ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

নিষ্ফলা মাঠের সফল কৃষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

  • সালেক খোকন
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
নিষ্ফলা মাঠের সফল কৃষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় কিংবা যদি বলা হয় ‘আলোকিত মানুষ চাই’, তখন অবলীলায় মনের ভেতর যার মুখচ্ছবি বা নামটি ভেসে ওঠে তিনিই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার, আমাদের স্বপ্নের বাতিঘর। তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান। স্বপ্ন মানুষকে জীবনের সফলতার পথ বাতলে দেয়। স্বপ্নই পারে মানুষকে সার্থক ও সমুন্নত করতে।

এমন হাজারো বাক্যের মাধ্যমে তিনি লাখো তরুণ মনকে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেছেন, এখনো করছেন। স্বপ্নের পথে চলতে ও স্বপ্নকে ছড়িয়ে দিতে যে অসীম সাহস তিনি নিজের জীবনে দেখিয়েছেন, তা শত বছর পরও মানুষের প্রেরণা জোগাবে।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক।

ষাটের দশকের প্রতিশ্রুতিময় কবি। সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে বেগবান করে রেখেছিলেন প্রায় এক দশক ধরে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকেই রুচিমান ও বিনোদনসক্ষম ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন আবু সায়ীদ। টেলিভিশনের বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব তিনি।

২৫ জুলাই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ পূর্ণ করলেন ৮২ বছর। দীর্ঘ এই জীবনে জনপ্রিয়তার মোহ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। কেন? তিনি বলেন, ‘আমার কোনো দিন জনপ্রিয়তার মোহ ছিল না। কিন্তু মানুষ একটু জানুক, একটু দেখুক! মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই—এই জনপ্রিয়তা তো সবাই আশা করে। মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই—কথাটার মধ্যে একটা মৃত্যু আক্রান্ত মানুষের আকুতি, কান্নার শব্দ শোনা যায়।

এই পৃথিবীতে সবই থাকবে, অথচ আমি থাকব না। কিন্তু একটা মাত্র উপায় আছে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার, যদি হৃদয় মাঝে স্থান করে নেওয়া যায়। সুতরাং মানুষের হৃদয়ের মাঝে আমি বাঁচতে চাই। এটা জনপ্রিয়তা নয়, অমরত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষা। জনপ্রিয়তা ক্ষণস্থায়ী। অমরত্ব দীর্ঘস্থায়ী। জনপ্রিয়তা একটা বাজারের বিষয়। অধিকাংশ সময় এটা ব্যবসার বিষয়ও।’

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর কাজের মাধ্যমে সত্যিকারভাবেই মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। অধ্যাপক হিসেবে তাঁর খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। পিতার শিক্ষক হিসেবে অসামান্য সাফল্য ও জনপ্রিয়তা শৈশবে তাঁকে এ পেশার প্রতি আকৃষ্ট করে। তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে, খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে। পরে ঢাকা কলেজেই জীবনের স্বর্ণযুগ অতিবাহিত করেছেন।

নানা বাস্তবতার মধ্যেও তিনি সাহিত্যচর্চায় নিবিষ্ট থাকেন। কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক গ্রন্থ ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। প্রকাশিত গ্রন্থ পঞ্চাশের অধিক। ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। যেখানে তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন, শিক্ষার পরিবেশ, শৈশবের মজার ঘটনা এবং সর্বোপরি তাঁর শিক্ষকদের নিয়ে লিখেছেন, যা শিক্ষকদের জন্য অবশ্য পাঠ্য। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও আমি’, ‘ভাঙো দুর্দশার চক্র’, ‘আমার বোকা শৈশব’, ‘ওড়াউড়ির দিনগুলি’, ‘আমার উপস্থাপক জীবন’, ‘রসস্ট্রাম থেকে’, ‘স্বপ্নের সমান বড়’, ‘বিস্রস্ত জার্নাল’, ‘নদী ও চাষীর গল্প’ প্রভৃতি। র‌্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় পরিবেশ পদকসহ দেশ-বিদেশি বহু সম্মাননা পেয়েছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ আন্দোলনসহ নানা ধরনের সামাজিক আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকার জন্য দেশব্যাপী অভিনন্দিতও হয়েছেন তিনি।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন সুবক্তা। মনের কথাগুলো সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে জুড়ি নেই। তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রায় সব দিক সমন্বিত হয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক সত্তায়। বই পড়ানোর মধ্য দিয়ে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজ করছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। নানা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে একটি বইবিমুখ জাতিকে বই পড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি বলে আসছেন জীবনের বেশির ভাগ সময় ধরেই। বলেই শুধু ক্ষান্ত হননি; সবার বই পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও হাতে নিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি, যা চলছে সারা দেশে। তাঁর পরিকল্পনায় এ পর্যন্ত বইপড়াসহ নানামুখী কার্যক্রম নিয়ে প্রায় কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

মানুষকে জাগিয়ে তোলার এক জীবন্ত কিংবদন্তি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আমাদের নিষ্ফলা মাঠের সফল কৃষক তিনি। তাঁর আলো ছড়ানো স্বপ্নগুলো সঞ্চারিত হোক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চরিত্রহীন

    রুদ্র অহম
শেয়ার
চরিত্রহীন

একদিন বিবেকবাবু ডাকলেন

বললেন, শোনো, আর যা-ই করো,

তোমার চরিত্র হারিয়ো না কখনো।

শুনে আমি খানিক বিস্মিত হলাম!

বললাম, বিবেকবাবু,

আপনি তো জানেন,

মদ-জুয়া কিংবা পরকীয়া

আমার কিছুতে আসক্তি নেই।

        তাহলে চরিত্র হারাব কিসে?

 

বিবেকবাবু হাসলেন।

বললেন, কিছু মানুষ আছে, যারা

সারাক্ষণ অন্যকে খুশি করতে,

অন্যের প্রিয়পাত্র হতে মত্ত থাকে।

কারোর অপ্রিয় হওয়ার সাহস নেই,

মাথা তুলে দাঁড়াবার মেরুদণ্ড নেই।

 

যেমন পানি। যে পাত্রেই রাখো,

তার আকার নেয়; নিজস্বতা নেই।

যার নিজের রুচি-পছন্দ-ইচ্ছে স্বতন্ত্র,

সে কখনো সকলের প্রিয় হয় না।

আর যে সকলের প্রিয়,

                   তার কোনো চরিত্র নেই।

মন্তব্য

বর্ষারূপ

    আসাদ কাজল
শেয়ার
বর্ষারূপ

অভিনব বর্ষা বুকের ভিতর কাঁদে

সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ষার ভিতর চলাচল

বর্ষা বহমান প্রকৃতিতে অবিচল

আমি শুধু পড়ে থাকি স্বপ্নময় ফাঁদে।

 

প্রকৃতির মেঘ দূরে সরে যায়। তবু

প্রণয়সঙ্গিনী মনের ভিতর একা।

বর্ষাভেজা রাতে সংগোপনে দেয় দেখা

বর্ষায় নিভৃতে ডাকি স্বরচিত প্রভু।

 

কদমফুলের মতো তোমার দুচোখ

ভালোবেসে উপেক্ষা করেছি রাজ্য-রাজা

চৈত্র ভুলে পুরনো বর্ষায়যত শোক

ভুলে যাই আমি মনের সমস্ত সাজা।

 

তবু বর্ষা আসে, উদ্যমে গোপন সঙ্গ

বর্ষারূপ আমার ভিতর স্বপ্নভঙ্গ।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শান্তি

    ফারুক মাহমুদ
শেয়ার
শান্তি

তোমার বাগান থেকে তুলে আনা দুটি পাকা বীজ

                      রোপণ করেছি বারান্দার টবে

 

অপেক্ষা অপেক্ষা শুধুকবে হবে গাছ

সেই গাছে দুলে দুলে দুলতে থাকবে

শাখাছন্দ, অহরহ অগণিত সবুজ বাতাস

ফুলের প্রকাশ্য মুখ, থেকে থেকে সুরভিত গান

 

কোনো এক পুণ্যপ্রাতে দেখি

বীজ থেকে হতে হতে হয়ে ওঠা গাছে

প্রথম ফুটেছে কলি। মনে হলো তুমি বুঝি এলে

 

চেনা গন্ধ, চারপাশে প্রবাহিত শান্তিসত্যধারা

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রদর্শনী

আটাশ শিল্পীর নান্দনিকতা

    মোহাম্মদ আসাদ
শেয়ার
আটাশ শিল্পীর নান্দনিকতা
পুরনো ঢাকা শহর। শিল্পী : কামার উদ্দিন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শিল্পী : মনজুর রশিদ

প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পীদের কাজ শিল্পপ্রেমীদের নজরে আসে। বিগত শতাব্দীতে এই গুরুদায়িত্ব শিল্পকলা একাডেমি পালন করত। ছিল কয়েকটি গ্যালারি। সেখানে বিশেষ কিছু শিল্পীই প্রদর্শনীর সুযোগ পেতেন।

অবশ্য সেই সময়ে শিল্পীর সংখ্যাও ছিল কম। এই শতাব্দীর শুরু থেকেই শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ব্যাপকতা দেখা যায়। নানা রকম গ্যালারি ও সেন্টারে অনেকে নিজ দায়িত্বে একক প্রদর্শনী করছেন। হাজারো বৈচিত্র্যময় কাজ দেখতে পারছেন শিল্পকলাপ্রেমীরা।
প্রদর্শনীর ব্যয়বাহুল্যের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ লা গ্যালারিতে এস্থিক বা নান্দনিকতা শিরোনামে ভিন্ন এক প্রদর্শনীর কথা বলছি। ২৮ জন শিল্পীর ৩৩টি কাজ নিয়ে এই আয়োজন। শিল্পীরা সবাই প্রায় এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কাজ উপহার দিয়ে চলেছেন।
বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের বিশাল সমাহারে প্রদর্শনীটি আলোকিত হয়ে উঠেছিল।

এই প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন আবদুল্লাহ আল বশির, আব্দুস সাত্তার তৌফিক, আল-আখির সরকার, আনজুম সুলায়মান, অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, আশফাক বাপ্পী, বিপ্লব চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, কে জামান শিমুল, কামাল উদ্দিন, কামরুজ্জোহা, কাজী শহীদ, লুত্ফা মাহমুদা, মো. জিয়াউর রহমান, মনজুর রশিদ, মুনতাসির মঈন, নাঈম জামান, নাজিয়া আহমেদ, প্রদ্যুৎ কুমার দাস, রত্নেশ্বর সূত্রধর, রেজাউর রহমান, রুহুল আমিন তারেক, এস এম সাহা, আনিসুজ্জামান ফারুক, সৌরভ চৌধুরী, সুমন ওয়াহেদ, সৈয়দ গোলাম দস্তগীর, ত্রিবেদী গোপাল চন্দ্র গুপ্ত।

বিশাল এই প্রদর্শনীর কোনো আয়োজক প্রতিষ্ঠান নেই। নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে প্রদর্শনীটির শুরু। তার পরও একজন তো দায়িত্বভার বহন করেছেন।

তিনি হলেন মনজুর রশিদ। তিনি বলেন, একাকিত্বের গানে নির্মল আনন্দ আছে, কিন্তু কখনো কখনো তা একা করে ফেলতেও পারে শ্রোতাকে! দিনশেষে মানুষ মানুষের সাহচর্যই চায় সম্ভবত! একসঙ্গে অনেকে মিলে চলাটা আনন্দের, ঘটে প্রাণের সঞ্চালন! জীবনকে আমরা সহজ সুন্দর করেই উদযাপন করতে চাই। এই ২৮ জন শিল্পীকে একটি স্রোতে এনে দারুণ কিছু করার প্রয়াস মাত্র। ভবিষ্যতেও এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে আশা করি।

কোনো বাণিজ্যিক চিন্তা ছাড়া এমন সুন্দর আয়োজনে শিল্পীরা যেমন উৎসাহিত হবেন, শিল্পকলাপ্রেমীরাও একই সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেখতে পারবেন।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ