<p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইনের শাসনকে গণতন্ত্রের প্রথম পূর্বশর্ত বলে উল্লেখ করেছেন বহু মনীষী। ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত আইনি পণ্ডিত অধ্যাপক এ ভি ডাইসি আইনের শাসনতত্ত্ব সম্পর্কে বলেছেন, আইনের শাসন মানে প্রচলিত আইনের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য। তাঁর মতে, আইনের শাসন বলতে যা বোঝায়, তা হলো আইনের প্রয়োগ দ্বারা দেশ শাসন। আইনের শাসনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, আইনের শাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বটি হচ্ছে, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আইনের চোখে সবার সমতা। কোনো মানুষই আইনের দৃষ্টিতে কোনো বিশেষ সুবিধাভোগী হতে পারে না। একই শ্রেণির আদালতে, একই আইন সবার জন্য প্রযোজ্য এবং সব মানুষই আইনের প্রতি অনুগত থাকতে বাধ্য।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান যুগে আইনের শাসনের নতুন সংজ্ঞা প্রদান করে যুক্তরাজ্যের সাবেক চিফ জাস্টিস লর্ড বিংহাম বলেছেন, ১৮৮৫ সালে অধ্যাপক ডাইসি আইনের শাসনের ওপর দীর্ঘ রচনা প্রকাশ করলেও তিনি এই মতবাদের জনক ছিলেন না। লর্ড বিংহামের মতে, এই তত্ত্বের জন্ম হয়েছিল আরো বহু শতক আগে। এক ইংরেজ লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন যে আইনের শাসনের ধারণাটি প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত অ্যারিস্টটল উচ্চারণ করেছিলেন এই বলে যে আইন দ্বারা শাসিত হওয়ার বিকল্প নেই। অ্যারিস্টটল আরো বলেছিলেন, আইন প্রয়োগের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা ব্যক্তিদের জন্য আইনের শাসন অনুসরণ করা অপরিহার্য। লর্ড বিংহামের ভাষায় আইনের শাসনের শর্তগুলো হচ্ছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. প্রতিটি মানুষের জন্য আইনের দ্বারস্থ হওয়ার অবাধ অধিকার; ২. আইনের চোখে সবার সমান অবস্থান; ৩. আইনের বিষয়ে স্বেচ্ছাচারিতার অনুপস্থিতি; ৪. আইন অনুসরণ করে প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ; ৫. মানবাধিকার এবং আদালতগুলোতে ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডাইসির তত্ত্ব প্রকাশিত হওয়ার বহু আগে ১৭৩৩ সালে ডা. থমাস ফুলার নামের এক চিকিৎসক ব্যক্ত করেছিলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুমি যতই বড় হও না কেন, আইন তোমার চেয়েও বড়</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span> <span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""> (Be you ever so high, the law is above you) </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">। যুক্তরাজ্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিচারক হিসেবে পরিচিত লর্ড ডেনিং অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে (যুক্তরাজ্যে যিনি একজন মন্ত্রী) এক রায়ে ডা. ফুলারের সেই অমর উক্তি পুনঃ প্রকাশ করেছিলেন ১৯৭৭ সালে। আইনের শাসনের কথা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার সনদে।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="সাম্প্রতিক বাস্তবতায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা" height="291" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/09.September/26-09-2023/1.jpg" style="float:left" width="332" />১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে হাতে নিয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রথমটিই ছিল সংবিধান প্রণয়ন, যে উদ্দেশ্যে আইনে বিশেষভাবে পারদর্শী ৩৪ জন গণপরিষদ সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য। ওই ৩৪ জনকে বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিলেন সংবিধানে গুরুত্ব দিতে হবে মানবাধিকার এবং আইনের শাসনকে। খসড়া প্রণেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও তদারকিতে ১৯৭২ সালে এমন একটি নিখুঁত সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, যা গোটা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছিল একটি অনন্য সংবিধান হিসেবে। সেই সংবিধানে বলা হয়েছে জনগণই সব ক্ষমতার মালিক, যে সংবিধানে মানবাধিকার, আইনের শাসন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জিয়া-মোশতাকের নেতৃত্বে খুনিচক্র সংবিধান লঙ্ঘন করে আগ্নেয়াস্ত্রের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতা জবরদখল করে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকারসহ বঙ্গবন্ধুর সব আদর্শকে মুছে দিয়েছিল বাহাত্তরের পবিত্র সংবিধান ক্ষতবিক্ষত করে, যে কথাগুলো মহামান্য হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ অত্যন্ত স্পষ্ট করেই ব্যক্ত করেছেন।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা খুনি জিয়াউর রহমান কর্তৃক নিগৃহীত হয়ে বহু বছর যাযাবরের মতো দুঃসহ জীবন কাটালেও বাবার আদর্শকে কখনো মন থেকে হারিয়ে যেতে দেননি। মা-বাবা-ভাইদের হারিয়ে বাংলাদেশের জনগণই হয়ে ওঠে তাঁর পরিবার, যাদের কল্যাণই হয়ে ওঠে তাঁর একমাত্র পাথেয়, যে কথা তিনি শুধু বলেই থাকেন না, কাজে পরিণত করেও প্রমাণ করছেন।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পাওয়ার পরই তিনি স্থির করেন জিয়া-মোশতাক যে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছেন, যে বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রচলন করেছেন, আইনের শাসনকে যেভাবে পদদলিত করেছেন, তা খণ্ডন করতে হবে। দেশের আপামর জনসাধারণকে সংযুক্ত করে, নিরলস আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি জিয়া প্রতিষ্ঠিত এবং জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া লালিত বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশকে উদ্ধার করেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যা ছিল প্রাথমিক প্রয়োজন। জিয়া-মোশতাক গং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের (জিয়া-মোশতাকও যাদের অন্তর্ভুক্ত) বিচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, আইনের শাসন এবং সাংবিধানিক শাসনকে রুদ্ধ করার জন্য যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই সেই ইনডেমনিটি আইন (১৯৭৫-এ প্রণীত যে অধ্যাদেশ জিয়া ১৯৭৯ সালে আইনের রূপ দিয়েছিলেন) বাতিল করে বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং চার জাতীয় নেতা হত্যার বিচার শুরু করার দ্বার উন্মুক্ত করে দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা একদিকে যেমন গোটা দেশকে কলঙ্কের টিকা থেকে মুক্তি দিয়েছে, অন্যদিকে তেমনি জয় করেছে বিশ্ববাসীর প্রশংসা।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">জিয়া-মোশতাক শুধু বঙ্গবন্ধু এবং চার নেতা হত্যার (যে হত্যায় তাঁদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা ও নির্দেশনা প্রমাণিত) বিচারই বন্ধ করেননি, তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করতেও কোনো পদক্ষেপ নেননি, যদিও ১৯৭৩ সালেই বঙ্গবন্ধু তাঁদের বিচারের জন্য আইন প্রণয়ন করেছিলেন, এমনকি সংবিধানেও পরিবর্তন এনেছিলেন। শফিউল আলম প্রধান নামের সাত খুনের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে জিয়া ক্ষমা করে দিয়ে ন্যায়বিচারের ভাবনাকে টুঁটি চেপে হত্যা করেছিলেন তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য। অথচ বঙ্গবন্ধু সে সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শফিউল আলম প্রধানের বিচার নিশ্চিত করেছিলেন, ছাত্রলীগ নেতা ছিল বলে শফিউল আলম প্রধানকে বিচার থেকে মুক্তি দেওয়ার চিন্তা বঙ্গবন্ধু কখনো করেননি। জিয়ার অবৈধ শাসনকালে বহু মানবাধিকার এবং আইনের শাসনবিরোধী ভূমিকার অন্যতমটি ছিল ১৯৭৭ সালে বিচারের প্রহসনের নামে কয়েক শ মুক্তিযোদ্ধা সৈনিককে হত্যা করা। জাপানের একটি বিদ্রোহীগোষ্ঠী তাদের একটি বিমান ঢাকায় নিয়ে এলে জিয়া তাঁর পাকিস্তানি প্রভুদের নির্দেশ ও প্ররোচনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন। হত্যাযজ্ঞকে আইনি রূপ দেওয়ার মানসে জিয়া এমন এক অবিচারের নাটক মঞ্চায়ন করেছিলেন, যাকে প্রহসন হিসেবে চিহ্নিত করলেও খুব কম বলা হবে। সেই জিয়া প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত আদালতগুলোতে বিচারিক প্রক্রিয়ার ন্যূনতম নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়নি বলে সেসব তথাকথিত আদালতের বিচারকরাই পরবর্তী সময়ে উল্লেখ করেছেন। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের বিন্দুমাত্র সুযোগ দেওয়া হয়নি, ছিল না কোনো আপিলের অধিকার। একেকজনের বিচার করা হয়েছে একেক মিনিটে। অনেককে তথাকথিত আদালতের তথাকথিত আদেশের আগেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে ফাঁসির পর মরদেহগুলো তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে কোথায় কিভাবে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তা কেউ জানে না। সাজানো আদালতগুলোর কৌতুক অভিনেতাসুলভ কারিগররা পরে বলেছেন যে তাঁদের ওপর নির্দেশনা ছিল জিয়া যেসব ব্যক্তির নাম পাঠাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিতে হবে। এমনকি জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন লে. জেনারেল মীর শওকত আলীও বলেছিলেন যে বিচারটি সঠিক ছিল না, যে কথা প্রখ্যাত সাংবাদিক জায়েদুল আহসান পিন্টু তাঁর গবেষণাসমৃদ্ধ বই </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">রক্ত পিচ্ছিল অন্ধকার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এ উল্লেখ করেছেন। জিয়ার সময়ে যে ধরনের মানবাধিকার নিধন হয়েছিল, তার তুলনা বিশ্বে খুঁজে পাওয়া ভার। তাই মহামান্য হাইকোর্ট এক রায়ে জিয়াকে ঠাণ্ডা মাথার খুনি বলে উল্লেখ করেছেন। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনা ক্ষমতাপ্রাপ্তির পরই পূর্ণসময় ব্যয় করেছিলেন জিয়াসৃষ্ট এবং এরশাদ ও খালেদা পালিত সাংবিধানিক ও বিচারিক নৈরাজ্যের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে। সামরিক ফরমান জারি করে ক্ষমতার জবরদখলকারী জিয়াউর রহমান বাহাত্তরের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলো, যথা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের বার্তা মুছে ফেলেছিলেন সংবিধানের তথাকথিত পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। তাই ১৯৭২ সালের বঙ্গবন্ধু প্রণীত সাংবিধানিক বৈশিষ্ট্যগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া প্রণীত পঞ্চম সংশোধনীর মূলোৎপাটন করা। মহামান্য হাইকোর্ট সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন পঞ্চম সংশোধনীকে আগাগোড়া বেআইনি ও অচল ঘোষণা করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মহামান্য হাইকোর্টের সেই রায়কে বাস্তবায়িত করা হয় সেই রায়ের আলোকে সংবিধানকে পুনর্মুদ্রণ করে। এটি ছিল আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এর ফলে গণতন্ত্র, সংবিধান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের আদর্শগুলো ফিরিয়ে আনা হয়, যেগুলো স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">খালেদা জিয়া কর্তৃক মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর অস্ত্র চালানোর আরেকটি ঘৃণিত অধ্যায়ের নাম </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপারেশন ক্লিন হার্ট</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">। ২০০২ সালে উদ্ভাবিত এই অভিশপ্ত প্রক্রিয়া দ্বারা খালেদা আইন প্রয়োগকারী বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর দ্বারা চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিনা বিচারে হত্যা করতে, নির্যাতন করতে, অন্তরিন ও গুম করতে। খালেদা শুধু এতেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বিনা বিচারে হত্যা, গুম, নির্যাতনকারীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ২০০৩ সালে ঠিক তাঁর স্বামীর অনুকরণে একটি ইনডেমনিটি আইনও করেছিলেন, যেটিকে মহামান্য হাইকোর্ট অবৈধ বলে বাতিল করে দিয়েছিলেন। মামলাটি মহামান্য হাইকোর্টে শুনানি হয়েছিল। হাইকোর্ট ব্যক্ত করেছিলেন যে এই অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে বহু শত মানুষকে হত্যা, গুম, বিকলাঙ্গ এবং আটক করা হয়েছিল, যার বিচার হওয়া দরকার। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা হয়তো নতুন প্রজন্মের অনেকেরই জানা নেই। সেই কলঙ্কিত দিনটিতে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, খালেদার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, প্রতিমন্ত্রী পিন্টু, পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার রহিম, পুলিশের আইজি প্রমুখের নেতৃত্বে এবং ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে সে সময়ের বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর নেতৃত্বে আয়োজিত সভায় বেশ কয়েকটি পাকিস্তানে প্রস্তুত গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। আক্রমণে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর কানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। আক্রমণে আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান (যাঁর স্বামী পরবর্তী সময়ে দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন) নিহত হয়েছিলেন। নিহত হয়েছিলেন আরো ২৩ জন। আহতরা এখনো ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। এই নারকীয় ঘটনার পর খালেদার বিএনপি-জামায়াত সরকার যে অপকর্মের আশ্রয় নিয়েছিল, পৃথিবীতে আইনের শাসন হত্যার ইতিহাসে তা বিরল। প্রথমেই জজ মিয়া নামের রাস্তায় বসবাসকারী, ছন্নছাড়া এক ভবঘুরেকে খালেদার পুলিশ ধরে এনে তাকে টাকার লোভ ও ভয় দেখিয়ে বলাতে বাধ্য করেছিল যে সে-ই গ্রেনেডগুলো নিক্ষেপ করেছে। খালেদা জিয়ার এই সাজানো ঘটনা জজ মিয়া নাটক নামে দুনিয়াভর পরিচিত। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিলে বিএনপি-জামায়াতের কিছু আইনজীবী আদালতে যে মাস্তানি করেছেন, তার তুলনা নেই বললেই চলে। তাঁরা আইনের শাসন ভঙ্গ করে তাঁদের নিজস্ব শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই একের পর এক এগুলো করে যাচ্ছেন, যে কারণে অবশেষে মহামান্য আপিল বিভাগ কঠোর আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কোনো মিছিল-মিটিং-মাইকিং চলবে না।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">সময় এসেছে এসব নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর, যারা বহু কষ্টে অর্জিত আইনের শাসনকে চুরমার করে দিতে মাঠে নেমেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা, যিনি আইনের শাসন, সংবিধানের শাসন এবং ন্যায়বিচার বজায় রাখতে অবিশ্রান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"> </p>