আজ ২৯ মে, আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এই দিনে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদান গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়। বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের। এ বছর তার ৭৬ বছর পূর্ণ হলো।
জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ
- কর্নেল কাজী শরীফ উদ্দিন (অব.)

ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবে ২০০২ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী এই দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়।
১৯৮৮ সালে সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষকদল ইরাক-ইরান শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। এর মাধ্যমে জাতিসংঘের পতাকাতলে শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ। এক বছর পর ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়।
পরবর্তী কয়েক বছর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করে গেছে। সে সময় অর্থাৎ ১৯৯৩-৯৪ সালে সবচেয়ে আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া—এই তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রমূলে আসে। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। শান্তি রক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই মূলত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সর্বপ্রথম ২০১০ সালে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে পুলিশের নারী দল পাঠায়।
স্থানীয় জনগণের আস্থা আর ভালোবাসাই জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের মূলশক্তি। প্রতিটি মিশনেই বাংলাদেশিদের এই দক্ষতা জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মুগ্ধ করেছে। ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক আর সামরিক দক্ষতার জন্য যেকোনো সামরিক কমান্ডারের কাছে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকান সেনাপতিরা বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতায় মুগ্ধ ও আস্থাশীল। ১৯৯৫ সালে ইউরোপের একমাত্র শান্তি মিশন বসনিয়ায় ফ্রান্স ব্যাটালিয়ন প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশি সেনারা তাদের জায়গায় কাজ শুরু করেন। ৩৪টি দেশের সেনাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তখন বাংলাদেশের ব্যাটালিয়নকে শান্তি রক্ষার কাজে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়েছিল।
জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছয়জন ফোর্স কমান্ডার ও সাতজন ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের গৌরব অর্জন করেন। শান্তি রক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বব্যাপী দেশের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তাঁরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছেন।
৩৬ বছর ধরে শান্তি রক্ষা মিশনে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ। পেশাদারি মনোভাব, অবদান ও আত্মত্যাগের ফলে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থানও সুসংহত করেছে বাংলাদেশ।
এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী তাঁদের মিশন শেষ করেছেন। তা ছাড়া মিশন এলাকায় সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আহত হয়েছেন ২৬৬ জন।
বর্তমান শতাব্দীতে তৃতীয় প্রজন্মের শান্তি রক্ষা কার্যক্রম বহুমাত্রিক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ জন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে চলেছে। ভয়ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা শান্তির বার্তা নিয়ে সফলতার সঙ্গে বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় তাঁদের অবদানের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
সশস্ত্র বাহিনীর জনসংযোগ বিভাগের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত পৃথিবীর ৪৩টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছে। এখনো আমাদের ছয় হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।
জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাদের অংশগ্রহণের ফলে বিশ্বের বুকে বেড়েছে বাঙালি ও বাংলা ভাষার পরিচিতি। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, আঞ্চলিক বৈষম্যকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন বিশ্বমানবতার মহান সেবায়। পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিক আচরণের কারণে তাঁরা আজ সেসব দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় আদর্শ। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে অবদান রাখা দেশগুলোর অবস্থান সম্পর্কে জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস’ প্রতিবেদন অনুসারে, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সবার শীর্ষে।
লেখক : অধ্যাপক ও পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর
সম্পর্কিত খবর

অভ্যুত্থানের এক বছর : সংকট, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ
- এজাজ ইউসুফী

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা একটি গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা করে, যা রাষ্ট্রব্যবস্থা ওলটপালট করে দেয়। এক বছর পরে এসে অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব, কাঠামোগত সংকট, সংস্কার প্রচেষ্টার সাফল্য-ব্যর্থতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা করতে চাই।
১.
ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। এটি ছিল পতিত সরকারের দমননীতি, বাকস্বাধীনতা হরণ, শিক্ষার বেসরকারীকরণ এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে দেড় দশক ধরে চলে আসা সম্মিলিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
(২০২৩)-এ দেখিয়েছেন, কিভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমে দলীয়করণের শিকার হয়ে পড়ে এবং ছাত্র-জনতার রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণ করা হয়।
২০২৩ সালের শেষ দিকে কোটা বাতিল, ন্যূনতম নিরাপদ ক্যাম্পাস, ন্যায়সংগত উপবৃত্তি এবং নিরপেক্ষ ছাত্রসংসদ নির্বাচন ঘিরে আন্দোলন শুরু হলেও তা দ্রুত রূপ নেয় একটি বৃহৎ রাজনৈতিক প্রতিবাদে। সমাজতাত্ত্বিক রহমান ও সুলতানা তাঁদের এক গবেষণায় আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একে উল্লেখ করেছেন, ‘control of knowledge and control of political destiny’, যা এক সূত্রে মিলে গিয়েছে। ফলে একটি গণ-অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে ওঠে রাজনৈতিক-সামাজিক মুক্তির প্রয়াস হিসেবে।
২.
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকটি ‘সংস্কার কমিশন’ গঠন করে। উদ্দেশ্য, রাজনীতির অবকাঠামোগত পরিবর্তন, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি এবং অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ভিত্তি স্থাপন করা। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমের দৃশ্যমান সাফল্য নেই।
প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আমলারা পুরনো রীতি বজায় রেখেছেন।
সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাব করেছে। এটি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য কতটা গ্রহণযোগ্য, তা গভীর বিবেচনার বিষয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা উভয়ই রয়েছে।
৩.
জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তন আশা করা হয়েছিল, তা প্রায় স্তিমিত।
Transparency Watch (২০২৫)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনজন শীর্ষ ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে বিদেশি তহবিল অপব্যবহার এবং অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ তদন্তাধীন। এ ছাড়া সমাজের সর্বক্ষেত্রে মব সন্ত্রাস দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্বও পুরনো দমননীতি গ্রহণ করেছে। আন্দোলনের সময় বাম-ডান-মধ্য সবাই একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যূথবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু কয়েকজন ছাত্রনেতার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঐক্য ভেঙে যায়। আন্দোলনকারী ছাত্ররা তাদের নিজ নিজ আদর্শিক সংগঠনে ফিরে যায়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল গণতান্ত্রিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এটি পরবর্তীকালে এমন কিছু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্ম দেয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাস ও জাতিসত্তার মূল ভিত্তি—মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে তীব্র আঘাতের মুখে ফেলে। বিশেষ করে বিরাজনৈতিকীকরণের প্রবণতা মুক্তিযুদ্ধের গণমুখী চেতনার বিপরীতে এক বিপজ্জনক স্খলন। প্রতীকী স্থাপনা ধ্বংস ও ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে দুর্বল করে উগ্রপন্থী ও সুবিধাবাদী চেতনার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র দেখা দিতে থাকে।
৪.
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে একাধিক ধর্মীয় ও প্রান্তিক গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন দেখিয়েছে, রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলো ছাত্রসমাজের বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে নারী, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘুদের আন্দোলনও মূলধারার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ফলে অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ‘ইনক্লুসিভনেস’ বা অংশগ্রহণমূলক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, সংস্কার এবং নির্বাচন ইস্যুতে সরকার, ছাত্র, রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আস্থাহীনতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়াকে অনেকটা জটিল করে তুলতে পারে।
৫.
সরকার যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, তা কার্যত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেলেও বড় দলগুলোর মধ্যে আস্থার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি, অভিযোগ এবং ‘গোপন এজেন্ডা’ নিয়ে সন্দেহ অব্যাহত রয়েছে।
দেশে এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নানাভাবে ঘায়েল করা এবং মব ভায়োলেন্সের দাপট চলছে। ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি সংস্কারে কিছুটা সাফল্য দেখালেও সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। পররাষ্ট্রনীতি বলতে তেমন কোনো কিছু দৃশ্যমান নয়। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বহুল প্রচারিত সফরের পরও রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনে গতি আসেনি, উপরন্তু নতুন করে লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অন্যদিকে আরাকান আর্মির জন্য মানবিক করিডরের (সরকারি ভাষ্যে মানবিক চ্যানেল) চিন্তা এবং চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার কাজ বিদেশি সংস্থাকে দেওয়ার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা পরিস্থিতি জটিল করেছে। এটিকে অনেক রাজনৈতিক দল ও সুধীসমাজ দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বলে ভাবছে।
৬.
জুলাই ২০২৪-এর অভ্যুত্থান কেবল শাসনব্যবস্থার পতন ঘটায়নি, বরং রাষ্ট্রকাঠামোর গভীরে জমে থাকা সংকটকে উন্মোচিত করেছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই অভ্যুত্থান কি ইতিহাসে একটি ‘অপূর্ণ’ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হবে, নাকি এটি ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ভিত্তি হবে?
রহমান ও সুলতানা (২০২৪) এ প্রসঙ্গে যুক্তি দিয়েছেন, ‘Movements fail not just because of external repression, but due to internal contradictions.’
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন যে আন্তরিকতা ও উদ্দীপনা নিয়ে দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছিল, তা আজ অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু। তবে আশার দিকও রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নবীন নেতৃত্ব, বিকল্প রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ ও স্থানীয় পর্যায়ে গণসংগঠন গঠনের প্রবণতা বাড়ছে। সামাজিক মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক বিকল্প পাঠচক্রের মাধ্যমে তারা নতুন বয়ান তৈরির আবহ সৃষ্টি করছে।
৭.
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম পদক্ষেপ ছিল ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ তৈরি করা, যা ‘জাতীয় সনদ’ হবে বলে উল্লেখ করা হলেও তা বাস্তবায়ন কঠিন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
ইউনূস সরকার একে সময়োচিত ও সংকট উত্তরণে অপরিহার্য বলে দাবি করলেও জাতীয় সনদ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি।
৮.
জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। আন্তোনিও গ্রামসির ‘সংকট তত্ত্ব’ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সংকটের সময়ে পুরনো গঠন মরে যায়, কিন্তু নতুনটি জন্মাতে না পারলে ‘নেতৃত্বশূন্যতা’ জন্ম নেয়। বাংলাদেশ আজ সেই যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।
সর্বশেষ বলা যায়, দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল, সুধী মুরব্বিরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ ও সংশ্লিষ্ট নাগরিক শক্তি যদি সঠিক আত্মসমালোচনার সাহস দেখায়, বর্তমান নেতৃত্বকে জবাবদিহির কাঠামোয় আনে এবং আদর্শিক স্পষ্টতা বজায় রাখতে পারে, তবে এখনো একটি অংশগ্রহণমূলক, ন্যায্য রাষ্ট্র বিনির্মাণের সম্ভাবনা অটুট রয়েছে।
লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম
প্রেস ক্লাব, সাবেক সভাপতি, সিইউজে

ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েদের অনন্য সাফল্য
- ইকরামউজ্জমান

নারী ফুটবলাররা ফুটবলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরেক ধাপ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি অতিক্রম করে স্থান করে নিয়েছে এশিয়ার বৃহৎ অঙ্গনে। এই অসাধারণ কৃতিত্বে বিশ্ব ফুটবল জগতে বাংলাদেশ নামের দেশটি আলো ছড়িয়েছে। এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ ফুটবলের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ‘সি’ গ্রুপে ফিফা র্যাংকিংয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকা বাহরাইন ও মায়ানমার, তুর্কমেনিস্তান অবশ্য বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে আছে, এই তিন অচেনা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াইয়ের মঞ্চে দাপটের সঙ্গে চিত্তাকর্ষক ফুটবল উপহার দিয়ে অপরাজিত থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত রাউন্ডে প্রথমবারের মতো খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে অদম্য নারী দল।
১৯৭৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সপ্তম এশিয়ান কাপের গ্রুপ-২ কোয়ালিফাইয়িং রাউন্ডে কোয়ালিফাই করে ১৯৮০ সালে কুয়েতে চূড়ান্ত পর্যায়ে খেলেছিল বাংলাদেশ পুরুষ দল। এর ৪৫ বছর পর বাংলাদেশ নারী দল এএফসি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করল।
অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়ে বাংলাদেশ দল ২০১৫ সালে নেপালে প্রথম এএফসি আঞ্চলিক (দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল) টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়—সেটিই শুরু। এর পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল মঞ্চ বয়সভিত্তিক এবং জাতীয় দলের রোমাঞ্চকর সাফল্যের গল্পে ঠাসা। ২০২২ ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশ নারী দল সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে পর পর দুইবার শিরোপা জিতে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে অন্যতম শক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছে। এরপর এএফসি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করে বড় স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে দেশের ফুটবলকে আরেক ধাপ উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং ভীষণ সীমাবদ্ধতার মধ্যে নারী ফুটবলারদের অসাধারণ এবং স্মরণীয় জার্নি। আর এই জার্নিতে অনেক প্রশ্ন আছে, কিন্তু উত্তর নেই!
এশিয়ান কাপের চত্বর যেমন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, তেমনি সম্ভাবনার হাতছানিতে ভরপুর। অস্ট্রেলিয়ায় চূড়ান্ত খেলায় ছয়ে থাকলে ২০২৭ সালের ব্রাজিল নারী বিশ্বকাপে সরাসরি সুযোগ মিলবে। সেরা আটে থাকলে থাকবে আন্তর্মহাদেশীয় ‘প্লে অফে’ খেলার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে স্বপ্নের জাল বোনা আর স্বপ্নকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হলে নারী ফুটবল নিয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করা এখনই জরুরি। ‘অস্ট্রেলিয়া মিশন’ স্লোগানের মধ্যে অবশ্যই একটি চেতনা ও লক্ষ্য আছে। ফুটবল ফেডারেশন নারী ফুটবলারদের পাশে ছিল এবং থাকবে। ফুটবল ফেডারেশন যদি পাশে না থাকত, তাহলে নারী ফুটবল এত রাস্তা অতিক্রম করে আজকের অবস্থানে আসতে পারত না।
একবার ভাবুন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে পর পর দুইবার সেরা শক্তিধর হিসেবে শিরোপা জিতেছে নারী দল। জিতেছে অনেক বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা। বাংলাদেশ নারী দল এবার দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি অতিক্রম করে স্থান করে নিয়েছে এশিয়ান মঞ্চে। এই বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের জন্য দেশে একটিও ‘ডেডিকেটেড’ ফুটবল গ্রাউন্ড নেই, যাতে তাঁরা নিয়মিতভাবে অনুশীলন করতে পারেন। নেই মেয়েদের জন্য ফুটবল কাঠামো। নেই পৃথক নারী ফুটবল একাডেমি, বাফুফের অফিসের ওপরতলায় বছরের পর বছর ধরে থাকছেন নারীরা ক্যাম্প করে। একবার একজন ফুটবল সংগঠক আমাকে বলেছেন, ফুটবলের এই আবাসিক ক্যাম্পকে এএফসি স্বীকৃতি দিয়েছে। মাঠ না থাকায় খেলার আয়োজন সম্ভব হয় না। জোড়াতালি দিয়ে অনিয়মিতভাবে স্বল্প সময়ের জন্য লীগের আয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক খুব কম। বসুন্ধরা গ্রুপের ক্লাব বসুন্ধরা কিংস নারী লীগে একনাগাড়ে তিন বছর শিরোপা জিতেছে। তখন এই ক্লাবটি নারী ফুটবলারদের ভালো পারিশ্রমিক দিয়েছে। ‘পুল’ ও বিভিন্ন কারণে বসুন্ধরা কিংস আর নারী লীগে অংশ নেয় না। বাফুফের উচিত অবিলম্বে এএফসি ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী পেশাদার লীগ শুরু করা।
ভুটানে নারী পেশাদার লীগ চলে ছয় মাস ধরে। তাদের ক্লাবের এএফসি লাইসেন্স আছে। ভুটানের ক্লাব দলের আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলার সুযোগ আছে। বাংলাদেশে নারী পেশাদার লীগ শুরু করার এখনই সময়। এ ক্ষেত্রে বসুন্ধরাসহ অন্য বড় গ্রুপগুলোর যাতে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকে এটি নিশ্চিত করা উচিত। এতে নারী ফুটবল এগিয়ে যাবে—পাশাপাশি খেলোয়াড়রা আর্থিক নিরাপত্তার বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। অর্থের অভাবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে ফিফার উইন্ডোতে প্রীতি ম্যাচ খেলানো সম্ভব হয় না। এতে খেলোয়াড়দের মান যাচাই এবং অগ্রগতি ও অবনতি নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। এর পরও নারী ফুটবলাররা জাদু দেখিয়ে চলেছেন। বেতন বাকি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা খেলেন। ফুটবলাররাও বুঝে ফেলেছেন উপায় নেই, তাঁদের লড়তে হবে বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজস্ব অবস্থান থেকে। এতে তাঁদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা সব সময় ভর করে থাকে। দেশের জন্য যাঁরা এত কিছু করছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী?
ফুটবলে প্রচুর সেন্টিমেন্টের ছড়াছড়ি। মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেন্টিমেন্ট যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে—এটি কতটুকু যুক্তিসংগত হচ্ছে ভেবে দেখা উচিত। ব্যক্তিগত দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব নিয়ে ‘হাইপ’ সৃষ্টি করা তো মানবতা নয়। ব্রিটিশ পেশাদার কোচকে বিভিন্ন ধরনের প্ররোচনা ও বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে অসম্মান করে ‘ভিলেন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোচের বিদায় চাওয়া হয়েছে। কোচ কিন্তু সবকিছুই বুঝেছেন। তিনি নীতি আর আদর্শের প্রশ্নে আপস করেননি। সব সময় বলেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কোনো অভিলাষ নেই বাংলাদেশে। আমি দেশের ফুটবলের ভালো চাচ্ছি। মেয়েদের ফুটবলের ভালো চাচ্ছি।’
নারী দলের অধিনায়ক সাবিনার নেতৃত্বে গত ৩০ জানুয়ারি ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে (২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে নারী জাতীয় দল এই পিটার বাটলারের অধীনে দ্বিতীয়বারের মতো সাফ শিরোপা জিতেছে) বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাফুফের অফিসের সামনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা তিন পৃষ্ঠা পড়ে শোনানো হয়েছে। মেয়েরা সাফ জানিয়েছেন, এই কোচের অধীনে তাঁরা আর খেলবেন না, প্রশিক্ষণ নেবেন না, দরকার হলে সবাই জাতীয় দল থেকে পদত্যাগ করবেন। বাফুফের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়রা কি এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বাফুফের নিযুক্ত হেড কোচের বিরুদ্ধে? তাঁরা বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপনের পাশাপাশি তাঁদের ‘ব্যক্তিগত বিষয়ে’ কোচের হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন। মিডিয়া বিষয়টিকে লুফে নিয়েছে। প্রতিদিনই মেয়েদের বড় কাভারেজ। কোচও কখনো কখনো কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর কথা হলো, মেয়েদের অভিযোগগুলো পুরোপুরি অযৌক্তিক। তিনি অন্যায় আবদার, নীতি, আদর্শ, ফিটনেস এবং শৃঙ্খলার প্রশ্নে কখনো আপস করবেন না—আর এটি মেয়েদের ফুটবলের স্বার্থে।
বাফুফের প্রেসিডেন্ট তাবিথ আউয়াল নারী ফুটবলারদের সঙ্গে বারবার বসা সত্ত্বেও সমস্যার আশু সমাধান হয়েছে বলে মনে হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাফুফে সিনিয়র সহসভাপতি মো. ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। এই কমিটিতে বাফুফের প্রতিনিধি ছাড়াও বাইরে থেকে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে সাত দিন। মো. ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে কমিটি বিদ্রোহী নারী খেলোয়াড় ও বিদেশি কোচের সঙ্গে ধৈর্য ধরে সময় নিয়ে কথা বলেছে। এরপর তাঁদের বেশ কয়েকটি সুপারিশসহ রিপোর্ট সময়মতো জমা দিয়েছে। এই রিপোর্ট পেশের পর থেকে পর্যবেক্ষকমহল মনে করে, বাফুফের যে ধরনের অবস্থান নেওয়া উচিত সেটি নিয়েছে। বাফুফে পেশাদার কোচের বিষয়ে অন্যায্য অভিযোগ ও আবদারকে প্রশ্রয় দেয়নি। এতে নারী ফুটবলে শৃঙ্খলাহীন কার্যকলাপ, ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বার্থে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারার অবসান হয়েছে।
খেলোয়াড়দের কাজ পারফরম করা। পারফরম না করতে পারলে দলে স্থান নেই। কোচের কাছেও প্রত্যাশা হলো ‘রেজাল্ট’। এ ক্ষেত্রে ব্যত্যয় হলে কোচের প্রয়োজনীয়তাও শেষ হয়ে যায়। এখন পিটার বাটলারকে নিয়ে এত উচ্ছ্বাসের কারণ হলো, তিনি রেজাল্ট দিতে পারছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নারী দল ১৪টি খেলায় অংশ নিয়ে সাতটি জিতেছে। তিনটি ড্র করেছে, চারটি হেরেছে। এর মধ্যে আছে চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে দুটি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ।
জীবন থেমে থাকে না। কারো জন্য অপেক্ষা করে না। নারী ফুটবলকে তুঙ্গে নিয়ে গেছেন খেলোয়াড়রা এবং ব্রিটিশ কোচ। পারফরম্যান্সের জন্য ১০ জন বিদ্রোহী খেলোয়াড়কেও দলে নিয়েছেন কোচ। তাঁরা কোচের সঙ্গে সুন্দরভাবে মানিয়েও নিয়েছেন। পেশাদার কোচের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে নারী ফুটবলারদের বুঝতে তাঁর সময় লাগেনি। খেলোয়াড়রা কোচ কী চাচ্ছেন, কিভাবে চাচ্ছেন, কেন চাচ্ছেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। কোচ পিটার মেয়েদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পেরেছেন। তাঁদের মধ্যে সাহস ও আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদের ভেতরের বারুদ। কোচের গেম পরিকল্পনাকে খেলোয়াড়রা একটি দল হয়ে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে লড়াইয়ে কামিয়াব হওয়া সম্ভব হয়েছে।
কোচের লক্ষ্য সব সময় এগিয়ে চলা। তাঁর একটাই দর্শন, ফিফা ফ্রেন্ডলি বা টুর্নামেন্ট খেলতে হবে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে—এতে খেলোয়াড়দের মধ্যে ভয়ডর থাকবে না। তাঁদের সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আসল কম্পিটিশনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি ভালো হবে। সবাই এক মন এক প্রাণের অধিকারী হয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করায় ধরা দিয়েছে স্মরণীয় সাফল্য। খেলোয়াড়দের অসাধারণ পারফরম্যান্স নিয়ে আগামী কলামে বিশ্লেষণ করব। খেলোয়াড়, কোচ, টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচিং স্টাফ—সবাইকে অভিনন্দন দেশে অস্থিরতা ও বিভাজনে ভরপুর সময়ে মাঠে দারুণ জয় পুরো জাতিকে আরেকবার ঐক্যবদ্ধ করেছে। রোমাঞ্চকর ফুটবল গল্প অনেক দিন মুখে মুখে থাকবে।
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, এআইপিএস এশিয়া। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। প্যানেল রাইটার, ফুটবল এশিয়া

ন্যাটোর বর্ধিত প্রতিরক্ষা ব্যয় ও বৈশ্বিক উদ্বেগ
- ড. সুজিত কুমার দত্ত

সম্প্রতি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বাজেট অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির বিষয়টি বিশ্ব উদ্বেগ নিয়ে দেখছে। ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ নির্ধারণের ব্যাপারে একমত হয়েছে। এই সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত শুধু ন্যাটোর নিজস্ব ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা কৌশলই নয়, বরং সমগ্র বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করতে যাচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর এবং সম্মিলিত প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রতি আরো বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তীব্রভাবে সচেতন করেছে।
ন্যাটোর নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০৩৫ সালের মধ্যে তাদের জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত মূল খাতে ব্যয় বা বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।
ন্যাটোর এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করবে, যার বহুমাত্রিক প্রভাব রয়েছে। প্রথমত, ন্যাটোর সম্মিলিত সামরিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং শক্তিশালী সামরিক কাঠামো সম্ভাব্য আগ্রাসীদের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলে ন্যাটোর উপস্থিতি আরো জোরদার হবে, যা এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে।
দ্বিতীয়ত, ন্যাটোর এই বিশাল প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি রাশিয়া, চীন এবং তাদের মিত্রদের তাদের নিজস্ব সামরিক ব্যয় আরো বাড়াতে উৎসাহিত করবে।
তৃতীয়ত, জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোর জন্য একটি বিশাল আর্থিক বোঝা। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে এবং জনসাধারণকে সামাজিক খাতে (যেমন—স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, অবকাঠামো) কম বরাদ্দ নিয়ে চলতে হতে পারে। এই ব্যয়ভার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে যদি অন্যান্য দেশও একই পথে হাঁটে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
চতুর্থত, ন্যাটোর এই সামরিকীকরণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য নতুন উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। উন্নত দেশগুলো যখন তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়, তখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উন্নয়ন সহায়তা, মানবিক সাহায্য বা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া বৈশ্বিক মেরুকরণ বাড়লে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বড় শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার শিকার হতে পারে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ঝুঁকি বাড়তে পারে। পঞ্চমত, ন্যাটোর এই পদক্ষেপ বিশ্বকে আরো বেশি সামরিক জোটকেন্দ্রিক ও মেরুকৃত করতে পারে। ন্যাটো একটি শক্তিশালী সামরিক জোটে পরিণত হলে এর বিপরীতে রাশিয়া-চীন অক্ষ আরো শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করবে, যা বিশ্বকে দুটি প্রধান সামরিক ব্লকে বিভক্ত করার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ন্যাটোর বর্ধিত প্রতিরক্ষা বাজেট বিশ্বকে এক নতুন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই সিদ্ধান্তকে ন্যাটোর অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য মনে করা হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। সামরিক শক্তি বৃদ্ধি অবশ্যই জাতীয় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, তবে তা যেন বৈশ্বিক শান্তি ও সহযোগিতার মূল্যবোধকে ছাড়িয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। এই মুহূর্তে সামরিক ব্যয়ের প্রবণতা থেকে সরে এসে কূটনীতি, আলোচনা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর জোর দেওয়া পূর্বের চেয়েও বেশি জরুরি। ন্যাটোর এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক নিরাপত্তায় কী ধরনের নতুন সমীকরণ নিয়ে আসে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বিশ্ব গড়ার জন্য সব দেশেরই দায়িত্বশীল আচরণ এবং দূরদর্শী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
datta.ir@cu.ac.bd

জুলাই আন্দোলন : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
- সাঈদ খান

শুধু রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে—শুধু ভিন্নমত পোষণ করলেই—একটি রাষ্ট্র যদি তারই নাগরিকদের ধরে নিয়ে যায়, দিনের পর দিন বন্দি করে রাখে, নির্মম, নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অবর্ণনীয় নির্যাতনে হত্যা করে, তারপর নিথর দেহটি পর্যন্ত গোপনে গুম করে ফেলে, তাহলে প্রশ্ন উঠে এই বর্বরতা থেকে রাষ্ট্র কী আনন্দ পায়? রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি—এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে? আয়নাঘরের ইতিহাস আমাদের সামনে এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে—যেখানে প্রতিটি গুম, প্রতিটি নিষ্ঠুরতা আর প্রতিটি মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানবতা বারবার হেরে গেছে রাষ্ট্রীয় পাশবিকতার কাছে। এই ভয়ংকর ইতিহাস থেকে কি আগামী দিনের সরকার ও তার নিরাপত্তা বাহিনী কোনো শিক্ষা নেবে? নাকি আগের মতোই নিষ্ঠুরতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে? তবে আমরা সেই খুনি রাষ্ট্র দিয়ে কী করব?
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ছিল দুঃখ-দুর্দশার বিরুদ্ধে জনতার এক অভূতপূর্ব সংগ্রাম। এটি ছিল গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ও বৈষম্যহীন সমতার বাংলাদেশ গড়ার ডাক। এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মানুষের মৌলিক অধিকার, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, সুশাসন এবং ন্যায্য সমাজ গড়ার প্রত্যাশা।
এই গণ-আন্দোলন হঠাৎ গড়ে ওঠেনি।
এই আন্দোলনের ফলেই গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তী সরকার।
৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর নতুন করে শুরু হয় হামলা-মামলা, সন্ত্রাস, খুন, নির্যাতনের ধারা।
গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনা ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া। কিন্তু আজও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সংস্কার প্রশ্নেও অস্পষ্টতা দেখা দেয়। ‘সংস্কার’কে শুধুই একটি টিক দেওয়ার নীতিপত্রে পরিণত করে ধোঁয়াশাপূর্ণ করে তোলা হয়। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সংশয় ও বিভ্রান্তি বাড়ে।
২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি নামে একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করলেও তাদের প্রস্তাবনা ও রাজনৈতিক ভাষা সাধারণ মানুষের বাস্তবতা ও চেতনার সঙ্গে মেলেনি। ‘বাংলাদেশ’ নামবদলের চিন্তা, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’-এর পরিবর্তে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’—এসব প্রচেষ্টা বিভ্রান্তি তৈরি করে। ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’, ‘রিসেট বাটন’, ‘নতুন সংবিধান’ ইত্যাদি ধারণা সাধারণ মানুষের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন এবং বাস্তবতাবিবর্জিত বলে অনেকে মনে করেন।
দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা আলাদা করা, উচ্চকক্ষ গঠন, ১৭ বছর বয়সে ভোটাধিকার—এসব প্রস্তাব সাধারণের কাছে দুর্বোধ্য। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজকে হুমকি, আর নেতাদের প্রতি অবমাননাকর আচরণ তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তারা হয়ে ওঠে শহুরে শ্রেণির কল্পনানির্ভর এক রাজনৈতিক কাঠামো।
অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিচারহীনতা, গুম-খুন অব্যাহত, মাজার ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা রক্ষায় এই সরকারের অবহেলা সমাজে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি করেছে। উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও সহিংস কর্মকাণ্ড সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যর্থতার জ্বলন্ত প্রমাণ। অভ্যুত্থানের পর ১১ মাস ধরে চলা মব কালচার, দমন-পীড়ন, প্রতিহিংসামূলক হামলা—এগুলো স্পষ্ট করে জনগণের বিজয়ের পরও শাসনযন্ত্রের ব্যর্থতা। স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের বিচার না হওয়ায় জনগণ বেআইনি পথে ঝুঁকছে। মানুষ বুঝতে পারছে, আন্দোলন সফল হলেও ক্ষমতা কাঠামোর বদল না ঘটলে কোনো অর্থ নেই।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলেছেন, ‘নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই, নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প।’ তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক, গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে পরিচালিত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহবান জানান। তাঁর মতে, ‘গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি বৈধ, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।’
গণতন্ত্র শুধু একটি শাসনব্যবস্থা নয়; এটি মানুষের অধিকার, মর্যাদা এবং নিরাপত্তার প্রতীক। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো জনগণের মতামত এবং অংশগ্রহণ। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রকে বহুবার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পেছনে সাধারণ মানুষের যে ত্যাগ, তা শুধু সুশাসন এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করলেই সার্থক হবে।
২০২৪ সালের এই আন্দোলনের চূড়ান্ত অর্জন হতে পারে স্থায়ী রাজনৈতিক সমঝোতা, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা ও গণভিত্তিক সরকার। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয় কিংবা আগে নির্বাচন তারপর সংস্কার—এই বিতর্কের বাইরে বাস্তবতা হলো : সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই জরুরি। কারণ জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হলে সুশাসন ও গণতন্ত্র টেকসই হয় না। ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান প্রমাণ করে জনগণই প্রধান শক্তি। তারা ভোট, মতপ্রকাশ ও আন্দোলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বদলায়, জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করে।
এ জন্য নির্বাচনব্যবস্থায় প্রথমেই সংস্কার দরকার, যাতে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য ভোট হয়। সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ছাড়া গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও নেতৃত্ব গড়া সম্ভব নয়। অতএব জনগণের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচিত, জবাবদিহিমূলক সরকার ও সংসদ গড়াই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের যাবতীয় সংস্কার কার্যক্রমের প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষ্য। কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সংস্কার কখনোই কার্যকর ও টেকসই হয় না।
জুলাই আন্দোলন আমাদের শেখায়—গণ-আন্দোলন যদি জনগণের দ্বারা গড়ে ওঠে, তবে তার ফসলও হতে হবে জনগণের হাতে।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংগঠনিক সম্পাদক, ডিইউজে