ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

হরেক রকম স্পিকার

  • কম্পিউটারে গেইম খেলা, মুভি দেখা, গান শোনাসহ অনেক কাজে সাউন্ড সিস্টেম বা স্পিকার লাগে। চলতি সময়ে স্পিকারে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। বদলে যাচ্ছে ধরনও। কোন কাজের জন্য কেমন স্পিকার দরকার, দাম ও ধরন কেমন ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন তুসিন আহম্মেদ
notdefined
notdefined
শেয়ার
হরেক রকম স্পিকার
ছবি: তারেক আজিজ নিশক

এক অথবা একাধিক যন্ত্র ও ফিল্টারের সমন্বয়ে স্পিকার তৈরি হয়। উফার ও সাব-উফারসহ ২: ১, ৪: ১, ৫: ১ বা ৭: ১ হিসেবে স্পিকার বিক্রি করা হয়। বাজারে সাধারণের পাশাপাশি ব্লুটুথ, পোর্টেবল, ওয়্যারলেস বিভিন্ন সুবিধার স্পিকার আছে।

 

কেনার সময় জানতে হবে

ফোন বা ল্যাপটপ কেনার সময় আমরা কনফিগারেশন দেখে কিনি।

কিন্তু স্পিকার কেনার সময় কনফিগারেশনের বিষয়টা নজর এড়িয়ে যায়। পরে ব্যবহার করতে গিয়ে হতাশ হতে হয়। স্পিকারের কনফিগারেশনসহ অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে জানাশোনা না থাকায় এমন হয়।

তবে স্পিকারের মোড়কের গায়েও কিন্তু বিভিন্ন সুবিধার কথা (স্পেসিফিকেশন) যেমন ওয়াট, ফ্রিকোয়েন্সি, সিগন্যাল রেশিও, ইনপুট-আউটপুট পাওয়ার, আরএমএস, রেশিও কোনটা কত তা উল্লেখ থাকে।

এর মধ্যে ফ্রিকোয়েন্সি অনুপাতের হিসাবটা হার্জে দেওয়া হয়। হার্জ বেশি হলে স্পিকারে শব্দ বেশি হয়। আর কোন স্পিকার কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করে তা বোঝা যায় ওয়াট দেখে।

 

কারিগরি দিক

আরএমএস-আউটপুট ওয়াট : আউটপুট শক্তি মাপা হয় ওয়াটের সাহায্যে।

বেশির ভাগ স্পিকারে আরএমএসের পরিমাণ লেখা থাকে। ৪: ১ স্পিকারে সাধারণত Subwoofer 5.25'' 4ohms 18 watts RMS লেখা থাকে। এখানে সাব-উফার স্পিকারটির মাপ ৫.২৫ ইঞ্চি এবং এটি ১৮ ওয়াট শক্তিসম্পন্ন। সাব-উফার সাধারণত নিম্নমানের শব্দ শোনায়।

আবার স্পিকারের বক্সে যদি Satellite 5'' 4ohms 10 watts RMS লেখা থাকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে স্পিকারটির স্যাটেলাইট ড্রাইভের মাপ ৪ ইঞ্চি এবং এটি ১০ ওয়াট শক্তিসম্পন্ন।

স্যাটেলাইট স্পিকারগুলো মাঝারি থেকে উচ্চমানের শব্দ শোনাতে পারে।  সাউন্ড ফ্রিকোয়েন্সি দেওয়ার জন্য ব্যবহূত হয়।

এস/এন রেশিও : এস/এন রেশিও দিয়ে বোঝানো হয় স্পিকারটিতে উৎপন্ন শব্দ এবং পারিপার্শ্বিক অন্যান্য শব্দের ব্যবধান। সাধারণত এস/এন রেশিওর মান ৬৫ ডিবির ওপরে থাকলে ভালো। কেনার সময় বিষয়টা দেখে কেনা উচিত।

 

কার জন্য কেমন স্পিকার

কম শব্দে শুনতে চাইলে ২: ১ স্পিকার সিস্টেম কিনতে পারেন। মাঝারি মানের শব্দের জন্য ৪: ১ স্পিকার আদর্শ। আর খুব জোরে শুনতে হলে লাগবে ৫: ১ কিংবা ৭: ১ স্পিকার।

ল্যাপটপের জন্য ছোট স্পিকার মানানসই। ব্লুটুথ স্পিকার হলে আরো ভালো—তারের ঝামেলা নেই। ল্যাপটপের ব্যাগে পুরে সঙ্গে রাখা যায়।

অনুষ্ঠান আয়োজনে ‘রিচার্জেবল পোর্টেবল অ্যান্ড পিএ’ স্পিকার নিতে পারেন। এগুলোতে মাইক্রোফোন ব্যবহারের সুবিধা আছে। এফঅ্যান্ডডি ও ডিজিটাল-এক্স বাংলাদেশের বাজারে এ ধরনের স্পিকার বিক্রি করে। দাম পাঁচ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে।

 

দরদাম

বাজারে মাইক্রোল্যাব, ক্রিয়েটিভ, লজিটেক, অ্যাল্টেক ল্যান্সিং, এফঅ্যান্ডডি, ডিজিটাল এক্স, এক্সট্রিম, সনি ইত্যাদি ব্র্যান্ডের স্পিকার পাওয়া যায়।

মাইক্রোল্যাব : এম১০০ ২: ১ মডেলের স্পিকারটি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকায়। একই মডেলের নতুন সংস্করণ এম১০০ ইউ ২: ১-এর দাম দুই হাজার ৩০০ টাকা। স্পিকারটির আউটপুট পাওয়ার ১০ ওয়াট আরএমএস, এস/এন রেশিও ৭৫ ডিবি। রয়েছে ইউএসবি টাইপ-এ এসডি কার্ড রিডার সুবিধা।

এম১০৬বিটি, এম১০৮, এম১০৯ এবং এম১১০ মডেলের স্পিকারের দাম যথাক্রমে দুই হাজার ৫০০, এক হাজার ৪০০, দুই হাজার এবং দুই হাজার ৫০০ টাকা। পোর্টেবল সুবিধাযুক্ত বি১৬ এবং বি৫১ স্পিকারের দাম ৬৯৯ এবং ৯০০ টাকা। ব্লুটুথ সুবিধাযুক্ত টি১০ ২: ১ কিনতে খরচ একটু বেশি—সাত হাজার টাকা। মাইক্রোল্যাবের ৫: ১ হোম থিয়েটার স্পিকারও আছে। দাম সাড়ে ১২ হাজার।

এফঅ্যান্ডডি : এই ব্র্যান্ডের স্পিকারের দাম এক হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এ১১০ ২: ১ স্পিকারটি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়। ব্লুটুথ সুবিধাযুক্ত এই মডেলটির উন্নত সংস্করণ এ১১১এক্সর দাম তিন হাজার টাকা। এ৫২০ইউ, এ৫২১ এবং এ৫২১এক্স মডেলের স্পিকার তিনটির দাম যথাক্রমে তিন হাজার ৮০০, তিন হাজার ৯০০ এবং তিন হাজার ৯৫০ টাকা।

উচ্চমানের শব্দ সুবিধা দিতে রিমোট কন্ট্রোলসহ এফঅ্যান্ডডির এফ৬০০০ইউ ৫: ১ মডেলের স্পিকারটি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৯ হাজার টাকায়।

অ্যাল্টেক ল্যান্সিং : ভিএস২৬২১ মডেলের ২: ১ স্পিকার বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২০০ টাকায়। আর ভিএস৪৬২১ ২: ১-এর দাম পাঁচ হাজার ২০০ টাকা।

ক্রিয়েটিভ : এসবিএস এ৩৫, এসবিএস এ৫০ এবং এসবিএস এ৬০ মডেলের দাম যথাক্রমে ৮৫০, ৯০০ এবং এক হাজার টাকা। আর এসবিএস ই২৮০০ ২: ১ এবং টি৩১৫০ ২: ১ স্পিকারের দাম যথাক্রমে তিন হাজার ৫০০ এবং সাড়ে চার হাজার টাকা।

লজিটেক : জেড১২০ ইউএসবি মিনি স্পিকার বিক্রি হচ্ছে ৯৯০ টাকায়। জেড৬২৩ ২: ১ মডেলের দাম ১৫ হাজার টাকা। জেড৫০৬ ৫: ১ এবং জেড২১৩ ২: ১-এর দাম যথাক্রমে ৯ হাজার ৫০০ ও দুই হাজার টাকা। খুব ভালো মানের স্পিকার জেড৯০৬ ৫: ১ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকায়।

ডিজিটাল এক্স : এম৭৮১ বিটির দাম দুই হাজার ৫০০ টাকা। আর ই২৭৮ইউ পাওয়া যাচ্ছে দুই হাজার ৩০০ টাকায়।

এ ছাড়া এফঅ্যান্ডডি ও ডিজিটাল-এক্স ‘রিচার্জেবল পোর্টেবল অ্যান্ড পিএ’ স্পিকার বিক্রি করে। দাম পাঁচ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে।

 

এখন চলছে ব্লুটুথ স্পিকার

ব্লুটুথ স্পিকার এখন ‘হট কেক’। নানা রঙের, সুবিধার, নকশার ও আকারের দৃষ্টিনন্দন ডিভাইসটি উপহার হিসেবেও খুব চলছে।

বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের পানিরোধক ব্লুটুথ স্পিকার রয়েছে। ভ্রমণপ্রিয়দের কাছে এ ধরনের স্পিকারের চাহিদা রয়েছে। ভ্রমণবিষয়ক ফেইসবুক গ্রুপ বেড়াই বাংলাদেশের প্রশাসক (অ্যাডমিন) রাজু মংলা বলেন, ঘুরতে গেলে সুন্দর পরিবেশে প্রচ্ছন্ন ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই গান শুনতে ইচ্ছা করে। সে ক্ষেত্রে ব্লুটুথ স্পিকার থাকলে সবাই মিলে গান ও প্রকৃতি উপভোগ করা যায়। দেশের বাজারে পানিরোধক সুবিধার শাওমি, রিমেক্স, সনি, লজিটেকসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ব্লুটুথ স্পিকার পাওয়া যায়। অখ্যাত অনেক ব্র্যান্ডও আছে। তবে ব্লুটুথ স্পিকার ব্র্যান্ড দেখে কেনা উচিত। বাজারে থাকা বিভিন্ন চায়নিজ নন-ব্র্যান্ডের স্পিকারের মান ভালো হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চার্জ বা ব্যাটারি সংক্রান্ত ঝামেলা হয়।

ব্লুটুথ স্পিকারের দরদাম : লজিটেক এক্স৫০ ও এক্স১০০-এর দাম যথাক্রমে দুই হাজার ১০০ এবং দুই হাজার ৮০০ টাকা। এফঅ্যান্ডডি ডাব্লিউ৩-এর দাম চার হাজার ৫০০ টাকা। সনি এসআরএস-এক্স৫ ব্লুটুথ স্পিকারের দাম ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। সাড়ে তিন হাজার টাকা দামের রাপ্পো এ২০০ মডেলের ব্লুটুথ স্পিকারটি সাদা, সবুজ, লাল ও কালো এই চার রঙে পাওয়া যাচ্ছে। রিমেক্স এম৭ মডেলের দাম তিন হাজার ৭০০ টাকা। শাওমির মিনি ও এমআই স্কয়ার ব্লুটুথ স্পিকার বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে এক হাজার ২০০ এবং এক হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া জেবিএলের ফিপ্ল৩ পোর্টেবল স্পিকার বিক্রি হচ্ছে ৯ হাজার ৫০০ টাকায়।

 

কোথায় পাওয়া যাবে

কম্পিউটার যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানে স্পিকার পাওয়া যায়। ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবন, এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে মিলবে স্পিকার। অনলাইনেও কেনা যাবে স্পিকার। অর্ডার করলে বাসায়ও পৌঁছে দেওয়া হয়। পাওয়া যাবে পিকাবুডটকম (https://goo.gl/NFc2Dm), মাল্টিমিডিয়া কিংডমের ওয়েবসাইটে (https://goo.gl/wNjggZ), দারাজডটকম (https://goo.gl/BgAEDm) এবং আজকেরডিলডটকমে (https://goo.gl/L3zK5C)।

 

কিছু টিপস

ধঅন্যান্য গ্যাজেটের মতো স্পিকারের প্রধান শত্রু ধুলাবালি। স্পিকারে যেন ধুলাবালি না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন একবার হলেও স্পিকারটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন কাপড় ভেজা না থাকে।

ধস্পিকার খোলামেলা ঘরে রাখলে ভালো শব্দ পাওয়া যায়। প্রতিধ্বনি হয় এমন ঘরে স্পিকার না রাখাই ভালো। রুমে কার্পেট থাকলে প্রতিধ্বনি কম হয়।

ধরিমোট কন্ট্রোল বা অন্য ফাংশনের জন্য স্পিকারের পেছনে বেশি টাকা খরচ না করে ব্র্যান্ড ও ভালো সাউন্ডের স্পিকার কেনা উচিত।

ধকেনার সময় অবশ্যই সাউন্ড চেক করে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে এমন দোকান থেকে কেনা উচিত যেখানে বাইরের শব্দ কম ঢোকে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এআই দেখাবে পরিবেশ বিপর্যয়

    এখনই পরিবেশদূষণ না কমালে ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কী হাল হতে পারে, তারই একটি সিমুলেটেড চিত্র তুলে ধরতে চালু হয়েছে thisclimatedoesnotexist.com। পরিবেশ বিপর্যয়ের পর সেই জায়গাটি কেমন হতে পারে, তারই চিত্র দেখা যাবে এ সাইটে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ
শেয়ার
এআই দেখাবে পরিবেশ বিপর্যয়
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের লালবাগ কেল্লা ডুবে যাওয়ার পর এমনই দেখা যেতে পারে

দুই বছর ধরে সাইটটি নিয়ে কাজ করছে কানাডার কুইবেকে অবস্থিত এআই ইনস্টিটিউট মিলা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন প্রয়োগ নিয়ে মিলা ইনস্টিটিউট কাজ করে আসছে। ২০১৯ সালে দলটি সিদ্ধান্ত নেয়, জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা মানুষকে চোখে আঙুল তুলে দেখানোর জন্য একটি প্রজেক্ট তৈরি করার। তাদের দলে কোনো আবহাওয়াবিদ না থাকলেও মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ অনেক তথ্যের ডাটাসেট হাতের কাছেই ছিল।

সেসব ব্যবহার করেই এআই ট্রেনিং শুরু করে তারা।

বিশ্বের সব অঞ্চল একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে না। সব জায়গায় সব ধরনের বিপর্যয় ঘটবেও না। মিলার দলটির ট্রেনিং দেওয়া এআই সূক্ষ্মভাবে তফাতগুলো আমলে নিয়ে এলাকাভিত্তিক পরিবর্তনগুলোর ভবিষ্যদ্বানী করতে পারে।

একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ছবি দিয়ে নিজেদের জেনারেটিভ এআইকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, যাতে নিখুঁতভাবে বন্যা, ধোঁয়াশা বা দাবানলের প্রভাব ছবিতে সেটি ফুটিয়ে তুলতে পারে। প্রায় দুই বছরের অক্লান্ত শ্রমের ফসল মিলা ইনস্টিটিউটের এ দুটি এআই মডেল।

গবেষকদের অনেক দেশ ও এলাকার দুর্যোগের বাস্তব চিত্র জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সেসব এলাকার থ্রিডি মডেল তৈরি করে সেখানে বন্যা, আগুন বা ধোঁয়াশার প্রভাব সিমুলেট করে সেই তথ্য ব্যবহার করেছেন।

সিমুলেশনের থেকে পাওয়া তথ্য এবং অন্যান্য এলাকার বাস্তব ছবি একসঙ্গে মিলিয়ে তবেই তৈরি করা হয়েছে দুর্যোগের চিত্রগুলো। ধোঁয়াশা বা আগুনের প্রভাব বেশ সহজেই এআইকে বুঝিয়ে দেওয়া গেলেও, বন্যার চিত্র জেনারেট করা শেখাতে তাঁদের বেশ কষ্ট হয়েছে। পানির প্রবাহ, অবস্থান, চারদিকের দৃশ্যের প্রতিফলনের মতো জটিল সব খুঁটিনাটি জিনিসপত্র সঠিকভাবে রেন্ডার করা না গেলে চিত্রগুলো বাস্তবসম্মত লাগবে না, সেটা দলের সবাই প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছিলেন।

প্রজেক্টটির মূল লক্ষ্য, সবার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং সেটি ঠেকানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী করা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি স্ক্রিনে বা কাগজের কিছু লেখা ও সংখ্যায় আটকে থাকায় অনেকের কাছেই সেটার প্রভাব আসলে কতটা বিস্তীর্ণ হতে পারে, সেটা সব সময় অনুধাবন করা সম্ভব হয় না।

চিরচেনা জায়গাগুলো ভবিষ্যতে কিভাবে বদলে যেতে পারে, সেটা সরাসরি দেখার পর অনেকেই অভ্যাস ও আইন বদলের যে কতটা প্রয়োজন, সেটা অনুধাবন করতে পারবে।

সিমুলেশনটি দেখতে হলে তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বেছে নিতে হবে পছন্দসই জায়গা। বিশ্বের সব দেশ ও শহরেই সিমুলেশনটি কাজ করে, তাদের তথ্যের জোগানদাতা গুগল ম্যাপস স্ট্রিটভিউ। ঠিকানা বাছাই করার পর দুর্যোগের ধরন ঠিক করে দিলেই কিছু সময় পর পাওয়া যাবে এআইয়ের তৈরি ছবি। নিজের বাসা, গ্রাম থেকে শুরু করে বিখ্যাত স্থানসব ছবি সহজেই জেনারেট করা যাবে সাইটটির মাধ্যমে।

 

মন্তব্য

কী দেখা গেল গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্টে?

    বার্ষিক গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্ট হয়ে গেল ১০ জুলাই। এতে উন্মোচিত হয়েছে নতুন ফোল্ডিং গ্যালাক্সি ফোন, গ্যালাক্সি ওয়াচ এবং গ্যালাক্সি বাডসের পাশাপাশি স্যামসাং স্মার্ট রিংও। বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ
শেয়ার
কী দেখা গেল গ্যালাক্সি আপ্যাকড ইভেন্টে?

বাডস ও ওয়াচের চিরচেনা স্যামসাং ডিজাইনে এবার দেখা গেছে বড়সড় পরিবর্তন। স্যামসাং স্মার্ট রিং হতে পারে আগামীর জনপ্রিয় ফ্যাশনেবল স্মার্ট প্রযুক্তিপণ্যে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ফোনগুলোই ছিল ইভেন্টের সবচেয়ে সাদামাটা ডিভাইস।

 

গ্যালাক্সি ফোল্ডেবল সিরিজ

স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬ ডিজাইন বর্তমান জেড ফোল্ড ৫-এর কাছাকাছি।

সামনের ডিসপ্লে কিছুটা বড় করা হয়েছে, ৬.৩ ইঞ্চি ডিসপ্লেটি আগের মডেলগুলোর মতো চওড়ায় অতিরিক্ত চিকন নয়। ভেতরের ডিসপ্লে অবশ্য থাকছে অপরিবর্তিত। ক্যামেরার ডিজাইনে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন, ট্রিপল ক্যামেরার প্রতিটি লেন্সের চারদিকে থাকছে বড়সড় বর্ডার, যাতে সহজে ক্যামেরায় দাগ না পড়ে। মূল ক্যামেরা থাকছে ৫০ মেগাপিক্সেল, টেলিফটো থাকছে ৩এক্স জুমসমৃদ্ধ ১০ মেগাপিক্সেল।
আলট্রাওয়াইডের সেন্সরটি নতুন, ১২ মেগাপিক্সেল রেজল্যুশনের সেন্সর, যাতে অন্ধকারে আরো ভালো ছবি তোলা যায়। স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ ফর গ্যালাক্সি প্রসেসর থাকছে ফোনটিতে, সঙ্গে ১২ গিগাবাইট র‌্যাম ও ন্যূনতম ২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজ। স্যামসাং অন্তত সাত বছর ফোনটিতে আপডেট দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে। বাকি সব হার্ডওয়্যার জেড ফোল্ড ৫-এর মতোই, শুধু ফোনটি কিছুটা পাতলা ও হালকা করা হয়েছে, সঙ্গে বেড়েছে এটির আইপি রেটিং।
এক্স৫ থেকে এখন ফোনটির আইপি ৪৫ রেটিংয়ে উন্নীত হয়েছে।

জেড ফ্লিপ ৬-এর হার্ডওয়্যারও ফ্লিপের মতোই। প্রসেসর বদলে দেওয়া হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ৩ ফর গ্যালাক্সি, ক্যামেরা হার্ডওয়্যার থাকছে এস২৪-এর মতো মূল ৫০ মেগাপিক্সেল ও আলট্রাওয়াইড ১২ মেগাপিক্সেল সেন্সর। র‌্যাম ও রম থাকছে ফোল্ডের মতোই, ১২ গিগাবাইট ও ২৫৬ গিগাবাইট। এই ফোনটিও করা হয়েছে ফ্লিপ ৫-এর চেয়ে কিছুটা পাতলা ও হালকা, ব্যাটারি ৪০০০ এমএএইচ-এ উন্নীত করা হয়েছে।

ফোনটিকে ওভারহিটিং থেকে বাঁচাতে যুক্ত হয়েছে ভেপর চেম্বার। এর বাইরে তেমন পরিবর্তন নেই।

গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৬-এর দাম শুরু এক হাজার ৮৯৯ ডলার থেকে। আর গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ৬-এর দাম ৮৯৯ ডলার থেকে শুরু। 

 

স্যামসাং বাডস

স্যামসাং বাডস ৩ এবং বাডস ৩ প্রো দেখতে অনেকটাই এয়ারপডসের মতো। বেশির ভাগ স্যামসাং-ভক্ত বিষয়টি নিয়ে হতাশ, এত দিন ধরে স্যামসাং নিজেদের বাডসগুলোতে এ রকম নিজস্ব ডিজাইন ব্যবহার করে আসছিল। চমৎকার সাউন্ড, ফাস্ট পেয়ারিং এবং কার্যকরী নয়েজ ক্যানসেলেশনের জন্য দুটি বাডসই অবশ্য প্রাথমিক রিভিউতে উের গেছে। বাডস ৩ প্রো মডেলে থাকছে সরাসরি বাডসের মধ্যেই লাইট স্ট্রিপ, যাতে চট করে ব্যাটারি লাইফ দেখে নেওয়া যায়। তবে এয়ারপডসের ডিজাইনের এত কাছাকাছি করে নতুন বাডস ডিজাইন করায় স্যামসাংয়ের নিজস্বতা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে, বলেছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

স্যামসাং বাডস ৩-এর দাম ১৭৯ ডলার থেকে শুরু।  বাডস ৩ প্রো-এর দাম ২৪৯ ডলার থেকে শুরু।

 

গ্যালাক্সি ওয়াচ এবং রিং

অ্যানড্রয়েড ওয়্যার ওএস চালিত সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টওয়াচ সিরিজ গ্যালাক্সি ওয়াচ। নতুন গ্যালাক্সি ওয়াচ ৭-এর মূল্য থাকছে অপরিবর্তিত, ২৯৯ ডলার থেকে শুরু। চেহারাও অনেকটা ওয়াচ ৬-এর মতোই রাখা হয়েছে, বৃত্তাকার অ্যামোলেড ডিসপ্লেসমৃদ্ধ ওয়াচটি বাজারের বাকি সব চতুষ্কোণ স্মার্টওয়াচের চেয়ে একেবারেই আলাদা।

গ্যালাক্সি ওয়াচ আলট্রা স্যামসাং পরিবারে নতুন সংযোজন। চারকোনা বডি ও কমলা বাটন এবং ন্যাটো স্টাইল স্ট্র্যাপ দেখে অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার কথাই মনে পড়বে। তবে বডি চারকোনা হলেও ডিসপ্লে থাকছে বৃত্তাকার। টাইটেনিয়াম বডি এবং স্যাফায়ার গ্লাস ডিসপ্লের ডিভাইসটি টানা ১০০ ঘণ্টা পর্যন্ত এক চার্জে চলতে সক্ষম। ডুয়াল ব্যান্ড জিপিএস, -২০ থেকে ৫৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় এবং ২৯ হাজার ৫২৭ ফিট উচ্চতায় পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকার মতো শক্তপোক্ত ডিজাইনের ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছে যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তাদের কথা মাথায় রেখেই। মূল্য শুরু ৬৪৯ ডলার থেকে।

 

গ্যালাক্সি রিং

স্যামসাং নিজেদের স্মার্ট রিং তৈরি করেছে হাতে স্মার্টওয়াচ না পরেই হার্টরেট, ব্রিদিং, দেহের উত্তাপ এবং ঘুমের মনিটরিং করার জন্য। বেশ কিছু ব্র্যান্ডের স্মার্ট রিং এর মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, স্যামসাংও অবশেষে বাজারে প্রবেশ করল। এক চার্জে প্রায় এক সপ্তাহ চলবে গ্যালাক্সি রিং, পাওয়া যাবে ম্যাট ব্ল্যাক, সিলভার এবং গোল্ড তিনটি রঙে। রিংটি ব্যবহার করার জন্য লাগবে অ্যানড্রয়েড ফোন, সব ফিচারের জন্য গ্যালাক্সি ফোন থাকা আবশ্যক। মূলত যারা ফ্যাশনসচেতন বা দীর্ঘ সময়, বিশেষ করে ঘুমের মধ্যে ঘড়ি পরতে আগ্রহী নয়, তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ডিভাইসটি। মূল্য ৪০০ ডলার থেকে শুরু।

মন্তব্য

ঘূর্ণিঝড় খুঁজতে ড্রোন

    সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় হারিকেনের প্রবল ঘূর্ণিবাতের কারণে উপকূল এলাকায় প্রাণ হারায় অসংখ্য জনজীবন। হারিকেনের তাণ্ডব থেকে জানমাল রক্ষার্থে এবার মাঠে নেমেছে সামুদ্রিক ড্রোন। তার কার্যকলাপ লিখেছেন আল সানি
শেয়ার
ঘূর্ণিঝড় খুঁজতে ড্রোন

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চল, মধ্য এবং পূর্ব-উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন। হারিকেনের পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্যাটাগরি-ফাইভ, যেটির গতিবেগ ২৫০ কিলোমিটারের ওপরে। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়গুলো প্রাথমিক অবস্থায় অল্প শক্তি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও দ্রুত ক্যাটাগরি ফাইভ হারিকেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিশেষ করে হারিকেন ওটিস গত বছরের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ মেক্সিকোর উপকূলে আঘাত হানে, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার।

গেরেরো রাজ্যের একটি বৃহৎ বন্দর ও জনপ্রিয় পর্যটন স্পট আকাপজল্কোতে আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষতি করেছিল এটি। তবে শুরুতে ওটিস এত বেশি শক্তিশালী ছিল না, আবহাওয়াবিদরা ওটিসের দ্রুত শক্তি সঞ্চয়ে কিছুটা অবাকও হয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর গবেষকদের ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ছোটখাটো ঝড়ও দ্রুত হারিকেনে রূপ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আকস্মিক বিপদ থেকে আগেই সতর্ক হতে ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) সেইলড্রোনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
সেইলড্রোনের বানানো সামুদ্রিক ড্রোনের নাম দেওয়া হয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নামানুসারেই।

সমুদ্রগামী ড্রোন তৈরি করা সেইলড্রোন আদতে একটি ডাটা কম্পানি। তবে তারা যে ড্রোন তৈরি করছে, এগুলো ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয়কারী হারিকেনের গতিবিধি নজর রাখতে এখন পর্যন্ত শতভাগ সক্ষম। এই সেইলড্রোনগুলো সেন্সরের মাধ্যমে সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলের অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি সংস্থার কাছে রিলে করে প্রেরণ করে এবং পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ করে ঝড়ের সম্ভাব্য অবস্থান ও গতিবিধির ব্যাপারে সচেতন হয়।

বায়ু অথবা সৌর যেকোনো নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে চলা এসব ড্রোন দেখতে অনেকটা পালতোলা নৌকার মতো। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন আকারের ড্রোন বানিয়েছে সেইলড্রোন। ২৩ ফুট, ৩৩ ফুট বা ৬৫ ফুটসব ধরনের ড্রোন আছে তাদের। সূর্যের তীব্রতা, বায়ু চলাচলের পথসব কিছু ট্র্যাক করে যথেষ্ট তথ্যবহুল ডাটা প্রদান করে বলে দিন দিন নির্ভরযোগ্য যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে এগুলো। সেইলড্রোনগুলো সমুদ্রের পানির নিচের ঢেউ থেকেও ডাটা ক্যাপচার করতে পারে ও সমুদ্রের স্রোত বিশ্লেষণ করতে সক্ষম এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে ৩০০০০ ফুট (৯১৪৪ মিটার) ও নিচের দিকে ১০০০ ফুট (৩০০ মিটার) গভীরতায় পরিষ্কার ছবিও তুলতে পারে।
সেইলড্রোনের মিশন ব্যবস্থাপনার পরিচালক জুলিয়া প্যাক্সটন বলেন, সামুদ্রিক এই ড্রোনগুলোর কাজ হারিকেনের ভবিষ্যদ্বাণী করা নয়, শুধু হারিকেনগুলো কেন ও কিভাবে তীব্র হয়ে উঠছেসেসব বিষয়ে গবেষণা করা, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের ঝড়ের মডেলিং আমরা আরো উন্নত করতে পারি। সেইলড্রোনের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে এনওএএ-এর বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যার ফলে হারিকেন কোথায়, কত শক্তিতে আঘাত হানতে পারেতা আরো নিখুঁতভাবে জানতে সক্ষম হয়। আর এ তথ্যই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ অঞ্চলগুলোর জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করবে বলে আশাবাদী সবাই।

মন্তব্য

আরিয়ানের রোবটেরা

    একদিকে শ্রমিকের অভাব, অন্যদিকে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীন জীবন—এই দুইয়ের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে ‘গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বুয়েটিয়ান আরিয়ান কবিরের পথচলার গল্প জানাচ্ছেন আল সানি
শেয়ার
আরিয়ানের রোবটেরা
আরিয়ান কবির

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক ছাত্র আরিয়ান কবির ২০২০ সালে তাঁর দুই ভারতীয় সতীর্থ ব্রুয়াল শাহ ও সতেন্দ্র কে. গুপ্তাকে নিয়ে শুরু করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হলেও সেবা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে।

বিশ্বব্যাপী রোবোটিকসকে এগিয়ে নিতে সৃজনশীল ও শক্তিশালী উদ্ভাবকদের দেওয়া হয় বিআরআর৫০ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড। ২০২০ সালে যেটি পায় গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস।

 

শুরুর কথা

আরিয়ান কবির পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয় নিয়ে। তবে বুয়েটে ভর্তির আগে থেকেই আরিয়ানের বেশ আগ্রহ ছিল রোবট নিয়ে। দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে দেওয়া, বিপজ্জনক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা ইত্যাদি কাজের জন্য রোবট কিভাবে বানায়, সেসবও ছিল তাঁর চিন্তায়। তবে আরিয়ান চাইতেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এসব রোবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিক।

এসব চিন্তা-ভাবনা থেকেই রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোগ বিষয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজখবর নিয়ে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে। ২০১৩ সালে স্নাতক শেষ করলেও স্নাতকোত্তর না করেই সরাসরি পিএইচডি প্রগ্রামে যুক্ত হন আরিয়ান। পিএইচডি প্রগ্রামে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বিভিন্ন রোবোটিকস সিস্টেমকে অটোনোমাস (স্বয়ংক্রিয়) কিভাবে করা যায় সেসব বিষয়ে।
প্ল্যানিং ও লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে কঠিন ও জটিল কাজে রোবোটিক সিস্টেম উন্নত করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।

২০১৬ সালে আরিয়ান তাঁর অধ্যাপকের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসেন। সেখানকার ল্যাবে বিভিন্ন শিল্প উৎপাদকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তখন বড় একটি অ্যারোস্পেস প্রতিষ্ঠান থেকে জানতে পারেন তারা নিজেদের মাল্টি মিলিয়ন ডলারের হেলিকপ্টার ব্লেড এখনো হাতে বানায়। তবে এই কাজে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল ওই সময়।

বিশেষ করে ফিনিশিংয়ের কাজের জন্য দীর্ঘ সময় শ্রমিক নিয়োগ ও রাসায়নিকের প্রভাবে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ছিল চিন্তার কারণ। পুরনো কর্মী ও শ্রমিকরা অবসর নেওয়ার পর নতুনরা খুব বেশিদিন এসব কাজে মনোসংযোগ করতে পারছিল না। আর এসব কারণে তারা পড়েছিল শ্রমিক সংকটে। একটু গবেষণা করে ওই সময় আরিয়ান জানতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৮ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি রোবট ব্যবহার করে না। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এই বাজারে জায়গা করে নিতে আরিয়ান ও তাঁর সহকর্মীরা মিলে গড়ে তোলেন গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস

 

শ্রমিক সংকট থেকে মুক্তি দিতে 

যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক সংকট নতুন নয়। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর বেশ কিছু অঞ্চলে ৪৪ হাজারের বেশি রোবট অর্ডার করেছিল বিভিন্ন কম্পানি। প্রযুক্তি কম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সিং অটোমেশন বা এ৩-এর তথ্য বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে এটি ১১ শতাংশ বেশি। রোবট শ্রমিকের বাজার দাঁড়িয়েছে ২৩৮ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছরও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংকট বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ঘাটতি উৎপাদন শিল্পে। প্রায় আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের এই উৎপাদনশিল্পে বিপজ্জনক বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিক মেলানো কঠিন, যার কারণে ক্রয়াদেশের পাহাড় ক্রমাগত বেড়েই চলছে। অনেক কারখানারই ব্যাকলগে পড়ে আছে দুই থেকে তিন বছরের কাজ। এই সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করা হলেও প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁদেরও কাজে লাগানো যাচ্ছে না পুরোদমে। পরিসংখ্যান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৮ লাখ শ্রমিকের পদ শূন্য। শূন্য পদের বিপরীতে যখন মানব শ্রমিকের অভাবে ধুঁকছে শিল্পোন্নত এসব দেশ, সেখানেই এগিয়ে এসেছে আরিয়ান কবিরের প্রতিষ্ঠান। গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কর্মদ্দীপ্ত এআইসমৃদ্ধ রোবট নিয়ে হাজির হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে। মানব শ্রমিকের চেয়ে কম খরচ ও প্রায় শূন্য ঝুঁকির কারণে শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকছে গ্রে ম্যাটার রোবটিকসের দিকে।

 

সাধারণ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট

গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস নিজেরা বানায় না কোনো রোবট। যে কাজের জন্য তাদের রোবট লাগে, সেই কাজের উপযোগী রোবট তারা বাজার থেকে কিনে আনে। হার্ডওয়্যারভিত্তিক এই রোবটগুলোতে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রগ্রাম সেট করে দেয়। আরিয়ানের প্রতিষ্ঠানটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) একটি সফটওয়্যার কম্পানি। স্পেসিফিক সেন্সর, টুলস যুক্ত করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে তারা বাজারের সাধারণ রোবটকে বানিয়ে তোলে একটি বুদ্ধিমান যন্ত্র হিসেবে। বর্তমানে তাদের রোবট বিভিন্ন সারফেস ফিনিশিংয়ের কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। সেন্ডিং, পলিশিং, কোটিং, গ্রাইন্ডিং, পেইন্টিংসহ যেখানে হাত দিয়ে কাজ করা হয়, সেখানেই কাজ করে এটি।

আরিয়ানের রোবটেরা

ভাড়ায় খাটা রোবট

আরিয়ানের প্রতিষ্ঠানের রোবটগুলো গ্রাহকরা না কিনেও ব্যবহার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের মতো ভাড়া নেওয়ার সুবিধা রাখা হয়েছে। আর এ কারণে রোবট কেনার জন্য এককালীন বিশাল খরচ থেকে বেঁচে যায় কারখানাগুলো এবং ক্রয়াদেশের ওপর ভিত্তি করে রোবট কম-বেশি করে ভাড়াও নিতে পারে তারা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এসব রোবটের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা মানব শ্রমিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

 

বিনিয়োগ যখন ৭৩১ কোটি টাকার

আরিয়ানের প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই বছর আগে বিনিয়োগ পেয়েছিল ২০০ কোটি টাকার বেশি। চলতি বছর তারা বিনিয়োগ পেয়েছে আগেরবারের চেয়ে প্রায় তিন গুণ। বাংলাদেশি টাকায় ৫৩১ কোটি বা সাড়ে চার কোটি ডলারের বি সিরিজ বিনিয়োগে সবার প্রথমে নাম আসে ওয়েলিংটন ম্যানেজমেন্টের। তা ছাড়া এই বিনিয়োগে যুক্ত আছে এনজিপি ক্যাপিটাল, ইউক্লিডিয় ক্যাপিটাল, অ্যাডভান্স ভেঞ্চার পার্টনারস ও এসকিউএন ভেঞ্চার পার্টনারস। থ্রিএম ভেঞ্চারস, বি ক্যাপিটাল, বো ক্যাপিটাল, ক্যালিব্রেট ভেঞ্চারস, ওসিএ ভেঞ্চারস ও সুইফ ভেঞ্চারসের বিনিয়োগে আরিয়ান কবিরের প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে আগেই। সাড়ে চার কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগ দিয়ে গ্রে ম্যাটার রোবোটিকস আরো নতুন ধরনের পণ্য ও সেবা নিয়ে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এর উদ্যোক্তারা। তা ছাড়া পুরনো গ্রাহকদের নতুন যেকোনো চাহিদা পূরণ করতেও রাখা হয়েছে আলাদা বরাদ্দ। বাকি অর্থ ব্যয় হবে নতুন নতুন গ্রাহক সৃষ্টি ও মার্কেটিংয়ের কাজে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ