দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ২০২৫ সামনে রেখে ক্যাম্পাসজুড়ে ফিরে এসেছে ছাত্ররাজনীতির চঞ্চলতা। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন জোট গঠন, প্যানেল প্রস্তুতি এবং শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব খুঁজে বের করার লক্ষ্যে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা, গঠনতন্ত্র সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করলেও এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করেনি।
এই প্রেক্ষাপটে ছাত্রসংগঠনগুলো নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে।
ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড ও অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা এবং গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
তবে সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আমরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গঠনতন্ত্র সংস্কার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাইন আহমেদ বলেন, ‘প্রশাসনের তৎপরতা ইতিবাচক হলেও গঠনতন্ত্র সংস্কার এড়িয়ে যাওয়া হতাশাজনক। নির্বাচিত সংসদের হাতে নিয়মিত নির্বাচন ও গঠনতন্ত্র সংশোধনের ক্ষমতা থাকতে হবে।
ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরের দাবি করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন, সাংস্কৃতিককর্মী ও অধিকারকর্মীদের নিয়ে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব প্যানেল গড়তে চাই।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর ডাকসু নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদ ও ছাত্র ফেডারেশন জোট গঠনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।
তারা প্যানেল গঠন ও শিক্ষার্থীবান্ধব, দক্ষ প্রার্থী বাছাইয়ে মনোযোগী।
ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে একটি কার্যকর প্যানেল ঘোষণা করব। প্রার্থী বাছাইয়ে নৈতিকতা, ছাত্রকল্যাণে ভূমিকা ও জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকে বিবেচনা করা হচ্ছে।’
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘স্বতন্ত্রভাবে প্যানেল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রার্থীদের সততা, দক্ষতা ও হলে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নিচ্ছি। জোটের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। প্যানেল গঠনের কাজ প্রায় শেষ। শিক্ষার্থীদের পক্ষে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। জোট নিয়ে আলোচনা চলছে।’
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দিন মুহাম্মদ খালিদ বলেন, “দলীয় প্যানেলের বদলে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’ স্লোগানে স্বতন্ত্র প্যানেল গড়ার চেষ্টা করছি। ছাত্র অধিকার পরিষদ, ফেডারেশন ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। সম্ভাব্য জোট নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র ইউনিয়ন ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। তারা আন্দোলনে সক্রিয়তা, শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের আগ্রহ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনে কাজ করছি। যেখানে সংগঠনের বাইরের সক্রিয় ছাত্রদেরও যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। জুলাই আন্দোলনে যাঁরা ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের প্রাধান্য দিচ্ছি।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক জোট গঠন ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছি। সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।’