ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর উপকূলের অন্তত এক কোটি মানুষ ঝুঁকিতে আছে। কারণ রিমালের আঘাতে সরকারিভাবে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেওয়া হলেও ত্রাণ ও পুনর্বাসনে নামমাত্র বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশেষ বরাদ্দের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রিমাল গত ২৬ মে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান ১৩ জুন ওই দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনে করণীয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, রিমালে ২০ জন নিহত, দুই হাজার ৫০৩ জন আহত ও তিন লাখ ৮৩ হাজার ৮১৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাত হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ২৫২ টাকা। যদিও ক্ষয়ক্ষতি কয়েক গুণ বেশি বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো দাবি করেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সরকার ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব করলেও সেই অনুযায়ী ত্রাণ ও পুনর্বাসনে পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষ চরম ঝুঁকিতে আছে। বিশেষত ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত পুকুর ও জলাশয়গুলো লবণপানি মুক্ত করার এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পদক্ষেপ না নেওয়ায় সুপেয় পানির দীর্ঘস্থায়ী সংকট দেখা দেবে।
রাস্তাঘাট সংস্কার না করায় সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার না করায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
সদ্যঃসমাপ্ত বাজেট অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রিমালের পর দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে উপকূলীয় ১৯টি জেলায় জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একটি জেলা সর্বোচ্চ ৮৫ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা পেয়েছে। আর ত্রাণ হিসেবে পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল এবং ১১ হাজার ৫০০ ব্যাগ ও বস্তা শুকনা ও অন্যান্য খাবার দেওয়া হয়েছে।
শিশুখাদ্য বাবদ দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও গোখাদ্য বাবদ দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৎস্যচাষি ও মৎস্যজীবীদের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন কাজ চলছে। রিমালে ৩৮ হাজার ৮৪ হেক্টর খামার, হ্যাচারি ও মৎস্যঘের (সম্পূর্ণ) এবং দুই লাখ ৩১ হাজার ১০৪টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর সংস্কারে ৩০০ বান্ডেল ঢেউটিন ও গৃহ মঞ্জুরি বাবদ ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে তিন হাজার ৫৬২ হেক্টর শস্য ক্ষেত ও বীজতলা সম্পূর্ণ এবং ৫৯ হাজার ৭৯৫ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিমালে দুই হাজার ২২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৩১ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ১১ হাজার ৪৫৭ কিলোমিটার রাস্তাঘাট, তিন হাজার ২২১টি ব্রিজ ও কালভার্ট, ছয় হাজার ৯৭৫টি নলকূপ ও ৬৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সংস্কারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে বলা হয়নি।
রিমাল-পরবর্তী পরিস্থিতি দেখতে সম্প্রতি ঢাকা থেকে একটি নাগরিক প্রতিনিধিদল খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলায় যায়। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুলের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের পর্যবেক্ষণ বলছে, দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর নেওয়া পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।