বিশ্বের সর্বত্রই এখন আফগানিস্তানের বর্তমান ঘটনাবলি এবং তার ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে এক তোলপাড় চলছে। প্রবহমান রয়েছে এক আলোচনার ঝড়। গণমাধ্যমে চলছে বিভিন্ন ঘটনার বহুমুখী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা মন্তব্য। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ছিল আফগানিস্তানের ১০২তম স্বাধীনতা দিবস।
তালেবান শাসন এবং জনগণের আস্থার সংকট
- গাজীউল হাসান খান
অন্যান্য


শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত বাহিনী পরাজিত হয়ে ফিরে গেছে। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের বিদ্রোহী মুজাহিদ বাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত বাহিনীমুক্ত আফগানিস্তানে আবারও যখন নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে মুজাহিদদের সঙ্গে পশ্চিমা শক্তির বিরোধ দানা বেঁধে ওঠে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জঙ্গি হামলাটি সংঘটিত হয়েছিল। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আফগানিস্তানে আশ্রয় দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন কট্টর মুজাহিদীন গ্রুপ নিয়ে গঠিত আফগান তালেবান সরকারকে অভিযুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ওসামা বিন লাদেনই যুক্তরাষ্ট্রে জঙ্গি হামলার জন্য দায়ী এবং তাতে তালেবানের মদদ ছিল। তারই সূত্র ধরে ২০০১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করে এবং ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত তালেবান সরকারকে উত্খাত করে। তখন থেকে ২০ বছর তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আফগানিস্তানে অবস্থান করেছে এবং বিশিষ্ট আফগান নাগরিক আবদুল হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনির নেতৃত্বে পর পর দুটি জাতীয় সরকার গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল তাদের নিজস্ব (পশ্চিমা) ভাবধারায় এক নতুন জাতি গঠনের (Nation Building) মাধ্যমে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও রাজনীতির খোল-নলচে পরিবর্তন করে দেওয়া। কিন্তু দেশপ্রেমিক লড়াকু তালেবান তাদের রাজনৈতিক ভাবধারা যতই বিতর্কিত হোক, কোনো মতেই হাল ছাড়েনি। দেশব্যাপী প্রায় ৪৩টি প্রদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দখলদারি ও তাদের দেশীয় (আফগান) তাঁবেদারদের উত্খাত করার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম বা প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুগপত্ভাবে কূটনৈতিক সংলাপ চালিয়ে গেছে নিজেদের মাতৃভূমিকে বিদেশি প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন থেকেই পুরো আফগানিস্তান ক্রমে ক্রমে দখল করে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল তালেবান। তারই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখল করার মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদার সরকারপ্রধান আশরাফ গনি কাবুল থেকে পালিয়ে গিয়ে কোনো মতে নিজের প্রাণ এবং তাঁর সরকারি আফগান বাহিনীর সদস্যদের জীবন রক্ষা করেন। এ ঘটনাবলি সবারই জানা। তবে সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটাই এখন আলোচনার বিষয়।
২.
আফগানিস্তানের ১০২তম স্বাধীনতা দিবস এবং কাবুলসহ দেশের বিভিন্ন প্রদেশে প্রধান প্রধান শহরে তালেবানের উপস্থিতি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রভাবশালী পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য প্রচার করা হয়েছে। তাতে কেউ কেউ বলেছেন, তালেবান অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার দেশ শাসনে এগিয়ে এসেছে। এ ছাড়া ইসলামী আইনে অর্থাৎ শরিয়া ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার জন্য সুদীর্ঘ ২০ বছরের প্রস্তুতি এবং ‘হোমওয়ার্ক’ কোনো মতেই অবহেলার বিষয় হতে পারে না। এ কথা অনস্বীকার্য, তালেবান ‘আমেরিকান ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ অথবা আব্রাহাম লিংকনের ‘গ্যাটিসবার্গ অ্যাড্রেস’-এর তুলনায় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে ইসলামে নবী মোহাম্মদ (দ.) ঘোষিত ‘মদিনা সনদ’ পড়েছে অনেক বেশি। যেহেতু তারা আফগানিস্তানে ইসলামী শাসন চায়, সেহেতু কোরআন, হাদিস ও ইসলামী শরিয়া আইনের আলোকে নিজেদের আবার তৈরি করার চেষ্টা করেছে। তালেবান নেতারা ভালো করেই জানেন, ২০০১ ও ২০২১ সাল এক নয়। তাঁরা এখন আফগানিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ নিয়ে কথা বলতে শিখেছেন। কারণ তাঁরা এরই মধ্যে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে সফলভাবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সুসম্পন্ন করেছেন। প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও অসামরিক বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে মতবিনিময় করেছেন। সে কারণে এটাই স্বাভাবিক যে অতীতের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী পথে তাঁরা আর চলবেন না। নারীদের পর্দা প্রথা কিংবা তালেবানের একক শাসন নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেবেন না। সে কারণে এবার কাবুলে উপস্থিত হয়েই তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেন। উচ্চ পর্যায়ের তালেবান নেতাদের পরামর্শে তিনি আফগানিস্তানব্যাপী শত্রু-মিত্র-নির্বিশেষে ঘোষণা করেছেন সাধারণ ক্ষমা। বলেছেন, শিগগিরই তাঁরা সবার অংশগ্রহণ বা প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করবেন। সে সরকার হবে শরিয়া আইনের ভিত্তিতে একটি সরকার। সে সরকার কারো প্রতি (দেশি-বিদেশি) কোনো বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং আফগানিস্তানের মাটিতে কোনো বিদেশি জঙ্গি বাহিনীকে স্থান দেবে না। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ইসলামী আইন অনুযায়ী নারীদের বৈধ ক্ষমতা নিশ্চিত করা হবে এবং ইসলামী প্রথা অনুযায়ী নারীদের পর্দা প্রথা অনুসরণ করতে হবে। তবে বোরকা পরার ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী নারীর শালীনতা ও সম্ভ্রম বজায় রাখতে হবে। আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রশ্নে যথেষ্ট যত্নবান থাকবে। এর পাশাপাশি অন্য আরো কিছু বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ।
আফগানিস্তানে তালেবানের পক্ষ থেকে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নাম শোনা যাচ্ছিল প্রথম থেকেই। মোল্লা গনি বারাদার সাবেক তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং সংগঠনের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেছেন। সম্ভবত হামিদ কারজাইয়ের শাসনামলে তিনি পাকিস্তানের করাচিতে ২০১৮ সালে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ কারজাই, আশরাফ গনি সরকারের একজন অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহসহ দেশের বিভিন্ন প্রদেশের প্রভাবশালী নেতার যোগাযোগ রয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদে জানা গেছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানে সবাই প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার গঠনের ব্যাপারে, বিশেষ করে পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের নেতাদের সঙ্গেও তিনি মতবিনিময় করেছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। সে কারণে কাতার থেকে আফগানিস্তানে প্রবেশ করার পরও তাঁরা সরকার গঠন করতে কয়েক দিন সময় নিয়েছেন। এর মধ্যে পাঞ্জশির প্রদেশে তালেবানের কোনো কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন সেখানকার প্রয়াত নেতা আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র ও তাঁর অনুসারীরা। তালেবান ২০ আগস্ট পর্যন্ত পাঞ্জশিরে প্রবেশ করতে পারেনি বলে জানা গেছে। তবে পর্দার অন্তরালে সেখানে কী ঘটছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের কোথায় কী ঘটছে তা জানাও সহজ নয়। তবে উচ্চ পর্যায়ের তালেবান নেতারা অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর অর্থ হচ্ছে বিশাল আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রক্ষা করার তাগিদ। মোল্লা আবদুল গনি বারাদার কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত তালেবানের কূটনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তালেবানের যে চুক্তি হয় তাতেও স্বাক্ষর করেছিলেন মোল্লা গনি বারাদার।
এত কিছুর পরও তালেবানের বিভিন্ন ঘোষণা ও আশ্বাসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছে না আফগানিস্তান এবং বিদেশের বিভিন্ন মহল। তাদের ধারণা, প্রাথমিক দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা কাটিয়ে একবার ক্ষমতায় থিতু হয়ে গেলে তালেবান কোনো কথাই রাখবে না। তারা তাদের জঙ্গিবাদী ও কট্টরপন্থী নীতি ও কর্মকাণ্ডে আবার ফিরে যাবে। ইসলামের নামে আবার শুরু করবে আফগানিস্তানের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও নারীদের ওপর বাড়াবাড়ি। কিন্তু এখানে একটি কথা বিশেষভাবে ভেবে দেখতে হবে, ২০ বছর আগের তালেবান সরকার আর এখনকার তালেবান নেতাদের কার্যকলাপ কিংবা কর্মপন্থা এক হতে পারে না। কারণ এখনকার তালেবান সরকারকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, বাণিজ্য ও উন্নয়নের স্বার্থে চীন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশের সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় কিংবা বহুপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। বিশ্বব্যাংক কিংবা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য তদবির করতে হবে। সেখানে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব থাকলে তালেবান একঘরে হয়ে যাবে অতি তাড়াতাড়ি। তাতে অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হবে তারা। দেশে খাদ্যাভাবের কারণে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি ত্বরান্বিত করতে না পারলে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দিতে পারে বিদ্রোহ। এতে অতি দ্রুত একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে আফগানিস্তান। এ ক্ষেত্রে শরিয়া আইন কিংবা ইসলামী শাসনের বুলি আওড়ে কোনো ফল পাবে না তালেবান সরকার। পবিত্র কোরআনে ইসলামকে একটি মধ্যপন্থার ধর্ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। কোরআনে আরো বলা হয়েছে, আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে সচেষ্ট হয়। সে কারণেই আফগানিস্তানের সার্বিক উন্নয়নে এখন প্রয়োজন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ। শিক্ষিত ও মেধাবী মানুষের অবদান। সে কারণেই বাধ্যতামূলকভাবে তালেবানের এখন সব জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার গঠন করা আবশ্যক।
বর্তমানে আফগানিস্তানের প্রায় চার কোটি মানুষের মধ্যে ৪৪ শতাংশই হচ্ছে পাখতুন বা পশতুন, অর্থাৎ পশতুভাষী। তারা পাঠান জাতি হিসেবে গর্ব করে থাকে। আহমদ শাহ দুররানি হচ্ছেন আফগানিস্তান বা আফগান জাতির পিতা, যিনি ১৭৪৭ সালে তাদের জন্য একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ পশতুন গোত্রের অন্য শাসক দোস্ত মোহাম্মদ ১৮২৬ সালের পর থেকে একদিকে রাশিয়া ও অন্যদিকে ব্রিটিশ আগ্রাসনবাদী শক্তির হাত থেকে আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য ১৮৪২ সাল পর্যন্ত লড়াই করেছেন। আফগানিস্তান পর্যায়ক্রমে সোভিয়েত রাশিয়ার সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং পরিশেষে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের থাবা থেকে মুক্ত হয়েছে। এ জাতি কখনো কারো পরাভব মানেনি। সুতরাং বর্তমানে তারা যদি শরিয়া আইন কিংবা ইসলামী শাসনের নামে ধর্মান্ধতা সৃষ্টি কিংবা বাড়াবাড়ির কারণে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তাহলে তার জন্য ইসলামকে দায়ী করা যাবে না। সে জন্য তালেবানই দায়ী হবে।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@gmail.com
সম্পর্কিত খবর

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আবারও মার্কিন হামলার শঙ্কা
- ড. ফরিদুল আলম

ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁদের মজুদ করা ইউরেনিয়াম সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না বা আদৌ এর কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, সে সম্পর্কে তাঁরা কিছু স্পষ্ট করেননি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কয়েক দশক পিছিয়ে দেওয়া গেছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির খুব একটা ক্ষতি হয়নি এবং তারা কয়েক মাস বা তারও কম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সেন্ট্রিফিউজগুলো মেরামত করে নতুন করে ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।
আইএইএ, ইরান বা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল, কাদের দাবি কতটুকু যৌক্তিক, তা পরিষ্কার নয়। তবে মার্কিন বিমান হামলার পর ইরানের পার্লামেন্ট তাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আইএইএকে আর কোনো ধরনের সহায়তা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট অনুমোদন দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যতই বলুন না কেন যে তাঁর দেশের বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি গুঁড়িয়ে দেওয়া গেছে, বাস্তবে তিনি যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তামুক্ত নন, এর আভাস পাওয়া গেছে তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যে।
ইরানের পরমাণু সক্ষমতার বিষয়টি এখনো বহাল রয়েছে, এটি প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ভেতরে ভেতরে যুক্তরাষ্ট্র খুব ভালো করে জানে যে তাদের এমন কিছু সক্ষমতা রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে যেকোনো ধরনের ক্ষতি তারা পুষিয়ে ওঠার সামর্থ্য রাখে। সাম্প্রতিক যুদ্ধে নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে যে ইরানের বর্তমান সরকারব্যবস্থা নিয়ে দেশটির ভেতরে ব্যাপক জন-অসন্তোষ থাকলেও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা যখন বিপন্ন হতে বসে, তখন ইরানিরা সবাই এক জাতীয়তাবাদী আদর্শের পতাকাতলে সমবেত হয়। ইরানের সাবেক শাহর নির্বাসিত পুত্র রেজা শাহকে নিয়ে ইসরায়েল এবং পশ্চিমারা আবারও ইরানের ভেতরে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে চাইলেও ইরানে ইসরায়েলের হামলা এবং প্রাণহানি নিয়ে তিনি ইসরায়েলের প্রশংসা করে সরকারবিরোধীদেরও রোষানলে পড়েছেন। পশ্চিমারা রেজা শাহকে সামনে নিয়ে ইরানে নতুন করে কোনো বিপ্লব সংগঠিত করতে চাইলে এ ক্ষেত্রে এর ব্যর্থতা অনিবার্য। তবে ইরানকে আবারও ঘুরে দাঁড়ানো দেখাটাও তাদের জন্য এক চপেটাঘাতের শামিল। আর সে জন্যই ইরানের নীতিনির্ধারকরা পর্যন্ত এটি শঙ্কা করছেন যে আইএইএকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে না—এমন অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল আবারও ইরানে হামলা করে বসতে পারে।
ইরানের অবস্থানকে সুবিধার মনে করছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অস্থিরতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর নতুন সিদ্ধান্তে। গত ৪ জুলাই ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের ওপর আগেকার নিষেধাজ্ঞার চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। এত দিন ধরে চাউর ছিল যে ইরানের তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শ্যাডো ফ্লিটের (গোপন জাহাজ) মাধ্যমে ইরান এই রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে জানা গেছে, ইরাকি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ সাঈদীর মালিকানাধীন বিভিন্ন কম্পানির মাধ্যমে ইরানের তেল ইরাকের তেলের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে আরব আমিরাত হয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে রপ্তানি হয়ে আসছে, যার মাধ্যমে বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করছে ইরান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যবসায়ী সালেহর কম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, যেন ইরান এভাবে বাণিজ্য করে এর থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে তা সামরিক খাতে ব্যয় করতে না করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থেকে তাকে বিরত রাখতে হলে সর্বাগ্রে তার অর্থনৈতিক সামর্থ্যের জায়গায় আঘাত করতে হবে। তবে এখানে একটি কথা থেকে যায়, যে ১০০ কোটি ডলার আয়ের কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে এটি ইরানের অর্থনীতিতে যে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে তার পারমাণবিক সক্ষমতাকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য, সেটি খুব একটা যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
মোটকথা হচ্ছে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ও ইসরায়েলের স্বার্থের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এখন কথা হচ্ছে, ইরান যদি এমনটা মনে করে থাকে যে তারা আবারও সম্ভাব্য হামলা থেকে নিরাপদ নয়, সে ক্ষেত্রে তাদের প্রতিরক্ষার ধরন কেমন হবে? এ ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে কয়েকটি অনুমান করা যেতে পারে। প্রথমত, হরমুজ প্রণালি ঘিরে তারা তাদের কৌশলকে শাণিত করতে পারে, যেন পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আগাম ধারণা পেতে পারে; দ্বিতীয়ত, তাদের নতুন করে আরো উন্নতমানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করে ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে হবে; তৃতীয়ত, যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রে ইসরায়েলি প্রযুক্তির বিপরীতে নিজেদের প্রযুক্তি দুর্বল—এই বাস্তবতার আলোকে এটিকে আরো উন্নত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা চীন ও রাশিয়ার সহায়তা নিতে পারে এবং চতুর্থত, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের চলমান কৌশলগত সম্পর্ককে আরো কার্যকর করার পাশাপাশি চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে উন্নত করা এবং ইসরায়েলের যেমন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি শক্তি সর্বদা তাদের পাশে রয়েছে, ইরানকেও এমন পাশে থাকার মতো বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে হবে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধের আপাত অবসান হতে চলছে বলে মনে হচ্ছে। এটি মানে এই নয় যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। বরং হামাস, হুতি ও হিজবুল্লাহর মতো সংগঠনগুলোর দুর্বলতার এই সুযোগে ইরানকে আরো পর্যুদস্ত করার নতুন চেষ্টা করতে পারে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা খুব ভালো করেই জানে এই সময়ে এসে তারা যদি ইরানকে ছাড় দেয়, তাহলে ইরান দ্রুতই আরো শক্তি সঞ্চয় করে তার প্রক্সিদের মাধ্যমে ইসরায়েলকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলবে। এসব যুক্তিতে ইরানে ফের হামলার শঙ্কা থেকেই যায়।
লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
mfulka@yahoo.com

ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থা ফেরাতে হবে
- ড. মো. শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে কিছু গুরুতর সমস্যা বিদ্যমান। অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া ব্যাংকগুলো ভালো পারফরম করতে পারছে না। বর্তমানে ব্যাংক খাতের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে খেলাপি ঋণের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, যদিও এই সমস্যাটি অতীতের জের ধরেই তৈরি। খেলাপি ঋণের সমস্যার সমাধান করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেখানে কিছু ব্যাংকের অতীতের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়াসহ আর্থিক খাত সংস্কারের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট ঋণের ২০.২ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে ছিল দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ১২ শতাংশ। জুন থেকে ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। অনেক ব্যাংক এখন মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে, যা তাদের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাও কমিয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব একটি বড় সমস্যা। এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে, যা দুর্নীতি ও অনিয়মকে উৎসাহিত করে। ব্যাংকিং খাতকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যথায় বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতি বাড়তে থাকবে, যা ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কমাবে।
বিগত এক দশকের খেলাপি ঋণ অনুপাতের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ঋণ আদায়ে অদক্ষতা এবং ত্রুটিপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থার কারণে ওই অনুপাত ২০১৪ সালের ৬.১০ থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে ১০.৩০ শতাংশে পৌঁছে। এরপর অনুপাত একটু কমে ২০২০ সালে হয় ৭.১০ শতাংশ।
উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে আমানতকারীদের আস্থায় ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সঞ্চয়ের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি ব্যাংক, এমনকি অনানুষ্ঠানিক, অনিয়ন্ত্রিত চ্যানেলে স্থানান্তর বা জমা করতে তাঁরা প্ররোচিত হতে পারেন, যা বেসরকারি ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জ। সীমিত ঋণপ্রবাহ শিল্প উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিরতাকেও বাড়িয়ে তোলে। যখন খেলাপিরা শাস্তি থেকে বেঁচে যায়, তখন এটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে।
বৈদেশিক বিনিয়োগকারী, ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদাররা দেশের আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রশ্ন তুলতে পারে, যা ঋণের খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যদি কার্যকর কাঠামোগত সংস্কার, সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সংকটের সমাধান করা না হয়, তাহলে বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক গতিপথ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যা কোনোভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সংস্কার। সরকার ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বছরের পর বছর ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং আইন ভঙ্গের চর্চার জন্য ব্যাংকিং খাতের আজকের এই পরিণতি, যা থেকে এ খাতের উত্তরণ অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া ব্যাংক প্রশাসনকে রাজনীতিমুক্ত করা, ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপিদের নাম প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা এবং স্বাধীন আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা যেতে পারে। ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত ঋণ মূল্যায়ন এবং ডিজিটাল ঋণ পর্যবেক্ষণের মতো প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে হবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ঋণগ্রহীতাদের পুরস্কৃত করার পাশাপাশি ঋণখেলাপিদের নানাভাবে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। স্বাধীন ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠা করা বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

নির্বাচন ব্যবস্থায় উপযুক্ত পরিবেশ জরুরি
- ড. সুলতান মাহমুদ রানা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল—এই দুটি ‘টাইমফ্রেম’ বা সময়সীমা সামনে রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তাদের বক্তব্য-বিবৃতি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এমনকি এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে যে স্থানীয় সরকার নয়, বরং সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক এই সংস্থা। কিন্তু যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এবং তেমনি সরকারের সঙ্গেও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের এক ধরনের টানাপড়েন চলছে। এমনকি বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটিও এখন অনুমান করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সংকট ও অনাস্থার পরিবেশ নতুন নয়। অনাস্থার বেড়াজাল থেকে রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই বের হতে পারেনি। গণতন্ত্রের নামে এবং গণতন্ত্র রক্ষার অঙ্গীকারে রাজনৈতিক দলগুলো বারবারই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিককালে এমনই এক অনিশ্চয়তার দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে বিদ্যমান রাজনীতি।
দেশে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখনো অনেক সংশয় রয়েছে। নির্বাচনের সময় ও অন্যান্য বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশ থাকতে হবে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তা না হলে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে নানা মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জন্য একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বর্তমানে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সব রাজনৈতিক দলকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা লক্ষ করছি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার এবং বিচারের আগে নির্বাচন না দেওয়ার বিষয়ে কথা বলে যাচ্ছে। এমনকি এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র না দিলে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কয়েকটি দলের নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি শুনে মনে হচ্ছে, তাঁরা নির্বাচন বিষয়ে ধীরগতিতে আগাতে চান। কারণ তাঁদের উপলব্ধি হচ্ছে নবগঠিত দলের ৩০০ আসনে প্রার্থিতা নিশ্চিত করা এবং ভোটারদের কাছে তাঁদের নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা কিংবা জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে তুলতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। অন্যদিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দিকে আগাতে চায়। জামায়াত সংস্কার প্রসঙ্গে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া। আর এই লক্ষ্য সামনে রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নিজস্ব কৌশল প্রয়োগে ব্যস্ত থাকবে, সেটি স্বাভাবিক। কৌশল প্রয়োগের লক্ষ্যে সব দলই নিজ নিজ জায়গা থেকে সামনে এগিয়ে যাবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেরুকরণ ঘটবে—এটি অস্বাভাবিক কিছু না। মূলত নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য রাজনৈতিক মেরুকরণে পরিবর্তন হতে পারে। তবে কোনো দল যদি রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজ নির্বাচনী আয়োজনের পক্ষে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় অথবা কাজে লাগায়, তাহলে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেটি উপযুক্ত হবে না। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে সামনে আসবে। আর নির্বাচন কমিশনও যদি প্রভাবিত না হয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে, তাহলেই নির্বাচন ও রাজনীতি দুটিই গ্রহণযোগ্য মাত্রা পাবে। আর এ কারণেই সব পক্ষকে সমান সুযোগের আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও সরকারের।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীদের প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।’ কাজেই নির্বাচন কমিশনই প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়ে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। মূলত নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের উপযুক্ত ভূমিকার ওপরই সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি বহুলাংশে নির্ভর করে।
আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ দৃশ্যমান হতে পারে। প্রথমত, নির্বাচনে বেশির ভাগ ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান; তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে সাধারণ জনগণের ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করা। কারণ নির্বাচন যদি ভালো হয়, তাহলে নির্বাচনী রাজনীতিতে জনগণের আস্থা তৈরি হবে আর ভালো না হলে তৈরি হবে স্থায়ী অনাস্থা।
অবশ্য রাজনীতিতে কিছু গুণগত পরিবর্তন আনাও জরুরি। আর তা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই নিজেদের পথের কাঁটা হওয়া থেকে সরে আসতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়ন করতে হলে রাষ্ট্রক্ষমতার চাবি হাতে থাকা যেহেতু জরুরি, সেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যেতে অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে রাজনৈতিক দলগুলো এখন মরিয়া হয়ে উঠবে—এমনটাই স্বাভাবিক। তবে শিষ্টাচারসম্মত রাজনীতির জন্য জনপ্রতিনিধিদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি।
আমাদের নিজেদের বিবেক এবং চিন্তা যদি পরিশীলিত বা মার্জিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশা সফল হবে না। আমরা বাংলাদেশে যে কাঠামোই চয়েস করি না কেন কিংবা যেমন আইনই তৈরি করি না কেন অথবা যেমন সংস্কারই হোক না কেন, এগুলো বাস্তবায়নের মূলে রয়েছে নাগরিক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন। মানসিকতা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই একটি গ্রহণযোগ্য মানের উদার নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের সাধারণ মানুষ রাজনীতির একটি গুণগত পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। আর এ কারণে নতুন রাজনৈতিক দলসহ বিদ্যমান সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে বলব, আপনারা যদি দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চান, তাহলে অতীতের অনেক আচরণ বদলানোর প্রয়োজন হবে। মনে রাখবেন, রাজনীতি মানে উগ্রতা বা প্রতিহিংসা নয়। রাজনীতি মানে ভদ্রতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সহনশীলতা। আর এসব গুণের মধ্য দিয়ে জনগণের মনে স্থান করে নিতে হবে। রাগ, হিংস্রতা কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ দিয়ে রাজনীতি করলে কখনোই রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে না। আমরা অপেক্ষাকৃত উন্নত, ভালো এবং নতুন কিছু প্রত্যাশা করি। আর এ জন্য পরিবর্তন শুধু মুখে নয়, আচরণে এবং কার্যক্রমে প্রমাণ করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
sultanmahmud.rana@gmail.com

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান : চাওয়া-পাওয়ার দাগ-খতিয়ান
- তুহিন খান

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর উপলক্ষে জুলাই ও আগস্ট মাসজুড়ে বেশ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানসূচি ঘোষিত হয়েছে ইন্টেরিম সরকারের তরফে। কিন্তু এক বছরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কতটা মেলানো গেল? জুলাইয়ের সুফল কার ঘরে কতটা উঠল?
গণ-অভ্যুত্থান নিজেই একটি বড় প্রাপ্তি। যে অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগের মতো একটি নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর পতন হলো, তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি এ দেশের জনগণের জীবনে খুব কমই আছে। এই অভ্যুত্থানের আগে-পরে দেশে যে বিপুল জনসচেতনতা ও সৃষ্টিশীল গণক্ষমতার উদ্বোধন আমরা দেখেছি, তরুণদের মধ্যে যে স্বচ্ছ রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ও দেশ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম নিতে দেখেছি, তা এককথায় মহাকাব্যিক।
গত বছর ৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ভারত পলায়নের পরিপ্রেক্ষিতে যে সরকারটি গঠিত হয়, তার ধরনটি ঠিক কী হবে, কী হলে আরো ভালো হতো, এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে। অন্তর্বর্তী এই সরকারটি গঠিত হয়েছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই; আবার গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের কেউ কেউ এ সরকারের অংশ হয়েছেন।
জুলাইয়ের বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের এই ধরন ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অবস্থান—এই তিনের টানাপড়েন শেষমেশ যে জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় থিতু হয়েছে, তার আলংকারিক নাম : সংস্কার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগ থেকেই বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্মের কারণে ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ ধারণাটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সেটির প্রায়োগিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এবং কিভাবে ও কতটুকু হবে এই সংস্কার—সেটিই প্রধান আলোচ্য বিষয়। বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে দেশে এবং সেসব কমিশন বড় বড় রিপোর্টও তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের স্বাভাবিক ফলাফল হিসেবেই যে সামাজিক ফ্যাসিবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থা সুপ্তাবস্থায় প্রায় এক যুগ ধরে আস্তে আস্তে গাঢ় হয়ে উঠছিল, তা অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নিঃশেষিত হয়নি, বরং নানা ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন শক্তিতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ও তার দেশি-বিদেশি এজেন্টরা এই প্রবণতাগুলোকে অনেক রংচং মেখে বাস্তবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিকট করে উপস্থাপন করার চেষ্টায় রত। জুলাইয়ের শক্তিগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন ও মেরুকরণও এই পরিস্থিতিটিকে বেশ ঘোলাটে করে তুলছে। সে ব্যাপারে সতর্ক থেকেও বলা যায় যে এই ঘটনাগুলো ঘটছে।
‘মব’ শুনলেই অনেকে খেপে যান আজকাল, তার সংগত কারণও আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সত্য কথা এটিই যে ৫ আগস্টের পর দেশে নানা রকম মব তৈরি হয়েছে। সামাজিক-নৈতিক পুলিশগিরি বাড়ছে। এসবের সঙ্গে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বা বিপ্লবী তৎপরতার যোগ সামান্য। ধর্মীয় চরমপন্থাও এই পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও সরকারের কাজ ছিল সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এই নতুন প্রতিবিপ্লবী, হঠকারী ও ফ্যাসিস্ট তৎপরতাগুলোরও বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, যেখানে মোটাদাগে স্পষ্টতই তারা ব্যর্থ হয়েছে। এতে সমাজে সরকার ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের ব্যাপারে যে মাত্রারই হোক, একটি নেতিবাচকতা তৈরি হয়েছে।
৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ের একটি প্রধান জনদাবি ও গুরুতর কাজ ছিল বিচার ও আনুষ্ঠানিক রিকনসিলিয়েশন প্রসেস শুরু করা। কিন্তু এই দাবিটি বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক শক্তিই সততার সঙ্গে সামনে আনতে পেরেছে বলে মনে হয় না। নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশ, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর টানাপড়েন, মামলা বাণিজ্যের পলিটিক্যাল ইকোনমি, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারিদের নানা রকম অপতৎপরতা, বিচারহীন পুনর্বাসনের বিবিধ উদ্যোগ আর সরকারের অস্পষ্ট ও গতিহীন নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিচারের দাবিটির বহুলাংশ অপচয় হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে উত্খাত করার পর অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় অখণ্ডতা রক্ষা ও সামাজিক-রাজনৈতিক রিকনসিলিয়েশন নিশ্চিতে যে ধরনের ব্যাপক, বহুমুখী ও কুশলী প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা প্রয়োজন ছিল, সরকার সেটি করতে বেশ খানিকটা ব্যর্থই হয়েছে বলা যায়।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলটিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল, আকাঙ্ক্ষা ও দরদ তৈরি হয়েছে। তবে এই আকাঙ্ক্ষা নিরঙ্কুশ নয়। নির্বাচনী রাজনীতিতে ঢুকে পড়ায় বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোর অনেক বিষয়ই আত্তীকৃত করতে হয়েছে দলটির, যা তাদের নানাভাবে বিতর্কিত করেছে। আবার এই দলটির গতি-প্রকৃতি কী হবে, তার কল্পনার বাংলাদেশটি ঠিক কেমন হবে—এসব বিষয়েও নানা ধরনের অনুমান তৈরি হয়েছে। এসব সত্ত্বেও পরিবর্তনকামী বা সংস্কারবাদীরা এখনো এই দলটির ওপর ভরসা রাখতে চাইছেন বলেই মনে হয়।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এই হিসাব চলবে। কিন্তু জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া মহাকাব্যিক অভ্যুত্থানটি আমাদের জাতীয় জীবনে যে বিপুল পরিবর্তনের সম্ভাবনা হাজির করেছে, তা অসামান্য। আমরা এর কতটা কাজে লাগাতে পারব, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন মুক্তির এই অসামান্য সম্ভাবনা এ দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : কবি, অনুবাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য