দেশে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১১ হাজার ৮৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৬৩। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২৪ সালে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৬০৯ জন। অর্থাৎ পাঁচ বছরে সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ।
পাঁচ বছরের সড়ক দুর্ঘটনা
মোটরসাইকেলে মৃত্যু বেড়েছে ৭৮%
- * মোট মৃত্যুর ৭৫ শতাংশ যুবক * দেশের মোট মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল
সজিব ঘোষ

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মোটরযানের নিবন্ধনসংক্রান্ত নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে সারা দেশে ২৮ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৭টি নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ছিল। ২০২৪ সালের শেষে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০টিতে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সড়কে মোটরসাইকেলের চলাচল সুপরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্ঘটনা কমানো কঠিন হবে। আর যে হারে মোটরসাইকেল বাড়ছে, সেটিও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত মোট যানের অর্ধেকের বেশি মোটরসাইকেল—এমন পরিসংখ্যান কখনই ভালো বার্তা দিতে পারে না।
জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই পদে আমার বয়স মাত্র তিন মাস। এখনো অনেক কিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অন্য যানের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ২৩ শতাংশ, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৮ শতাংশ এবং মোটরসাইকেলে ভারী যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৩৭ শতাংশ। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেলচালক এককভাবে দায়ী ছিলেন। বাকিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৮ শতাংশ ক্ষেত্রে বাস ও পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের চালক দায়ী। সড়কভিত্তিক দুর্ঘটনার চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ৩০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪০ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ১৭ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে ও ১৩ শতাংশ শহরের সড়কে ঘটেছে।
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, তরুণদের হাতে মোটরসাইকেল বেশি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠেছে। ফলে কম বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি। আবার আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেশি হচ্ছে। জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে উপযুক্ত নীতিমালা ও শক্ত নিয়ন্ত্রণ দরকার।
এদিকে দেশের মোট মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলচালকদের বিরাট অংশ কিশোর ও যুবক। এদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা প্রবল। এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার একটি ব্যাপক অংশ ঘটছে বাস ও পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের ধাক্কা বা চাপায়। এসব দ্রুতগতির যানবাহন চালকদের বেশির ভাগই অসুস্থ ও অদক্ষ। এদের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর কারণে দক্ষ মোটরসাইকেলচালকরাও দুর্ঘটনার শিকার হন।
মোটরসাইকেল চার চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু দেশে গণপরিবহনব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য না হওয়া এবং যানজটের কারণে মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা বাড়ছে। মোটরসাইকেলের চালকদের মানসম্পন্ন হেলমেট ব্যবহারের আগ্রহ কম। অথচ মানসম্পন্ন হেলমেট ৪৮ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমায়।
এক প্রশ্নের জবাবে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব মৃত্যুর জন্য পলিসি দায়ী। তাই পলিসি পাল্টাতে হবে। মোটরসাইকেলকে আমরা সহজলভ্য করে দিয়েছি, নিবন্ধনের খরচ কমিয়ে দিয়েছি। ৩৫০ সিসির মোটরসাইকেল বাজারে ছেড়ে দিয়েছি। অথচ আমাদের ১০০ থেকে ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল যথেষ্ট।’
সম্পর্কিত খবর

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদির মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ এক হাজাতির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম এস এম আব্দুল হক (৭০)। গতকাল রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মো. ফারুক এ তথ্য দেন।
আব্দুল হককে হাসপাতালে নিয়ে আসা কারারক্ষী মো. রোকন বলেন, নিহত আব্দুল হক খুলনার কবি ফররুখ একাডেমি মোড়ের ইমান আলী শেখের ছেলে। খুলনা কারাগারে অসুস্থ হলে তাঁকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

সংক্ষিপ্ত
মিরপুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ডাকাতির চেষ্টা, আটক ৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে বাসায় ঢুকে ডাকাতির চেষ্টাকালে চারজনকে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন সাবেক সেনা সদস্যও রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার বিকেল সোয়া ৩টায় মিরপুর ডিওএইচএসের ৮০৭ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় ঢোকেন পাঁচ ব্যক্তি। এই দলের সদস্যদের টার্গেট ছিল ভাড়াটিয়া বোরহানের বাসাটি।
ধরা পড়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে করপোরাল (অব.) মুকুল জানান, মিরপুর-১০-এর এক চায়ের দোকানে তাঁর সঙ্গে হারুনুর রশিদের পরিচয় হয়। হারুন জানান, এক ব্যক্তির কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়।

ভোলাগঞ্জে পাথরের লোভে লাশ হলেন আরেক শ্রমিক
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পর্যটনকেন্দ্র সংলগ্ন রেলওয়ের রোপওয়ের (রজ্জুপথ) সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে হাবিবুর রহমান (৩৫) নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গত শনিবার রাতে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের বাংকার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হাবিবুর রহমান উপজেলার কলাবাড়ী গ্রামের আসাদ মিয়ার ছেলে।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি একইভাবে অবৈধভাবে পাথর তুলতে গিয়ে প্রাণ দেন আরেক শ্রমিক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো গত শনিবার রাতেও রেলওয়ের রোপওয়ের সংরক্ষিত এলাকায় গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করতে যান হাবিবুর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরো দুজন শ্রমিক।
হাবিবুর গর্ত থেকে পাথর উত্তোলন করছিলেন। বাকি দুজন মাথায় পাথর বহন করে নৌকায় নিয়ে রাখছিলেন।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।’
পুলিশ জানায়, গত ১৩ জানুয়ারি সকালে একই এলাকায় অবৈধভাবে পাথর তুলতে গিয়ে বালুধসে লিটন মিয়া নামের এক শ্রমিক প্রাণ হারান। এ নিয়ে চলতি বছর রেলওয়ের রোপওয়ে বাংকার এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে দ্বিতীয় প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।
ভোলাগঞ্জ পাথরকোয়ারি, শাহ আরেফিন টিলা ও বাংকার এলাকার পাথর লুটপাটের পর সাদা পাথর এলাকায় গত ২৩ এপ্রিল থেকে একটি চক্র পাথর লুট শুরু করেছে।

ডাকসু নির্বাচন
অংশ নিতে পারবেন না তিন শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ডিকেট সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। সভায় উপস্থিত একজন সদস্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনায় জড়িতদের ব্যবস্থা নিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যে ১২৬ জনকে সামরিক বহিষ্কার করেছে, তাঁরা ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। শাহবাগ থানায় যে মামলা হয়েছে তার মধ্যে এই ১২৬ জনের কেউ কেউ থাকতে পারেন।