<p>রহমাতুল্লিল আলামিন, দোজাহানের বাদশাহ প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হাসান (রা.) ও হুসাইন (রা.)। তাঁরা উভয়েই ছিলেন প্রিয় নবীজির কলিজার ধন, নবীজি তাঁদের দুজনকে এতটাই ভালোবাসতেন যে তিনি বলতেন, হাসান ও হুসাইন দুজন এই পৃথিবীতে আমার দুটি সুগন্ধময় ফুল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৭০)</p> <p>যুগ যুগ ধরে মানবসভ্যতায় ফুলকে ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে দেখা হয়। প্রিয় নবী (সা.) তাঁর দুই দৌহিত্রকে ফুলের উপমা দিয়ে আমাদের বুঝিয়েছেন যে তিনি তাঁদের কতটা ভালোবাসতেন। মহান আল্লাহর হাবিবের এই প্রিয় দৌহিত্রদের মহান আল্লাহও ভালোবাসেন। তাইতো তিনি তাঁদের জান্নাতি যুবকদের সর্দার বানাবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হাসান ও হুসাইন (রা.) প্রত্যেকেই জান্নাতি যুবকদের সর্দার। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৬৮)</p> <p>তাঁদের প্রতি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা এতটাই গভীর ছিল যে অবসরে তাঁদের দুজনকে বুকে জড়িয়ে রাখতেন এবং যারা তাঁদের ভালোবাসবে তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে আমার কোনো প্রয়োজনে নবী (সা.)-এর কাছে গেলাম। অতএব, নবী (সা.) এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল, যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার প্রয়োজন সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কী? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উন্মুক্ত করলে দেখা গেল তাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রা.)। তিনি বলেন, এরা দুজন আমার পুত্র (দৌহিত্র) এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ! আমি এদের দুজনকে ভালোবাসি। সুতরাং তুমি তাদের ভালোবাসো এবং যে ব্যক্তি এদের ভালোবাসবে, তুমি তাদেরও ভালোবাসো। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৬৯)</p> <p>প্রিয় নবীজি (সা.) তাঁর দৌহিত্রদের এতটাই ভালোবাসতেন যে কখনো কখনো তাঁদের সঙ্গে খেলাধুলাও করতেন। তাঁদের আনন্দ দিতেন। তাঁদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। একদিন হুসাইন (রা.) গলির মধ্যে খেলছিলেন। প্রিয় নবী (সা.) সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি লোকদের অগ্রভাগে এগিয়ে গেলেন এবং তাঁর দুই হাত প্রসারিত করে দিলেন। বালকটি এদিক-ওদিক পালাতে থাকল। কিন্তু নবী (সা.) তাকে হাসতে হাসতে ধরে ফেলেন। এরপর তিনি তাঁর এক হাত ছেলেটির চোয়ালের নিচে রাখলেন এবং অন্য হাত তার মাথার তালুতে রাখলেন। তিনি তাকে চুমু দিলেন এবং বলেন, ‘হুসাইন আমার থেকে এবং আমি হুসাইন থেকে। যে ব্যক্তি হুসাইনকে ভালোবাসে, আল্লাহ তাআলা তাকে ভালোবাসেন। হুসাইন আমার নাতিদের একজন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪)</p> <p>এমনিভাবে হজরত হাসান (রা.)-এর ভালোবাসার ব্যাপারেও নবীজি (সা.)-এর দোয়া আছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) হাসান (রা.) সম্পর্কে বলেন, হে আল্লাহ! আমি অবশ্যই হাসানকে ভালোবাসি। অতএব, আপনিও তাকে ভালোবাসুন এবং যারা তাকে ভালোবাসে আপনি তাদেরও ভালোবাসুন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তাঁকে নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪২)</p> <p>নবীজি (সা.) তাঁর নাতিদের আদর করতে মাঝেমধ্যে তাঁদের বাড়ির আঙিনায় চলে যেতেন। এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদিন নবী (সা.) দিনের এক অংশে বের হলেন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কায়নুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসে পড়লেন। তারপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? ফাতেমা (রা.) তাঁকে কিছুক্ষণ দেরি করালেন। আমার ধারণা হলো তিনি তাঁকে পুঁতির মালা সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকেও (হাসানকে) মহব্বত করো এবং তাকে যে ভালোবাসবে তাকেও মহব্বত করো। (বুখারি, হাদিস : ২১২২)</p> <p>অতএব, আমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাই, আমাদের অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা স্থাপন করতে হবে। তিনি যাদের ভালোবাসতেন তাদের ভালোবাসতে হবে। হুসাইন ও হাসান (রা.)-কেও আল্লাহর জন্য ভালোবাসতে হবে।</p> <p> </p>