<p>ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী গত এক বছরে মারামারির ঘটনায় এক হাজার ৩১৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে অন্তত ২০০। বেশির ভাগ মামলা হয়েছে দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায়। এটি জামিন অযোগ্য। তবে চিকিৎসা সনদপত্রে গুরুতর আঘাত না থাকায় ৯০ শতাংশ মামলায় ৩২৬ ধারা বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।</p> <p>আদালত সূত্র জানায়, মারামারি বা আঘাতের মামলাগুলো হয় দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫ ও ৩২৬ ধারায়। এর মধ্যে ৩২৬ ধারা অধিক শাস্তিযোগ্য। এই ধারায় কেউ হাজতে গেলে তার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন হয় না। দায়রা আদালত বা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে হয়।</p> <p>অনেকে আবার জামিন না নিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। এমন ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। আইনজীবীরা বলেন, মামলার শুরুতে বাদীরা এই সুযোগটাই নিয়ে থাকেন।</p> <p>৩২৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, গুলি, ছুরি বা ধারালো যেকোনো অস্ত্র বা যন্ত্রের মাধ্যমে আঘাত, যা মৃত্যু ঘটাতে পারে। আগুন বা উত্তপ্ত পদার্থ, বিষ বা ক্ষয়কারক বা বিস্ফোরক বা এমন কোনো পদার্থের মাধ্যমে আঘাত, যা মানবদেহে কোনোভাবে প্রবেশ করে ক্ষতি করে। এই অপরাধে যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে।</p> <p>ফুলবাড়িয়া থানা সূত্র জানায়, গত এক বছরে মামলা হয়েছে ৩৬৮টি। এর মধ্যে হত্যা মামলা আটটি, হত্যাচেষ্টা ও মারাত্মক আঘাতের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩২৬ ও ৩২৫ ধারায় ১৬৯টিসহ মারামারির ঘটনায় ২১৪টি। ১৬৯ মামলার মধ্যে ৩২৬ ধারায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে ২০টির। কিছু মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান। বেশির ভাগ মামলা চিকিৎসা সনদপত্রে গুরুতর আঘাত না থাকায় ৩২৬ ও ৩২৫ ধারা বাদ দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।</p> <p>স্থানীয় দুই আইনজীবী জানান, বাদীর লিখিত অভিযোগের পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা নথিভুক্ত করার নিয়ম। দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় মামলা করার আগে সতর্ক থাকতে হবে পুলিশকে। বাদী বিবাদীকে ঘায়েল করতে অভিযোগে অনেক কিছু মিথ্যা লিখে থাকেন। সাধারণ (সিম্পল) ও গুরুতর (গ্রিভিয়াস) জখম দেখলেই অনেকটা বোঝা যায়।</p> <p>ময়মনসিংহ জজ আদালতের আইনজীবী পারোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, ‘মারামারি ঘটলেই বাদীরা তদবির করেন ৩২৬ ধারায় এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) করার। ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর আহত করলেই এই ধারা যুক্ত করা উচিত।’</p> <p>ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হারুন আল মাকসুদ বলেন, ‘মারামারির রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। মামলার ক্ষেত্রে আঘাতের ধরনানুযায়ী রোগীদের সনদপত্র দেওয়া হয়।’</p> <p>ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন বলেন, ‘পাঁচ মাস হলো এই থানায় যোগ দিয়েছি। জমিসংক্রান্ত ও তুচ্ছ ঘটনায় মারামারির ঘটনা বেশি ঘটে।</p> <p>বাদীর লিখিত এজাহার অনুযায়ী মামলা করা হয়। ডাক্তারি সার্টিফিকেটে যে ধরনের আঘাত উল্লেখ থাকে, দণ্ডবিধির সেই ধারা অনুযায়ী আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।’</p>