<p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সপ্তম দুর্যোগঝুঁকিপূর্ণ এক নাজুক দেশ হিসেবে বিবেচিত। এর অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর কারণে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া, যা দুর্যোগের মাত্রা, ব্যাপ্তি, নাজুকতা ও পুনঃপুনঃ ঘটনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতির ওপর প্রতি মুহূর্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি নাজুকতা বৃদ্ধির পেছনে যে দুটি কারণ দায়ী সেগুলো হলো মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, অতিমারি ও মহামারি, যার উদাহরণ হলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৃষ্ট নানা রকম দুর্ঘটনাজনিত আপদ; যথা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অগ্নিকাণ্ড, ভবনধস, নগর বন্যা, অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক জলাবদ্ধতা, নানা ধরনের বর্জ্যের কারণে ব্যাপক আকারে নদীদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও শব্দদূষণ। এর পাশাপাশি ঢাকা ও বড় বড় শহরের চারদিকের প্লাবনভূমি তথা বিস্তৃত জলাভূমি ভরাটের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতলবিশিষ্ট ভবন, শিল্প ও গার্মেন্টস কারখানাগুলো, যার মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় মাত্রার জলাবদ্ধতা, যা কখনো কখনো শহরগুলোতে সরবরাহ করা বিশুদ্ধ পানি ও স্যুয়ারেজ লাইনের ত্রুটির কারণে একত্র হয়ে সৃষ্টি করছে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন বিপর্যয়।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একই সঙ্গে দেখা যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড যথাযথভাবে মানা হয় না। সেই সঙ্গে নেই রাজউক অনুমোদিত নকশায় নির্মিত ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক ব্যবস্থাপনা। ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট ও বৈদ্যুতিক সংযোগের ঝুঁকি নিরসনে নেই কোনো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাসলাইন, গ্যাস সিলিন্ডার ও গ্যাস স্টোভের ত্রুটি ও বিস্ফোরণজনিত কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, যার পরিণতি দেখেছি আমরা ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। এর মাধ্যমে কেবল শত শত জীবন নাশ হচ্ছে না, মানুষের গুরুতর আহত হওয়ার পাশাপাশি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সম্পদহানি এবং হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকার নাজুকতা। কাজেই সময় এসেছে বিভিন্ন লাইন এজেন্সির মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে মানবসৃষ্ট এসব বিপর্যয় রোধ করার। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সার্বিকভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সক্ষমতা আগের তুলনায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রমাণ আমরা পাই সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সেগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে। বৈশ্বিক প্রটোকলগুলোর আলোকে বাংলাদেশ সরকারের প্রণীত ডিজাস্টার অ্যাক্ট, স্ট্যান্ডিং অর্ডারস অব ডিজাস্টার, ন্যাশনাল প্ল্যান ফর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, মেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্কের আলোকে বাংলাদেশের দুর্যোগঝুঁকি অনুধাবন, বিশ্লেষণ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; দুর্যোগঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিতকরণ; দুর্যোগঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে ও দুর্যোগ সহনশীল সমাজ গড়ে তুলতে দুর্যোগসংশ্লিষ্ট আর্থিক বিনিয়োগ ও টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা চালু, দুর্যোগ প্রস্তুতির সব স্তরে তথা দুর্যোগ-পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী প্রস্তুতির পরিধি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিল্ড ব্যাক বেটার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে দুর্যোগ-পরবর্তী সহনশীল ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ, কার্যকর উদ্ধার তৎপরতা, পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে দুর্যোগপীড়িত জনগোষ্ঠীকে দুর্যোগ সহনশীল ও টেকসই ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসা। আর এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রটোকলের পাশাপাশি সরকারের গৃহীত বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান ২০২১-২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে টেকসই ব্যবস্থাপনায় রূপান্তর। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/03.March/10-03-2024/2/kalerkantho-ed-3a.jpg" height="191" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/03.March/10-03-2024/2/kalerkantho-ed-3a.jpg" style="float:left" width="254" />চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন কম্পোনেন্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম (পাইলট প্রকল্পসহ) হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ড্রোনের মাধ্যমে দুর্যোগের নাজুকতাগুলো ম্যাপিং করা, উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক আগুন নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে ২৪ তলা ভবনের আগুন নেভানো এবং সেই সঙ্গে ভবনে আটকে পড়া মানুষকে নিরাপদে উদ্ধার কার্যক্রম। এ ছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে রিয়াল টাইম এরিয়াল ইমেজগুলো ম্যাপিং এবং সে অনুযায়ী অতি দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা, একই প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন ডিভাইস ও মানববিহীন রোবটের মাধ্যমে অতি প্রত্যন্ত ও প্রতিকূল অবস্থায় আটকে পড়া জনগোষ্ঠীকে উদ্ধারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা, আধুনিক ফায়ার ইকুইপমেন্ট ও ফায়ার ব্যবস্থাপনা, মেশিন লার্নিং ইন্টারনেট অব থিংকস ও বিগ ডাটার মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে অত্যাধুনিক করা, স্যাটেলাইট ইমেজ তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাইক্লোন ও বন্যার আগাম সতর্কবার্তা প্রদান এবং কার্যকরভাবে দুর্যোগঝুঁকিতে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে অতি দ্রুততার সঙ্গে নিরাপদ স্থানে, বিশেষ করে সাইক্লোন ও বন্যা শেল্টারে স্থানান্তর।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য দরকার সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, যার মধ্যে রয়েছে কাঠামোগত ও অকাঠামোগত প্রস্তুতি। আমাদের কাঠামোগত প্রস্তুতির ক্ষেত্রে দরকার হলো উপকূলবর্তী ও নদী রক্ষার জন্য নির্মিত বাঁধগুলোকে টেকসইভাবে নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, যাতে আকস্মিকভাবে বাঁধ ভেঙে লাখ লাখ মানুষ নাজুকতায় না পড়ে। সেই সঙ্গে দরকার সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাবিদ, পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে অপরিকল্পিত অবকাঠামোগুলো অপসারণের মাধ্যমে নগর জলাবদ্ধতা ও সমতল বাংলাদেশের দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। একই সঙ্গে দরকার আরো কার্যকর অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, যার মধ্যে রয়েছে দুর্যোগবিষয়ক গবেষণার মাধ্যমে দুর্যোগঝুঁকি নিরসন ও টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা; দুর্যোগের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল ও টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সুশাসন ও সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের জন্য দুর্যোগের করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি; দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; দুর্যোগে ফার্স্ট রেসপন্ডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি; জলবায়ুজনিত দুর্যোগের নাজুকতা হ্রাসে সহনশীল অভিযোজন মডেলগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর করা; প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ, কোয়াডকপ্টার ও হেলিকপ্টার প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ডিভাইসের মাধ্যমে অগ্নিনির্বাপণ ও আগুনের ব্যাপ্তি দ্রুত কমিয়ে আনা; হেলিকপ্টার ও এয়ারলিফটিংয়ের মাধ্যমে দুর্যোগে আটকে পড়া মানুষকে তাৎক্ষণিক উদ্ধারের ব্যবস্থা, সব নাগরিককে দুর্যোগ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণার ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনের সব স্তরে দুর্যোগ প্রতিরোধে অংশীজনদের নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লেখক : উপ-উপাচার্য, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এবং দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">mokaddemdu@yahoo.com</span></span></span></span></span></span></span></span></p>