‘বিগত ১৭৪ বছরের মধ্যে পৃথিবী তৃতীয়বার উষ্ণতম মে প্রত্যক্ষ করল।’ এই বাক্যটিকেই শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করে আমেরিকার ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) গত ১৪ জুন ২০২৩ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ শতকের তুলনায় গত মে ২০২৩-এ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ০.৯৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেশি ছিল। উল্লেখ্য, বিশ শতকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪.৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা ও আমাদের করণীয়
- বিধান চন্দ্র দাস

গ্লোবাল অ্যানুয়াল টেম্পারেচার র্যাংকিংস আউটলুক (ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ইনফরমেশন) বলছে, ২০২৩ সাল হবে পৃথিবীর এ পর্যন্ত রেকর্ড করা ১০টি উষ্ণতম বছরের একটি, এমনকি প্রায় ৮৯ শতাংশ সম্ভাবনা আছে পাঁচটি উষ্ণতম বছরের মধ্যে একটি হওয়ারও। এনওএএ থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল নিনো’ চক্র শুরু হওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার সঙ্গে এল নিনো প্রবলভাবে দেখা দিলে তার অভিঘাত মারাত্মক হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে আগামী বছর (২০২৪) হবে উষ্ণতম বছর।
নাসার গোডারড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ (জিআইএসএস) হিসাব দিয়েছে, ১৮৮০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে। সব থেকে বেশি বৃদ্ধি ঘটেছে ১৯৭৫ সালের পর থেকে। প্রতি দশকে প্রায় ০.১৫ থেকে ০.২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পাবে।
সর্বশেষ গত ২২ মার্চ ২০২৩ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্ত সরকার প্যানেল (আইপিসিসি) তাদের প্রতিবেদনে (ক্লাইমেট চেঞ্জ ২০২৩ : সিনথেসিস রিপোর্ট) দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে, মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্যই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই বৃদ্ধির পরিমাণ (১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের তুলনায়) ১.০৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ভূপৃষ্ঠ ও সমুদ্রে এই বৃদ্ধির পরিমাণ যথাক্রমে ১.৫৯ ও ০.৮৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। কাজেই ২০২৪ সাল হঠাৎ করেই উষ্ণতম বছর হচ্ছে না, এটি আসলে বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, ১ বা ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের এত মাথাব্যথা কেন? আমরা যে যেখানে বাস করি, সেখানে তো কয়েক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা প্রতিদিনই ওঠানামা করে। আসলে স্থানীয় তাপমাত্রার ওঠানামা, যা অল্প সময়ের (রাত ও দিন, গ্রীষ্ম ও শীত) মধ্যে ঘটে, তার অভিঘাত বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক তাপমাত্রা থেকে ভিন্ন। বৈশ্বিকভাবে ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সব মহাসাগর, বায়ুমণ্ডল এবং স্থলভাগকে উষ্ণ করতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তার জন্য বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১/২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অতীতে ১ থেকে ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমার জন্য পৃথিবী স্বল্পকালীন বরফ যুগে (লিটল আইস এজ) নিমজ্জিত হয়েছিল। ২০ হাজার বছর আগে ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা হ্রাসের কারণে উত্তর আমেরিকার একটি বিশাল অংশ বরফের নিচে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক মাত্র ০.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার বৃদ্ধি মানুষ, জীবজগৎ তথা প্রকৃতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারে। আগে এত কম তাপমাত্রা পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। বলা হচ্ছে, বৈশ্বিকভাবে অর্ধডিগ্রি কিংবা ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তা প্রকৃতিতে ক্লাস্টার বোমার মতো পরিণাম ডেকে আনে। বর্তমানে মেরু বরফ বিগলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি ধ্বংস, শস্য উৎপাদন হ্রাস, বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তন, প্রবালপ্রাচীর বিনষ্ট হওয়ার মতো ঘটনাগুলো এ কারণেই ঘটছে। খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দাবানল, বজ্রপাত ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘হিট-ওয়েভ’-এ আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট রোগব্যাধিও বেড়েছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য জাতিসংঘ নানাভাবে কাজ করছে, বিশেষ করে বিগত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনে (কপ : কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ) এ ব্যাপারে নানা ধরনের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২১) বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তাপমাত্রার ওপরে ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখা এবং তা ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। পরেও কয়েকটি সম্মেলনে (কপ ২২-২৭) এ ব্যাপারে নানা ধরনের চুক্তি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এতগুলো সম্মেলন ও চুক্তির পরও বৈশ্বিক তাপমাত্রা আশা অনুযায়ী সীমিত রাখা সম্ভব হয়নি।
গত বছর (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৈশ্বিক তাপমাত্রা সীমিত রাখার বিষয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কপ-২৭ (৬-২০ নভেম্বর ২০২২) উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দেওয়ার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে (৩ অক্টোবর ২০২২)।’ যে সময় সবাই একসঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ তথা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রয়োজন ছিল, ঠিক সেই সময় যুদ্ধ জয়ের উন্মাদনায় শক্তিধর দেশগুলোকে পেয়ে বসেছে। বিশ্ব এখন পারমাণবিক যুদ্ধের খুব কাছে চলে এসেছে। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ যখন ক্ষুধা ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে, তখন লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে তথাকথিত যুদ্ধ জয়ের জন্য।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস দায়ী। জাতিসংঘ বলছে, বছরে ৩০ গিগাটন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ করতে পারলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে। এর জন্য ছয়টি ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে—১. জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে এনে নবায়নযোগ্য (জলবিদ্যুৎ, বায়ু, সৌর, পারমাণবিক, জিওথার্মাল ইত্যাদি) জ্বালানি ব্যবহার; ২. জৈব ও পুনরুৎপাদী কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ এবং খাদ্য অপচয় নিয়ন্ত্রণ; ৩. সবুজ ভবন (নির্মাণ, ব্যবহার ও বিনষ্টকরণে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার) ও শহর (পার্ক, বাগান ও জলাশয় বৃদ্ধিকরণ) দর্শন বাস্তবায়ন; ৪. বনভূমি রক্ষা; ৫. সবুজ যানবাহন (বিদ্যুৎ, হাইড্রোজেন, বায়োফুয়েল ইত্যাদি চালিত) ও সবুজ পরিবহন (ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে পাবলিক পরিবহনকে উৎসাহদান) ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং ৬. কার্বন মূল্য (শিল্প-কলকারখানায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন মাত্রার ওপরে মূল্য ধার্য) নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন। উল্লেখ্য, বিশ্বের অনেক জায়গায় এই ক্ষেত্রগুলোর ওপর কাজ হচ্ছে এবং কোনো কোনো দেশে একাধিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সন্তোষজনক। তবে বৈশ্বিকভাবে তা সন্তোষজনক নয়।
বাংলাদেশ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৬.৭৩ এবং ১৫.১২ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস যথাক্রমে শর্তহীন ও শর্ত সাপেক্ষে কমানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। আসলে বাংলাদেশকে উপরোক্ত ছয়টি ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন পেতে হলে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। যেমন—বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ২.৫ শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি। দেশে জৈব কৃষি পদ্ধতি ব্যবহারের গতি খুবই মন্থর এবং পুনরুৎপাদী কৃষি পদ্ধতি (মাটি, জীববৈচিত্র্য ও জলাশয়কে স্বাস্থ্যময় রেখে এবং কার্বনকে মাটির গভীরে পাঠিয়ে ফসল উৎপাদন) এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। ভবন নির্মাণ, ব্যবহার ও বিনষ্টকরণে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সন্তোষজনকভাবে ব্যবহার সম্ভব হয়ে ওঠেনি। শহরগুলোর মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পার্ক ও জলাশয়ের অভাব আছে। বন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির (১০.৭৪ শতাংশ) ব্যবস্থাপনা মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমির (১৫.৫৮ শতাংশ) অবস্থা ভালো না। দেশে সবুজ যানবাহন ও সবুজ পরিবহন ব্যবস্থাও সেভাবে গড়ে উঠছে না। দেশে কার্বন মূল্য বা ট্যাক্স ধার্য ও বাস্তবায়ন করাও খুব সহজ কাজ নয়।
বাংলাদেশে উপরোক্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এল নিনো ও ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা–এই দুটিকেই বিবেচনায় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তার জন্য কাজ করা দরকার। মনে রাখা প্রয়োজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ছাড়া এল নিনো ও ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার অভিঘাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পর্কিত খবর

নেটফ্লিক্স স্রেব্রেনিচা ও গাজা
- জিয়াউদ্দিন সাইমুম

মুসলিম গণহত্যা যদি স্রেফ রসিকতার ব্যাপার হয়ে থাকে, তাহলে পশ্চিমা মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠা নেটফ্লিক্স বসনিয়ার স্রেব্রেনিচা আর ফিলিস্তিনের গাজার গণহত্যা নিয়ে নির্দয় রসিকতা করে মোটেও ভুল করেনি। কারণ পশ্চিমারা সভ্যতার ডেফিনেশন নিয়ে পাঁয়তারা করে বেড়ালেও মুসলিম ইস্যুতে নাক সিঁটকাতে মোটেও ভুল করে না। নেটফ্লিক্স তো পশ্চিমা মূল্যবোধের বাইরে যেতে পারে না।
গণহত্যা অথবা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে একসময় পশ্চিম বিশ্বে ‘আর কখনো নয়’ উচ্চারিত হতো কাঁপতে থাকা নিপাট আন্তরিকতার সঙ্গে।
ওয়ারশ ঘেটো আর স্রেব্রেনিচা থেকে গাজা পর্যন্ত গণহত্যার চিত্র, বিশেষ করে শিশুদের দুর্ভোগ—কেবল তার পবিত্রতাই হারায়নি, এটি উপহাস, কৌতুক এবং বিনোদনের সবচেয়ে নিন্দনীয় রূপে পরিণত হয়েছে।
অসংবেদনশীলতার এক মর্মান্তিক প্রদর্শনীতে, ডাচ নেটফ্লিক্স কমেডি ‘ফুটবল প্যারেন্টসে’ এমন একটি দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যেখানে স্রেব্রেনিচা গণহত্যার শিকারদের তুলনা আনাড়ি শিশু ফুটবল খেলোয়াড়দের সঙ্গে করা হয়েছে, যা বসনিয়ান গণহত্যাকে একটি কৌতুকে পরিণত করেছে।
১৯৯৫ সালে ডাচ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের তত্ত্বাবধানে আট হাজারেরও বেশি বসনিয়ান মুসলিম পুরুষ ও ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিল। ডাচ সেনারা কেবল গণহত্যা রোধ করতে ব্যর্থ হয়নি, বরং এতে সক্রিয় অংশগ্রহণও করেছিল।
গাজায় গণহত্যা রোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ডাচ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা করা হচ্ছে। এদিকে একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ডাচ নাগরিক হলোকস্টে অংশ নিয়েছিল।
অস্বীকার কেবল একটি পরোক্ষ চিন্তা নয়, এটি গণহত্যা প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেমনটি ইসরায়েলি টিকটক সেলিব্রিটিদের মধ্যে দেখা যায়, যারা গাজার ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য অনুদানের ভান করে ভাইরাল ‘প্রাংক’ ভিডিও তৈরি করে, অথচ আবেদনটিকে তারা একটি নিষ্ঠুর রসিকতা হিসেবে প্রকাশ করে।
প্রশ্ন হতে পারে, পশ্চিমারা মূল্যবোধের এই স্তরে কিভাবে এসে পৌঁছল? কঠিন সত্য হলো তারা কখনো গণহত্যার চেতনা থেকে সত্যিকার অর্থে দূরে সরে যায়নি বা যেতে পারেনি।
ইতিহাস বলছে, পশ্চিমাদের গালভরা ‘আর কখনো নয়’ শব্দবন্ধ বা আপ্তবাক্যটি বাস্তবে কখনো ছিল না। পশ্চিমারা তাদের দর্শন ও সংস্কৃতি থেকে বর্ণবাদ, উপনিবেশবাদ, অমানবিকীকরণ, সামরিকবাদের মূল কারণগুলো কখনো বাদ দিতে পারেনি। পরিবর্তে, হলোকস্টকে ইন্ধন জোগানো একই মতাদর্শগুলো নতুন সময়ে নতুন অভিব্যক্তি খুঁজে পায়, নতুন সংস্থাগুলোকে লক্ষ্য করে।
জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগরি স্ট্যান্টন গণহত্যার ১০টি ধাপের রূপরেখা দিয়েছেন—শ্রেণিবিভাগ, প্রতীকীকরণ, বৈষম্য, অমানবিকীকরণ, সংগঠন, মেরুকরণ, প্রস্তুতি, নিপীড়ন, নির্মূলকরণ এবং অস্বীকার, যা তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনো এড়াতে পারেনি। ভাষাগতভাবেও তাদের প্রতিশ্রুতি সর্বদা ভঙ্গুর ছিল। তবে তাদের একটি মন্ত্র ভবিষ্যদ্বাণীতে পরিণত হয়েছে, ‘আবার চিরকাল।’
পশ্চিমে, বিশেষ করে অতীতের গণহত্যায় জড়িত দেশগুলোর সাংস্কৃতিক প্রচারণায় শিশুদের দুঃখ-কষ্ট ন্যায্য খেলায় পরিণত হয়েছে। পবিত্রতা এখন অপবিত্র। পশ্চিমা মিডিয়ায় শিশুরা সর্বদা একটি নির্দিষ্ট ‘বিনোদনমূলক’ মূল্য ধারণ করে। তাদের ব্যথা আলোকিত, তাদের অশ্রু আবেগগতভাবে শক্তিশালী। কিন্তু দুঃখ-কষ্টকে উপস্থাপন করা এবং তা শোষণ করার মধ্যে একটি সূক্ষ্মরেখা রয়েছে। এবং আজ সেই রেখাটি কেবল অতিক্রম করা হয় না, এটি মুছে ফেলা হয়। তাই লাইভস্ট্রিম করা যুদ্ধ এবং অ্যালগরিদমচালিত সম্পৃক্ততার যুগে গণহত্যা আর কেবল একটি অপরাধ নয়, এটি আত্মতৃপ্তিও বটে। ‘ওবামানা’ মানে বসনিয়ান গণহত্যা ছিল টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত প্রথম গণহত্যা। এরই ধারাবাহিকতায় গাজার গণহত্যা প্রথম সম্পূর্ণ ডিজিটাল গণহত্যা হয়ে উঠেছে।
স্মার্টফোনগুলো বাস্তব সময়ে শিশুদের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো ধারণ করে। লাইভস্ট্রিমে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া পুরো পরিবারগুলোকে দেখানো হয়—শুধু সেই ছবিগুলোকে ব্যঙ্গ, অস্বীকৃতি অথবা আরো খারাপ প্যারোডি দ্বারা ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য। এটি সিস্টেমের কোনো বাগ নয়। এটি আজকের ক্ষমতা কিভাবে কাজ করে, তার একটি বৈশিষ্ট্য। গণহত্যা রোধ করতে ব্যর্থ একই রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের সাংস্কৃতিক শিল্পে তার শিকারদের উপহাসকে বিকশিত হতে দেয়। তবে গাজা এই নির্মম সত্যকে নিশ্চিত করে : ‘একবার আমরা একটি গণহত্যাকে ক্ষমা করে দিলে, আমরা পরবর্তী গণহত্যাটিকে সক্ষম করে তুলব, অনিচ্ছা সত্ত্বেও।’
নেটফ্লিক্স শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের বিকৃত শ্রেণিবিন্যাস উন্মোচিত করে, যেখানে এমনকি স্বর্ণকেশী, নীল চোখের ইউরোপীয় মুসলিম গণহত্যার শিকারদেরও পূর্ণ মানবতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। রিড হেস্টিংস এবং ডেভিড হাইম্যান সিরিজটি অপসারণের অযোগ্য বলে মনে করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব নতুন একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে; যার মূলমন্ত্র হিসেবে দাবি করা হয় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট হতে থাকে—পশ্চিমাদের এই নীতিমালা সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়, বরং একেক দেশের জন্য তা একেক রকম।
নেটফ্লিক্সের কথা বাদ দিন। পশ্চিমা দুনিয়ায় বিধর্মী শত্রু অথবা ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে মুসলমানরাই এখন প্রচারমাধ্যমের সবচেয়ে বড় টার্গেট। একটি তথ্য জানালেই সেটি টের পাওয়া যাবে। ডেনমার্কে গত বছরের ১৫ মে থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের ছয়টি জাতীয় সংবাদপত্র এবং দুটি টিভি চ্যানেলের ওপর জরিপে দেখা গেছে, সেখানকার মিডিয়া কাভারেজের ৭৫ শতাংশই ইসলাম সম্পর্কিত এবং তার মধ্যে ৬০ শতাংশই নেতিবাচক অর্থাৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ।
পশ্চিমের প্রচারমাধ্যম এমনভাবে মুসলমানদের সামাজিক পরিচয় বানায়, যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসের আশ্রয় নেওয়াটা একমাত্র তাদেরই বৈশিষ্ট্য। সহজেই পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমগুলো ভুলে যায়, মুসলমানদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সন্ত্রাস পরিচালনা শুরু করার বহু আগে থেকে পৃথিবীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপকভাবেই ছিল। উদাহরণ হিসেবে ফিলিস্তিনে সারা দুনিয়ার ইহুদিদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ‘স্টার্ন গ্যাং’ ও ‘ইরগান’ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে ‘আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ বা এএনসি যেভাবে রাজনৈতিক সন্ত্রাস ব্যবহার করেছে, তা যেকোনো মুসলিম সন্ত্রাসকে ম্লান করে দেয়। অথচ মুসলিমরাই এখন দুর্ভাগ্যে ভাগ্যবান!
লেখক : সাংবাদিক, গবেষক

বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা : আরো অভিযান প্রয়োজন
- ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

সম্প্রতি বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট রাজধানীর মিরপুর-১-এ একটি অভিযান পরিচালনা করেছে। সেখানকার কাঁচাবাজার ও পাখির দোকানগুলোতে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিক্রির জন্য আটকে রাখা ৫০টি দেশীয় বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযানে তিনটি পাহাড়ি ময়না, দুটি ঝুঁটিশালিক, দুটি গাঙশালিক, দুটি তিলা ঘুঘু, ১৪টি শালিক, দুটি হিরামন তোতা, ২৩টি টিয়া, একটি বাজপাখি ও একটি কড়ি কাইট্টা উদ্ধার করা হয়েছে।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী কোনো প্রকার অনুমোদন বা লাইসেন্স ছাড়া বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয়, শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। বন্যপ্রাণী বলতে বোঝাবে বন্য অবস্থায় থাকা যেকোনো প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, মাছ, পোকামাকড় এবং অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণী। ওই আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখির ট্রফি বা অসম্পূর্ণ ট্রফি, মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করলে, দখলে রাখলে বা ক্রয়-বিক্রয় করলে বা পরিবহন করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। এমন অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ৫২ ও ২৪ ধারার ক্ষমতাবলে সরকার পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২০ প্রবর্তন করে। এই বিধিমালা শৌখিন পোষা পাখি লালন-পালনকারী অর্থ কোন ব্যক্তি, যিনি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষা পাখি লালন-পালন করেন না এবং যাঁর কাছে কোনো প্রজাতির অনধিক ১০টি পাখি আছে।
বাংলাদেশে নিবন্ধিত মোট ৮২টি খামার রয়েছে। এরা বিধিমালা অনুযায়ী পোষা পাখির ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ ও এই বিষয়ে সচেতনতা না থাকায় যত্রতত্র পাখির অবৈধ ব্যবসা গড়ে উঠছে। পোষা পাখির লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনাবেচা ও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হয়। কোনো ব্যক্তি এই লাইসেন্স না নিলে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। লাইসেন্স পাওয়ার পর তাঁকে পজেশন সার্টিফিকেট নিতে হবে। এ ছাড়া কোনো পাখি নিজ মালিকানায় বা দখলে নিতে পারবেন না। প্রতিটি পাখির পজেশন সার্টিফিকেটের জন্য বার্ষিক ফিও দিতে হবে। প্রতিবছর এটি নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স বাতিল হলে পজেশন সার্টিফিকেটও বাতিল বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে পোষা পাখির খামারির ১০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স করতে হবে। পেট শপের ক্ষেত্রে লাইসেন্স ও প্রসেস ফি লাগবে ৫০০ টাকা। বছরে পজিশন ফি দিতে হবে দুই হাজার টাকা।
বিধিমালা অনুযায়ী শৌখিনভাবে পোষা পাখি লালন-পালন ও খামার পরিচালনার কিছু শর্ত আছে। যেমন—শৌখিনভাবে এবং খামারে পোষা পাখি লালন-পালনের ক্ষেত্রে প্রতিটি পোষা প্রজাতির বিধিমালায় নির্দিষ্ট পরিমাপ অনুযায়ী নির্ধারণ করবে। খামারে প্রতিটি পোষা পাখি প্রজাতির খাঁচার মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার, খনিজ লবণ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও সুষম খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। খামারে প্রতিটি পোষা পাখির এবং খামারকর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা নিশ্চিত করতে হবে। খামারে পোষা পাখির বাচ্চা জন্মানোর পর বাচ্চার পায়ে রিং পরানোর পর রিং নম্বরসহ লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। পোষা পাখি কোনো অবস্থায়ই প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যাবে না। মৃত পোষা পাখির দেহাবশেষ মাটিচাপা দিতে হবে এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত খামারিরা রেজিস্টার্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বছরে এক বা একাধিক পোষা পাখি প্রদর্শন করতে পারবেন।
সম্প্রতি বন বিভাগের অপরাধ দমন ইউনিট যে অভিযান পরিচালনা করেছে, তা সত্যি আশাব্যঞ্জক। এ রকম অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা দরকার। একই সঙ্গে অনলাইন মনিটরিংও রাখা দরকার। কেননা অনলাইনেও নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিক্রি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশীয় নানা বন্যপ্রাণী বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের তথ্য মতে, নানা প্রজাতির পাখি তো আছেই, কাঠবিড়ালি, কচ্ছপও সেখানে বিক্রয় হয়। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্ল্যাটফর্মগুলোতেও দেশীয় বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের কড়া নজরদারি দরকার।
লেখক : শিক্ষক ও গবেষক
mitra_bibhuti@yahoo.com

ক্ষমতার পালাবদলে ব্যবস্থা আরো মর্মস্পর্শী
- সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বর্তমান সরকারের প্রতিষ্ঠা ঘটেছে একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এবং সেই অভ্যুত্থানে মেয়েরা ছিলেন একেবারে সামনের কাতারে। আমাদের দেশের সব আন্দোলনেই মেয়েরা থাকেন। কিন্তু এবারের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তাঁদের অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব, এমনকি অভাবিতপূর্বও বলা চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তো বটেই, স্কুল-কলেজের মেয়েরাও পথে বের হয়ে এসেছে।
মেয়েদের এই অংশগ্রহণ অভ্যুত্থানকে একটি সামাজিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস বলেও অনেকে ভেবেছিলেন। কিন্তু দিনের শেষে কী দেখা গেল? যে কে সেই। থোড় বড়ি খাড়া।
কিন্তু পটুয়াখালীর লামিয়া আক্তার, বয়স যার মাত্র ১৭। তাকে যে প্রাণ দিতে হয়েছে, সেটি তো সবাই জানেন, যাঁরা খবরের কাগজ পড়েন। লামিয়ার বাবাকেও কিন্তু প্রাণ দিতে হয়েছে। এবং বাবার ওই প্রাণদানের ধারাবাহিকতায়ই লামিয়া তার বাঁচার অধিকারটি হারিয়েছে। বেঁচে থাকাটা অসম্ভব দেখে মেয়েটি আত্মঘাতী হয়েছে। তার বাবা জসিমউদ্দিন একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার ড্রাইভার ছিলেন। না, তিনি কোনো দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাননি। তিনি নিহত হয়েছেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে, ঢাকার মোহাম্মদপুরে। জসিমউদ্দিন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে তিনি থাকতেন ঢাকার আদাবর এলাকায়। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি দিশাহারা হয়ে পড়ে। শহীদ জসিমউদ্দিনকে দাফন করা হয়েছে তাঁর নিজের গ্রামে। তাঁর কন্যা লামিয়া এক বিকেলে গিয়েছিল বাবার কবর জিয়ারত করতে। সেখান থেকে সন্ধ্যায় সে যাচ্ছিল তার নানাবাড়িতে। পথিমধ্যে দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে। সেখানেই শেষ নয় কাহিনির। লামিয়ার মুখ বন্ধ করার জন্য ধর্ষকরা তার যে নগ্ন ছবি যথারীতি ভিডিও করে রেখেছিল, তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। বাবা শহীদ, কন্যা ধর্ষিতা। পরিবার বিপর্যস্ত, ধর্ষিতা কন্যা বিপন্ন। আশা-ভরসাহীন লামিয়া কী করবে ঠিক করতে পারেনি। প্রশ্ন ওঠে, এটিই কি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান মুখচ্ছবি? না, আমরা সেটি জানি না; এবং এটিও জানি যে সাধারণীকরণে ভ্রান্তি ঘটে। তবে এটি আমরা নিশ্চিত জানি যে পাষাণহৃদয় সমাজ ধর্ষকদের নিবৃত্ত করবে কী, উল্টো লামিয়াদেরই অসম্মান করে। লামিয়ার দশা হয়েছে একাত্তরে ‘সম্মানজনক খেতাব’ প্রাপ্ত বীরাঙ্গনারদের মতোই। লামিয়া সাহসী মেয়ে। থানায় গিয়ে সে নালিশ করেছে। বদমাশদের মধ্যে দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু প্রতিকার তো সুদূরপরাহত, অপরাধীদের যে বিচার হবে সে নিশ্চয়তা লামিয়া পায়নি। প্রাণদানের ক্ষতিপূরণ হিসাবে শহীদ বাবার নামে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সোমবার সকালে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে গিয়ে টাকাটা লামিয়ার নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লামিয়ার পক্ষে বাবার মৃত্যু, নিজের অপমান, বিচারে বিলম্ব, পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট—এতসব অত্যাচার সহ্য করা নিশ্চয়ই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল, নইলে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শনিবার রাতেই সে গলায় ফাঁস দিয়ে সব যন্ত্রণার অবসান ঘটাবে কেন? লামিয়ার আহত বাবা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে ১০ দিন লড়াই করে মারা গেছেন, আহত লামিয়া তার অপমান ও বেদনার সঙ্গে লড়াই করেছে ৩৮ দিন, তার পরে আর পারেনি; নিজেই শেষ করে দিয়েছে নিজের বিড়ম্বিত জীবনকে।
যেকোনো সমাজেই নারীর অবস্থান দেখে সংস্কৃতির গুণাগুণের একটি ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মেয়েরা এখন সব রকমের কাজ করেন; দায়িত্ব পালনে সক্রিয় থাকেন আর রাজনৈতিক আন্দোলনেও যে থাকেন সে তো আমরা দেখি, জানি, উপলব্ধি করি, কিন্তু নারীর মর্যাদার যে বাস্তবিক অবস্থা তার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের নিরাপত্তার অভাব দেখে। হেফাজতপন্থীরা এবং ওয়াজ ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতি বিদ্বেষ এমন ভাবে প্রচার করেন যে শুনলে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে এবং জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হয় যে তাঁদের নিজেদের ঘরে কি স্ত্রী, কন্যা, ভগ্নি ও নারী আত্মীয়-স্বজন নেই? আমরা তো অনেক এগিয়েছি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, ডিজিটাল হয়ে গেছি, পুরোপুরি স্মার্ট হতে বেশি বাকি নেই, তার মধ্যে মেয়েদের কেন এমন অমর্যাদা? ব্যাখ্যাটি অবশ্যই এই রকমের যে আমাদের সব উন্নতিই পুঁজিবাদী ধরনের এবং পুঁজিবাদী উন্নয়নের আলোকিত দিকটির তুলনায় অন্ধকারগুলোকেই রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রকরা সাদরে গ্রহণ করেছেন। অন্ধকারের ভেতর বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে ভোগবাদিতা; এবং মেয়েদের দেখলেই পুরুষপুঙ্গবদের ভোগবাদী লালসা চঞ্চল হয়ে ওঠে। এটি বিশেষভাবে দেখা যায় তরুণদের ভেতর। নির্মম সত্য অবশ্য এটিও যে দেশে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চর্চা কমতে কমতে একেবারেই নিচে নেমে এসেছে।
ধরা যাক চলচ্চিত্রের কথা। সিনেমা হলে গিয়ে অনেকের সঙ্গে ছবি দেখার ভেতর যে কেবল বিনোদন থাকে তা-ই নয়, থাকে সামাজিকতাও। দেশে লোকসংখ্যা অনেক বেড়েছে, কিন্তু নতুন সিনেমা হল তৈরি হবে কী, যেগুলো ছিল সেগুলোও একে একে নিভে যাচ্ছে; সেখানে গড়ে উঠছে বিপণিবিতান, যে বিতানে সিনেমা হল বাহুল্য জ্ঞানে বর্জিত। পাঠগারে গিয়ে বই পড়াতে আনন্দ থাকে আবার সামাজিকতাও থাকে। সামাজিকতার বিষয়টি ভুললে চলবে না; মানুষ সামাজিক প্রাণী বলেই অন্য প্রাণীদের থেকে স্বতন্ত্র আচরণ করে এবং সাংস্কৃতিকভাবে নিজের উন্নতি ঘটায়। দেশে এখন নতুন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠা নেই, পুরনো পাঠাগার পাঠকের অভাবে ম্রিয়মাণ। স্কুলে গ্রন্থাগারিক পদ আগে ছিল না, এখন তৈরি হয়েছে, সেটি একটি উন্নতি বটে, কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীদের গ্রন্থানুরাগ যে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা মোটেই নয়; আগের তুলনায় অনেক কমেছে। শহরগুলোতে গানের স্কুল জনপ্রিয় ছিল; ঘরেও গানের চর্চা চলত। এখনকার অভিভাবকরা ছেলেমেয়েকে কোচিং সেন্টারে আনা-নেওয়াতেই এতটা সময় দিতে বাধ্য হন যে সন্তানদের সংগীতে দক্ষ করে তোলার কথা ভাবার অবকাশটুকু পর্যন্ত পান না।
পাঠাগারের প্রতি কাঠ মোল্লাদের অনীহা সর্বজনবিদিত। অথচ ইসলাম ধর্মের প্রধান অবদানগুলোর একটি ছিল জ্ঞানের বিকাশ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা অসাধারণ উৎসাহে জ্ঞান-বিজ্ঞানে চর্চা করেছেন এবং সেই জ্ঞান সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা পাঠাগার গড়েছেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওইভাবে মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে তাঁরা অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। অনেক দেশেই এখন তাঁদের অগ্রগমনটা বিপরীতমুখী। একাত্তর সালে ‘ইসলাম রক্ষা’য় স্বনিয়োজিত পাকিস্তানি হানাদাররা যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প গেড়ে বসেছিল, সেখানে গ্রন্থাগারগুলোকে জ্বালানি সরবরাহকারী হিসেবে ব্যবহার করে তারা সুখ পেয়েছে। তাদের স্থানীয় দোসররা, বিশেষভাবে আলবদরবাহিনী ঠিক করেছিল গ্রন্থাগারগুলোতে হানা দিয়ে অবাঞ্ছিত গ্রন্থ চিহ্নিত করে সেগুলোকে ভস্মীভূত করবে। বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে গ্রন্থও প্রাণ হারাবে। তা বুদ্ধিজীবী নিধনে তারা ভালোই দক্ষতা দেখিয়েছে, গ্রন্থ নিধনের জন্য সময় পায়নি। তবে অতি সম্প্রতি শুনলাম তাদের মতাদর্শিক বংশধররা টাঙ্গাইলে পূর্ববর্তীদের অসমাপ্ত কাজে হাত লাগিয়েছে। তারা একটি গ্রন্থাগার থেকে পাঁচ শতাধিক গ্রন্থ লুণ্ঠন করে ছালায় ভরে নিয়ে গেছে। গ্রন্থাগারের আসবাব ভাঙচুর করেছে, যাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকার। তবে গ্রন্থগুলো তারা পুড়িয়ে ফেলেনি, ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছে এবং থানায় গিয়ে খবর দিয়েছে যে অনেকগুলো পলাতক দাগি আসামি ধরা পড়েছে। তাদের সাফ কথা, এলাকায় কোনো পাঠাগার থাকবে না। অথচ টাঙ্গাইল তো সংস্কৃতিচর্চার জন্য সুখ্যাত ছিল। মীর মশাররফ হোসেন টাঙ্গাইলে বসে সাহিত্যচর্চা করেছেন, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে সেই ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মুসলমান নারী শিক্ষার্থী ফজিলাতুন্নেসা অঙ্কশাস্ত্রে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে সারা বাংলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিলেন; মওলানা ভাসানীও টাঙ্গাইলে বসবাস করতে পছন্দ করতেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের ভূমিকা গৌরবমণ্ডিত। সেসবকে বিদায় দিয়ে ‘তৌহিদী জনতা’র বর্তমান উদ্যোগ বোধ করি এই লক্ষ্যে যে টাঙ্গাইলে শুধু তাঁরাই থাকবেন আর থাকবে মুখোমুখি বসিবার প্রগাঢ় অন্ধকার।
কিশোর অপরাধী বাড়ছে। এর একটি বড় কারণ সংস্কৃতির চর্চা নেই। আমরা যখন অপেক্ষাকৃত কম উন্নত ছিলাম, দেশে তখন কিশোর সংগঠন ও কিশোর আন্দোলন ছিল, এখন সেগুলো দিবালোকে স্বপ্নের দশা পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আছে অথচ ছাত্রসংসদ নেই এমন অবস্থা ঔপনিবেশিক শাসনামলেও ভাবা যেত না; মুক্ত স্বাধীন স্বদেশে এখন আমরা সেটিকে দিব্যি মেনে নিয়েছি।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিএনপির পথ আটকানোর পাঁয়তারা কেন
- জব্বার আল নাঈম

সন্দেহাতীতভাবে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। কারণ একদিকে রয়েছে সংস্কারের নামে বিএনপিকে বিব্রত করার কৌশল, অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কূটকৌশল ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দলটি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, বিএনপি কি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার, নাকি প্রতিহিংসার শিকার? নাকি কারো চক্রান্ত? যদি এমনটাই হয়, তাহলে এসবের সমাধানে বিএনপির কৌশল কী হতে পারে?
বিএনপির ইচ্ছা দ্রুতই রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে সক্রিয় দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, কিন্তু প্রক্রিয়াটা যে সহজভাবে হচ্ছে না কিংবা হতে দেওয়া হবে না, তা মোটামুটি পরিষ্কার।
২
সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির কিছু মতভিন্নতা রয়েছে, সেটি সবাই জানে। আবার মতভিন্নতার ভেতর দিয়েই দেশে গণতন্ত্রের ভিত শক্ত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। বাস্তবতা বলে আসলে মতভিন্নতা নয়, বিগত দিনের লড়াই-সংগ্রাম ও নির্যাতনের মাঝেও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা পেশ করেন, যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলনের মাঠে কর্মীরা জীবনও দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে যখন জুলাই চব্বিশ নেমে এলো, পরবর্তী রাষ্ট্র গঠনে প্রাসঙ্গিক হলো বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব।
বিএনপিকে সরাসরি মিডিয়া ট্রায়ালের সামনে দাঁড় করানোটা কোনো কোনো দলের পক্ষে যৌক্তিক সমাধান যেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা নিম্নরুচির পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়তই আক্রমণ কিংবা অপমানিত করছেন।
অনুমান করে বলছি, নির্বাচনটি হতে পারে তিনটি ব্লকে। প্রথম ব্লকে বিএনপি, দ্বিতীয় ব্লকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি আর সর্বশেষ ব্লকে ১৪ দল। যদিও নির্বাচনের আগে আরো জল ঘোলা হবে, ঘোলা জলে মাছ শিকার হবে, বিএনপিকে টার্গেট করে কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলা হবে। এর পরও সব দলেরই লক্ষ্য থাকবে একটিই—বিএনপি ঠেকাও! তার পরও নির্বাচনের আগে নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করতে জামায়াত, এনসিপি ও অন্যান্য দলকে নির্বাচনমুখী লাইনে রাখাও বিএনপির দায়িত্ব। তাই সমীকরণ যতই কঠিন হোক, পথ এগোতে হবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে।
৩
বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন না হলে দেশ রসাতলে যাবে। ইন্টেরিমের ব্যর্থতার ষোলো কলা পূর্ণ হলে দেশ যাবে অন্য কারো কবজায়। এতে ছোট ছোট দলের চেয়ে ক্ষতিটা বড় দল হিসেবে বিএনপির বেশি। এমতাবস্থায় বিএনপি সব দলকে ডেকে প্রশাসনের ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচন, সংকট ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারে।
বিএনপিতে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে দেশের প্রায় মোট মুক্তিযোদ্ধার অর্ধেক। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের প্রধান ছিলেন। সেই দলটির একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে আপসহীন থাকাটা স্বাভাবিক। আলোচনার সুবিধার্থে বলা যেতে পারে, একজনও মুক্তিযোদ্ধা দলটিতে না থাকলেও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্যসন্তান। বিএনপি তা জানে, মানে এবং স্বীকারও করে। করতেই হবে। ভবিষ্যতে যেন তা অব্যাহত থাকে বিষয়টি জাতির সামনে পুনরায় ব্যক্ত করার অর্থ হলো দেশের আগের ইতিহাস বিএনপি কখনোই ভোলে না। একই সঙ্গে নব্বই ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থানে শহীদদের ব্যাপারে বিএনপি বেশ তৎপর। জুলাই চব্বিশ স্মরণে তাদের এক বছর পূর্তিতে নানা রকম উদ্যোগ ও উদযাপন প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের ইসলামী দল কিংবা ধর্মপ্রাণ মানুষের পক্ষে বরাবরই শক্ত শক্তি হিসেবে ছিলেন। তা পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত। বর্তমানে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিও বিএনপির অবস্থান ধীরে ধীরে জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। মোদ্দাকথা, বিএনপিকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সামনের দিকে এগোতে হবে। এই মুহূর্তে বড় দল হিসেবে সম্ভবত এটিই তাদের দায়িত্ব।
লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক