‘দিনে দিনে শহরটা অচেনা হয়ে যাচ্ছে। অলিগলিতেও এখন বড় বড় ভবন। মনে হয়, এক ভবন হেলে পড়ছে আরেক ভবনের ওপর। ঠিকমতো রাস্তাঘাট নেই।
ময়মনসিংহে অপরিকল্পিত নগরায়ণ সমাধানে নেই জোরালো উদ্যোগ
- ভূমিকম্প হলে কয়েক দিন চলে আলোচনা-উৎকণ্ঠা
নিয়ামুল কবীর সজল, ময়মনসিংহ

সম্প্রতি ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে বসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নগরীর কয়েকজন বিশিষ্টজন।
এদিকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ছয়তলার তিন হাজার ৭৬৮টি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাত বা ততোধিক তলার ১২৭টি ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সময়কালে ভবন নির্মাণে নানা অনিয়ম বন্ধে ২৫০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।
মসিকের প্রশাসক ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখন দেখে-শুনে নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন দিচ্ছি। এ ছাড়া ভবন নির্মাণে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না তাও আমরা দেখভাল করছি।’
এদিকে একাধিক মহল তাদের মতামতে বলেছে, ময়মনসিংহ নগরীর অপরিকল্পিত নগরায়ণ নিয়ে কঠোর অবস্থান না নিলে ভবিষ্যতে কোনো দুর্যোগে নগরীর বেসামাল অবস্থা হবে। কোনো অলিগলিতে আগুন লাগলে তা সহজে নেভানোর অবস্থাও থাকবে না। কোনো ভবন ভেঙে পড়লে সেখানে উদ্বারকাজ চালানো যাবে না। আর গাদাগাদি-ঠাসাটাসি করে গড়ে ওঠা এসব ভবনের বাসিন্দারাও পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাবে শারীরিক নানা সমস্যায় ভোগবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের ২৪০ বছরের পুরনো উপমহাদেশের প্রাচীনতম এই নগরী ছিল শান্ত নিরিবিলি এক শহর। রাজা-মহারাজাদের স্মৃতিবিজরিত এ শহরের চিত্র পাল্টে যেতে থাকে গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসাসহ নানা কারণে আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে ধীরে ধীরে লোকজন বসতি শুরু করে এ শহরে। গত শতাব্দীর আশির দশক পর্যন্ত এ শহরে নামমাত্র কয়েকটি পাকা ভবন ছিল। তিনতলা পাকা বাড়ি ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। এরপর জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে এ শহরের জনসংখ্যা আর বসতবাড়ি। বাড়তে থাকে পাকা ও উঁচু ভবন নির্মাণ। বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরী সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলেও সাত বছর আগে ছিল পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত। বহুতল ভবন নির্মাণের নিয়ম-কানুন ও নকশা অনুমোদনের বিষয়টি ছিল অনেক সহজ। সে সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নগরীর যত্রতত্র ভবন নির্মাণ হতে থাকে। তখন থেকেই বাড়িঘর নির্মাণ নিয়ে কমবেশি অভিযোগ ছিল। সমালোচনা ছিল। পৌরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল কঠোরভাবে ভবন নির্মাণের বিষয়টি দেখভাল না করার। আর শহরবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল নকশার বাইরে গিয়ে স্থাপনা তৈরি করার।
গত ছয় থেকে সাত বছরে চিত্রটি অবিশ্বাস্য ঊর্ধ্বমুখী। পুরনো বাড়িঘর ভেঙে এখন বহুতল ভবন ও বিপণিবিতান নির্মাণের হিড়িক পড়েছে নগরীতে। ময়মনসিংহ শহরে কোনো অতিথি এলেই এ নগরীকে এলোমেলো নগরী বলে মন্তব্য করে থাকেন। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি হওয়া ঘরবাড়ি ও বিপণিবিতান, সড়ক ও অলিগলির দুই পাশ দখল, ড্রেন দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কারণে ময়মনসিংহ শহরের যে দিকেই তাকানো যায়, সেদিকেই হযবরল চিত্র ভেসে ওঠে। কোনটি আবাসিক এলাকা, কোনটি বাণিজ্যিক এলাকা তা বলা মুশকিল। বাড়িঘরগুলো তৈরি হচ্ছে মালিকদের ইচ্ছামতো। ভবন নির্মাণকালে নকশা অনুযায়ী ভূমির কোনো স্থান ফাঁকা রাখতে আগ্রহী নন অনেক মালিক। শুধু হাঁটার জায়গা রেখে অলিগলিতে তৈরি হচ্ছে বিশালাকার ভবন। অলিগলিতে, ফুটপাতে কিংবা ড্রেনের ওপর নেমে এসেছে বহু বাড়িঘরের সিঁড়ি। উঁচু ভবনের ভিড়ে অলিগলি আলো-বাতাসহীন। সিটি করপোরেশনের নকশার বাইরে ভবন নির্মাণ নিয়ে মসিকে অভিযোগেরও এখন অন্ত নেই।
ময়মনসিংহের আউটার স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা সফিয়েল আলম সুমন বলেন, ‘একসময় নিরিবিলি পরিবেশে আমরা বসবাস করতাম। এখন চারদিকে উঁচু উঁচু বাড়িঘর। কেউ জায়গা ছাড়েনি। ভালোভাবে গলি দিয়ে হাঁটাও যায় না।’
নগরীর বাউন্ডারি এলাকার বাসিন্দা মীর গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের বাসার চারদিকের বাড়িঘরে এখন ঘিঞ্জি পরিবেশ। ঘরে আলো-বাতাস আসে না। অনেকে সীমানাপ্রাচীরের ওপর ঘরবাড়ির দেয়াল নির্মাণ করেছেন। জায়গা ছাড়ার কোনো নামগন্ধই নেই।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. ছাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ডেঙ্গু মশাসহ অন্যান্য মশার বংশ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া আলো-বাতাসহীন ঘরে দীর্ঘদিন থাকলে অ্যাজমাসহ অন্যান্য রোগ হওয়ার জোরালো আশঙ্কা থাকে।’
মসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ মানস বিশ্বাস বলেন, ‘নকশা নিয়ম মতোই নেন ভবন মালিকরা। কিন্তু ভবন নির্মাণকালে তাঁদের কেউ কেউ সেই নিয়ম মানেন না। তবে আমরা এমন ঘটনা জানতে পারলে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’
সম্পর্কিত খবর

শাহজালালে প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে দুজন সঙ্গী প্রবেশের নির্দেশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন প্রতিজন যাত্রীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন সঙ্গী প্রবেশ করতে পারবেন—এমন নির্দেশনা জারি করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এই নির্দেশনা আগামী রবিবার (২৭ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে। বিমানবন্দর এলাকার ডিপারচার ড্রাইভওয়ে ও অ্যারাইভাল ক্যানোপিতে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ দুজন ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখা, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, বিমানবন্দর এলাকায় আসা সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল ও কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
যানজট ও নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের পদক্ষেপকে জরুরি বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিমানবন্দর সূত্র বলছে, প্রয়োজনে এই নিয়ম আরো কড়াকড়ি করা হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ পরিচয়পত্র রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার মামাতো ভাই হিরা কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আমির হোসেন হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামাতো ভাই শেখ ওয়ালিদুর রহমান হিরাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন হিরাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ রানা তাঁকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

দেড় দশকে ‘আওয়ামী সন্ত্রাসে’ নিহতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের ‘সন্ত্রাসী’ হামলা এবং তৎকালীন ‘সরকারের নির্দেশে’ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ এবং মামা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই নির্দেশ দেন।
সাক্ষাতে আবরার ফাহাদের পরিবার দাবি জানায়, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের তালিকা তৈরি করে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। একই সঙ্গে আবরার হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে সরকারের উদ্যোগ চান তাঁরা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এ ঘটনার বিচার অবশ্যই শেষ হবে। গণ-অভ্যুত্থানের আগের ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তাদের সংগঠনের হাতে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের প্রতিটি ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে। তৎকালীন সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে, সেগুলোও তদন্তের আওতায় রয়েছে।
সাক্ষাৎকালে মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ বলেন, ‘দেশের স্বার্থে কথা বলার কারণেই আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অসম পানিবণ্টনের বিরুদ্ধেও সে কথা বলেছিল। আজও তার মা ছেলের জন্য কান্না করে।

হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজউকের প্লট
- রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান!
নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের ১৫ চালককে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৫ চালককে প্লট দেওয়া হয়।
গত বুধবার কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে এই অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। গতকাল সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।
দুদক সূত্র জানায়, রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে নানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ঝিলমিল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার ক্ষেত্রে চার শ্রেণিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বরাদ্দের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চিঠি দিলে রাজউক তা বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পে ১৩/এ ধারার আওতায় বিভিন্ন সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২-এর গাড়িচালক, বিশেষ সহকারীর গাড়িচালক, সহকারী একান্ত সচিব-১-এর চালক, একান্ত সচিব-১ ও ২-এর চালক, প্রটোকল অফিসারের চালক, মুখ্য
সচিবের চালক, চিফ ফটোগ্রাফারের চালকসহ প্রায় ১৫ জন চালককে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তবে এসআরও এবং রাজউক বিধিতে অসামান্য অবদানের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া পাওয়া যায়নি। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কোন কোন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রয়েছে তার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।