ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

  • গাজীউল হাসান খান
শেয়ার
যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং এমন কি জ্যোতিষীদের মধ্যেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রাক-নির্বাচনকালীন জনমত জরিপকারী গণমাধ্যম কিংবা সংস্থার হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী এবার ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে রিপাবলিকানদলীয় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা নির্বাচনী লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ৪৩টিতে প্রাক-নির্বাচনকালীন জরিপে উভয়েই পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ করে জনপ্রিয় ভোট।

আর বাদবাকি সাতটি দোদুল্যমান রাজ্যের (সুইং স্টেটস) কমবেশি ৭ শতাংশ ভোটই নির্ধারণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন। নিজেদের ভোট প্রদানের বেলায় যারা আগে থেকেই কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে, তারা সাধারণত দেখেশুনে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। সে কারণে আগে থেকেই চূড়ান্তভাবে ফলাফলের ব্যাপারে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এটা গেল নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফলের এক দিক।

অন্যদিকে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো, বিরোধীদের ভাষায়, একগুঁয়ে মনোভাবাপন্ন প্রার্থী, যিনি নির্বাচনে যেকোনো ব্যবধানে হেরে গেলে ফলাফল মেনে নেবেন কি না? তা ছাড়া মিশিগান, জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, আরিজোনা কিংবা নাভাডার মতো অঙ্গরাজ্যে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখলে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে দিতে পারেন। সেসব অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের সহায়ক বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে বহুদিন যাবৎ বিরোধী ডেমোক্র্যাটসরা অভিযোগ করে আসছে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচন কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন, ইউক্রেন এবং এমনকি গর্ভনিরোধ ইস্যুতেও বিভিন্ন রাজ্যের বিপুলসংখ্যক ভোটার স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কূটনীতিসহ দু-একটি মানবাধিকার আন্দোলনসংক্রান্ত পেশায় দীর্ঘদিন কাজ করা এবং সরেজমিনে বেশ কয়েকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাছে থেকে দেখার ফলে আমার এ অভিজ্ঞতা জন্মেছে যে এখন আর যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবোধগতভাবে আগের অবস্থানে নেই।

অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী বা কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সর্বজনীন নীতিমালা হারিয়ে যেতে বসেছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের কর্তৃত্ব কিংবা আধিপত্য ধরে রাখার জন্য নির্দ্বিধায় সব কিছু অগ্রাহ্য করে চলেছে। এর প্রমাণ ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনের গণহত্যামূলক সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা। দ্বিচারিতা এবং দ্বৈত চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ সর্বত্র দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ অপকৌশলের সূচনা সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের (জুনিয়র) সময় হলেও পরিপূর্ণতা পেয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে, যা থেকে ডেমোক্র্যাটদলীয় বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও মুক্ত হতে পারেননি।
তবে এ ক্ষেত্রে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি ও কূটনীতিকে ষোলোকলায় পরিপূর্ণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ অভিযোগ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলীয় রাজনীতিক কিংবা সমর্থকদের নয়, এ অভিযোগ এখন বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রমনা সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষেরও। ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো প্রথাগত রাজনীতি থেকে আসেননি। তাঁর যেমন নেই কোনো প্রশাসনিক পূর্ব অভিজ্ঞতা, তেমনি নেই কোনো উচ্চশিক্ষা কিংবা উন্নত দর্শন। বলা হয়েছে, ট্রাম্পের আর কিছু না থাকুক, আছে সব কিছু অগ্রাহ্য করার এক দারুণ স্পর্ধা। সব কিছু নিজের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী বদলে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছাশক্তি। আমেরিকাই প্রথম এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী ডোনাল্ড ট্রাম্প গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে তাঁর কর্তৃত্ব কিংবা আধিপত্যবাদী ধ্যান-ধারণা বাস্তবায়িত করতে চান। তাঁর একগুঁয়েমি, গোঁয়ার্তুমি কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন নীতি-নৈতিকতা বিশ্বশান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শুধু আমেরিকায়ই নয়, বিশ্বব্যাপী এক বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি ডেকে আনবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। সে কারণেই প্রথাগত রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক সিনেটর কমলা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত এবং অস্বস্তিবোধ করছেন। পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র গণতন্ত্রমনা যুক্তরাষ্ট্রবাসী।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/04-11-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpgযুক্তরাষ্ট্র্যের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার ভোট দেবে ৬২ মিলিয়ন ভোটার। তাদের মধ্যে নারী এবং অপেক্ষাকৃতভাবে শিক্ষিত তরুণরা রয়েছে কমলা হ্যারিসের পক্ষে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নারীদের গর্ভনিরোধ, অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান উত্তেজনা কমিয়ে এনে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করাই হ্যারিসের মূল উদ্দেশ্য। তার পাশাপাশি রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি অভিবাসন সম্পূর্ণ বন্ধ করা, গর্ভনিরোধের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা, যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার মাধ্যমে নিজ দেশের মানুষের অবস্থার আমূল পরিবর্তন করাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্য। সব কিছুতেই তাঁর আমেরিকা ফার্স্ব নীতি অব্যাহত রয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অল্পশিক্ষিত, বেকার ও প্রকারান্তরে বর্ণবাদ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী নয় এমন সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানই এখন ট্রাম্পের শিবিরে ভিড় জমিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের ধারণা (ট্রাম্প সমর্থক), ট্রাম্প আবার ক্ষমতাসীন হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আবার শীর্ষ অবস্থানে চলে যাবে। এবং অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারবে না। ফলে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গসহ হিসপানিক কিংবা লাতিনোদের কর্মসংস্থানের অভাব হবে না। ট্রাম্প সমর্থকদের নির্বাচনকালীন সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে, তারা অভুক্ত ও কর্মহীন থেকে কেন অবৈধ অভিবাসীদের ভরণপোষণ করবে? কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রচুর নির্মাণকর্মীসহ পেশাজীবী মানুষ প্রয়োজন, যাদের অভাবে নির্মাণ, প্রকৌশল কিংবা সেবা খাতে প্রচণ্ড সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা আইন-শৃঙ্খলার ধার ধারে না। ফলে কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা এশীয়দের ওপর সশস্ত্র হামলা কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করার কোনো জোর দাবি তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে না। তাতে প্রাথমিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে অবৈধ অস্ত্রধারীরা গোলাবর্ষণ করে অসহায় ও নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা করে চলে যায়। তার পাশাপাশি পাশবিক অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় নাগরিকদের ওপর। এর তেমন বিশেষ কোনো প্রতিকার নেই।

ট্রাম্প সমর্থকদের ভাষ্য হচ্ছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, অবৈধ অভিবাসন বন্ধ হবে, গর্ভনিরোধের প্রতিকার হবে এবং রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশীয় অর্থনীতি ও বহির্বাণিজ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যে অবৈধ ও বেআইনি পন্থায় রিপাবলিকানরা এবং তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনতে চান, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে নীতি-আদর্শ কিংবা মূল্যবোধ বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটি অনৈতিক, পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও কর্তৃত্ববাদী অমানবিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাতে গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ এবং আইনের শাসন বলতে কিছুই থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র পরিণত হয়ে উঠবে একটি আধিপত্যবাদী ও যুদ্ধবাজ জাতিতে, যারা মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ ও তাইওয়ানসহ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে প্রতিহিংসার বিষবাষ্প। অনেকের ধারণা, এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের শেষ পর্যন্ত পরাজয় হলে সমগ্র বিশ্ব ক্রমে ক্রমে শোষণ, অপশাসন, সংঘাত-সংঘর্ষ এবং বৃহত্তর যুদ্ধ-বিগ্রহের দিকে এগোবে, যা বিশ্বকে শেষ পর্যন্ত ধ্বংস করবে। ইহুদিবাদী ইসরায়েলসহ বিশ্বে আরো দু-একটি দেশ সে অবস্থার জন্য অপেক্ষা করে বসে রয়েছে। তাদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি অলিখিত সখ্য ও মৈত্রীর সম্পর্ক রয়েছে, যা অস্বীকার করা যায় না। বয়োবৃদ্ধ দুর্বল বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করতে সমর্থ হননি, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ফিলিস্তিন ও ইউক্রেনসহ বিশ্বের দিকে দিকে। চীন-রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিরাজমান উত্তেজনা কিংবা সংকটের নিরসন ঘটাতে পারেননি বাইডেন। যার ফলে উদ্ভব ঘটেছে বৈশ্বিক দক্ষিণে ব্রিকস নামক উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থাটির। এ অবস্থায় কোনোমতে ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে বাড়াবাড়ি করলে যুক্তরাষ্ট্রের পরাশক্তিগত আধিপত্য কিংবা বাণিজ্যগতভাবে ডলারের প্রভাব প্রতিপত্তি অতিদ্রুত হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অতল কৃষ্ণগহ্বরে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো তাদের কার্যকারিতা হারাবে অতি দ্রুত।

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পরিক্রমায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তার ব্যবধান কমে এসেছে মৃদু মন্থরগতিতে। বাস্তব অবস্থায় নির্বাচন করার কথা ছিল ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। কিন্তু বয়সজনিত বিভিন্ন জটিলতা এবং বিশেষ করে দুর্বলতার কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর দ্বিতীয় টার্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের হাতে ছেড়ে দেন। ফলে শেষের দিকে কমলা হ্যারিস তাঁর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতার প্রচার-প্রপাগান্ডার জন্য সময় পেয়েছেন মাত্র দুই মাস। অথচ তাঁর প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই সোচ্চার এবং সক্রিয় রয়েছেন। এ অবস্থায় কমলা হ্যারিসের বিশেষ ভরসাস্থল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নারীকুল এবং অপেক্ষাকৃত তরুণদের ভোট। ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন যুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের কারণে ডেমোক্রেটিকদলীয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়, বিশেষ করে আরব ও এশীয়দের সমর্থন হারিয়েছেন ব্যাপকভাবে। তা ছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ, হিসপানিক কিংবা লাতিনো ভোটারদের মধ্যেও বিশাল ফাটল ধরিয়েছেন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষশাসিত সমাজে কমলা হ্যারিস একজন দক্ষিণ এশীয় অশ্বেতাঙ্গ। তদুপরি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রবাসী আগে কখনো নির্বাচিত করেনি। সাবেক নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন তাঁর দলের একজন নারী প্রার্থীর জন্য সর্বান্তঃকরণে মাঠে নামবেন বলে ঘোষণা দিলেও সেভাবে কখনো নামতে পারেননি ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণে। তবে শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমেছিলেন এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন স্ত্রী মিশেল ওবামা। এ জনপ্রিয় দম্পতি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের পক্ষে উল্লেখযোগ্যভাবে জনমত গঠন করতে সমর্থ হয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ বিশ্লেষকদের ধারণা। তাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কমলা হ্যারিসের স্বচ্ছ রাজনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তুলে ধরেছেন দেশবাসীর কাছে। তারপরেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাররা তাদের সব মানসিক বাধাবিপত্তি এবং সংস্কার কাটিয়ে কমলা হ্যারিসের মতো একজন শিক্ষিত, প্রাজ্ঞ, স্মার্ট ও কৌশলী নারী রাজনীতিককে ভোট দেওয়ার মতো সৎ সাহস ও অগ্রসরতার প্রমাণ দেবে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। তদুপরি পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, মিশিগান, আরিজোনা কিংবা নেভাডার মতো দোদুল্যমান রাজ্যে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখলে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে দিতে পারেন। তা ছাড়া নির্বাচনে হেরে গেলে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন কি না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিপ্রিয় নাগরিক ও বিশ্ববাসী যথেষ্ট উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি, সামরিক ও অসামরিক প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত কারণে বিশ্ববাসীর কাছে যেন একটি সর্বজনীন নির্বাচন। তাই সবাই চায় একটি শান্তিপূর্ণ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা অশান্তি চায় না। এখন সার্বিক পরিস্থিতি এবং ফলাফল কোন দিকে যায় সেটিই দেখার বিষয়।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়াশিংটন দূতাবাসে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক মিনিস্টার (প্রেস ও তথ্য)

gaziulhkhan@gmail.com

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

নেটফ্লিক্স স্রেব্রেনিচা ও গাজা

    জিয়াউদ্দিন সাইমুম
শেয়ার
নেটফ্লিক্স স্রেব্রেনিচা ও গাজা

মুসলিম গণহত্যা যদি স্রেফ রসিকতার ব্যাপার হয়ে থাকে, তাহলে পশ্চিমা মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠা নেটফ্লিক্স বসনিয়ার স্রেব্রেনিচা আর ফিলিস্তিনের গাজার গণহত্যা নিয়ে নির্দয় রসিকতা করে মোটেও ভুল করেনি। কারণ পশ্চিমারা সভ্যতার ডেফিনেশন নিয়ে পাঁয়তারা করে বেড়ালেও মুসলিম ইস্যুতে নাক সিঁটকাতে মোটেও ভুল করে না। নেটফ্লিক্স তো পশ্চিমা মূল্যবোধের বাইরে যেতে পারে না।

গণহত্যা অথবা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে একসময় পশ্চিম বিশ্বে আর কখনো নয় উচ্চারিত হতো কাঁপতে থাকা নিপাট আন্তরিকতার সঙ্গে।

এই মন্ত্রটি ছিল অজাত প্রজন্মের কাছে পশ্চিমা প্রতিশ্রুতি : গণহত্যার ভয়াবহতার আর কখনো পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু আজ ডিজিটাল প্রদর্শনী এবং রাজনৈতিক দায়মুক্তির যুগে আর কখনো নয় মাঝে মাঝে আবার কখনো হয়ে উঠেছে। এবং এই গ্রহবাসী স্মৃতির এক ভয়াবহ বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছে।

ওয়ারশ ঘেটো আর স্রেব্রেনিচা থেকে গাজা পর্যন্ত গণহত্যার চিত্র, বিশেষ করে শিশুদের দুর্ভোগকেবল তার পবিত্রতাই হারায়নি, এটি উপহাস, কৌতুক এবং বিনোদনের সবচেয়ে নিন্দনীয় রূপে পরিণত হয়েছে।

এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং অমীমাংসিত ইতিহাস এবং অমীমাংসিত মূল কারণগুলো কিভাবে সহিংসতার প্রতি সংবেদনশীল এবং প্রদর্শনের জন্য ক্ষুধার্ত একটি সংস্কৃতি তৈরি করেছে, তারই প্রতিফলন।

অসংবেদনশীলতার এক মর্মান্তিক প্রদর্শনীতে, ডাচ নেটফ্লিক্স কমেডি ফুটবল প্যারেন্টসে এমন একটি দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যেখানে স্রেব্রেনিচা গণহত্যার শিকারদের তুলনা আনাড়ি শিশু ফুটবল খেলোয়াড়দের সঙ্গে করা হয়েছে, যা বসনিয়ান গণহত্যাকে একটি কৌতুকে পরিণত করেছে।

১৯৯৫ সালে ডাচ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের তত্ত্বাবধানে আট হাজারেরও বেশি বসনিয়ান মুসলিম পুরুষ ও ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিল। ডাচ সেনারা কেবল গণহত্যা রোধ করতে ব্যর্থ হয়নি, বরং এতে সক্রিয় অংশগ্রহণও করেছিল।

নেদারল্যান্ডস এই পৃথিবীতে তিনটি বড় গণহত্যার সঙ্গে যুক্তহলোকস্ট, বসনিয়ান গণহত্যা এবং এখন গাজায় গণহত্যা।

গাজায় গণহত্যা রোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ডাচ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা করা হচ্ছে। এদিকে একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ডাচ নাগরিক হলোকস্টে অংশ নিয়েছিল।

অস্বীকার কেবল একটি পরোক্ষ চিন্তা নয়, এটি গণহত্যা প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেমনটি ইসরায়েলি টিকটক সেলিব্রিটিদের মধ্যে দেখা যায়, যারা গাজার ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য অনুদানের ভান করে ভাইরাল প্রাংক ভিডিও তৈরি করে, অথচ আবেদনটিকে তারা একটি নিষ্ঠুর রসিকতা হিসেবে প্রকাশ করে।

প্রশ্ন হতে পারে, পশ্চিমারা মূল্যবোধের এই স্তরে কিভাবে এসে পৌঁছল? কঠিন সত্য হলো তারা কখনো গণহত্যার চেতনা থেকে সত্যিকার অর্থে দূরে সরে যায়নি বা যেতে পারেনি।

ইতিহাস বলছে, পশ্চিমাদের গালভরা আর কখনো নয় শব্দবন্ধ বা আপ্তবাক্যটি বাস্তবে কখনো ছিল না। পশ্চিমারা তাদের দর্শন ও সংস্কৃতি থেকে বর্ণবাদ, উপনিবেশবাদ, অমানবিকীকরণ, সামরিকবাদের মূল কারণগুলো কখনো বাদ দিতে পারেনি। পরিবর্তে, হলোকস্টকে ইন্ধন জোগানো একই মতাদর্শগুলো নতুন সময়ে নতুন অভিব্যক্তি খুঁজে পায়, নতুন সংস্থাগুলোকে লক্ষ্য করে।

জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগরি স্ট্যান্টন গণহত্যার ১০টি ধাপের রূপরেখা দিয়েছেনশ্রেণিবিভাগ, প্রতীকীকরণ, বৈষম্য, অমানবিকীকরণ, সংগঠন, মেরুকরণ, প্রস্তুতি, নিপীড়ন, নির্মূলকরণ এবং অস্বীকার, যা তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনো এড়াতে পারেনি। ভাষাগতভাবেও তাদের প্রতিশ্রুতি সর্বদা ভঙ্গুর ছিল। তবে তাদের একটি মন্ত্র ভবিষ্যদ্বাণীতে পরিণত হয়েছে, আবার চিরকাল।

পশ্চিমে, বিশেষ করে অতীতের গণহত্যায় জড়িত দেশগুলোর সাংস্কৃতিক প্রচারণায় শিশুদের দুঃখ-কষ্ট ন্যায্য খেলায় পরিণত হয়েছে। পবিত্রতা এখন অপবিত্র। পশ্চিমা মিডিয়ায় শিশুরা সর্বদা একটি নির্দিষ্ট বিনোদনমূলক মূল্য ধারণ করে। তাদের ব্যথা আলোকিত, তাদের অশ্রু আবেগগতভাবে শক্তিশালী। কিন্তু দুঃখ-কষ্টকে উপস্থাপন করা এবং তা শোষণ করার মধ্যে একটি সূক্ষ্মরেখা রয়েছে। এবং আজ সেই রেখাটি কেবল অতিক্রম করা হয় না, এটি মুছে ফেলা হয়। তাই লাইভস্ট্রিম করা যুদ্ধ এবং অ্যালগরিদমচালিত সম্পৃক্ততার যুগে গণহত্যা আর কেবল একটি অপরাধ নয়, এটি আত্মতৃপ্তিও বটে। ওবামানা মানে বসনিয়ান গণহত্যা ছিল টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত প্রথম গণহত্যা। এরই ধারাবাহিকতায় গাজার গণহত্যা প্রথম সম্পূর্ণ ডিজিটাল গণহত্যা হয়ে উঠেছে।

স্মার্টফোনগুলো বাস্তব সময়ে শিশুদের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো ধারণ করে। লাইভস্ট্রিমে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া পুরো পরিবারগুলোকে দেখানো হয়শুধু সেই ছবিগুলোকে ব্যঙ্গ, অস্বীকৃতি অথবা আরো খারাপ প্যারোডি দ্বারা ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য। এটি সিস্টেমের কোনো বাগ নয়। এটি আজকের ক্ষমতা কিভাবে কাজ করে, তার একটি বৈশিষ্ট্য। গণহত্যা রোধ করতে ব্যর্থ একই রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের সাংস্কৃতিক শিল্পে তার শিকারদের উপহাসকে বিকশিত হতে দেয়। তবে গাজা এই নির্মম সত্যকে নিশ্চিত করে : একবার আমরা একটি গণহত্যাকে ক্ষমা করে দিলে, আমরা পরবর্তী গণহত্যাটিকে সক্ষম করে তুলব, অনিচ্ছা সত্ত্বেও।

নেটফ্লিক্স শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের বিকৃত শ্রেণিবিন্যাস উন্মোচিত করে, যেখানে এমনকি স্বর্ণকেশী, নীল চোখের ইউরোপীয় মুসলিম গণহত্যার শিকারদেরও পূর্ণ মানবতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। রিড হেস্টিংস এবং ডেভিড হাইম্যান সিরিজটি অপসারণের অযোগ্য বলে মনে করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব নতুন একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে; যার মূলমন্ত্র হিসেবে দাবি করা হয় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট হতে থাকেপশ্চিমাদের এই নীতিমালা সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়, বরং একেক দেশের জন্য তা একেক রকম।

নেটফ্লিক্সের কথা বাদ দিন। পশ্চিমা দুনিয়ায় বিধর্মী শত্রু অথবা সংখ্যালঘু হিসেবে মুসলমানরাই এখন প্রচারমাধ্যমের সবচেয়ে বড় টার্গেট। একটি তথ্য জানালেই সেটি টের পাওয়া যাবে। ডেনমার্কে গত বছরের ১৫ মে থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের ছয়টি জাতীয় সংবাদপত্র এবং দুটি টিভি চ্যানেলের ওপর জরিপে দেখা গেছে, সেখানকার মিডিয়া কাভারেজের ৭৫ শতাংশই ইসলাম সম্পর্কিত এবং তার মধ্যে ৬০ শতাংশই নেতিবাচক অর্থাৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ।

পশ্চিমের প্রচারমাধ্যম এমনভাবে মুসলমানদের সামাজিক পরিচয় বানায়, যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসের আশ্রয় নেওয়াটা একমাত্র তাদেরই বৈশিষ্ট্য। সহজেই পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমগুলো ভুলে যায়, মুসলমানদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালনা শুরু করার বহু আগে থেকে পৃথিবীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপকভাবেই ছিল। উদাহরণ হিসেবে ফিলিস্তিনে সারা দুনিয়ার ইহুদিদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে স্টার্ন গ্যাংইরগান এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসি যেভাবে রাজনৈতিক সন্ত্রাস ব্যবহার করেছে, তা যেকোনো মুসলিম সন্ত্রাসকে ম্লান করে দেয়। অথচ মুসলিমরাই এখন দুর্ভাগ্যে ভাগ্যবান!

 

লেখক : সাংবাদিক, গবেষক

 

মন্তব্য

বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা : আরো অভিযান প্রয়োজন

    ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
শেয়ার
বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা : আরো অভিযান প্রয়োজন

সম্প্রতি বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট রাজধানীর মিরপুর-১-এ একটি অভিযান পরিচালনা করেছে। সেখানকার কাঁচাবাজার ও পাখির দোকানগুলোতে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিক্রির জন্য আটকে রাখা ৫০টি দেশীয় বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযানে তিনটি পাহাড়ি ময়না, দুটি ঝুঁটিশালিক, দুটি গাঙশালিক, দুটি তিলা ঘুঘু, ১৪টি শালিক, দুটি হিরামন তোতা, ২৩টি টিয়া, একটি বাজপাখি ও একটি কড়ি কাইট্টা উদ্ধার করা হয়েছে।

এটি বন্যপ্রাণী প্রেমিকদের জন্য ভালো সংবাদ। বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ CITES-এর স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও সম্প্রতি অবৈধ পাখি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায়, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বন্যপ্রাণী আমদানি-রপ্তানি করায় বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২২ নভেম্বর জেনেভায় এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এটি সত্যি লজ্জাজনক ছিল।
সাইটিসের পরিশিষ্ট-১ অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা এমন কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আমদানি করা যেতে পারে, কিন্তু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়। পরিশিষ্ট-২-এ এমন উদ্ভিদ ও প্রাণী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেসব বিলুপ্তির হুমকির মধ্যে নেই, তবে তাদের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। পরিশিষ্ট-৩-এ রাখা হয়েছে এমন সব প্রজাতি, যা টেকসই পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশ বিক্রির উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গ্রেট সবুজ ম্যাকাও, নীল গলা ম্যাকাও, সামরিক ম্যাকাও, লাল মুকুট পেরাকীট, গোল্ডেন পেরাকীট আমদানি করেছে।

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী কোনো প্রকার অনুমোদন বা লাইসেন্স ছাড়া বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয়, শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। বন্যপ্রাণী বলতে বোঝাবে বন্য অবস্থায় থাকা যেকোনো প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, মাছ, পোকামাকড় এবং অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণী। ওই আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখির ট্রফি বা অসম্পূর্ণ ট্রফি, মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করলে, দখলে রাখলে বা ক্রয়-বিক্রয় করলে বা পরিবহন করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। এমন অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

 

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ৫২ ও ২৪ ধারার ক্ষমতাবলে সরকার পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২০ প্রবর্তন করে। এই বিধিমালা শৌখিন পোষা পাখি লালন-পালনকারী অর্থ কোন ব্যক্তি, যিনি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষা পাখি লালন-পালন করেন না এবং যাঁর কাছে কোনো প্রজাতির অনধিক ১০টি পাখি আছে।

বাংলাদেশে নিবন্ধিত মোট ৮২টি খামার রয়েছে। এরা বিধিমালা অনুযায়ী পোষা পাখির ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ ও এই বিষয়ে সচেতনতা না থাকায় যত্রতত্র পাখির অবৈধ ব্যবসা গড়ে উঠছে। পোষা পাখির লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনাবেচা ও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হয়। কোনো ব্যক্তি এই লাইসেন্স না নিলে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। লাইসেন্স পাওয়ার পর তাঁকে পজেশন সার্টিফিকেট নিতে হবে। এ ছাড়া কোনো পাখি নিজ মালিকানায় বা দখলে নিতে পারবেন না। প্রতিটি পাখির পজেশন সার্টিফিকেটের জন্য বার্ষিক ফিও দিতে হবে। প্রতিবছর এটি নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স বাতিল হলে পজেশন সার্টিফিকেটও বাতিল বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে পোষা পাখির খামারির ১০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স করতে হবে। পেট শপের ক্ষেত্রে লাইসেন্স ও প্রসেস ফি লাগবে ৫০০ টাকা। বছরে পজিশন ফি দিতে হবে দুই হাজার টাকা।

বিধিমালা অনুযায়ী শৌখিনভাবে পোষা পাখি লালন-পালন ও খামার পরিচালনার কিছু শর্ত আছে। যেমনশৌখিনভাবে এবং খামারে পোষা পাখি লালন-পালনের ক্ষেত্রে প্রতিটি পোষা প্রজাতির বিধিমালায় নির্দিষ্ট পরিমাপ অনুযায়ী নির্ধারণ করবে। খামারে প্রতিটি পোষা পাখি প্রজাতির খাঁচার মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার, খনিজ লবণ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও সুষম খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। খামারে প্রতিটি পোষা পাখির এবং খামারকর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা নিশ্চিত করতে হবে। খামারে পোষা পাখির বাচ্চা জন্মানোর পর বাচ্চার পায়ে রিং পরানোর পর রিং নম্বরসহ লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। পোষা পাখি কোনো অবস্থায়ই প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যাবে না। মৃত পোষা পাখির দেহাবশেষ মাটিচাপা দিতে হবে এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত খামারিরা রেজিস্টার্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বছরে এক বা একাধিক পোষা পাখি প্রদর্শন করতে পারবেন।

সম্প্রতি বন বিভাগের অপরাধ দমন ইউনিট যে অভিযান পরিচালনা করেছে, তা সত্যি আশাব্যঞ্জক। এ রকম অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা দরকার। একই সঙ্গে অনলাইন মনিটরিংও রাখা দরকার। কেননা অনলাইনেও নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিক্রি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশীয় নানা বন্যপ্রাণী বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের তথ্য মতে, নানা প্রজাতির পাখি তো আছেই, কাঠবিড়ালি, কচ্ছপও সেখানে বিক্রয় হয়। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্ল্যাটফর্মগুলোতেও দেশীয় বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের কড়া নজরদারি দরকার।

 

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক

mitra_bibhuti@yahoo.com 

 

মন্তব্য

ক্ষমতার পালাবদলে ব্যবস্থা আরো মর্মস্পর্শী

    সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
শেয়ার
ক্ষমতার পালাবদলে ব্যবস্থা আরো মর্মস্পর্শী

বর্তমান সরকারের প্রতিষ্ঠা ঘটেছে একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এবং সেই অভ্যুত্থানে মেয়েরা ছিলেন একেবারে সামনের কাতারে। আমাদের দেশের সব আন্দোলনেই মেয়েরা থাকেন। কিন্তু এবারের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তাঁদের অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব, এমনকি অভাবিতপূর্বও বলা চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তো বটেই, স্কুল-কলেজের মেয়েরাও পথে বের হয়ে এসেছে।

কেবল ঢাকায় নয়, প্রতিটি শহরে। মধ্যরাতে আবাসিক থেকে মেয়েদের রাজপথে এসে স্বৈরাচারবিরোধী মিছিল করা ও সমাবেশে যোগ দেওয়া আগে কখনো ঘটেনি। মেয়েরা লড়েছেন। সেবা-শুশ্রূষা এবং চিকিৎসাও করেছেন।
সরকারি হিসাবে শহীদ হয়েছেন ১১ জন নারী; প্রাণ হারিয়েছে ১৩২ জন শিশু।

মেয়েদের এই অংশগ্রহণ অভ্যুত্থানকে একটি সামাজিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস বলেও অনেকে ভেবেছিলেন। কিন্তু দিনের শেষে কী দেখা গেল? যে কে সেই। থোড় বড়ি খাড়া।

নারী নির্যাতন একটুও কমেনি, বরং বেড়েছে। দুটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। স্বভাবতই এরা দৃষ্টান্ত মাত্র, ঘটনার বিস্তারের কোনো পরিমাপ নয়। একটি ঘটেছে পটুয়াখালীর কলেজছাত্রী লামিয়া আক্তারের জীবনে। অপরটির শিকার হয়েছেন নরসিংদীর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন।
নাদিরা নারী অঙ্গন নামে একটি সংগঠনের সম্পাদক এবং হিস্যা নামে একটি পোর্টালেরও সম্পাদক। বোঝাই যাচ্ছে তিনি নারী-পুরুষের সমানাধিকার এবং সম্পত্তিতে নারীর সমান হিস্যার কথা বলেছেন। নরসিংদীর বাসিন্দা হেফাজতপন্থীদের সেটি সহ্য হবে কেন? তাঁরা কলেজ থেকে নাদিরার প্রত্যাহার চেয়েছেন। কী অভিযোগ, কেন অভিযোগ, পেছনে কোনো অভিসন্ধি রয়েছে কি না, সেসব বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি; হেফাজতিদের দাবি মেনে নিয়ে তাঁকে সাতক্ষীরায় বদলি করে দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরায় বদলির কথা শুনে তিনি প্রমাদ গুনেছেন। কারণ তিনি শুনেছেন যে সেখানে মৌলবাদীরা অত্যন্ত তৎপর। কিন্তু সাতক্ষীরা নিজেই যে তাঁকে পছন্দ করবে না, অতটা তিনি অনুমান করতে পারেননি। সাতক্ষীরার কিছু শিক্ষার্থী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে এবং জেলা প্রশাসকের কাছেও স্মারকলিপি জমা দিয়েছে নাদিরা ইয়াসমিনকে যেন কলেজে যোগ দিতে না দেওয়া হয় এমন দাবি জানিয়ে। সুন্দর কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেছেন, অভিযোগের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাদিরা ইয়াসমিনকে অবশ্য অতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয়নি। তদন্তের আগেই সাতক্ষীরা থেকে তাঁকে টাঙ্গাইলে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। নাদিরা ইয়াসমিনের পক্ষে এখন কে দাঁড়াবে? প্রতিবাদ অবশ্য দু-চারটি সংগঠন থেকে করা হয়েছে। তবে সেসবের তেমন প্রচার নেই। প্রতিবাদকারীদের কণ্ঠে যে জোর আছে তা-ও নয়। তা ছাড়া এখন কে-ই বা শোনে ভালো মানুষের কথা? নাদিরাকে কি শেষ পর্যন্ত চাকরি হারাতে হবে? আমরা জানি না।

ক্ষমতার পালাবদলে ব্যবস্থা আরো মর্মস্পর্শীকিন্তু পটুয়াখালীর লামিয়া আক্তার, বয়স যার মাত্র ১৭। তাকে যে প্রাণ দিতে হয়েছে, সেটি তো সবাই জানেন, যাঁরা খবরের কাগজ পড়েন। লামিয়ার বাবাকেও কিন্তু প্রাণ দিতে হয়েছে। এবং বাবার ওই প্রাণদানের ধারাবাহিকতায়ই লামিয়া তার বাঁচার অধিকারটি হারিয়েছে। বেঁচে থাকাটা অসম্ভব দেখে মেয়েটি আত্মঘাতী হয়েছে। তার বাবা জসিমউদ্দিন একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার ড্রাইভার ছিলেন। না, তিনি কোনো দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাননি। তিনি নিহত হয়েছেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে, ঢাকার মোহাম্মদপুরে। জসিমউদ্দিন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে তিনি থাকতেন ঢাকার আদাবর এলাকায়। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি দিশাহারা হয়ে পড়ে। শহীদ জসিমউদ্দিনকে দাফন করা হয়েছে তাঁর নিজের গ্রামে। তাঁর কন্যা লামিয়া এক বিকেলে গিয়েছিল বাবার কবর জিয়ারত করতে। সেখান থেকে সন্ধ্যায় সে যাচ্ছিল তার নানাবাড়িতে। পথিমধ্যে দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে। সেখানেই শেষ নয় কাহিনির। লামিয়ার মুখ বন্ধ করার জন্য ধর্ষকরা তার যে নগ্ন ছবি যথারীতি ভিডিও করে রেখেছিল, তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। বাবা শহীদ, কন্যা ধর্ষিতা। পরিবার বিপর্যস্ত, ধর্ষিতা কন্যা বিপন্ন। আশা-ভরসাহীন লামিয়া কী করবে ঠিক করতে পারেনি। প্রশ্ন ওঠে, এটিই কি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান মুখচ্ছবি? না, আমরা সেটি জানি না; এবং এটিও জানি যে সাধারণীকরণে ভ্রান্তি ঘটে। তবে এটি আমরা নিশ্চিত জানি যে পাষাণহৃদয় সমাজ ধর্ষকদের নিবৃত্ত করবে কী, উল্টো লামিয়াদেরই অসম্মান করে। লামিয়ার দশা হয়েছে একাত্তরে সম্মানজনক খেতাব প্রাপ্ত বীরাঙ্গনারদের মতোই। লামিয়া সাহসী মেয়ে। থানায় গিয়ে সে নালিশ করেছে। বদমাশদের মধ্যে দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু প্রতিকার তো সুদূরপরাহত, অপরাধীদের যে বিচার হবে সে নিশ্চয়তা লামিয়া পায়নি। প্রাণদানের ক্ষতিপূরণ হিসাবে শহীদ বাবার নামে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সোমবার সকালে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে গিয়ে টাকাটা লামিয়ার নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লামিয়ার পক্ষে বাবার মৃত্যু, নিজের অপমান, বিচারে বিলম্ব, পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটএতসব অত্যাচার সহ্য করা নিশ্চয়ই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল, নইলে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শনিবার রাতেই সে গলায় ফাঁস দিয়ে সব যন্ত্রণার অবসান ঘটাবে কেন? লামিয়ার আহত বাবা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে ১০ দিন লড়াই করে মারা গেছেন, আহত লামিয়া তার অপমান ও বেদনার সঙ্গে লড়াই করেছে ৩৮ দিন, তার পরে আর পারেনি; নিজেই শেষ করে দিয়েছে নিজের বিড়ম্বিত জীবনকে।

যেকোনো সমাজেই নারীর অবস্থান দেখে সংস্কৃতির গুণাগুণের একটি ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মেয়েরা এখন সব রকমের কাজ করেন; দায়িত্ব পালনে সক্রিয় থাকেন আর রাজনৈতিক আন্দোলনেও যে থাকেন সে তো আমরা দেখি, জানি, উপলব্ধি করি, কিন্তু নারীর মর্যাদার যে বাস্তবিক অবস্থা তার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের নিরাপত্তার অভাব দেখে। হেফাজতপন্থীরা এবং ওয়াজ ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতি বিদ্বেষ এমন ভাবে প্রচার করেন যে শুনলে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে এবং জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হয় যে তাঁদের নিজেদের ঘরে কি স্ত্রী, কন্যা, ভগ্নি ও নারী আত্মীয়-স্বজন নেই? আমরা তো অনেক এগিয়েছি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, ডিজিটাল হয়ে গেছি, পুরোপুরি স্মার্ট হতে বেশি বাকি নেই, তার মধ্যে মেয়েদের কেন এমন অমর্যাদা? ব্যাখ্যাটি অবশ্যই এই রকমের যে আমাদের সব উন্নতিই পুঁজিবাদী ধরনের এবং পুঁজিবাদী উন্নয়নের আলোকিত দিকটির তুলনায় অন্ধকারগুলোকেই রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রকরা সাদরে গ্রহণ করেছেন। অন্ধকারের ভেতর বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে ভোগবাদিতা; এবং মেয়েদের দেখলেই পুরুষপুঙ্গবদের ভোগবাদী লালসা চঞ্চল হয়ে ওঠে। এটি বিশেষভাবে দেখা যায় তরুণদের ভেতর। নির্মম সত্য অবশ্য এটিও যে দেশে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চর্চা কমতে কমতে একেবারেই নিচে নেমে এসেছে।

ধরা যাক চলচ্চিত্রের কথা। সিনেমা হলে গিয়ে অনেকের সঙ্গে ছবি দেখার ভেতর যে কেবল বিনোদন থাকে তা-ই নয়, থাকে সামাজিকতাও। দেশে লোকসংখ্যা অনেক বেড়েছে, কিন্তু নতুন সিনেমা হল তৈরি হবে কী, যেগুলো ছিল সেগুলোও একে একে নিভে যাচ্ছে; সেখানে গড়ে উঠছে বিপণিবিতান, যে বিতানে সিনেমা হল বাহুল্য জ্ঞানে বর্জিত। পাঠগারে গিয়ে বই পড়াতে আনন্দ থাকে আবার সামাজিকতাও থাকে। সামাজিকতার বিষয়টি ভুললে চলবে না; মানুষ সামাজিক প্রাণী বলেই অন্য প্রাণীদের থেকে স্বতন্ত্র আচরণ করে এবং সাংস্কৃতিকভাবে নিজের উন্নতি ঘটায়। দেশে এখন নতুন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠা নেই, পুরনো পাঠাগার পাঠকের অভাবে ম্রিয়মাণ। স্কুলে গ্রন্থাগারিক পদ আগে ছিল না, এখন তৈরি হয়েছে, সেটি একটি উন্নতি বটে, কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীদের গ্রন্থানুরাগ যে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা মোটেই নয়; আগের তুলনায় অনেক কমেছে। শহরগুলোতে গানের স্কুল জনপ্রিয় ছিল; ঘরেও গানের চর্চা চলত। এখনকার অভিভাবকরা ছেলেমেয়েকে কোচিং সেন্টারে আনা-নেওয়াতেই এতটা সময় দিতে বাধ্য হন যে সন্তানদের সংগীতে দক্ষ করে তোলার কথা ভাবার অবকাশটুকু পর্যন্ত পান না।

পাঠাগারের প্রতি কাঠ মোল্লাদের অনীহা সর্বজনবিদিত। অথচ ইসলাম ধর্মের প্রধান অবদানগুলোর একটি ছিল জ্ঞানের বিকাশ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা অসাধারণ উৎসাহে জ্ঞান-বিজ্ঞানে চর্চা করেছেন এবং সেই জ্ঞান সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা পাঠাগার গড়েছেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওইভাবে মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে তাঁরা অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। অনেক দেশেই এখন তাঁদের অগ্রগমনটা বিপরীতমুখী। একাত্তর সালে ইসলাম রক্ষায় স্বনিয়োজিত পাকিস্তানি হানাদাররা যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প গেড়ে বসেছিল, সেখানে গ্রন্থাগারগুলোকে জ্বালানি সরবরাহকারী হিসেবে ব্যবহার করে তারা সুখ পেয়েছে। তাদের স্থানীয় দোসররা, বিশেষভাবে আলবদরবাহিনী ঠিক করেছিল গ্রন্থাগারগুলোতে হানা দিয়ে অবাঞ্ছিত গ্রন্থ চিহ্নিত করে সেগুলোকে ভস্মীভূত করবে। বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে গ্রন্থও প্রাণ হারাবে। তা বুদ্ধিজীবী নিধনে তারা ভালোই দক্ষতা দেখিয়েছে, গ্রন্থ নিধনের জন্য সময় পায়নি। তবে অতি সম্প্রতি শুনলাম তাদের মতাদর্শিক বংশধররা টাঙ্গাইলে পূর্ববর্তীদের অসমাপ্ত কাজে হাত লাগিয়েছে। তারা একটি গ্রন্থাগার থেকে পাঁচ শতাধিক গ্রন্থ লুণ্ঠন করে ছালায় ভরে নিয়ে গেছে। গ্রন্থাগারের আসবাব ভাঙচুর করেছে, যাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকার। তবে গ্রন্থগুলো তারা পুড়িয়ে ফেলেনি, ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছে এবং থানায় গিয়ে খবর দিয়েছে যে অনেকগুলো পলাতক দাগি আসামি ধরা পড়েছে। তাদের সাফ কথা, এলাকায় কোনো পাঠাগার থাকবে না। অথচ টাঙ্গাইল তো সংস্কৃতিচর্চার জন্য সুখ্যাত ছিল। মীর মশাররফ হোসেন টাঙ্গাইলে বসে সাহিত্যচর্চা করেছেন, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে সেই ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মুসলমান নারী শিক্ষার্থী ফজিলাতুন্নেসা অঙ্কশাস্ত্রে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে সারা বাংলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিলেন; মওলানা ভাসানীও টাঙ্গাইলে বসবাস করতে পছন্দ করতেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের ভূমিকা গৌরবমণ্ডিত। সেসবকে বিদায় দিয়ে তৌহিদী জনতার বর্তমান উদ্যোগ বোধ করি এই লক্ষ্যে যে টাঙ্গাইলে শুধু তাঁরাই থাকবেন আর থাকবে মুখোমুখি বসিবার প্রগাঢ় অন্ধকার।

কিশোর অপরাধী বাড়ছে। এর একটি বড় কারণ সংস্কৃতির চর্চা নেই। আমরা যখন অপেক্ষাকৃত কম উন্নত ছিলাম, দেশে তখন কিশোর সংগঠন ও কিশোর আন্দোলন ছিল, এখন সেগুলো দিবালোকে স্বপ্নের দশা পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আছে অথচ ছাত্রসংসদ নেই এমন অবস্থা ঔপনিবেশিক শাসনামলেও ভাবা যেত না; মুক্ত স্বাধীন স্বদেশে এখন আমরা সেটিকে দিব্যি মেনে নিয়েছি।

 

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বিএনপির পথ আটকানোর পাঁয়তারা কেন

    জব্বার আল নাঈম
শেয়ার
বিএনপির পথ আটকানোর পাঁয়তারা কেন

সন্দেহাতীতভাবে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। কারণ একদিকে রয়েছে সংস্কারের নামে বিএনপিকে বিব্রত করার কৌশল, অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কূটকৌশল ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দলটি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, বিএনপি কি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার, নাকি প্রতিহিংসার শিকার? নাকি কারো চক্রান্ত? যদি এমনটাই হয়, তাহলে এসবের সমাধানে বিএনপির কৌশল কী হতে পারে?

বিএনপির ইচ্ছা দ্রুতই রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে সক্রিয় দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, কিন্তু প্রক্রিয়াটা যে সহজভাবে হচ্ছে না কিংবা হতে দেওয়া হবে না, তা মোটামুটি পরিষ্কার।

এর প্রথম ও প্রধান বাধা বিএনপির ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারী! তাঁদের কেউই দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বা বিএনপির আদর্শ, নীতি কিংবা নৈতিকতার ভেতরে নেই। জুলাই ২০২৪-এর পরবর্তী সময়ে দলটির বিভিন্ন কমিটিতে হঠাৎ করে পদ পাওয়া কর্মীদের ব্যাপারে আরো সক্রিয় ও সজাগ হওয়ার সময় এখনই। বিগত দিনের লড়াই-সংগ্রামে টিকে থাকা দলটির ভেতরে অসংখ্য ত্যাগী নেতা রয়েছেন, যাঁদের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদ দিয়ে মূল্যায়ন করার সময় এখনই। নয়তো সেটি হবে অবমূল্যায়ন।

সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির কিছু মতভিন্নতা রয়েছে, সেটি সবাই জানে। আবার মতভিন্নতার ভেতর দিয়েই দেশে গণতন্ত্রের ভিত শক্ত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। বাস্তবতা বলে আসলে মতভিন্নতা নয়, বিগত দিনের লড়াই-সংগ্রাম ও নির্যাতনের মাঝেও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা পেশ করেন, যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলনের মাঠে কর্মীরা জীবনও দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে যখন জুলাই চব্বিশ নেমে এলো, পরবর্তী রাষ্ট্র গঠনে প্রাসঙ্গিক হলো বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব।

ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও বিএনপির সংস্কারে কোথাও কোথাও কিছুটা দূরত্ব তৈরি হলে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ জুলাই বিপ্লবের সম্মুখসারির নেতাদের সমন্বয়ে তৈরি এনসিপি সরকারের সংস্কার প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে। এর মূল কারণ, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে তাদের নিজস্ব বয়ান বা বক্তব্য যৌক্তিকভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবে যে অগ্রণী ভূমিকায়, তা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো স্বীকার করছে না।

বিএনপিকে সরাসরি মিডিয়া ট্রায়ালের সামনে দাঁড় করানোটা কোনো কোনো দলের পক্ষে যৌক্তিক সমাধান যেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা নিম্নরুচির পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়তই আক্রমণ কিংবা অপমানিত করছেন।

মানে যা নয়, তা-ই বলছেন ও করছেন, যার মোক্ষম জবাব বিএনপি দিতে পারছে না। বিএনপি বড় দল হিসেবে সংযমের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে, এটি একটি মুখ্য কারণ হতে পারে। হতে পারে, এই মুহূর্তে সক্রিয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খেপিয়ে দিলে তারা নির্বাচনে অনীহা প্রকাশ করবে। অথবা নির্বাচন যখনই হোক, শক্ত প্রতিপক্ষ প্রয়োজন। দেখা গেল, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কথা রাখতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করছেন। কিন্তু ঠিক তখনই জামায়াত বা এনসিপি বলল, নির্বাচনের প্রতি আমাদের অনাস্থা। তাই রাজনীতির খোলা ময়দান হওয়া সত্ত্বেও বিএনপিকে আরো কৌশলী, আরো সাবধান হতে হবে। কারণ আগামী নির্বাচনটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন।

অনুমান করে বলছি, নির্বাচনটি হতে পারে তিনটি ব্লকে। প্রথম ব্লকে বিএনপি, দ্বিতীয় ব্লকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি আর সর্বশেষ ব্লকে ১৪ দল। যদিও নির্বাচনের আগে আরো জল ঘোলা হবে, ঘোলা জলে মাছ শিকার হবে, বিএনপিকে টার্গেট করে কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলা হবে। এর পরও সব দলেরই লক্ষ্য থাকবে একটিইবিএনপি ঠেকাও! তার পরও নির্বাচনের আগে নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করতে জামায়াত, এনসিপি ও অন্যান্য দলকে নির্বাচনমুখী লাইনে রাখাও বিএনপির দায়িত্ব। তাই সমীকরণ যতই কঠিন হোক, পথ এগোতে হবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন না হলে দেশ রসাতলে যাবে। ইন্টেরিমের ব্যর্থতার ষোলো কলা পূর্ণ হলে দেশ যাবে অন্য কারো কবজায়। এতে ছোট ছোট দলের চেয়ে ক্ষতিটা বড় দল হিসেবে বিএনপির বেশি। এমতাবস্থায় বিএনপি সব দলকে ডেকে প্রশাসনের ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচন, সংকট ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারে।

বিএনপিতে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে দেশের প্রায় মোট মুক্তিযোদ্ধার অর্ধেক। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের প্রধান ছিলেন। সেই দলটির একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে আপসহীন থাকাটা স্বাভাবিক। আলোচনার সুবিধার্থে বলা যেতে পারে, একজনও মুক্তিযোদ্ধা দলটিতে না থাকলেও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্যসন্তান। বিএনপি তা জানে, মানে এবং স্বীকারও করে। করতেই হবে। ভবিষ্যতে যেন তা অব্যাহত থাকে বিষয়টি জাতির সামনে পুনরায় ব্যক্ত করার অর্থ হলো দেশের আগের ইতিহাস বিএনপি কখনোই ভোলে না। একই সঙ্গে নব্বই ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থানে শহীদদের ব্যাপারে বিএনপি বেশ তৎপর। জুলাই চব্বিশ স্মরণে তাদের এক বছর পূর্তিতে নানা রকম উদ্যোগ ও উদযাপন প্রশংসার দাবি রাখে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের ইসলামী দল কিংবা ধর্মপ্রাণ মানুষের পক্ষে বরাবরই শক্ত শক্তি হিসেবে ছিলেন। তা পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত। বর্তমানে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিও বিএনপির অবস্থান ধীরে ধীরে জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। মোদ্দাকথা, বিএনপিকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সামনের দিকে এগোতে হবে। এই মুহূর্তে বড় দল হিসেবে সম্ভবত এটিই তাদের দায়িত্ব।

 

লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ