ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

জলাভূমি রক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন

  • ধরিত্রী সরকার সবুজ
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
জলাভূমি রক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন

আজ ২ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব জলাভূমি দিবস। জলাভূমিগুলোর ক্রমাবনতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া এবং জলাভূমিগুলোতে উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের প্রতিবেশব্যবস্থা সঠিকভাবে সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও উদ্যোগ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই  দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। বিশ্বের জলাভূমিগুলোর আয়তন হ্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং জলাভূমিগুলোর বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের আবাসযোগ্যতা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার শহরে একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম কনভেনশনের এই দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তখন থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা ও কমিউনিটি গ্রুপগুলো জলাভূমির গুরুত্ব ও উপকারিতা বোঝাতে এবং জলাভূমি সংরক্ষণ ও এর সর্বোত্তম ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালন করে আসছে।

প্রতিবছর দিনটিকে উদ্যাপনের জন্য একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে রামসার কনভেনশন সচিবালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি এবং সে বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়। ২০১৮ সালে বিশ্ব জলাভূমি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘ভবিষ্যৎ টেকসই নগরায়ণের জন্য জলাভূমি।

’ তবে বিশ্বব্যাপী জলাভূমি সংরক্ষণের চিত্রটি মোটেই সুখকর নয়। নগরায়ণের চাপে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। রামসার কর্তৃপক্ষ গত বছর জলাভূমি দিবসের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিল, ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬৪ শতাংশ জলাভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে এসব জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের জীবনযাত্রা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শহরাঞ্চলের জলাভূমিগুলো বিভিন্নভাবে নাগরিক জীবনকে বাসযোগ্য করে তোলে। এসব জলাভূমি বন্যা বা জলাবদ্ধতার প্রকোপ কমায়, পানীয় জল সরবরাহ করে, আবর্জনাকে পরিশোধন করে এবং সর্বোপরি নাগরিক জীবনের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন সবুজ প্রকৃতির পরশ জোগায়। একটি সুষ্ঠু নাগরিকজীবনের উৎস হতে পারে শহরাঞ্চলের জলাভূমিগুলো। অর্থাৎ একটি নগর বা মহানগরের ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে জলাভূমিগুলোকে অবশ্যই সমন্বিত করা প্রয়োজন।

আমরা আমাদের রাজধানী ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার দিকে তাকালে অনেকটা উল্টো চিত্রই দেখতে পাব।

দিনে দিনে ঢাকা উঁচু ভবন বা কংক্রিটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে এবং জলাভূমিগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার অভ্যন্তরের ও পার্শ্ববর্তী নিচু জলাশয়গুলো একসময় বন্যার পানি ধারণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখত। সেসব নিচু ভূমি ও জলাশয় ভরাট হয়ে গড়ে উঠেছে সুরম্য অট্টালিকা। ঢাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালগুলোর বেশির ভাগই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আর কিছু আছে মৃতপ্রায় অবস্থায়। এর মধ্যে একটু শুধু আশার আলো দেখায় ঢাকার রামপুরার কাছে গড়ে তোলা হাতিরঝিল প্রকল্প। একটি জলাশয়কে সুন্দরভাবে গড়ে তুললে তা যে কত মানুষের বিনোদনকেন্দ্র হতে পারে, হাতিরঝিল প্রকল্প তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।

হাওর-বাঁওড়, খাল-বিলের মতো জলাভূমির অভাব নেই এ দেশে। বর্ষাকালে নদীর দুই কূল ছাপিয়ে এখনো পানি ঢুকে পড়ে অনেক এলাকার সমতলভূমি ও প্লাবনভূমিতে। আমাদের দেশের গর্বের জলাভূমি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরবনের জলাভূমি এবং সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো আন্তর্জাতিক পরিচিতিসম্পন্ন দুটি জলাভূমি। আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এসব জলাভূমির রয়েছে বিস্তর প্রভাব। কারণ জলাভূমি যে শুধু মাছের আবাস তা নয়, জলাভূমিকে কেন্দ্র করে টিকে আছে হাজারো প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। জলজ এসব উদ্ভিদ মানুষের জন্য সৃষ্টি করে অক্সিজেন। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী দেয় প্রোটিনসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদান। 

বাংলাদেশে ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর জলাভূমি রয়েছে। জলাভূমিগুলো থেকে বছরে বর্তমানে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমিতে দুই কোটি ১০ লাখ হেক্টর জলাভূমি বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ খালের মতো কাঠামোর জন্য বিলীন হয়ে গেছে। হাওর এলাকায় মানুষ বাড়িঘর তৈরি করায় সেগুলোর রূপান্তর ঘটছে। আমাদের বিল, হাওর-বাঁওড়ের পাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে বাঁধ। ফলে এসব জলাশয়ের বেশির ভাগই পরিণত হয়েছে বদ্ধ জলাশয়ে এবং সে কারণে মাছের বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্র অনেকটাই সংকুচিত হয়ে এসেছে। জলাভূমি বিলুপ্তির একটি বড় উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে আমাদের চলনবিল। উনিশ শতকের শুরুর দিকে যে চলনবিলের আয়তন ছিল এক হাজার ৮৫ বর্গকিলোমিটার, তা ১৯০৯ সালে এসে দাঁড়ায় ৩৬৮ বর্গকিলোমিটারে। বর্তমানে এর মাত্র ৮৫ বর্গকিলোমিটারে সারা বছর কমবেশি পানি থাকে। কখনো কখনো চলনবিলের আয়তন ২৬ বর্গকিলোমিটারে পৌঁছায় এবং এটি বিচ্ছিন্ন কিছু পুকুরের আকার ধারণ করে।

দেশের অনেক জলাশয় জেলা প্রশাসন বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ইজারা দিয়ে দেয়। জলাশয়গুলো ইজারা দেওয়ার ফলে দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। ইজারাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা শুষ্ক মৌসুমে মাছ ধরার জন্য পুরো জলাভূমি শুকিয়ে ফেলায় দেশি মাছের বংশবৃদ্ধিসহ উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর ফলে ওই সব জলাশয় থেকে অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ পরবর্তী মৌসুমে বিদেশি প্রজাতির পোনা জলাশয়ে ছাড়লেও দেশি প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়ার আগ্রহ তাদের থাকে না। গ্রামীণ খাল-বিলের টাকি, পুঁটি, চেলা মাছের মতো অনেক মাছই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু গ্রামবাংলার অজস্র দরিদ্র মানুষের জন্য যেমন এগুলোর বিকল্প নেই, তেমনি জীববৈচিত্র্যের জন্যও এগুলোর হারিয়ে যাওয়া একটি অপূরণীয় ক্ষতি। জলাভূমি নষ্টের সঙ্গে সঙ্গে এক শ্রেণির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এলাকার প্রতিবেশব্যবস্থা নষ্ট হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে আমাদের জীববৈচিত্র্যই হুমকির মুখে পড়ছে। মাছের প্রাপ্যতা বহুলভাবে কমে যাওয়ায় মানবস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। জলাভূমিতে উৎপন্ন হয় এমন অনেক দেশীয় ধানের প্রজাতিও বিলুপ্তির মুখে পড়ছে।

দেশে জলাভূমি ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত নীতিমালার অভাব রয়েছে। সরকারের চারটি মন্ত্রণালয় দেশের জলাভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করলেও তাদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সমন্বয় ও জলাভূমি ব্যবহারের সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে প্রতিবছরই মারাত্মকভাবে ধ্বংস হচ্ছে জলাভূমি ও তার চারপাশের পরিবেশ। দেশের জলমহালগুলো রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায়। বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় নদী ও খাল রয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে। মৎস্যসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে জলাভূমির একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আবার পরিবেশ অধিদপ্তর উপকূলীয় জলাভূমি ও হাওরগুলোতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করছে। এসব মন্ত্রণালয়ের পারস্পরিক কাজের মধ্যে সমন্বয় খুবই দরকার।

দেশে জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু তার সঠিক প্রয়োগের অভাবে প্রতিনিয়তই জলাভূমি ভরাট করে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। অনেক জলাভূমি পরিবর্তন করে বাঁধ দিয়ে কৃষিজমিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। অনেক প্রকল্পই এমনভাবে নেওয়া হচ্ছে, যা বাস্তবায়নের পর পাশের জলাভূমি এমনিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের উচিত হবে জরুরি ভিত্তিতে জলাভূমি সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে সেটি যাতে কোনোভাবে কোনো জলাভূমির ক্ষতি না করে তা নিশ্চিত হওয়া দরকার।

আবার শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জলাভূমি রক্ষা করা সম্ভব নয়। এ জন্য জলাভূমিকেন্দ্রিক এমন কিছু প্রকল্প নেওয়া দরকার, যাতে সেগুলো থেকে স্থানীয় জনগণ সরাসরি লাভবান হতে পারে। তাহলে নিজ স্বার্থেই তারা জলাভূমি রক্ষায় উদ্যোগী হবে। স্থানীয় সরকারের আওতায় মাছ ধরার লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীকে এই সম্পদ ভোগ করার অধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন। দেশের কিছু জলাভূমিকে ইকো-পর্যটনের আওতায় এনে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সরকার বেশ কিছু জলাভূমিকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে। আরো অধিকসংখ্যক জলাভূমিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা দরকার। গণমাধ্যমের সাহায্য নিয়ে মানুষকে জলাভূমি ধ্বংসের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মানুষের সচেতনতাই হতে পারে জলাভূমি রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ।

লেখক : প্রকৌশলী, ইংল্যান্ডের গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন বিষয়ে মাস্টার্স

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিএনপির পথ আটকানোর পাঁয়তারা কেন

    জব্বার আল নাঈম
শেয়ার
বিএনপির পথ আটকানোর পাঁয়তারা কেন

সন্দেহাতীতভাবে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। কারণ একদিকে রয়েছে সংস্কারের নামে বিএনপিকে বিব্রত করার কৌশল, অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কূটকৌশল ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দলটি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, বিএনপি কি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার, নাকি প্রতিহিংসার শিকার? নাকি কারো চক্রান্ত? যদি এমনটাই হয়, তাহলে এসবের সমাধানে বিএনপির কৌশল কী হতে পারে?

বিএনপির ইচ্ছা দ্রুতই রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে সক্রিয় দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, কিন্তু প্রক্রিয়াটা যে সহজভাবে হচ্ছে না কিংবা হতে দেওয়া হবে না, তা মোটামুটি পরিষ্কার।

এর প্রথম ও প্রধান বাধা বিএনপির ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারী! তাঁদের কেউই দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বা বিএনপির আদর্শ, নীতি কিংবা নৈতিকতার ভেতরে নেই। জুলাই ২০২৪-এর পরবর্তী সময়ে দলটির বিভিন্ন কমিটিতে হঠাৎ করে পদ পাওয়া কর্মীদের ব্যাপারে আরো সক্রিয় ও সজাগ হওয়ার সময় এখনই। বিগত দিনের লড়াই-সংগ্রামে টিকে থাকা দলটির ভেতরে অসংখ্য ত্যাগী নেতা রয়েছেন, যাঁদের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদ দিয়ে মূল্যায়ন করার সময় এখনই। নয়তো সেটি হবে অবমূল্যায়ন।

সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির কিছু মতভিন্নতা রয়েছে, সেটি সবাই জানে। আবার মতভিন্নতার ভেতর দিয়েই দেশে গণতন্ত্রের ভিত শক্ত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। বাস্তবতা বলে আসলে মতভিন্নতা নয়, বিগত দিনের লড়াই-সংগ্রাম ও নির্যাতনের মাঝেও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা পেশ করেন, যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলনের মাঠে কর্মীরা জীবনও দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে যখন জুলাই চব্বিশ নেমে এলো, পরবর্তী রাষ্ট্র গঠনে প্রাসঙ্গিক হলো বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব।

ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও বিএনপির সংস্কারে কোথাও কোথাও কিছুটা দূরত্ব তৈরি হলে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ জুলাই বিপ্লবের সম্মুখসারির নেতাদের সমন্বয়ে তৈরি এনসিপি সরকারের সংস্কার প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে। এর মূল কারণ, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে তাদের নিজস্ব বয়ান বা বক্তব্য যৌক্তিকভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবে যে অগ্রণী ভূমিকায়, তা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো স্বীকার করছে না।

বিএনপিকে সরাসরি মিডিয়া ট্রায়ালের সামনে দাঁড় করানোটা কোনো কোনো দলের পক্ষে যৌক্তিক সমাধান যেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা নিম্নরুচির পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়তই আক্রমণ কিংবা অপমানিত করছেন।

মানে যা নয়, তা-ই বলছেন ও করছেন, যার মোক্ষম জবাব বিএনপি দিতে পারছে না। বিএনপি বড় দল হিসেবে সংযমের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে, এটি একটি মুখ্য কারণ হতে পারে। হতে পারে, এই মুহূর্তে সক্রিয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খেপিয়ে দিলে তারা নির্বাচনে অনীহা প্রকাশ করবে। অথবা নির্বাচন যখনই হোক, শক্ত প্রতিপক্ষ প্রয়োজন। দেখা গেল, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কথা রাখতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করছেন। কিন্তু ঠিক তখনই জামায়াত বা এনসিপি বলল, নির্বাচনের প্রতি আমাদের অনাস্থা। তাই রাজনীতির খোলা ময়দান হওয়া সত্ত্বেও বিএনপিকে আরো কৌশলী, আরো সাবধান হতে হবে। কারণ আগামী নির্বাচনটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন।

অনুমান করে বলছি, নির্বাচনটি হতে পারে তিনটি ব্লকে। প্রথম ব্লকে বিএনপি, দ্বিতীয় ব্লকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি আর সর্বশেষ ব্লকে ১৪ দল। যদিও নির্বাচনের আগে আরো জল ঘোলা হবে, ঘোলা জলে মাছ শিকার হবে, বিএনপিকে টার্গেট করে কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলা হবে। এর পরও সব দলেরই লক্ষ্য থাকবে একটিইবিএনপি ঠেকাও! তার পরও নির্বাচনের আগে নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করতে জামায়াত, এনসিপি ও অন্যান্য দলকে নির্বাচনমুখী লাইনে রাখাও বিএনপির দায়িত্ব। তাই সমীকরণ যতই কঠিন হোক, পথ এগোতে হবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন না হলে দেশ রসাতলে যাবে। ইন্টেরিমের ব্যর্থতার ষোলো কলা পূর্ণ হলে দেশ যাবে অন্য কারো কবজায়। এতে ছোট ছোট দলের চেয়ে ক্ষতিটা বড় দল হিসেবে বিএনপির বেশি। এমতাবস্থায় বিএনপি সব দলকে ডেকে প্রশাসনের ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচন, সংকট ও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারে।

বিএনপিতে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে দেশের প্রায় মোট মুক্তিযোদ্ধার অর্ধেক। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের প্রধান ছিলেন। সেই দলটির একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে আপসহীন থাকাটা স্বাভাবিক। আলোচনার সুবিধার্থে বলা যেতে পারে, একজনও মুক্তিযোদ্ধা দলটিতে না থাকলেও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্যসন্তান। বিএনপি তা জানে, মানে এবং স্বীকারও করে। করতেই হবে। ভবিষ্যতে যেন তা অব্যাহত থাকে বিষয়টি জাতির সামনে পুনরায় ব্যক্ত করার অর্থ হলো দেশের আগের ইতিহাস বিএনপি কখনোই ভোলে না। একই সঙ্গে নব্বই ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থানে শহীদদের ব্যাপারে বিএনপি বেশ তৎপর। জুলাই চব্বিশ স্মরণে তাদের এক বছর পূর্তিতে নানা রকম উদ্যোগ ও উদযাপন প্রশংসার দাবি রাখে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের ইসলামী দল কিংবা ধর্মপ্রাণ মানুষের পক্ষে বরাবরই শক্ত শক্তি হিসেবে ছিলেন। তা পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত। বর্তমানে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিও বিএনপির অবস্থান ধীরে ধীরে জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। মোদ্দাকথা, বিএনপিকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সামনের দিকে এগোতে হবে। এই মুহূর্তে বড় দল হিসেবে সম্ভবত এটিই তাদের দায়িত্ব।

 

লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক

মন্তব্য

ঢাকার আকাশে যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ : এই মৃত্যুর দায় কার

    ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
শেয়ার
ঢাকার আকাশে যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ : এই মৃত্যুর দায় কার

টর্ট আইনেAct of God’ নামক একটি শব্দ আছে, যা বলতে এমন একটি ঘটনাকে বোঝায়, যা অপ্রত্যাশিত এবং অপ্রতিরোধ্য। বলা হয়ে থাকে, দুর্ঘটনার ওপর মানুষের হাত নেই। তাই বলে এমন দুর্ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না, যা ২১ জুলাই রাজধানী ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটেছে। ওই দিন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের সময় বিধ্বস্ত হয়।

গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওই ঘটনায় ৩২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়, যাদের বেশির ভাগই শিশু। ছাড়া আহত হয়েছে দেড় শতাধিক।

দেশের ইতিহাসে অত্যন্ত বিয়োগান্ত ঘটনায় কেবল স্বজনহারা পরিবারই নয়, বরং পুরো বাংলাদেশ আজ শোকাহত, মর্মাহত। সর্বমহলে নানা প্রশ্নের সঙ্গে একটি সাধারণ প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে আর তা হচ্ছে, ঢাকার মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেখানে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বসবাস করে, সেখানে যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

জনবহুল এলাকা কখনো যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের জায়গা হতে পারে না এবং আন্তর্জাতিক প্রটোকলে বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ Operations in populated or congested areas could increase the likelihood of injury to persons and loss of control’ অর্থাৎ জনবহুল বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই কার্যক্রম চালানোর ফলে মানুষের আহত হওয়ার এবং নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।

কারণে রিস্ক-বেসড বিশ্লেষণ করে প্রশিক্ষণক্ষেত্র নির্বাচন করার সুপারিশ দেওয়া হয় গ্রামীণ বা কম জনবসতিবিশিষ্ট এলাকায়, নদী ও চর এলাকায়।  International Civil Aviation Organization (ICAO)-এর পরিশিষ্ট ১১-তে জি শ্রেণিকে (অনিয়ন্ত্রিত, স্থানীয়, গ্রামীণ) সর্বোত্তম প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত এলাকা বলা আছে।

জানা যায়, ২১ জুলাই ছিল সংশ্লিষ্ট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের সলো ফ্লাইট ট্রেনিং। সলো ফ্লাইট ট্রেনিং হলো একজন পাইলটের ট্রেনিংয়ের সর্বশেষ ধাপ।

ফাইটার জেট অপারেট করার জন্য একজন পাইলট যে হাই স্কিল্ড, সেটিই প্রমাণিত হয় সলো ফ্লাইটের মাধ্যমে। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ওই দিন সে রকমই একটি ট্রেনিং ফ্লাইট পরিচালনা করছিলেন। ধরনের ফ্লাইট অপারেট করার জন্য পাইলটকে যথেষ্ট কোয়ালিফায়েড হতে হয় এবং বিমান হতে হয় ত্রুটিমুক্ত। কিন্তু বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান এফ-সেভেন বিজিআই মডেলের বিমানটি সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার কারণযান্ত্রিক ত্রুটি এফ-সেভেন বিজিআই মডেলের বিমানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন আর বিমানটি স্বল্প খরচে নির্মিত।
সাধারণত একটি যুদ্ধবিমানের কার্যকাল থাকে ১০ থেকে ১২ বছর। আর বিধ্বস্ত বিমানটি বাংলাদেশ ২০১৩ সালে চীন থেকে কিনেছে। সুতরাং হিসাব অনুযায়ী বিমানটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে ছিল। জানা যায়, বিমানবাহিনীর একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করি, কমিটি সংশ্লিষ্ট সবকিছু খতিয়ে দেখবে।

দেশে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা এবারই প্রথম নয়, এর আগেও ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যদিও এর আগে দেশে একাধিকবার প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও এতগুলো প্রাণহানি ঘটেনি। যেমন২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে তামান্না রহমান নামের এক পাইলট নিহত হন। তা ছাড়া ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে টাঙ্গাইলে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে বিমানটির পাইলট উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ নিহত হন। ঘটনার এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে প্রশিক্ষণের সময় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

যেসব শিক্ষার্থী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে আছে, তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার যে আশ্বাস সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তা যেকোনো প্রকারে সুনিশ্চিত করা আবশ্যক। এসবের পাশাপাশি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ও নিহতদের নাম-ঠিকানা সঠিকভাবে তালিকা আকারে প্রকাশ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। তা ছাড়া বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো বিমানগুলো বাতিল করে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আধুনিক বিমান কিনতে হবে। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অধিকতর নিরাপদ স্থানে করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে আর ধরনের মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা আমাদের দেখতে না হয়।

লেখক : অধ্যাপক (আইন বিভাগ) ও সহযোগী ডিন (কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ)

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

kekbabu@yahoo.com

মন্তব্য
৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আলোকিত মানুষ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

    জুয়েল আইচ
শেয়ার
আলোকিত মানুষ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ নামক চিরতরুণ কিন্তু দারুণ সুসার বৃক্ষটি ৮৬ বছর ধরে আমাদের দেশ ও জাতিকে কত ছায়া, ফুল ও ফল দিয়ে চলেছেন; তিনি তাজা থাকতেই নিজ চোখে তা দেখেও গেলেন। আমাদের এক বিরাট সৌভাগ্য।

কোটি কোটি মানুষের কথা এই ক্ষুদ্র লেখায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। শুধু আমার অংশটুকু সামান্য কিছু বলি।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, তখন জীবিত অবস্থায় যে ফিরে আসব তার সম্ভাবনা ছিল অতি ক্ষীণ। আমার সহযোদ্ধাদের অনেকেই শহীদ হয়েছেন। স্বাধীনতার পর ফিরে এসে দেখি আমার খাট, চৌকিসহ ঘরবাড়ি সব ধ্বংসস্তূপ। ঘুমানোর বিছানা তো দূরের কথা, খিদে মেটানোর খাবার নেই।
নেই মানে কিচ্ছু নেই। অথচ এই পাগলটার ছিল অনেকগুলো চমৎকার বাঁশি, প্রচুর বইপত্র, ছবি আঁকার রংতুলি-ইজেল, ম্যাজিকের বাহারি সব সরঞ্জামকী না ছিল!

জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলিমুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। সেই অবস্থায় সশস্ত্র যুদ্ধ করার শারীরিক সক্ষমতা হারাই। একটু সুস্থ হলে আমাকে নদীয়া জেলার বাহাদুরপুর ক্যাম্প স্কুলে শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কিছুদিনের মধ্যেই শিক্ষকতার কাজটি আমাকে দারুণ তৃপ্তি দিতে শুরু করল। স্কুল-কলেজ জীবন থেকেই যেকোনো কাজকে আনন্দদায়ক করে তোলার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছিলাম। গল্প বলা, ম্যাজিক দেখানো, উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তিসবকিছুতেই সুন্দর করে কথা বলার দক্ষতা লাগত। সঙ্গে ছিল আমার মোক্ষম অস্ত্রকথা বলতে বলতে ব্ল্যাকবোর্ডে অতি দ্রুত ছবি এঁকে ফেলার দক্ষতা। বাহাদুরপুর ক্যাম্প স্কুলে আমার অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আমি যতটা না শিক্ষক, তার চেয়ে বেশি বিনোদনদাতা।
রাতারাতি আমি হয়ে গেলাম এক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। ওই ক্যাম্পের কিছু শরণার্থী আমাদের সমুদয় কাঠী এলাকারও ছিলেন। তাঁরাই অতি উৎসাহী হয়ে অনুনয়-বিনয় করে আমাকে সমুদয় কাঠী হাই স্কুলে শিক্ষক হতে রাজি করালেন।

আমার থলেতে যত রকম আনন্দ-বিনোদনের উপাদান ছিল, সব ঢেলে প্রতিটি পিরিয়ডকে বিনোদনমূলক শিক্ষার অনুষ্ঠান করতে লাগলাম। ম্যানেজিং কমিটি জোর করে আমায় সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং বছরের মাথায় প্রধান শিক্ষক হতে বাধ্য করল।

আশৈশব যেসব শিল্পের চর্চা করে এসেছি, উৎসাহ পেয়ে তা আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিলাম। এই সুনাম গ্রাম থেকে থানা, মহকুমা হয়ে সমগ্র বরিশাল জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে। এর পরে ঢাকাকে কেন্দ্র করে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পরামর্শ আসতে শুরু হলো। হঠাৎ ১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একদল ডাকাত বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে আবার আমার সবকিছু পুড়িয়ে ছাই করে দিল। হায়! এখন বাঁচব কিভাবে?

ঢাকা থেকে আমার কাছে টিভিতে জাদু প্রদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়ে একের পর এক টেলিগ্রাম আসতে শুরু করল। পঞ্চম টেলিগ্রামটি এলে বরিশালের এক বন্ধু তা পড়ে বিস্মিত হয়ে বলল, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সাহেবকে তুই চিনিস?

না তো।

সেই জন্যই তাঁর এতগুলো টেলিগ্রামের পরেও তোর কোনো হুঁশ হয়নি। তাঁর টিভি প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে মানুষের জীবন ধন্য হয়ে যায়।

তোরা তো জানিস, আমার সব পুড়ে শেষ। আমি টিভিতে গিয়ে কী দেখাব?

তবু তুই সশরীরে আজই যাবি। অন্তত সৌজন্যের খাতিরে হলেও তুই গিয়েস্যরিবলে আসবি।

বন্ধুরা সবাই মিলে আমায় জোর করে লঞ্চে তুলে দিল। ব্যস, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এমনই শক্তিশালী চুম্বক, যাঁর স্পর্শে কেউ একবার গেলে আর ছুটে আসতে পারে না।

প্রথম দেখাতেই তিনি আমাকে ভালোবেসে ফেললেন। আমার কোনো ম্যাজিক না দেখেই তিনি আমাকে পুরোপুরি আস্থায় নিয়ে নিলেন। সামনেই বিটিভিরঈদের আনন্দমেলা তিনি অনেক ভেবেচিন্তে আমাকেআনন্দমেলা ক্লোজিং পারফরমার হিসেবে রাখলেন। ঈদের রাতেআনন্দমেলাপ্রচারিত হলো। আমার প্রদর্শিতশূন্যে ভাসমান তরুণী টিভির অগণিত দর্শককে বিস্ময়ে হতবাক করে ফেলল। রাতারাতি টিভি আমায় জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী বানিয়ে দিল।

কোনো অডিশন ছাড়াই সায়ীদ স্যার আমাকে এতটা আস্থায় স্থান দিচ্ছেন বলে তাঁর মেধাবী সহকারীদের খুব সংশয় ছিল। এখন তাঁরাই আমার সেরা ভক্ত। তাঁদের মধ্যে ডা. লিয়াকত আলী, ডা. আরিফ, মিজারুল কায়েস, খান লোদী, সুশীল সূত্রধরের কথা আমি জীবনেও ভুলব না।

টিভি প্রোগ্রামের পাশাপাশি আমার স্টেজ শোও জনপ্রিয় হয়ে উঠল। প্রতিটি স্টেজ শোর দর্শক সারিতে বসে সায়ীদ স্যার নোটবইয়ে আমার ব্যক্তিত্ব, উপস্থাপন, কথা বলা, দর্শকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে আরো ভালো কিভাবে করা যায় সেই পরামর্শ লিখে আমায় দিতেন। সে ছিল আমার জন্য এক মহার্ঘ উপহার।

বছরখানেকের মাথায় আমাদের চার-পাঁচ জনকে নিয়ে তিনি শুরু করলেন পাঠচক্র। প্রথম দিকে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনের রাস্তা পেরিয়ে একটি সস্তাভাতের হোটেলেবসতাম। একখানা বই ভাগাভাগি করে পড়ে পরের সপ্তাহে যার যার নিজস্ব মতামত বলে আলোচনায় মেতে উঠতাম। কণ্ঠস্বর ম্যাগাজিনের সাবেক সম্পাদক, অত্যন্ত সফল টিভি উপস্থাপক এবং আমি ছাড়া বাকি সবাই স্যারের সরাসরি ছাত্র। স্যার সবার বিশ্লেষণ মনোযোগসহকারে শুনতেন। সব মিলিয়ে যখন তিনি উপসংহার টানতেন, তখন সবার মন আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। ক্রমে আমাদের বসার একটি ঠাঁই হলো। ৩৭ ইন্দিরা রোড। স্যারের দৃষ্টি সব সময় ভালো থেকে আরো ভালো, বড় থেকে আরো বড়। তাঁর দৃষ্টি বহুধা বিস্তৃত। সেই থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে আমার নাড়ির বাঁধন কখনোই ছিন্ন হয়নি।

আমি দলবল নিয়ে দেশময় শো করে বেড়াচ্ছি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার ম্যাজিক হওয়ার কারণেই হয়তো দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের সাংবাদিকদেরও দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছিল। হঠাৎ ১৯৮১ সালেসোসাইটি অব আমেরিকান ম্যাজিশিয়ানস-এর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম ম্যাজিক দেখাতে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের কোনো ম্যাজিশিয়ানকে আন্তর্জাতিক ম্যাজিক সম্মেলনে দুই হাজার ম্যাজিশিয়ানের সামনেআদর্শ পারফরমারহিসেবে ম্যাজিক দেখানো শুধু আমার নয়, দলের কাছেও ছিল অত্যন্ত আনন্দদায়ক। দেশের জন্যও ছিল এক বিরল সম্মান।

সম্মেলনে দেখানো আমাদের শোর একটি ভিডিও ক্যাসেট সোসাইটি অব আমেরিকান ম্যাজিশিয়ানস আমাদের উপহার দিয়েছিল। তখন বাংলাদেশে ভিডিও ক্যাসেট নিয়ে আসা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নিষিদ্ধ ছিল। আমাদের আশা ছিল আমেরিকায় কী ঘটেছিল, টেলিভিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শক তা দেখুক। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কিছুতেই সেই ভিডিও ক্যাসেট আমাকে দিল না। প্রচণ্ড আনন্দ নিয়ে দেশে ফিরেছি। শুরুতেই খেলাম একটি বড় হোঁচট। মনমরা হয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বের হলাম। গনগনে রোদ। বাইরে বেরিয়েই যা দেখলাম, আমার হৃদয়টা স্নিগ্ধ সুখে ভরে গেল। আমাকে স্বাগত জানাতে আমার কোনো ম্যাজিশিয়ান বন্ধু এয়ারপোর্টে ছিল না কিংবা ছিল না কোনো সাধারণ ভক্তও। কিন্তু যাঁদের কখনো আশাই করিনি এমন একদল মানুষ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে। হাতে তাঁদের ফুলের তোড়া এবং সুদীর্ঘ ফুলের মালা। দলের সবাই ছিলেন সে সময়ের ক্ষুদ্র বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তাঁর স্ত্রী এবং বাচ্চা মেয়ে লুনা ও জয়া।

একসঙ্গে দল বেঁধে হাঁটছি। আর সেই দলের সামনে ও পেছন দিকে উল্টো হেঁটে ক্যামেরা চালাতে চালাতে ছুটছেন সুশীল সূত্রধর। সবাই মিলে আমেরিকার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে বৃষ্টির মতো প্রশ্ন করতে লাগলেন। আর আমিও এত দিন পরে আপনজনদের বলতে পেরে খুব আনন্দিত বোধ করছিলাম। কিছুতেই যখন প্রশ্ন শেষ হচ্ছিল না, তখন সিদ্ধান্ত হলো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে (ইন্দিরা রোডে) একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সভা হয়েছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে আলোচনা। সে আনন্দ ভোলার নয়।

সেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র স্থানান্তরিত হয়ে চলে এলো বাংলামোটরের আজকের নিজস্ব স্থায়ী ঠিকানায়। ক্ষুদ্র একতলা পুরনো বাড়ি থেকে এখনকার সুরম্য অট্টালিকাই শুধু নয়, অনেকগুলো ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি, বই পড়া ও সেরা পাঠকদের পুরস্কৃত করার কর্মসূচির মতো অসংখ্য দৃশ্যমান ও অদৃশ্য ডালপালা, শাখা-প্রশাখা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আরো পড়তেই থাকবে।

এই কেন্দ্রের কর্ণধার দুর্লভ ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন।

লেখক : বিশ্বনন্দিত জাদুশিল্পী

বীর মুক্তিযোদ্ধা, চিত্রশিল্পী ও ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত

 

মন্তব্য

বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবাকে শিল্প হিসেবে দেখা হোক

    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আজিজ, পিএসসি (অব.)
শেয়ার
বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবাকে শিল্প হিসেবে দেখা হোক

২৪ জুলাইআন্তর্জাতিক বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা দিবস বাংলাদেশেও ২৪ জুলাই এই দিনটি উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবা বা কম্পানিগুলোর আগমন ঘটে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে, যখন সিকিউরেক্স, অতন্দ্র নিশ্চিত, শিল্ডসসহ বেশ কয়েকটি কম্পানি ছোট পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৪-৯৫ সালের মধ্যে আরো অনেক কম্পানি কার্যক্রম শুরু করে।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ভয়াবহ হামলার পর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য স্থানে নিরাপত্তা ব্যবসা এক বিশাল উল্লম্ফন লাভ করে। বিশেষ করে মৌলবাদী, জঙ্গি চরমপন্থীদের হুমকিকে তখন সর্বোচ্চ উদ্বেগ ও ভীতির সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছিল। তখন বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে কাজ করার জন্য প্রচুরসংখ্যক বেসরকারি নিরাপত্তা কম্পানি জন্ম নেয়।দারোয়ান’-এর পুরনো ধারণা রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে যায়উর্দি পরা নিরাপত্তাকর্মীরা কম্পানির ব্যানারে সংগঠিত হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন উচ্চপদস্থ সাবেক সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা।
তাঁরা এই ব্যবসাকে একটি পেশাদার, সুসংগঠিত শিল্পে পরিণত করেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাইহোলি আর্টিজান হামলায় ঢাকার গুলশানে ১৮ জন বিদেশি নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যার পর তা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানের ওপর মারাত্মক আঘাত হানে। আমরা একটি মধ্যপন্থী জাতি হিসেবে সুনাম হারাই। তখন দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থায় সংস্কার আনা হয়।

সমস্ত সরঞ্জাম ও গ্যাজেটসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়। এতে এই প্রচেষ্টা সফল হয় এবং দ্রুতই বাংলাদেশ বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করে।

২০০৬ সালে সরকার বেসরকারি নিরাপত্তা কম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্যবেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবা আইন ২০০৬ প্রণয়ন করে, যা শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। এই আইনের মাধ্যমে বেসরকারি নিরাপত্তা শিল্প দেশব্যাপী একটি অপরিহার্য পরিষেবা হিসেবে  স্বীকৃত হয় এবং দেশের নিয়মিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টায় পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।

আজ সারা দেশে ৮০০টিরও বেশি নিরাপত্তা কম্পানি কাজ করছে। এই কম্পানিগুলো ১২ লাখের বেশি কর্মীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে দূতাবাস, হাইকমিশন, জাতিসংঘের সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও, সব ধরনের শিল্প, পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-অ্যাপার্টমেন্টসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। তারা প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা নগদ বহনকারী যানবাহনের মাধ্যমে স্থানান্তর বা পরিবহন করে। দেশের ২০ হাজারের বেশি এটিএম বুথের অপারেশন বন্ধ হয়ে যাবে যদি নিরাপত্তা কম্পানিগুলো কাজ বন্ধ করে দেয়।

বেসরকারি নিরাপত্তা কম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রমের পরিধি বাড়িয়েছে এবং বহুমুখী করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তদন্ত পরিষেবা, নির্বাহী/ঘনিষ্ঠ সুরক্ষা পরিষেবা, যথাযথ যাচাইকরণ (Due Diligence), জরুরি উচ্ছেদ, সংকটপূর্ণ/দূরবর্তী অঞ্চলের অপারেশন, ইভেন্ট নিরাপত্তা, লজিস্টিক্যাল সহায়তা, ইলেকট্রনিক নিরাপত্তা, মেরিটাইম নিরাপত্তা, ডগ স্কোয়াড সহায়তা (K9) এবং বিবিধ পরিষেবা।

বাংলাদেশে নিরাপত্তা কম্পানিগুলোর আরো শক্তিশালী হওয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে সহায়তা প্রয়োজন। কর্মীদের ভালো প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো সংস্থান নেই বললেই চলে। এই খাতে নিয়োজিত ১২ লাখের বেশি মানুষ নিয়মিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পরিপূরক হিসেবে কাজ করছেন। দুর্ভাগ্য, তাঁদের অবদানের তেমন কোনো স্বীকৃতি নেই। তাঁদের প্রশিক্ষণ ও স্বীকৃতি প্রয়োজন।

দেশ, সমাজ ও সাধারণ মানুষের জন্য বিশাল অবদান রাখা সত্ত্বেও বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবা সামাজিকভাবে এখনো সম্মানিত নয়। এই পরিষেবার প্রতি আকর্ষণও কম। এর প্রধান কারণ এটি সাধারণত খুব কম বেতনের পেশা। গ্রামের একটি মেয়ে একজন নিরাপত্তা প্রহরীকে বিয়ে করতে চায় না। কারণ সে জানে, ছেলেটি গরিব এবং সমাজের অন্যান্য উর্দিধারী পরিষেবার মতো তার কোনো মর্যাদা নেই।

দেশে বড় কম্পানি, ব্যাংক কনগ্লোমারেট, বড় সিএসআর পারফরমার রয়েছে, যারা ৮ ঘণ্টার মাসিক কর্মসংস্থানের জন্য প্রতি গার্ডকে সর্বনিম্ন মজুরি বোর্ড অনুযায়ী আট হাজার টাকা প্রদান করে। এত কম পারিশ্রমিকে কিভাবে এই খাত থেকে ন্যূনতম ভালো পরিষেবা আশা করা যায়?

কভিড-১৯-এ এই দরিদ্র নিরাপত্তাকর্মীরা অন্যান্য ফ্রন্টলাইন যোদ্ধার মতো অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। কিন্তু তাঁদের জন্য কোনো স্যালুট  বা প্রণোদনা ছিল না। নিরাপত্তারক্ষীরা সত্যিই অবহেলিত রয়ে গেছেন।

তবু বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবা একটি ব্যবসা হিসেবে টিকে আছে। উন্নত বিশ্বে এটি একটি বড় ব্যবসা। আশা করি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরো উন্নত হবে এবং এটি ব্যবসা হিসেবে টিকে থাকবে।

 

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এলিট ফোর্স

এলিট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি.

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ