বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী। এখানকার বেশির ভাগ উপজেলা নদী দ্বারা বেষ্টিত। আছে নদী আর সাগরবেষ্টিত শতাধিক দুর্গম চর। এসব চরে সাধারণত প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতায়াত করে না।
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী। এখানকার বেশির ভাগ উপজেলা নদী দ্বারা বেষ্টিত। আছে নদী আর সাগরবেষ্টিত শতাধিক দুর্গম চর। এসব চরে সাধারণত প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাতায়াত করে না।
গলাচিপার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের কামার হাওলা গ্রামের ৮০ বছর বয়সী বিধবা ফাতেমা বিবি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘আমারে বাবা নীলা কোম্বলডাই দাও। তোমাগো মতো কইরা বাড়িতে যাইয়া কেউ কোন দিন খবর দিয়া কোম্বল দেয় নাই।
পটুয়াখালী লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম (৬৮) বলেন, ‘প্রত্যেক বচ্ছর শীতে চিরা খেতা গায়ে দেই। কিন্তু শীত মানে না। মাঘের শীত বাঘের গায়েও লাগে। আমারে তো কাঁপাইয়া দেয় শীতে। রাইতে শীতে বড় কষ্ট করি। জীনে একটা ল্যাপ বা কোম্বল আমারে কেউ দেয় নাই। আমাগো মতো গরিব মাইনষ্যের খবর কেউ নেয় না। কিন্তু এহন মোনে হইছে আমাগো মতো মাইনষ্যের খবর নেওয়ার মতোও মানুষ আছে। যেরা আমার কষ্ট দেইখ্যা কম্বল দিছে আল্লায় হেগোরে ভালো রাহুক।’
চর আগস্তি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সোহরাব আকন বলেন, ‘এই বছর শীতে অনেক কষ্ট করছি। কেউ আমারে একটা কোম্বল দেয় নাই। বসুন্ধরা আমারে কোম্বল দিছে। আমাগো গেরামের হগুলডি কোম্বল পাইছে। আমি গরিব মানুষ। আমি দোয়া ছাড়া আর কী করতে পারমু। যারা আমারে কোম্বল দিছে আল্লায় হেগো ভালো করুক।’ গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নের চর আগস্তি বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী হুজাইফা। অন্য শিক্ষার্থীর মতোই তাকেও কম্বল উপহার দেওয়া হয়। কম্বল হাতে পেয়ে বলে ওঠে, ‘আমরা যমজ তিন ভাই বুইন। এতো দিন একটা কোম্বল গায়ে দিয়া তিনজনে ঘুমাইতাম। রাইতে শীত করতো। আইজ রাইতে তিনজনে তিনডা কোম্বল গায়ে দিয়া ঘুমামু। এহন আমারো একটা কোম্বল হইছে।’
২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ স্কুল মাঠ ও ২৪ জানুয়ারি দশমিনা উপজেলা চত্বরে ও চর বোরহান বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল মাঠে প্রধান অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা। আরো উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ সাহিন, দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিসা নাজ নীরা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অলিউজ্জামান চৌধুরী, বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক ও কালের কণ্ঠ’র জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক জাকারিয়া জামান, গলাচিপা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও বসুন্ধরা শুভসংঘ গলাচিপা শাখার প্রধান উপদেষ্টা মু. ফোরকান কবির, ডাক্তার ফারজানা রশিদ শাম্মি প্রমুখ। হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার ডিগ্রি কলেজ মাঠে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম (পিপিএম, বিপিএম-বার), পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. হাফিজুর রহমান। ২১ জানুয়ারি রবিবার থেকে কলাপাড়া উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে ও কুয়াকাটা হোটেল মিয়াদ ইন্টারন্যাশনালের চত্বরে কম্বল বিতরণ শুরু হয়। এরপর পটুয়াখালী পৌর এলাকার হাজী আক্কেল আলী ডিগ্রি কলেজ মাঠে, বাউফল শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে, বাউফল মান্তা পারিবারে, গলাচিপা পৌর এলাকার বাংলাদেশ-তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ স্কুল মাঠে, মধ্য রতনদী তালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে, দশমিনা উপজেলা পরিষদের সামনে, দশমিনার চর বোরহান বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল মাঠে, গলাচিপার চর আগস্তি মুজিবকেল্লা বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল মাঠে, রাঙ্গাবালী চর ইমারসন বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল মাঠে, বাহেরচর এলাকায় ও মির্জাগঞ্জ উপজেলায় কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
বাবা সমর চক্রবর্তী ছিলেন ব্যবসায়ী। তাঁর আয়েই চলত সংসার ও তিন সন্তানের লেখাপড়া। আকস্মিকভাবে তাঁর মৃত্যুতে স্ত্রী লক্ষ্মীরাণী চক্রবর্তী দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। দোকান চালানোর মতো আর কেউ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায়।
‘স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। না পারছি তাদের ঠিকভাবে খাওয়াতে, না পারছি লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে। এই বিষয়ে কাউকে কিছু না পারছি বলতে, পারছি না সহ্য করতে।’ তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পেয়ে এভাবেই অনুভূতি জানাচ্ছিলেন রাশিদা বেগম।
গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের পাশে দাঁড়ানোর এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বসুন্ধরা গ্রুপ যে চিন্তা থেকে বাংলাদেশের একেবারে শেষ প্রান্তের জেলা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জকে বেছে নিয়েছে, তাদের প্রতি অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। পিছিয়ে পড়া এই উপজেলায় অসচ্ছল মানুষ যেমন আছে, তেমনি নদীভাঙন-বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এসব পরিবারের অনেক ছেলেমেয়ে অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারছে না, নানাভাবে সমাজে লাঞ্ছিত হচ্ছে।
আমাদের দেশের শিল্পপতিরা প্রতিদিন নাশতা খেতে বা সামান্য কাজে যত টাকা ব্যয় করেন, তা দিয়ে যদি সাধারণ মানুষের ভালো করার কথা চিন্তা করেন, তাহলে সমাজের জন্য তাঁরা অনেক কিছু করতে পারেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করেন। তাঁদেরই একজন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপ বা বসুন্ধরা শুভসংঘ ইচ্ছা করলে অসচ্ছল নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন বিতরণ না করে এই টাকা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারত।