<p style="text-align: justify;">ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান কোরবানি, যা প্রতিটি সামর্থ্যবান নর-নারীর ওপর ওয়াজিব। মহিমান্বিত এই ইবাদত সন্নিকটে। তাই যাঁরা কোরবানির বাজেট নিয়ে চিন্তা করছেন, তাঁদের উচিত পরিবারের কোন কোন সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা নেওয়া এবং সে অনুযায়ী কোরবানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা।</p> <p style="text-align: justify;">কারণ কোরবানি সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকার কারণে বিভিন্ন সময় এর সঙ্গে অনেক ভুল ধারণাকেও গুলিয়ে ফেলি। তার মধ্যে একটি হলো গৃহকর্তার নামেই কোরবানি দিতে হবে বা সংসারের পুরুষদের নামেই কোরবানি দিতে হবে। বাংলাদেশে অনেক পরিবার এমন আছে, যাদের ঘরের মহিলা বা মেয়েদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, অথচ কোরবানি দেওয়া হয় গৃহকর্তা বা পুরুষ লোকটির নামে।</p> <p style="text-align: justify;">অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিবই হয়নি। আবার অনেক পরিবারে মা-বাবার নামে কোরবানি দেওয়া হলেও তাঁদের অবিবাহিত ছেলে-মেয়ের (যারা শিক্ষা বা বিয়ের জন্য রাখা টাকা বা সোনা দিয়ে সাহেবে নিসাব হয়ে গেছে) নামে কোরবানি দেওয়া হয় না। অথচ তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব।</p> <p style="text-align: justify;">আবার অনেক পরিবারে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এক ভাগে কোরবানি দিচ্ছে, অথচ তার পরিবারে একাধিক লোকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব ছিল, তারা চাইলে এই টাকায় ছোট পশু কিনে সবার পক্ষ থেকে কোরবানি আদায় করতে পারত।</p> <p style="text-align: justify;">এ ধরনের অসামঞ্জস্যের কারণ হলো, আমরা স্পষ্টভাবে জানি না কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব আর কার ওপর ওয়াজিব নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন কারণে মানুষের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব :</strong> একবাক্যে বলতে গেলে, যার ওপর জাকাত ওয়াজিব, তার ওপর কোরবানিও ওয়াজিব। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ওই মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>নিসাব কী :</strong> সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি সোনার মালিক হলেই তাকে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বলে গণ্য করা হবে। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দামের সমপরিমাণ অর্থ বা এমন প্রয়োজনাতিরিক্ত জিনিস, যার দাম সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দামের সমপরিমাণ বা বেশি হয়।</p> <p style="text-align: justify;">কারো কাছে যদি সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা—এগুলোর কোনো একটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না-ও থাকে, কিন্তু প্রয়োজনাতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার দামের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আল-মুহীতুল বুরহানী : ৮/৪৫৫)</p> <p style="text-align: justify;">যেমন—কারো কাছে দুই ভরি সোনা ও ৫০০ টাকা আছে, যার কোনো একটিও পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ নয়। কিন্তু দুই ভরি সোনার দাম ও ৫০০ টাকা একত্র করলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার দামের বেশি হয়ে যায়। তাই তিনি নিসাবের মালিক বলে গণ্য হবেন এবং তাঁর ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।</p> <p style="text-align: justify;">উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, আমাদের দেশে এমন অনেক নারী রয়েছেন, যাঁর ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয় না। আবার এমন অনেক পুরুষ আছেন, যাঁর ওপর মূলত কোরবানি ওয়াজিব নয় (ওয়াজিব তাঁর স্ত্রী বা কন্যার ওপর)। কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকেই কোরবানি দেওয়া হচ্ছে। আছে এমন যুবক-যুবতিও, যার কাছে কোনো না কোনোভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, কিন্তু সে জানেই না যে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। যেহেতু কোরবানি একটি ইবাদত, তাই ওই কোরবানি ওয়াজিব না হওয়া ব্যক্তিটি কোরবানি করার সওয়াব পেয়ে গেলেও মূলত যার ওপর ওয়াজিব ছিল, তাকে অবশ্যই কোরবানি করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">তাই এখনই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার। যাঁরা ধনাঢ্য, তাঁরা চাইলেই পরিবারের সবার পক্ষ থেকে কোরবানি করতে পারেন। কিন্তু যাঁরা মধ্যবিত্ত রয়েছেন, তাঁরা সব দিক চিন্তা করে ঠিক করতে হবে, এ বছর তাঁদের পরিবারে কার কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে। প্রয়োজনে স্থানীয় কোনো বিজ্ঞ আলেমের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা বিষয়টি ঠিক করতে পারি আমাদের আসলে কার কার পক্ষ থেকে কোরবানি করা ওয়াজিব।</p> <p> </p>