<p><em>ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ১৯ দিন অবস্থান করে খবর সরবরাহ করেন সাংবাদিক সামির ইয়োর্দামোভিচ। জেরুজালেম, রামাল্লাহ, নাবলুস, জেনিনসহ বিভিন্ন স্থানে তুরস্কভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন তিনি। দখলদারদের বর্বর নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেন খুব কাছ থেকে। সারায়েভো অফিসে ফিরে সেই ভয়াল চিত্রের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য তাঁর বক্তব্যের ভাষান্তর করেছেন মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ</em></p> <p>ফিলিস্তিন এমন এক স্থান, যেখানে মানবতার মৃত্যু ঘটেছে। এখানে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুর বর্বর আচরণ করা হয়। পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হলেও সংবাদ সরবরাহ করতে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়েছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বাস্তবতা তুলে ধরা। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যা করছে হুবহু ঘটনা পশ্চিম তীরেও ঘটছে। আমি ১২টি জানাজায় উপস্থিত হয়েছি। এর মধ্যে চারটি শিশু রয়েছে, যারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে। ক্যামেরা যখন গাজার দিকে থাকে তখন একই দৃশ্য পশ্চিম তীরে ঘটতে থাকে।</p> <p>সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে আমরা নিজ চোখে দেখতে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। গাজা উপত্যকার পাশে ইসরায়েলের দুটি বসতি সেদিরত ও এসকালান শহরে গিয়েছি। সেখানে ইসরায়েলি সৈনিকরা অবস্থান করছে। ইসরায়েল কিভাবে এখানকার টিলা থেকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে তা দেখাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল।</p> <p>তাদের স্থল অভিযানের প্রস্তুতিও আমরা সরেজমিনে দেখেছি। তবে এ বিষয় স্পষ্ট যে সব কিছু পরিকল্পনামতো হচ্ছিল না। গাজায় আমার বন্ধুদের ধারণ করা ছবি থেকে বোঝা যায়, নারী, শিশু, হাসপাতাল ও চিকিৎসকরাই এখন ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু। পশ্চিম তীরের নাবলুস এলাকায় চিকিৎসাকেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য খাতে দায়িত্বশীল ও সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হামলা করা হচ্ছে। অনেক সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।</p> <p>সেদিরত ও এসকালানের স্থানীয় অধিবাসীদের সবাই সশস্ত্র অবস্থানে রয়েছে। তাদের সবাই সংবাদমাধ্যমের প্রতি প্রচণ্ড রকমের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। অন্যদিকে গাজার অধিবাসীদের কাছে পানি, বিদ্যুৎ ও খাবারের কিছুই নেই। মানবিক সহায়তার কোনো কিছুই তাদের কাছে পৌঁছেনি।</p> <p>রাষ্ট্রীয় ও পশ্চিমা মিডিয়ার সহযোগিতাপ্রাপ্ত দখলদার সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিরোধ করার মতো কোনো কিছুই তাদের কাছে নেই। চলমান এ যুদ্ধে সাধারণ মানুষের ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও বাস্তবতাকে হত্যা করা হয়েছে। পশ্চিম তীরে তাদের শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। রাতে অস্ত্রসহ মানুষের ঘরে ঢুকে পড়ছে ইসরায়েলি সৈনিকরা। ফিলিস্তিনি জাতি খুবই অতিথিপরায়ণ হলেও এখন তাদের ভয়ে দিন কাটছে।</p> <p>এর আগে আমি ইউক্রেনেও গিয়েছিলাম। দুঃখের বিষয় হলো, ফিলিস্তিনে বেসামরিক মানুষ হত্যার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিডিয়ার কপটতা প্রকাশ পেয়েছে। পশ্চিমারা শাস্তি হিসেবে রাশিয়াকে বয়কট করলেও বিপরীতে ইসরায়েলকে মহিমান্বিত করেছে এবং তার পাশে দাঁড়িয়েছে।</p> <p>ফিলিস্তিনি জনগণকে কেউ সাহায্য করতে পারে না। অথচ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা ঘটছে তা ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন থেকে সবচেয়ে নৃশংস ও অমানবিক পরিস্থিতি। ফিলিস্তিন হলো সেই জায়গা, যেখানে মানবতার মৃত্যু হয়েছে।<br />  </p>