আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী রাখা হবে, নাকি সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকবে, তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
যদি বিএনপি ঘোষণা দিয়ে বা ঘোষণা ছাড়াই কৌশলে নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেবে ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু বিএনপি ও তার সমমনারা যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে সদ্যঃসমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার কৌশলও নিতে পারে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য কালের কণ্ঠকে এমনটা জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী মার্চে রমজানের আগে অথবা এপ্রিলে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শুরু হবে। সারা দেশে চার-পাঁচ ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। বর্তমানে সারা দেশে ৪৮৫ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনযোগ্য।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য কালের কণ্ঠকে জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
তাঁরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। প্রথম দিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলের প্রার্থী দেওয়া হলেও ২০১৯ সালের নির্বাচনে তা দেওয়া হয়নি। এবারও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে না। তবে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে একাধিক মত রয়েছে।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অনুপস্থিতিতে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে চাইলে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হলে ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়বে ও নির্বাচনী আমেজ তৈরি হবে। আবার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকলে দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত বাড়বে। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বেড়ে গেছে। অনেক স্থানে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
এ অবস্থায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখলে দলের অভ্যন্তরে দীর্ঘমেয়াদি কোন্দল বাড়বে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্যাহ দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডেরও সদস্য। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নৌকার মনোনয়ন থাকার সম্ভাবনাই বেশি। আবার যাঁরা স্বতন্ত্র করতে চান তাঁরাও হয়তো করতে পারবেন। সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে। একটা মডেল সেট হয়ে গেলে সেটা হুট করে পরিবর্তন করা কঠিন হয়।’
দলের সিদ্ধান্ত কবে নাগাদ হতে পারে, জানতে চাইলে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আগামী এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা। এখনো আড়াই মাস সময় আছে। দলের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে কি না—জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’ গত বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনে আসবে কি না তার ওপরে আওয়ামী লীগের কৌশল নির্ভর করবে। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নির্বাচন বর্জন করলে দুই ধরনের কৌশলের একটি নিতে পারে আওয়ামী লীগ। প্রথমত, তারা দলের সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার পথে হাঁটতে পারে। এ ক্ষেত্রে কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। দ্বিতীয়ত, একজনকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করে নৌকা প্রতীক দিতে পারে। তবে অন্যদেরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নিষেধ করা হবে না। বিগত সংসদ নির্বাচনে এমন কৌশল নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়কে পরামর্শ দিচ্ছেন যেন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়া হয়। ওই নেতাদের মতে, একজনকে প্রতীক দিলে অন্য নেতারা নিজেদের বঞ্চিত ভাবেন। এতে দলের মধ্যে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর চেয়ে প্রার্থিতা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখলে এবং দল কাউকে সমর্থন না দিলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সবাই চাইলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারেন। এতে তৃণমূলে কার কেমন জনপ্রিয়তা সেটাও দেখার সুযোগ পাবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা চাই, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হোক। সে জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দরকার। এখন বিএনপি যদি না আসে তাহলে তো নির্বাচনে স্বতন্ত্রদের গুরুত্ব বাড়বে। তখন হয়তো আমরা স্বতন্ত্রদের প্রতি নমনীয় থাকব। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে আমরা দলীয় প্রতীক নিয়েই ভোট করব।’
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমাদের কৌশল কী হবে, তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’