<p>‘শস্যের চেয়ে টুপি বেশী, ধর্মের আগাছা বেশী।’ ‘লালসালু’ উপন্যাসে এই বক্তব্যের মধ্যেই প্রকাশ পায় বেশির ভাগ বাঙালির ধর্মীয় জ্ঞানের অজ্ঞতা, ধর্মভীরুতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির চিত্র। ধর্মভীরু মানুষকে কাজে লাগিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল করার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর এই উপন্যাস। একদিকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মভীরু শোষিত দরিদ্র মানুষ; অন্যদিকে প্রতারক, ধর্মব্যবসায়ী ও শোষক <img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2021/11.November/12-11-2021/kalerkantho-sl-3a.jpg" style="float:left; height:340px; margin:12px; width:200px" />মাতবর-ভূস্বামী। মহব্বতনগর গ্রামের পরিত্যক্ত একটি কবরকে মোদাচ্ছের পীরের মাজার হিসেবে চিহ্নিত করে, এত দিন এই মাজারকে গুরুত্ব না দেওয়া বা ফেলে রাখার দায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে এই উপন্যাসের কাহিনি। ভণ্ড মজিদ স্বার্থসিদ্ধির জন্য গ্রামের মাতবর, প্রতারক খালেক ব্যাপারীকেই সহযোগী হিসেবে বেছে নেয়। অল্প দিনের মধ্যেই ফুলেফেঁপে ওঠা মজিদ বিয়ে করে বিধবা যুবতি রহিমাকে। মজলিসি ঢঙের নিজস্ব বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে ধর্মবিষয়ক অজ্ঞানতার জায়গাটিকে আক্রমণ করে ধর্মভীরু মানুষকে বশে রাখার চেষ্টা করে মজিদ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ালপুরের পীরসাহেবের উত্থানকে দমিয়ে দিয়ে, শিক্ষিত তরুণ আক্কাস আলীর স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়ে মূলত মজিদ নিজের শঠতার পথকে কণ্টকমুক্ত রাখে। কিন্তু মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা মজিদের মুখে থুথু ছিটিয়ে দিয়ে, মাজারকে অবজ্ঞা করে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং ভেঙে দেয় মজিদের অস্তিত্ব। কাহিনি চরিত্র, ভাষাশৈলীর কারণে সমসাময়িক সমাজবাস্তবতা থেকে উত্তীর্ণ ‘লালসালু’ হয়ে উঠেছে চিরকালীন।</p>