বিগত সরকারের আমলে আচরণবিধি ভঙ্গ করে বিচারকরা জামিনযোগ্য মামলায় জামিন না দিয়ে মানুষকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা সরকারের সুবিধা পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে অন্যায় ও অবিচার করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
এমন পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতে আইন ও সংবিধান সংশোধন করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি এবং সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় গঠনসহ বিচার বিভাগ পুনর্গঠন ও সংস্কারের জন্য ১২ দফা প্রস্তাব দিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ১২ দফা প্রস্তাব এবং বিচারকদের বিভিন্ন বঞ্চনা ও অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করার আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার বাদী অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ১২ দফা নির্দেশনার ৮ নম্বর দফায় বলা আছে সংসদ ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত রাখতে। অথচ আমাদের বদলি, পদোন্নতি সব কিছু করে সরকার।
তাহলে কি আমরা (মুক্ত) থাকতে পারব? স্বাধীনতা ভোগ করতে পারব? কখনো না।’
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারী শাসনামলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। মানুষের শেষ ভরসাস্থল হলো বিচার বিভাগ। সেখানে যদি হস্তক্ষেপ হয়, মানুষ যদি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে দেশ ও জনগণের জন্য একটা বিপর্যস্ত অবস্থা দাঁড়ায়।
বিচার বিভাগের বেশির ভাগ কর্মকর্তা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা বিগত সরকারের সুবিধার জন্য বিভিন্নভাবে অন্যায় ও অবিচার করেছেন।’
১২ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি, বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতিসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় গঠন, মাসদার হোসেন মামলায় প্রদত্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন।