<p>প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার (যুক্তরাষ্ট্র সময়) হোয়াইট হাউসে ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চরি’র বিস্তারিত বিষয় জানাবেন বলেছিলেন (এর মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে—বি.স.)। দিনটি ধার্য করা হয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট অ্যালায়েন্সের নেতা বেনি গানেজর হোয়াইট হাউস সফর উপলক্ষে।</p> <p>দিনটি এমন একসময় স্থির করা হয়েছে যখন একদিকে ইসরায়েলের নেসেটে দুর্নীতির অভিযোগে নেতানিয়াহুর শাস্তি মওকুফ করা হবে কি হবে না এ নিয়ে বিতর্ক চলছে (নেতানিয়াহু মওকুফের আবেদন প্রত্যাহার করেছেন—বি.স.)। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনবিষয়ক শুনানি চলছে। নিশ্চিত করেই বলা যায়, এ চুক্তির বিষয়টিকে সামনে আনার উদ্দেশ্য দুজনই যে রাজনৈতিক গোলযোগে রয়েছেন তার ওপর থেকে জনদৃষ্টি সরানো এবং তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি চাঙ্গা করা। </p> <p>যা হোক, ইসরায়েলের আশপাশের বিভিন্ন দেশে এ বিষয়ক অভিব্যক্তি খুবই আলাদা ধরনের হবে। অধিকাংশ আঞ্চলিক নেতা এ ঘটনাকে আশঙ্কার নিরিখে দেখবেন; তারা উদ্বিগ্ন, পরিকল্পনার বিশদ উন্মোচন সংঘাত ও গণ-অসন্তোষের কারণে এর মধ্যে অস্থিতিশীল একটি অঞ্চলকে আরো অস্থির করে তুলতে পারে।</p> <p>জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জর্দানের দরজা খুলে দিতে, বিনিময়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু হাশেমি রাজবংশ মনে করে, এটা করলে জর্দানের জনমিতিক পরিচয় চিরতরে বদলে যেতে পারে।</p> <p>এ পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা ছিল না। ট্রাম্প একতরফাভাবে জেরুজালেমকে ইহুদি রাষ্ট্রটিকে রাজধানী হিসেবে উপহার দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন (ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ঘোষণার পরই ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নাকচ করেছে—বি.স.)। তিনি যথা সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। বর্তমান মার্কিন প্রশাসন একেবারে শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি শত্রুতার মনোভাব প্রদর্শন করেছে। তারা পশ্চিম তীর ও গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য সব সহায়তা স্থগিত করেছে; ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থাকে (ইউএনআরডাব্লিউএ) সাহায্য করাও বন্ধ করে দিয়েছে।</p> <p>ইসরায়েলি নীতির সমালোচনাকারী সব জাতিসংঘ প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক দশকের পুরনো মার্কিন নীতি উল্টে দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিগুলোকে অবৈধ মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র। সার কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সব যোগ্যতা হারিয়েছে।</p> <p>ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু প্রশাসনের মধ্যে কোনো ফারাক দেখা যায় না; দুটি প্রশাসন যেন এক সত্তারই প্রতিরূপ। এই সত্তা যেকোনো প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের বাধ্য করে মন্দ বা নিকৃষ্টের যেকোনো একটিকে বেছে নিতে। কাজেই এ কথা বিশ্বাস করা উচিত হবে না যে দূর দিগন্তের কোথাও সত্যিকারের ‘চুক্তি’ বলে কিছু দেখা যাচ্ছে।</p> <p>ফিলিস্তিনিদের বলা হচ্ছে, তাদের একটি ‘রাষ্ট্র’ দেওয়া হবে। এ কথা জানা হয়ে গেছে যে সে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্য কোনো বাহিনী থাকবে না; সীমান্তের ওপর, আকাশসীমার ওপর এর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এই ‘রাষ্ট্র’কে শরণার্থী ফিলিস্তিনিদের স্বদেশে ফেরার অধিকার ত্যাগ করতে হবে, জেরুজালেম ও ফিলিস্তিনের এক-তৃতীয়াংশ ভূমি ইসরায়েলকে দিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া পশ্চিম তীরের অধিকাংশ ইহুদি বসতি এবং জর্দান উপত্যকাও ইসরায়েলের অনুকূলে ছেড়ে দিতে হবে; গাজার হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপকে নিরস্ত্র করতে হবে এবং জেরুজালেমকে রাজধানী মেনে ইসরায়েলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করতে হবে।</p> <p>ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের কথা না হয় বাদই দিলাম; হামাস বা ইসলামিক জিহাদ বা কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি কি ইসরায়েলের উচ্চাভিলাষ পূরণের জন্য এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করবে! কতক ভাষ্যকারের ধারণা, ‘চুক্তি’টি ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্তি-অভিলাষে সম্মতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি করার প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের এমন ধারণায় আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, বাস্তবতা তেমনই। ফিলিস্তিনিরা ‘চুক্তি’ মানতে রাজি না হলে (সেটাই স্বাভাবিক) তাত্ক্ষণিকভাবে নেতানিয়াহুকে পশ্চিম তীরের বসতি ও জর্দান উপত্যকা ইসরায়েলে অন্তর্ভুক্ত করার সবুজসংকেত দেবেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এখতিয়ার নেই—একের ভূমি অন্যকে দিয়ে দেওয়া। কিন্তু আমাদের বর্তমান বিশ্বে একটাই নীতি কার্যকর রয়েছে—জোর যার মুল্লুক তার। অর্থাৎ জঙ্গলের বিধান জারি আছে।</p> <p>ভুলে যাবেন না, এটা কেবল ফিলিস্তিনের সমস্যা নয়, এটা একটা প্রবণতার অংশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর মধ্যে সিরিয়ার গোলান মালভূমি অন্তর্ভুক্ত করার এজাজত দিয়েছেন ইসরায়েলকে। আর যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার তেলক্ষেত্র দখলে নিয়েছে এবং ইরাকে আগ্রাসন অভিযানের খরচ না দিলে মার্কিন সেনা সরানো হবে না বলে সগর্বে ঘোষণা করেছে। যদি বিশ্বনেতারা সমবেত স্বরে আপত্তি না জানান, সেটা হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই, তাহলে পরবর্তী আগ্রাসন কোথায় ঘটবে!</p> <p> </p> <p>লেখক : ব্রিটিশ রাজনৈতিক কলাম লেখক</p> <p>সূত্র : গালফ নিউজ</p> <p>ভাষান্তর : সাইফুর রহমান তারিক</p>