দুর্নীতিবাজরা প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ধ্বংস করে ফেলছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য (এমপি) পঙ্কজ নাথ। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি বিল ২০২৪-এর ওপর সংশোধন আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) বিল ২০২৪ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিরা।
আলোচনায় পঙ্কজ নাথ বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাকে একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ের শিশুদের যোগ্য করে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন। তিনি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছেন, যেই গ্রামে বিদ্যালয় নেই সেটি খুঁজে বের করে আমাদের চরাঞ্চলে স্কুল দিয়েছেন, প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছেন। সন্তানকে স্কুলে পাঠানো মায়ের মোবাইল অ্যাকাউন্টে নীরবে দেড় শ টাকা চলে যায়, সেটিও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এটি শিক্ষার প্রতি তাঁর অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সদিচ্ছা, আন্তরিকতা—এই লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। সেটি হচ্ছে ডিজি কিংবা মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক বদলি বাণিজ্যের তদবির আর ট্রেনিংয়ের একটা সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটটা ভাঙা দরকার।’
আওয়ামী লীগ নেতা পঙ্কজ নাথ বলেন, ‘অনলাইনে বদলির আবেদনের কথা বললেও ম্যানুয়ালি যে বদলিগুলো হচ্ছে সেই ডিজি ও মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক তদবিরটা যদি বন্ধ করা না যায়...।
আমি গ্রামের মানুষ; আমার চরে কেউ থাকতে চান না। এক বছরের বেশি রাখতেই পারি না। সেই বদলিটা যেন যত্রতত্র না হয়। ঢাকায় এসে তদবির করে বদলি হয়ে যায়। বদলির আরজিটা বন্ধ করতে না পারায় লাভের গুড়, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ধ্বংস করে ফেলছে এই দুর্নীতিবাজরা ও শিক্ষকরা। দক্ষ ও পরিশ্রমী শিক্ষকদের প্রণোদনা দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে আবাসিক প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠার আহবান জানাচ্ছি।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, নেপের আইন বা বিধি না থাকায় শূন্যপদে জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থা/প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন কর্মকর্তারা প্রেষণে নিয়োগ পেয়ে একাডেমিতে যোগ দেন। তবে বেশির ভাগ কর্মকর্তার গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁদের একাডেমির মূল কাজে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে নতুন আইন করা হচ্ছে।
নেপ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে বার্ষিক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানের জন্য গবেষণা পরিচালনা করে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনার, সভা, ওয়ার্কশপ, সম্মেলনের আয়োজন ও অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিট, এনসিটিবি, পিটিআই ও ইউআরসির বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করে।