বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবহন খরচসহ আনুষঙ্গিক নানা খরচের কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের নগদ সহায়তা বা ভর্তুকির পরিবর্তে নীতিনির্ধারকদের প্রতি ব্যবসার খরচ কমানোর আহবান জানিয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। একই সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সরকারের কাছে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অর্থনীতিবিদ সম্মেলনে গত রবিবার এক অধিবেশনে অংশ নিয়ে তিনি এ আহবান জানান।
বর্তমান ব্যবসা পরিবেশের বাস্তবতা তুলে ধরে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪০০ শতাংশ, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে হয়েছে ১৩ শতাংশ। পণ্য পরিবহনে খরচ কিলোমিটারপ্রতি বিশ্বের মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসার এই খরচ কমাতে না পারলে সামনের দিনে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের শেষ দিনে ‘বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণের চ্যালেঞ্জ ও কাঠামোগত রূপান্তর’ শীর্ষক এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। অধিবেশনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার এবং বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আক্তার মাহমুদ।
মূল প্রবন্ধে সেলিম রায়হান উপস্থাপন করেন, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে বাংলাদেশ চার ডিজিটের এইচএস কোডের মাত্র ৯টি নতুন পণ্য রপ্তানিতে যোগ করতে পেরেছে। ২০২১ সালে এসব পণ্যের মূল্য ছিল ৮২ কোটি ডলার। অথচ এই সময়ে ভিয়েতনাম ৪১টি নতুন পণ্য রপ্তানি করেছে। এসব পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ এক হাজার ৪৫০ কোটি ডলার। তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের রপ্তানি কাছাকাছি ছিল।
তবে কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে ভিয়েতনাম নতুন উচ্চতায় উঠে গেছে। তাদের রপ্তানি খাত বর্তমানে বৈচিত্র্যময়, যেখানে সহজ ও জটিল পণ্য রয়েছে।
ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আক্তার মাহমুদ বলেন, নব্বইয়ের দশকে ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম প্রায় একই জায়গায় ছিল। বর্তমানে ভিয়েতনামের ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। আর বাংলাদেশে রপ্তানি খুবই নগণ্য। ভিয়েতনামের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। তাদের ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানির ৭০ শতাংশ এফডিআই থেকে আসে। আইন-কানুন, নীতির অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে এফডিআই কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সপ্তমবারের মতো ঢাকায় এ সম্মেলেনের আয়োজন করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে তিন দিনের এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।