<p>পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় আগুনমুখা নদীঘেঁষা বিচ্ছিন্ন চরটির নাম চরইমারশন। এই চরে ছিল না কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওখানকার শিক্ষার্থীরা পাঁচ কিলোমিটার দূরের স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করত। এ জন্য পাড়ি দিতে হতো দারছিঁড়া নামক একটি নদীও। খেয়া নৌকা পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা নিয়মিত ভুগতেন নিরাপত্তাহীনতায়। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় সেখানকার দেড় শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার উপক্রম হচ্ছিল। খেয়া নৌকা পার হয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যাওয়া অনেক শিশুর পক্ষেই অসম্ভব ছিল। ওই শিশুরা পাঠগ্রহণে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করত। পাশাপাশি দুর্ভোগের কারণে স্কুলবিমুখ হয়ে পড়ছিল বেশির ভাগ শিক্ষার্থী।<br /> এই কচিকাঁচা সোনামণিদের কথা চিন্তা করে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বিচ্ছিন্ন ওই চরে একটি স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন বসুন্ধরা শুভসংঘ রাঙ্গাবালী উপজেলা শাখার বন্ধুরা। এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে চালু হওয়া স্কুলটিতে বর্তমানে ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পড়াশোনা করছে। উপজেলার সেই দুর্গম চরে নির্মিত ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল’ পরিদর্শনে গিয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের একদিন পাঠদান করেছেন রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান। পাঠদান শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে এবং অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। স্কুলের পরিদর্শন বইয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশংসাও করেন মো. মিজানুর রহমান।<br /> শুভসংঘ স্কুলের শিক্ষক মোসা. হাবিবা বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় আজ প্রথমবারের মতো দুর্গম চরে এসে আমাদের বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিয়ে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি আমাদের পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্যসহ স্বাক্ষর করেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বাচ্চাদের নিয়ে সময় কাটিয়েছেন এবং স্কুল পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’ বসুন্ধরা শুভসংঘের রাঙ্গাবালী উপজেলা শাখার সভাপতি ঝিলাম তাওহীদ বলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘ এখন দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এই বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলটি চালু হওয়ার পর অনেক ঝরে পড়া শিক্ষার্থী স্কুলমুখী হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসহায় নারী ও কিশোরীদের তিন মাস মেয়াদি বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের হাতে কিছুদিনের মধ্যেই সেলাই মেশিন তুলে দেবে বসুন্ধরা গ্রুপ। এতে গ্রামীণ অসহায় নারীরা তাদের পরিবারে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করতে পারবে। এই দ্বীপটি উপজেলা থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন ছিল, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে দূরের বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আর পড়াশোনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে এই দুর্গম চরে শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।<br /> উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘চরইমারশন একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ। এখানে কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। এখানকার শিশুদের দূরের স্কুলে গিয়ে পড়তে খুব কষ্ট হতো। বসুন্ধরা গ্রুপ এখানে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল নির্মাণ করে দিয়েছে। শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে এই দুর্গম জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছে। অনেক দিন ধরেই আমি আসব আসব বলে আসার সুযোগ হয়নি। আজকেই আসলাম। শিশুদের পড়াতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই এখানে এসেই ওদের সঙ্গে কিছু সময় ব্যয় করলাম। সুযোগ হলে আমি মাঝে মাঝে এখানে এসে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাব। বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের প্রতি আমাদের উপজেলা প্রশাসনের দিক থেকে  সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।’<br /> এলাকাবাসী বলে, আমাদের ছোট শিশুদের এত দূরের স্কুলে পাঠাতে খুব ভয় পেতাম। অনেক সময় ইচ্ছা করেই তাদের স্কুলে যেতে দিতাম না। এত দূরে স্কুল, রাস্তায় আবার কোন বিপদ হয়। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের সন্তানরা নিশ্চিন্তে পড়বে।</p>