<p>নবী-রাসুলরা ছিলেন ক্ষমা, সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতার প্রতীক। তাঁরা ছিলেন ক্ষমার মূর্তপ্রতীক। তাঁদের জীবনী মানবতার জন্য অনুপম দৃষ্টান্ত। এখানে নবী-রাসুলদের ক্ষমাসংক্রান্ত কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো—</p> <p><strong>আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের ঘটনা</strong></p> <p>আদম (আ.)-এর দুই পুত্র কাবিল ও হাবিলের ঘটনা কমবেশি সবার জানা। তাদের ঘটনায় আছে ক্ষমার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুই ভাই আল্লাহর নামে কোরবানি করেছিল। কিন্তু আল্লাহ হাবিলের কোরবানি কবুল করেন। কিন্তু কাবিলের কোরবানি কবুল করেননি। এতে কাবিল ক্ষুব্ধ হয়ে হাবিলকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব।’ হাবিল এর জবাবে বলল, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকওয়াবান বান্দাদের থেকে (কোরবানি) কবুল করে থাকেন। তুমি যদি আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হও, তাহলে আমি তোমাকে পাল্টা হত্যা করতে উদ্যত হবো না। কেননা আমি বিশ্ব জাহানের রব আল্লাহকে ভয় করি।’<br /> (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২৭-২৮)</p> <p>বড় ভাই ছোট ভাইকে হত্যা করেছিল। হাবিল অন্যায়ের বদলে অন্যায় করেনি, বরং সে ক্ষমা ও সহনশীলতা অবলম্বন করেছে।</p> <p><strong>ইউসুফ (আ.)-এর ক্ষমা</strong></p> <p>১০ জন বিমাতা ভাই মিলে আল্লাহর নবী ইউসুফ (আ.)-কে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল। অবশেষে গহিন কূপে তাঁকে নিক্ষেপ করে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। মহান আল্লাহ ইউসুফ (আ.)-কে কূপ থেকে উদ্ধার করে রাজ-ক্ষমতা দান করেন। মহান আল্লাহ তাঁর দিন বদলে দেন। একপর্যায়ে ভাইয়েরা তাঁর কাছে ধরনা দেয়। তাঁর কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়। সাহায্য চাইতে এলে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি, বরং তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। ইউসুফ (আ.)-এর বিমাতা ভাইয়েরা বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমাদের ওপর আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং আমরা অবশ্যই অপরাধী ছিলাম।’</p> <p>ইউসুফ (আ.) বললেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সব দয়ালুর চেয়ে বেশি দয়ালু।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৯১-৯২)</p> <p><strong>মহানবী (সা.)-এর মহানুভবতা</strong></p> <p>মহানবী (সা.) ছিলেন ক্ষমার মূর্তপ্রতীক। তিনি জীবনে বহু প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি ধৈর্যের সঙ্গে তা মোকাবেলা করেছেন। এবং ক্ষমার অনন্য নজির গড়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) অশ্লীলভাষী ও অশ্লীল আচরণকারী ছিলেন না। তিনি হাটে-বাজারে শোরগোলকারী ছিলেন না। আর মন্দের প্রতিশোধ তিনি মন্দের দ্বারা নিতেন না, বরং তিনি ক্ষমা করে দিতেন এবং উপেক্ষা করে চলতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২০১৬)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ক্ষমার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই মক্কা বিজয়ের সময়। যে মক্কাবাসী তাঁকে একে একে ১৬টি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল, সেই মক্কায় তিনি বিজয়ী বেশে প্রবেশ করে শত্রুদের হাতের মুঠোয় পেয়েও ক্ষমা করে দিলেন। তিনি তাদের ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। বিশ্ব ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিজয় হলো মক্কা বিজয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন বলেন, যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি তার ঘরের দরজা বন্ধ রাখবে, সে নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি অস্ত্র ফেলে দেবে, সে নিরাপদ থাকবে এবং যে ব্যক্তি মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ থাকবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০২১)</p> <p>আলী (রা.) আবু সুফিয়ানকে শিখিয়ে দিলেন যে তুমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মুখে গিয়ে সেই কথাগুলো বলো, যা ইউসুফের ভাইয়েরা তাঁকে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে আমাদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং আমরা অবশ্যই অপরাধী ছিলাম।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৯১)</p> <p>আবু সুফিয়ান তা-ই করলেন। আর সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) সেই জবাবই দিলেন, যা ইউসুফ (আ.) তাঁর ভাইদের দিয়েছিলেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি হলেন দয়ালুদের মধ্যে বেশি দয়ালু।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৯২)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের নবী-রাসুলদের গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফিক দান করুন।</p> <p> </p>