জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে ১১টি হত্যা মামলাসহ ৬০টি মামলা হয়েছে। ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও একটি মামলারও তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্তের এমন ধীরগতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্বজনরা।
আইনজীবীরা বলছেন, মামলা তদন্তে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের ১৬টি থানার মধ্যে আটটি থানায় ৬০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় ১৬টি, পাঁচলাইশ থানায় ১৩টি, চান্দগাঁও থানায় ১২টি, ডাবলমুরিং থানায় ৯টি, বাকলিয়া থানায় চারটি, খুলশী থানায় তিনটি, সদরঘাট থানায় দুটি ও হালিশহর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রামের সাবেক দুই মেয়র আ জ ম নাসির ও রেজাউল করিম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি নুরে আলম মিনা, সাবেক সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম, সাবেক চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
তদন্ত শেষ না হওয়ায় এসব আসামির বিরুদ্ধে এখনো বিচারকাজ শুরু করা যায়নি।
জানতে চাইলে ডাবলমুরিং থানার ওসি কাজী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডাবলমুরিং থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলা আছে। কোনো মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আমরা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য কাজ করছি।
আদালতে চার্জশিট দিতে কিছুটা সময় লাগবে। মামলায় আসামির সংখ্যা বেশি। সবার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ, ঘটনায় যোগসূত্র, কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আসবে, সেসব বিষয় তদন্ত করতে হচ্ছে।’
এদিকে বিচারকাজের ধীরগতিতে হত্যাকাণ্ডের মতো চরম নির্মমতার শিকার পরিবারগুলো হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তারা দ্রুত বিচারকাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছে।
শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা শফিউল আলম বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা পাখির মতো মানুষ মেরেছে। কষ্ট দিয়ে দিয়ে আমাদের ছেলেদের মেরেছে। শুধু আমার সন্তান ওয়াসিম আকরাম নয়, যেসব মায়ের বুক খালি হয়েছে সবার পক্ষ থেকে আমি বিচারের দাবি জানাই। কোনো খুনি যেন পার না পায়। এই মামলার তদন্ত ও বিচার গুরুত্ব দিয়ে করা উচিত।’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আইনের বিধান হচ্ছে ১২০ দিনের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করা। ঘটনার পর প্রায় এক বছর হয়ে গেছে, এর পরও মামলায় চার্জশিট না দেওয়াটা হতাশার।’
সচেতন নাগরিক কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, মামলা লেখা, আসামি করার পদ্ধতি, গঠন প্রাণালী, উদ্দেশ্যসহ সবই প্রশ্নবিদ্ধ। মামলা নিয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার বাণিজ্যে ব্যস্ত।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনায় চট্টগ্রামে ১১টি হত্যা মামলাসহ ৬০টি মামলা হয়েছে। এখনো একটি মামলারও চার্জশিট দেওয়া হয়নি। কয়েকটি মামলার তদন্তকাজ শেষের দিকে।