড়েছিল। তারা বাআল দেবতার পূজা করত। রাজা আখিয়াব ও তার স্ত্রী ইসাবেলের পৃষ্ঠপোষকতা করত। ইলিয়াস (আ.) তাদের জন্য নবী হিসেবে প্রেরিত হন। তাদেরকে একত্ববাদের দাওয়াত দেন। তখন রাজা তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। ইলিয়াস (আ.) দোয়া করেন, ফলে তাদের ওপর নেমে আসে চরম দুর্ভিক্ষ। এ সময় ইলিয়াস (আ.) রাজাকে বলেন, ‘এই দুর্ভিক্ষের একমাত্র কারণ হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত বাদ দিয়ে বাআল দেবতার উপাসনা করা। আল্লাহই একমাত্র সত্য ইলাহ, উপাসনা শুধু তাঁরই জন্য হবে। চলুন, আমরা কোরবানি পেশ করে এর সত্যতা যাচাই করি। আমি আল্লাহর নামে কোরবানি করি। আর আপনার বাআল দেবতার নবীরা তার নামে কোরবানি করুক। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আর তারা দেবতার কাছে দোয়া করুক। যার কোরবানি কবুল হবে, সে-ই সত্য বলে প্রমাণিত হবে।’ রাজা সম্মত হলেন। এরপর কারামেল পাহাড়ে বাআল দেবতার কথিত নবীরা কোরবানি পেশ করে তার কাছে দুর্ভিক্ষ তুলে নেওয়ার দোয়া করল। কোনো কাজ হলো না। এরপর ইলিয়াস (আ.) নিজের কোরবানির জন্তু পেশ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। তখনই আসমান থেকে আগুন এসে তাঁর কোরবানি ভস্ম করে দিল এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমে এলো। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, সুরা সাফফাত ১২৫ নং আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য )</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ইসলাম যুগে কোরবানি</strong></p> <p style="text-align: justify;">শরিয়ত মোতাবেক আমরা যে কোরবানি করে থাকি তা ইবরাহিম (আ.)-এর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর স্মৃতিচারণা এবং ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। হাদিসে এসেছে, ‘একবার কয়েকজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! কোরবানি কী?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।’ সাহাবিরা বলেন, ‘এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান আছে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১২৭)</p>