<p>রেললাইনের ওপর বসছে বাজার। ইট ঝুলিয়ে নড়বড়ে সিগন্যাল (সংকেত) বাতি সচল রাখা হচ্ছে। জয়পুরহাট-বগুড়া-নওগাঁ-নাটোরের ৩২টি রেলগেটের মধ্যে ১৬টিতেই নেই নিরাপত্তাকর্মী ও ব্যারিয়ার। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বছরের পর বছর ধরে বগুড়ার সান্তাহার থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৭০ কিলোমিটার রেলের এ অব্যবস্থাপনা চলছে। রেলের ভগ্ন অবকাঠামো সংস্কারসহ শূন্য পদে লোকবল পূরণের দাবি স্থানীয়দের।</p> <p>তবে এ ব্যাপারে রেলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাঁদের কথা যে পুরোপুরি সত্য নয়, তা বোঝা যায় একটি জংশনের সিগন্যাল প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণের কারিশমা দেখে। দীর্ঘদিন ধরে সান্তাহার রেল জংশনের ঢাকামুখী আউটার সিগন্যালটি নষ্ট। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেও কাজ হয়নি। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেল কর্মচারীরাই নিজস্ব প্রযুক্তিতে কয়েকটি ইট ঝুলিয়ে সিগন্যালটিকে কার্যকর রেখেছেন। সান্তাহার-নাটোর রেলপথের তারাপুর এলাকায় এই সিগন্যাল বাতির অদূরেই রয়েছে অরক্ষিত রেলগেট। সেখানে নেই কোনো ব্যারিয়ার। ফলে বিভিন্ন যানবাহন পারাপারে হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা।</p> <p>তারাপুরে গেটম্যান হিসেবে দেড় বছর ধরে কাজ করছেন ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, এখানে গেট ব্যারিয়ার নেই। তাই খুব সমস্যা হয়। হুট করেই ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহন রেললাইনে উঠে পড়ে। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘আধুনিক যুগে সিগন্যাল ইট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়—এটা বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আড়াই বছর ধরে সেটিই চলছে।’</p> <p>এদিকে সান্তাহারে রেললাইনের ওপর চলে বেচাকেনা। এতে গত ছয় মাসে রেলের চাকায় প্রাণ গেছে অন্তত ২৪ জনের। নির্দেশনা না মানায় মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সান্তাহার জিআরপি থানার ওসি মনজের আলী বলেন, ‘এসব দোকান দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকবার বলা হয়েছে; কিন্তু তারা তা মানছে না। ফলে সমস্যা বাড়ছে।’ সান্তাহার রেলস্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দুর্বল অবকাঠামো সংস্কারের আশ্বাস পেলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।’</p> <p>দেশের প্রাচীনতম রেল জংশনের একটি সান্তাহার। এখান থেকে জয়পুরহাট-নাটোরের ৭০ কিলোমিটারজুড়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে রেল। এই পথের মধ্যে ১৬টি রেলগেটে নেই নিরাপত্তাকর্মী ও গেট ব্যারিয়ার। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন ২৫টি ট্রেন চলাচল করে। নিরাপদ বাহন হিসেবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছেই রেল পছন্দের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষের দায়িত্বে গাফিলতির কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। তাই রেলকে জনবান্ধব ও আধুনিক সেবানির্ভর করতে এ খাতে আরো বেশি নজর দেওয়ার দাবি বিশিষ্টজনদের।</p>