ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন অভিনয়
১৯৪৬ মুক্তি পায় দেব আনন্দ অভিনীত প্রথম ছবি ‘হাম এক হ্যায়’, এরপর ‘আগে বাড়ো’, ‘মোহন’। প্রথম তিনটি ছবি ফ্লপ হওয়ায় অভিনয় ছেড়ে দেবেন বলে ঠিক করেন। এ সময় অশোক কুমার তাঁকে নিয়ে বানান ‘জিদ্দি’। এই ছবি হিট হওয়ায় আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৫০ সালে দেব আনন্দ অভিনীত আটটি ছবি মুক্তি পায়। ‘হিন্দুস্তান হামারা’, ‘মধুবালা’, ‘দিলরুবা’, ‘আফসার’সহ সব ছবিই সুপারহিট। এমন কীর্তি বলিউডে আর কোনো অভিনেতার নেই।
অভিনয় করেছেন আমৃত্যু
২০১১ সালের ডিসেম্বরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টানা ৬৫ বছর তিনি অভিনয় করে গেছেন।
সর্বশেষ ছবি ‘চার্জশিট’ মুক্তি পায় মৃত্যুর তিন মাস আগে, ২০১১-র সেপ্টেম্বরে। প্রায় সাত দশক পর্দায় হাজির ছিলেন, এর মধ্যে পাঁচ দশক তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ছবির গল্প।
স্টাইলিশ দেব আনন্দ
১৯৫৮ সালে ‘কালাপানি’ তুমুল হিট করেছিল। সে সময় দেব আনন্দ একবার রাস্তায় কালো কোট ও প্যান্ট পরে বেরিয়েছিলেন অন্যান্য দিনের মতোই।
এক নারী ভক্ত প্রিয় নায়ককে একঝলক দেখতে উঁচু বাড়ি থেকে ঝাঁপ দেন! সে সময়ের পত্রিকায় রিপোর্ট হয়, দেব আনন্দকে কালো কোটে এতই হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছিল যে একটি মেয়ে তাঁর এই রূপে মুগ্ধ হয়ে আত্মাহুতি দিতেও দ্বিধা করেনি। এই ঘটনার জেরে জনসমক্ষে দেব আনন্দের কালো কোট পরা নিষিদ্ধ করেন ভারতের আদালত। এর পর থেকে আর কালো কোট পরে বেরোতে পারতেন না তিনি। তাঁর স্টাইল ও ফ্যাশন সেন্সের বিশেষ প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষ, এমনকি বলিউডের কয়েক প্রজন্মের ওপর। তবু দেব আনন্দকে বড় পর্দায় ফুল স্লিভ ছাড়া আর কোনো কিছু পরতে দেখা যায়নি। আবার দেব আনন্দের টুপি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে এখনো ‘দেব আনন্দ টুপি’ বললে সবাই চেনে বিশেষ ধরনের এই টুপি।
সুরাইয়ার প্রেমিক, কল্পনার স্বামী
অভিনেত্রী সুরাইয়ার সঙ্গে দেব আনন্দের প্রেমের কথা বহুল চর্চিত। ১৯৪৭ সালে ‘বিদ্যা’ ছবির একটি গানের শুটিংয়ে মাঝনদীতে পড়ে যান সুরাইয়া। দেব আনন্দ নদীতে লাফিয়ে পড়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। তখন থেকেই তাঁদের প্রেমের সূত্রপাত। দেব-সুরাইয়া তাঁদের প্রেম নিয়ে কখনোই লুকোছাপা করেননি। দুজন হাত ধরাধরি করে চলতেন প্রকাশ্যে। দেব আনন্দ ভালোবেসে সুরাইয়াকে ‘নোজী’ এবং সুরাইয়া দেব আনন্দকে ‘স্টিভ’ বলে ডাকতেন। সুরাইয়া পরিবারের সর্বেসর্বা ছিলেন তাঁর নানি। নানির ওপর পরিবারের কারো কথা বলার ক্ষমতা ছিল না। নানির বাধায় হিন্দু ধর্মের দেবের সঙ্গে বিয়ে হয়নি মুসলিম সুরাইয়ার। থানা-পুলিশ-মারামারি কম হয়নি এই সিনেমাটিক প্রেমে। সুরাইয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের বছর দেড়েক পর অভিনেত্রী কল্পনা কার্তিককে বিয়ে করেন দেব আনন্দ। তবে সুরাইয়া আর বিয়ে করেননি। আজীবন অবিবাহিতই থেকে গেছেন। সুরাইয়া ধীরে ধীরে অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। ২০০৪ সালে মারা যান। একটা লম্বা সময় নিজেকে রেখেছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে।
আত্মজীবনীতে দেব
সমসাময়িক দিলীপকুমার থেকে পরবর্তীকালের ঋষি কাপুর—অনেকেই আত্মজীবনী লিখেছেন। তবে দুই জায়গায় ব্যতিক্রম দেব। এক. নায়ক-নায়িকারা আত্মজীবনী লেখেন কোনো অনুলেখকের সাহায্যে। কিন্তু ‘রোমান্সিং উইথ লাইফ’ অনুলিখন নয়, লাহোর কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের কৃতী ছাত্র দেব আনন্দের নিজেরই লেখা।
দুই. চলচ্চিত্রের বাইরে জওয়াহেরলাল নেহরু থেকে মকবুল ফিদা হুসেন, সমারসেট মম—অনেকেই স্বনামে সেখানে উঁকিঝুঁকি মেরে গেছেন দেবের লেখনীতে। বোম্বেতে (অধুনা মুম্বাই) তাঁর উত্থানের কাহিনি ছড়িয়ে আছে বইটির ছত্রে ছত্রে। নায়িকা সুরাইয়ার সঙ্গে তাঁর ব্যর্থ প্রণয় এবং সহশিল্পী কল্পনা কার্তিকের সঙ্গে বিবাহ—সবই উঠে এসেছে এ বইয়ে।
নায়িকাদের আবিষ্কারক
নতুন তারকা খুঁজে বের করতে দেব আনন্দের জুড়ি মেলা ভার। টিনা মুনিম, জিনাত আমান, রিচা শর্মা, নাতাশা সিনহা, ফাতেমা শেখ, দীপশিখার মতো অনেকে তাঁর হাত ধরেই চলচ্চিত্রে পা রাখেন।
নারীর মর্যাদা
শাহরুখ খানের ছবির প্রযোজক হন তাঁর স্ত্রী গৌরী খান। বলিউডে এই ধারা শুরু করেন দেব আনন্দ। অভিনেতার প্রডাকশন হাউস নবকেতন ফিল্মসের বেশির ভাগ ছবির প্রযোজক তাঁর স্ত্রী কল্পনা কার্তিক। তাঁর ছবিতে নায়িকাদের উপস্থিতি বরাবরই স্মার্ট ও স্বাধীন।
একনজরে
জন্ম : ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২৩, পাকিস্তানের পাঞ্জাব
পুরো নাম : ধর্মদেব পিশোরিমাল আনন্দ
প্রথম সিনেমা : হাম এক হ্যায় [১৯৪৬]
মোট চলচ্চিত্র : ১১৪টি
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র : জিদ্দি, ট্যাক্সি ড্রাইভার, হরে রাম হরে কৃষ্ণ, কালাপানি, সিআইডি, গাইড, তেরে ঘরকে সামনে, দেশ পরদেশ
মৃত্যু : ৩ ডিসেম্বর ২০১১, লন্ডন [৮৮ বছর]
পুরস্কার : ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দুইবার, ফিল্মফেয়ার চারবার, দাদাসাহেব ফালকে ও পদ্মভূষণ