সবুজের বয়স যখন আট বছর তখন তাঁর বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে সবুজের মা চোখেমুখে যেন অন্ধকার দেখছিলেন। সবুজ বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের কষ্টের শেষ ছিল না।
[অদম্য মানুষ ]
হাত পাতেননি সবুজ
- বরিশালের গৌরনদীর বার্থী ইউনিয়নের বাওরগাতী গ্রামের সবুজ মিয়া। মাত্র তিন বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। সুচিকিৎসার অভাবে হারিয়ে ফেলেন চোখের আলো। কিন্তু তিনি হাত পাতেননি। লিখেছেন মো. আহছান উল্লাহ
অন্যান্য

সবুজ বলে চলেন
প্রতিবেশী চান্দু মিয়া দাদা আমাদের খুব ভালোবাসতেন।
প্রথম দিকে চান্দু দাদা ঝালমুড়ি তৈরি ও বিক্রিতে সহযোগিতা করেছেন। প্রথম দিন বিক্রি করে আড়াই শ টাকার মতো লাভ করেছিলাম।
এভাবে আট-দশ বছর কেটে গেল। একদিন আম্মু বললেন, ‘তোর দেওয়া সব টাকা খরচ করিনি। কিছু টাকা জমা করেছি। স্কুলের সামনে ছোট করে একটি দোকান দে। সেখানে কিছু মুদিমালও রাখবি।’ তখন স্কুলের পাশেই ছোট একটি দোকান দিলাম। ভালোই চলছিল। একদিন বেচাবিক্রি করে রাতে বাড়িতে গেলাম। সকালে এসে দেখি দোকানের তালা ভাঙা। সব মাল চুরি করে নিয়ে গেছে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। তার পরও ধারদেনা করে আবার ঝালমুড়ি বিক্রি শুরু করেছি।
জীবনসঙ্গী হলেন চম্পা
চম্পার বাড়ি বরগুনায়। ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করতেন। বরিশালে বেড়াতে এলে সবুজের সঙ্গে পরিচয়। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে সংসার শুরু করেন তাঁরা। বর্তমানে সবুজ-চম্পা দম্পতির দুই সন্তান—সৈয়দ তামজিদ (৯), আর সৈয়দা তানজিমা (৭)। পায়ের সমস্যায় ছেলেটার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। গেল করোনা মহামারিতে বছর দুয়েক বন্ধ ছিল স্কুল। ফলে বন্ধ ছিল সবুজের বেচাকেনাও। এ কারণে খুব অসহায় হয়ে পড়েছেন সবুজ। জানালেন, অর্থাভাবে ছেলেটার চিকিৎসাও চালাতে পারছেন না। সবুজের স্ত্রী চম্পা বেগম বলেন, ‘এত অভাবের মধ্যেও দাম্পত্য জীবনে আমরা সুখী।’
সবুজের মা লিলি বেগম (৬০) বলেন, ‘অভাবের কারণে পোলাটার ভালো কোনো চিকিৎসা করাতে পারিনি। গ্রামে কারো সঙ্গে মনোমালিন্য হলে কানা পোলার মা হিসেবে অনেকে গালি দিত। ছেলেকে কারো কাছে হাত পাততে দিইনি।’ সবুজ বলেন, পৃথিবীটা আমার জন্য অনেক কঠিন, তার পরও কারো বোঝা হতে চাইনি। বড় সাধ ছিল দুই চোখে পৃথিবীটাকে দেখব। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না। এখন ছেলেমেয়েকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারলেই আমি খুশি।
সম্পর্কিত খবর