<p>সুলতানা খাদিজা বিনতে প্রথম ওমর ছিলেন মালদ্বীপের দীর্ঘকালীন মুসলিম নারী শাসক। তিন দশকেরও বেশি সময় তিনি মালদ্বীপ শাসন করেন। মরক্কোর বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতার মতে, সুলতানা খাদিজা ছিলেন বাঙালি বংশোদ্ভূত। তবে এ ক্ষেত্রে ভিন্নমতও আছে।</p> <p>ব্যক্তিগত জীবনে সুলতানা খাদিজা অত্যন্ত বিচক্ষণ এবং দৃঢ়চিত্তের অধিকারী ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ তিন দশকের শাসনামলে তিনি একাধিকবার রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হন এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা মোকাবেলা করেন। ঐতিহাসিকদের কাছে তিনি খাদিজা রেহেন্দি নামেও পরিচিত।</p> <p>রানি খাদিজা ছিলেন সুলতান প্রথম ওমরের বড় মেয়ে। ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা গেলে তাঁর ছেলে আহমদ শিহাবুদ্দিন সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু আহমদ শিহাবুদ্দিনের নৈতিক স্খলন ও অদক্ষতার কারণে জনমনে অসন্তোষ দেখা দেয়। ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর সুলতানা খাদিজা সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মালদ্বীপ শাসন করেন।</p> <p>তিনি প্রতিদিন সেনাছাউনি পরিদর্শন করতেন এবং সৈনিকরা তাঁর প্রতি আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শন করত। মালদ্বীপের মসজিদগুলোতে তাঁর নামে খুতবা পাঠ করা হতো। সুলতানা খাদিজা ছিলেন থিমুজ রাজবংশের প্রথম নারী শাসক। ইবনে বতুতার মতে, তাঁর দাদা ও থিমুজ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান সালাহুদ্দিন সালিহ ছিলেন বাঙালি।</p> <p>ইবনে বতুতা লেখেন, ‘আশ্চর্য বিষয় হলো, এর (মালদ্বীপ) শাসক একজন নারী। তাঁর পুরো নাম হলো খাদিজা বিনতে সুলতান জালালুদ্দিন ওমর বিন সুলতান সালাহুদ্দিন সালিহ বাঙালি। যখন তাঁর পিতা মারা যান তখন তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই শিহাবুদ্দিন বয়সে নাবালক ছিলেন। ফলে মালদ্বীপের উজির আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ হাদরামি শিহাবুদ্দিনের মাকে বিয়ে করেন এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। শিহাবুদ্দিন সাবালক হওয়ার পর অবশ্য তাদের প্রভাবমুক্ত হতে পেরেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাতের বেলা প্রজাদের বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করতেন তাদের অনুমতি ছাড়া। এ কারণে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং দেশান্তরিত করা হয়।</p> <p>রাজপরিবারের অবশষ্টি দুই বোন থেকে খাদিজার মাথায় মুটুক পরানো হয়। তাঁর স্বামী ছিলেন খতিব (রাষ্ট্রের প্রধান ইমাম) জালালুদ্দিন। খাদিজা তাঁর স্বামীকে উজির পদে এবং ছেলে মুহাম্মদকে খতিব পদে নিয়োগ দেন। ধীরে ধীরে স্বামী জালালুদ্দিনই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন এবং স্ত্রীর নামে নিজেই চিঠিপত্র ও অধ্যাদেশ জারি করতেন, যা তাদের সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়।</p> <p>১৩৬৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্বামী ও উজির জামালুদ্দিন তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। কিন্তু ১৩৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিংহাসন ফিরে পান। ক্ষমতার পালাবদলের সময় স্বামী জামালুদ্দিন নিহত হন। এরপর তিনি সাবেক উজির আবদুল্লাহ হাদরামিকে বিয়ে করেন এবং তাঁকে উজির নিয়োগ দেন। ১৩৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি নির্বিঘ্নে রাজত্ব পরিচালনা করেন। কিন্তু দ্বিতীয় স্বামীও সুলতানা খাদিজাকে সরিয়ে সিংহাসন দখল করেন। তিন বছর পর আবার সিংহাসন উদ্ধারে সক্ষম হন। ১৩৭৬ থেকে ১৩৮০ পর্যন্ত দেশ শাসনের পর তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর বোন মারিয়াম সিংহাসনে আরোহণ করেন।</p> <p>ব্যক্তিগত জীবনে সুলতানা খাদিজা খুব বেশি ধার্মিক ছিলেন না, তবে ধর্মের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ ছিল। ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করতেন, আলেম-ওলামা ও জ্ঞানীদের সম্মান করতেন। তিনি নিজেও একজন জ্ঞানান্বেষী ছিলেন। ইতিহাস গবেষক ওমর রেজা কাহহালা লেখেন, ‘তিনি (খাদিজা) ছিলেন ভারতের অন্যতম সুলতানা। তিনি তাঁর পিতৃভূমিতে (মালদ্বীপে) বেড়ে ওঠেন। তিনি জ্ঞান, বিজ্ঞান, ভাষা ও সাহিত্যে এতটা দক্ষতা অর্জন করেন, যা তৎকালীন নারীদের ভেতর বিরল ছিল।’ (আলামুন নিসা : ১/৩৩৮)</p> <p>মালদ্বীপের মানুষ এখনো সুলতানা খাদিজাকে তাঁর জ্ঞান, বিচক্ষণতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দৃঢ় প্রত্যয়ের জন্য স্মরণ করে এবং তাঁকে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক মনে করে।</p> <p><em>তথ্যসূত্র : আলামুন নিসা ও উইকিপিডিয়া</em><br />  </p>