<p>কয়েক টুকরা ছিন্ন কাপড়। আলাদা রং ও আকার। একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে একটি দৃশ্য। তাতে ফুটে উঠেছে লাল-সবুজ পতাকা, নারীর গড়ন ও ফুল-ফল। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারির শুরুতেই রয়েছে সুই-সুতায় বোনা কোলাজটি। গতকাল শুক্রবার থেকে এই গ্যালারিতে শুরু হয়েছে শিল্পী সুরঞ্জনা ভট্টাচার্যের একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। সন্ধ্যায় ‘স্টিচড কোলাজ’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য, চিত্রসমালোচক মঈনুদ্দিন খালেদ ও সৈয়দ ইকবাল। অতিথিরা বলেছেন, শিল্পকৌশল হিসেবে কোলাজের বয়স দুই হাজার বছরের বেশি। আধুনিক শিল্পধারা বা মডার্ন আর্টের যুগে পিকাসো, জর্জ ব্রাক, অঁরি মাতিস ও ভাসিলি কঁদিনিস্কির মতো মহান শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় ধন্য হয়েছে এই শিল্প। বাংলাদেশে এই ধারার কাজের চর্চা প্রায় নেই। নিজস্বতা আরো কম।</p> <p>শিল্পী সুরঞ্জনা ভট্টাচার্যের তৈরি একটি কোলাজে কাপড়ের ফালি এমনভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যে প্রথম দেখায় তা মনে হয় ফসলের মাঠ। মধ্যখানে গোলাকার একটুকরা কাপড় আর চারপাশে ফসলের মাঠের মতো খণ্ড খণ্ড কাপড়ের টুকরা। নানা রঙের। যেন পাখির চোখে দেখা বাংলার রূপ। এসব কাপড়ের টুকরায় আবার রয়েছে নকশিকাঁথার সেলাইয়ের ধরন।</p> <p>শিল্পী সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য জানালেন, আধুনিক শিল্পীদের মধ্যে বিশেষ করে কঁদিনিস্কির শিল্পকর্ম ছিল তাঁর আকৈশোর বিস্ময়, অনুরাগ ও অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস। নারায়ণগঞ্জে জন্ম এবং চট্টগ্রাম ও নরসিংদীতে বেড়ে ওঠা এই শিল্পীর সূচিকর্মের প্রতি আশৈশব ঝোঁক ছিল। নরসিংদীর সরকারি কারিগরি বিদ্যালয়ে সূচিকর্মের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। তাঁর সেই আগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কাজে লাগল প্রায় দুই দশক পর। প্রায় এক যুগ আগে তিনি দুরারোগ্য ডিস্ট্রোফি রোগে আক্রান্ত হন, এর ফলে তাঁর বাঁ হাত প্রায় অকেজো হয়ে যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত কাপড়ের ফালি দিয়ে কোলাজ করতে শুরু করেন। মাতিসের করা নীলনারীর কোলাজের একটি অনুলিপি টাঙানো ছিল তাঁর ঘরের দেয়ালে। এই কোলাজ যখন মাতিস করেন, তখন তিনিও প্রায় অন্ধ। এই শিল্পকর্মটি শিল্পী সুরঞ্জনাকে অনুপ্রাণিত করে গেছে তাঁর কল্পনাগুলোকে কোলাজের মাধ্যমে সৃষ্টিতে পরিণত করতে। প্রদর্শনীটি চলবে ২৭ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত। সোমবার থেকে শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।</p>