মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় কিংবা যদি বলা হয় ‘আলোকিত মানুষ চাই’, তখন অবলীলায় মনের ভেতর যার মুখচ্ছবি বা নামটি ভেসে ওঠে তিনিই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার, আমাদের স্বপ্নের বাতিঘর। তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান। স্বপ্ন মানুষকে জীবনের সফলতার পথ বাতলে দেয়। স্বপ্নই পারে মানুষকে সার্থক ও সমুন্নত করতে।
নিষ্ফলা মাঠের সফল কৃষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
- সালেক খোকন
অন্যান্য

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক।
২৫ জুলাই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ পূর্ণ করলেন ৮২ বছর। দীর্ঘ এই জীবনে জনপ্রিয়তার মোহ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। কেন? তিনি বলেন, ‘আমার কোনো দিন জনপ্রিয়তার মোহ ছিল না। কিন্তু মানুষ একটু জানুক, একটু দেখুক! মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই—এই জনপ্রিয়তা তো সবাই আশা করে। মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই—কথাটার মধ্যে একটা মৃত্যু আক্রান্ত মানুষের আকুতি, কান্নার শব্দ শোনা যায়।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর কাজের মাধ্যমে সত্যিকারভাবেই মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। অধ্যাপক হিসেবে তাঁর খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। পিতার শিক্ষক হিসেবে অসামান্য সাফল্য ও জনপ্রিয়তা শৈশবে তাঁকে এ পেশার প্রতি আকৃষ্ট করে। তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে, খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে। পরে ঢাকা কলেজেই জীবনের স্বর্ণযুগ অতিবাহিত করেছেন।
নানা বাস্তবতার মধ্যেও তিনি সাহিত্যচর্চায় নিবিষ্ট থাকেন। কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক গ্রন্থ ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। প্রকাশিত গ্রন্থ পঞ্চাশের অধিক। ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। যেখানে তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন, শিক্ষার পরিবেশ, শৈশবের মজার ঘটনা এবং সর্বোপরি তাঁর শিক্ষকদের নিয়ে লিখেছেন, যা শিক্ষকদের জন্য অবশ্য পাঠ্য। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও আমি’, ‘ভাঙো দুর্দশার চক্র’, ‘আমার বোকা শৈশব’, ‘ওড়াউড়ির দিনগুলি’, ‘আমার উপস্থাপক জীবন’, ‘রসস্ট্রাম থেকে’, ‘স্বপ্নের সমান বড়’, ‘বিস্রস্ত জার্নাল’, ‘নদী ও চাষীর গল্প’ প্রভৃতি। র্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় পরিবেশ পদকসহ দেশ-বিদেশি বহু সম্মাননা পেয়েছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ আন্দোলনসহ নানা ধরনের সামাজিক আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকার জন্য দেশব্যাপী অভিনন্দিতও হয়েছেন তিনি।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন সুবক্তা। মনের কথাগুলো সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে জুড়ি নেই। তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রায় সব দিক সমন্বিত হয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক সত্তায়। বই পড়ানোর মধ্য দিয়ে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজ করছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। নানা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে একটি বইবিমুখ জাতিকে বই পড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি বলে আসছেন জীবনের বেশির ভাগ সময় ধরেই। বলেই শুধু ক্ষান্ত হননি; সবার বই পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও হাতে নিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি, যা চলছে সারা দেশে। তাঁর পরিকল্পনায় এ পর্যন্ত বইপড়াসহ নানামুখী কার্যক্রম নিয়ে প্রায় কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
মানুষকে জাগিয়ে তোলার এক জীবন্ত কিংবদন্তি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আমাদের নিষ্ফলা মাঠের সফল কৃষক তিনি। তাঁর আলো ছড়ানো স্বপ্নগুলো সঞ্চারিত হোক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
সম্পর্কিত খবর

চরিত্রহীন
- রুদ্র অহম

একদিন বিবেকবাবু ডাকলেন
বললেন, শোনো, আর যা-ই করো,
তোমার চরিত্র হারিয়ো না কখনো।
শুনে আমি খানিক বিস্মিত হলাম!
বললাম, বিবেকবাবু,
আপনি তো জানেন,
মদ-জুয়া কিংবা পরকীয়া
আমার কিছুতে আসক্তি নেই।
তাহলে চরিত্র হারাব কিসে?
বিবেকবাবু হাসলেন।
বললেন, কিছু মানুষ আছে, যারা
সারাক্ষণ অন্যকে খুশি করতে,
অন্যের প্রিয়পাত্র হতে মত্ত থাকে।
কারোর অপ্রিয় হওয়ার সাহস নেই,
মাথা তুলে দাঁড়াবার মেরুদণ্ড নেই।
যেমন পানি। যে পাত্রেই রাখো,
তার আকার নেয়; নিজস্বতা নেই।
যার নিজের রুচি-পছন্দ-ইচ্ছে স্বতন্ত্র,
সে কখনো সকলের প্রিয় হয় না।
আর যে সকলের প্রিয়,
তার কোনো চরিত্র নেই।

বর্ষারূপ
- আসাদ কাজল

অভিনব বর্ষা বুকের ভিতর কাঁদে
সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ষার ভিতর চলাচল
বর্ষা বহমান প্রকৃতিতে অবিচল
আমি শুধু পড়ে থাকি স্বপ্নময় ফাঁদে।
প্রকৃতির মেঘ দূরে সরে যায়। তবু
প্রণয়সঙ্গিনী মনের ভিতর একা।
বর্ষাভেজা রাতে সংগোপনে দেয় দেখা
বর্ষায় নিভৃতে ডাকি স্বরচিত প্রভু।
কদমফুলের মতো তোমার দুচোখ
ভালোবেসে উপেক্ষা করেছি রাজ্য-রাজা
চৈত্র ভুলে পুরনো বর্ষায়—যত শোক
ভুলে যাই আমি মনের সমস্ত সাজা।
তবু বর্ষা আসে, উদ্যমে গোপন সঙ্গ
বর্ষারূপ আমার ভিতর স্বপ্নভঙ্গ।

শান্তি
- ফারুক মাহমুদ

তোমার বাগান থেকে তুলে আনা দুটি পাকা বীজ
রোপণ করেছি বারান্দার টবে
অপেক্ষা অপেক্ষা শুধু—কবে হবে গাছ
সেই গাছে দুলে দুলে দুলতে থাকবে
শাখাছন্দ, অহরহ অগণিত সবুজ বাতাস
ফুলের প্রকাশ্য মুখ, থেকে থেকে সুরভিত গান
কোনো এক পুণ্যপ্রাতে দেখি—
বীজ থেকে হতে হতে হয়ে ওঠা গাছে
‘প্রথম ফুটেছে কলি’। মনে হলো তুমি বুঝি এলে
চেনা গন্ধ, চারপাশে প্রবাহিত শান্তিসত্যধারা
।

প্রদর্শনী
আটাশ শিল্পীর নান্দনিকতা
- মোহাম্মদ আসাদ

প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পীদের কাজ শিল্পপ্রেমীদের নজরে আসে। বিগত শতাব্দীতে এই গুরুদায়িত্ব শিল্পকলা একাডেমি পালন করত। ছিল কয়েকটি গ্যালারি। সেখানে বিশেষ কিছু শিল্পীই প্রদর্শনীর সুযোগ পেতেন।
এই প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন আবদুল্লাহ আল বশির, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, আল-আখির সরকার, আনজুম সুলায়মান, অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, আশফাক বাপ্পী, বিপ্লব চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, কে জামান শিমুল, কামাল উদ্দিন, কামরুজ্জোহা, কাজী শহীদ, লুত্ফা মাহমুদা, মো. জিয়াউর রহমান, মনজুর রশিদ, মুনতাসির মঈন, নাঈম জামান, নাজিয়া আহমেদ, প্রদ্যুৎ কুমার দাস, রত্নেশ্বর সূত্রধর, রেজাউর রহমান, রুহুল আমিন তারেক, এস এম সাহা, আনিসুজ্জামান ফারুক, সৌরভ চৌধুরী, সুমন ওয়াহেদ, সৈয়দ গোলাম দস্তগীর, ত্রিবেদী গোপাল চন্দ্র গুপ্ত।
বিশাল এই প্রদর্শনীর কোনো আয়োজক প্রতিষ্ঠান নেই। নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে প্রদর্শনীটির শুরু। তার পরও একজন তো দায়িত্বভার বহন করেছেন।
কোনো বাণিজ্যিক চিন্তা ছাড়া এমন সুন্দর আয়োজনে শিল্পীরা যেমন উৎসাহিত হবেন, শিল্পকলাপ্রেমীরাও একই সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেখতে পারবেন।