চাকমাদের বিদ্রোহ

&lt;p&gt; দেশের একমাত্র পাহাড়-পর্বতময় অঞ্চলটির নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি যাযাবর চাষিদের বাসস্থান। এই অঞ্চলের চাকমা, কুকি প্রভৃতি পার্বত্য অধিবাসীরা প্রকৃতির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে কঠোর সংগ্রাম করে জীবন ধারণ করে। সেই কঠোর সংগ্রামই তাদের দুর্ধর্ষ করে তুলেছে। এই অঞ্চলের পার্বত্য আদিম অধিবাসীরা এমনকি মোগল যুগেও নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে পেরেছিল। তখন তারা কঠোর কায়িক পরিশ্রমে প্রস্তরময় অনুর্বর জমিতে যে শস্য উৎপাদন করত, তার সামান্য একটা অংশ রাজস্ব হিসেবে মোগল সম্রাটদের দিয়ে তারা স্বাধীনভাবে বাস করত। কিন্তু এই অঞ্চলটি ইংরেজ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহের পুরনো ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায় এবং অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের মতো এই পর্বত-অরণ্যচারী আদিম মানুষগুলোও ক্রমশ ইংরেজ রাজের শোষণের নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। ক্রমশ এই অঞ্চলের ওপরও ইংরেজরাজের শোষণযন্ত্রগুলো একে একে চেপে বসতে থাকে।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; ইংরেজ শাসকরা বাইরের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কার্পাস কর আদায়ের চুক্তি করে তাকে পার্বত্য অঞ্চল ইজারা দিত। ইজারাদার বিভিন্ন কৌশলে এই সরল প্রকৃতির পার্বত্য অধিবাসীদের কাছ থেকে রাজস্বের নির্দিষ্ট পরিমাণ তুলার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি তুলা আদায় করে আনত এবং চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ তুলা শাসকদের কাছে জমা দিয়ে বাকি তুলা আত্মসাৎ করত। এর পর ওই তুলা বাজারে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করত। শাসকরা রাজস্ব হিসেবে যে তুলা পেত, তা বিক্রি করে মুদ্রায় পরিণত করার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করত। এই দ্বিতীয় ব্যক্তিটি শাসকদের হাতে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ জমা দিয়ে বাকি তুলা থেকে ফাটকাবাজি দ্বারা প্রচুর মুনাফা লুট করত।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; এই ব্যবস্থার ফলে পার্বত্য অধিবাসীদের জীবিকা নির্বাহ অসম্ভব হয়ে ওঠে। প্রথমত, প্রথম ইজারাদার তাদের কাছ থেকে রাজস্বের নামে প্রায় সব তুলাই লুট করে নিত। দ্বিতীয়ত, তার লুটের পর যে সামান্য পরিমাণ তুলা বাকি থাকত, তা চট্টগ্রামের সমতল ভূমিতে নিয়ে এর বিনিময়ে বা এর বিক্রিলব্ধ অর্থে আদিবাসীদের পক্ষে খাদ্যসহ প্রযোজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ দ্বিতীয় ব্যক্তিটির জন্য অসম্ভব হয়ে উঠত। কারণ সেই ব্যক্তি বিভিন্ন উপায়ে ওই অবশিষ্ট তুলা নামমাত্র মূল্যে তার কাছে বিক্রি করতে আদিবাসীদের বাধ্য করত। এই অঞ্চলের আদিবাসীরা সমান ওজনের দ্রব্যের বিনিময় সমান ওজনের দ্রব্য নিতে অভ্যস্ত ছিল। সুতরাং তুলার ব্যাপারি দুই টাকা মূল্যের এক মণ লবণের বিনিময়ে আট টাকা মূল্যের এক মণ তূলা আত্মসাৎ করত। এভাবে কোনো একটি বা দুটি দ্রব্য ক্রয় করতেই আদিবাসীদের সব তুলা নিঃশেষ হয়ে যেত। এই উভয়বিধ শোষণের ফলে এই অঞ্চলের আদিবাসীরা অনিবার্য মৃত্যুর মুখে এসে দাঁড়ায়। অবশেষে তারা বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করতে বাধ্য হলো।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যভাগে চাকমারা প্রথমবার বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন চাকমা দলপতি রাজা সের দৌলত ও তাঁর সেনাপতি রামু খাঁ। তাঁরা পরস্পরের আত্মীয় ছিলেন। রামু খাঁ সাধারণের কাছে সেনাপতি বলে পরিচিত ছিলেন। চাকমাদের ওপর সেনাপতি রামু খাঁর অসাধারণ প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল। ইংরেজ শাসকদের দ্বারা নিযুক্ত ইজারাদারদের শোষণ উৎপীড়ন সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে রামু ও শের দৌলত চাকমা জাতির সব লোককে একত্র করে ইজারাদারি ও ইংরেজ শাসনের মূলোচ্ছেদ করার জন্য প্রস্তুত হন। প্রথমে কার্পাস কর দেওয়া বন্ধ হয় এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ইজারাদারদের তুলার গোলা লুট হয়। রামু খাঁর নেতৃত্বে চাকমারা ইজারাদারদের বড় বড় ঘাঁটি ধ্বংস করে ফেলে। রাঙ্গুনিয়া প্রভৃতি স্থানের বড় বড় গোলা লুট করে সব তুলা বিদ্রোহীরা নিয়ে যায়। ইজারাদার ও তার কর্মচারীরা চাকমা অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায় এবং বহু কর্মচারী চাকমাদের হাতে নিহত হয়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; ইংরেজ শাসকরা ইজারাদারদের সাহায্যে অগ্রসর হয় এবং এই অঞ্চলের সামরিক অফিসারের নেতৃত্বে একটি সৈন্য দল প্রেরণ করে। চাকমরা তাদের তীর-ধনুক ও বর্শা দ্বারা আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অসম্ভব বুঝে গভীর পার্বত্য অঞ্চলে সরে পড়ে। ইংরেজ বাহিনী বিদ্রোহীদের কোনো সন্ধান না পেয়ে ফিরে আসে। চাকমারা সুযোগ বুঝে আবার অগ্রসর হয় এবং চট্টগ্রামের সমতল ভূমিতে নেমে এসে ইজারাদারদের ঘাঁটি ও ব্যাপারিদের দোকান প্রভৃতির ওপর আক্রমণ চালাতে থাকে। ইংরেজ বাহিনী আবার পাহাড় অঞ্চলে প্রবেশ করে বিদ্রোহীদের তাড়া করে। কিন্তু এবারও বিদ্রোহীরা গভীর পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য হয়ে যায়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; এভাবে বিদ্রোহী চাকমাদের দমন করা অসম্ভব বুঝে শাসকরা এক নতুন কৌশল অবলম্বন করে। চাকমারা সমতল ভূমির বিভিন্ন বাজারে এসে তাদের উদ্বৃত্ত তুলার বিনিময়ে বাজার থেকে খাদ্য, লবণ প্রভৃতি সংগ্রহ করত। শাসকরা জানত যে চাকমরা তুলা বাজারে না আনতে পারলে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে না এবং খাদ্যাভাবে শেষ পর্যন্ত বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হবে। সুতরাং তারা সমতল ভূমির বিভিন্ন বাজারের পথে বহু সৈন্যের পাহারা বসিয়ে চাকমাদের বাজারে আসা বন্ধ করার ব্যবস্থা করে। অবশেষে তাদের এই কৌশল সাফল্য লাভ করে, চাকমারা বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। রামু খাঁ ইংরেজ শাসকদের ৫০১ মণ তুলা বার্ষিক রাজস্ব স্বরূপ দিতে সম্মত হয়েছিলেন। প্রথম বিদ্রোহের পর রামু খাঁর পুত্র জানবকস খাঁর নেতৃত্বে ১৭৮২ সালে ও ১৭৮৪ সালে দুটি বিদ্রোহ হয়। এরপর দ্বিতীয় শের দৌলত খাঁর নেতৃত্বে ১৭৮৭ সালে আরেকটি বিদ্রোহ হয়।&lt;/p&gt; &lt;p&gt; &lt;/p&gt; &lt;p&gt; &lt;/p&gt;

বাংলার বিদ্রোহ

চাকমাদের বিদ্রোহ

অনিন্দ্য আরিফ

অনিন্দ্য আরিফ

প্রাসঙ্গিক

সম্পর্কিত খবর

বুথিডং, মংডুতে বিদ্রোহীগোষ্ঠীর কারফিউ জারি

বুথিডং, মংডুতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কারফিউ জারি

রঘু ডাকাত কে ছিলেন?

সেলাই করা কাপড়ের ফালিতে বাংলার রূপ

সর্বশেষ সংবাদ

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের পারিবারিক পরিচয় দেখার প্রয়োজন নেই : ইসি সচিব

শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন, হাউস টিউটরের পদত্যাগ

সুবর্ণার স্বামী সৌদের সঙ্গে কি আসলেই প্রেম করছেন নীলা?

এবার ৭ গোলে জিতল নাসরিন

ম্যানইউর অনুশীলন ক্যাম্পে বাংলাদেশের তিন কিশোর

কুমিল্লায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৪ জনের

অবশেষে রাজধানীতে নামল স্বস্তির বৃষ্টি

ঘোষণা দিয়েও ঈদে আসেনি, অবশেষে ১০ মে আসছে ‘পটু’

সিলেটে ২ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, বন্যার আশঙ্কা

রং নেই রঙিন স্টেডিয়ামে

মানুষ এখন মর্যাদা নিয়ে বিশ্বদরবারে চলতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ যাত্রী আহত

‘এখন আর প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হয় না জুয়েলারিরা’

গুচ্ছের বি ইউনিটের পরীক্ষায় বসবে ৯৪ হাজার শিক্ষার্থী

কামরাঙ্গীর চরে নতুন ভবন নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণের অনাপত্তিপত্র প্রদান

যে কারণে নোলানের দুই পুরনো সিনেমা স্টার সিনেপ্লেক্সে

উপজেলা নির্বাচন : তৃতীয় ধাপে মনোনয়ন জমা দিলেন ১৫৮৮ প্রার্থী

শিয়ালের পেটে গেল বৃদ্ধার আঙুল, আহত ৩

উচ্চশিক্ষা খাতকে এগিয়ে নিতে ডিজিটালাইজেশনে গুরুত্বারোপ ইউজিসির

চুরির টাকায় বান্ধবীকে ফোন উপহার, কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে ধরা

সংরক্ষণাগারের অভাবে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় : কৃষিমন্ত্রী

উত্তরায় পাঁচ শতাধিক শ্রমজীবীর মাঝে বসুন্ধরা শুভসংঘের শরবত বিতরণ

নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলে আইনি ব্যবস্থা: ইসি রাশেদা

যে কারণে শাবনূর নিজেকে অভিনয় শ্রমিক বললেন

নাটোরে চুলার আগুনে বাড়ি পুড়ে ছাই

‘সমাজে আইনের শাসন নিশ্চিত করাই আইনজীবীর কাজ’

ভারতের কাছে সিরিজ হার বাংলাদেশের

খিলগাঁওয়ে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু

৭০ বছরের বৃদ্ধাকে এক যুগ পর ফিরিয়ে দিল ফেসবুক

সোনার দাম ভরিতে কমল ১৮৭৮ টাকা

সর্বাধিক পঠিত

‘আমি বিরক্ত’, শাকিবের তৃতীয় বিয়ে প্রসঙ্গে অপু

মৃত্যু সনদে নিজেই সিল মারতেন মিল্টন, আটক হতে পারেন স্ত্রীও

ঢাকা থেকে ট্রেনে তিন ঘণ্টায় খুলনা, ভাড়া মাত্র ৫৫০ টাকা

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে রাতেই তিন মামলা

ভোক্তাপর্যায়ে এলপিজির দাম কমল ৪৯ টাকা, আজ থেকেই কার্যকর

হাজতেই আত্মহত্যা অস্ত্রদাতার, পরিবারের দাবি ‘খুন করা হয়েছে’

স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে শনিবার : শিক্ষা মন্ত্রণালয়

মুস্তাফিজের শীর্ষে ওঠা হলো না, হারল চেন্নাই

এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা হবে আজ

মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব: ডিবিপ্রধান

নিজেদের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে রইল ডর্টমুন্ড

নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আ. লীগকে আমন্ত্রণ বিজেপির

অবশেষে রাজধানীতে নামল স্বস্তির বৃষ্টি

জীবনসঙ্গী খুঁজছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মনীষা কৈরালা

সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকাসহ যেসব জেলায় নামতে পারে বৃষ্টি

যে বিশেষ কারণে পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন রাজা

ভূমধ্যসাগরে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ ঢাকায়

চুরির টাকায় বান্ধবীকে ফোন উপহার, কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে ধরা

নতুন রূপে আসছে প্রভাসের ‘বাহুবলী’

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আর নেই

মহানবী (সা.) যে উপার্জনকে সর্বোত্তম বলেছেন

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে বিদেশি স্পন্সরশিপে অপপ্রচার চালানো হয় : আরাফাত

সোনার দাম ভরিতে কমল ১৮৭৮ টাকা

যে কারণে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ

যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা হত্যা: বাদীকে প্রধান আসামি জিহাদীর হুমকি

উত্তেজনার মধ্যেই দুই গ্রুপের মে দিবস পালন, আ. লীগের বিভক্তি স্পষ্ট

আশ্রমে টর্চার সেল, মিল্টনের বিরুদ্ধে আরো এক মামলা

'পুলিশ' স্টিকারযুক্ত গাড়িতে থানা ও ট্রাফিক পুলিশের অভিযান

মানবজাতির জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন