গ্রীষ্মকালে পিঠে বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল চুলকানিযুক্ত গোটা হওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। এটাই ঘামাচির সাধারণ ধরন।
কিভাবে হয়?
আমাদের ত্বকের গভীরে থাকে অনেক ঘামের গ্ল্যান্ড, দেখতে অনেকটা পেঁচানো থলির মতো। গরম আবহাওয়ায় ঘামের গ্ল্যান্ডগুলো উদ্দীপিত হলে সেখানে প্রচুর ঘাম তৈরি হয় এবং গ্ল্যান্ডের থলি থেকে একটি নলের মধ্য দিয়ে ঘাম ত্বকের উপরি ভাগে বেরিয়ে আসে।
কিন্তু কোনো কারণে ঘামের গ্ল্যান্ডের এই ঘাম নিঃসরণকারী নালিকাগুলো নষ্ট হয়ে গেলে ঘামের তরল ত্বকের ভেতরেই ছড়িয়ে পড়ে। এতে ত্বকের মধ্যে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে লাল লাল গোটা আকারে ফুটে ওঠে। শিশুদের ত্বকে ঘামাচি বেশি হতে দেখা যায়। কেননা শিশুদের ঘামের গ্ল্যান্ডগুলো অনেক সময় পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠে না।
করণীয়
* যেহেতু গরম আবহাওয়া এ রকম পরিস্থিতির জন্য দায়ী, তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় নিয়ে যেতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকলে ঘামাচির দ্রুত নিরাময় ঘটে। সেটা সম্ভব না হলে ফ্যানের বাতাসেও রোগীর যথেষ্ট আরাম হয়।
* আঁটসাঁট কাপড়চোপড় পরা থাকলে সেগুলো দ্রুত পরিহার করে ঢিলেঢালা সুতির কাপড় পরা অত্যাবশ্যক।
* ক্যালামাইন লোশন আক্রান্ত স্থানে লাগালে তা তাৎক্ষণিক প্রশান্তি দেয় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
* আক্রান্ত স্থানে বরফ হালকাভাবে মালিশ করলেও তা সাময়িক আরাম দেয়।
* প্রচুর পানি খেতে হবে, যাতে শরীর পানিশূন্যতায় না ভোগে।
কী করবেন না?
* আক্রান্ত স্থান কখনোই জোরে জোরে ঘষা যাবে না। আর চুলকানির জন্যও ঘটতে পারে জীবাণু সংক্রমণ।
তাই যথাসম্ভব চুলকানি প্রতিরোধ করে রাখা ঘামাচিকে জটিলতামুক্ত রাখার অন্যতম প্রধান উপায়।
* অযথা শরীরে কোনো ক্রিম বা পাউডার লাগানোর প্রয়োজন নেই। কেননা তাতে গ্ল্যান্ডের মুখ বন্ধ হয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যেতে পারে।
* গরম আবহাওয়া যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে। সাধারণ ঘামাচি কোনো গুরুতর ব্যাধি নয়। সাধারণত তিন-চার দিনের মধ্যেই অনুকূল পরিস্থিতিতে এটার সম্পূর্ণ নিরাময় ঘটে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ ঘামাচি জটিলাকার ধারণ করতে পারে এবং জীবাণু সংক্রমণ ঘটে ত্বকের পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে মুখে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও নানাবিধ যত্ন ও চিকিৎসার প্রয়োজন ঘটে থাকে।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. যাকিয়া মাহফুজা যাকারিয়া
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ডার্মাটোলজি
উত্তরা স্কিন কেয়ার অ্যান্ড লেজার, ঢাকা